ঢাকা ১১ বৈশাখ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

দাউদকান্দি মডেল থানায় নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার গাড়ি

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ১২:৪৫ পিএম
আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৫, ০৩:০১ পিএম
দাউদকান্দি মডেল থানায় নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার গাড়ি
ছবি : খবরের কাগজ

কুমিল্লার দাউদকান্দি মডেল থানার ভিতরে অযত্ন-অবহেলা আর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামিদামি মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন। রোদবৃষ্টি আর ধুলা-ময়লায় মরিচা পড়ে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার এসব যানবাহন। বিভিন্ন জটিলতায় দীর্ঘদিন ধরে অযত্ন-অবহেলায় যানবাহনগুলো পড়ে থেকে হারিয়ে ফেলছে চলাচলের ক্ষমতা। 

জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনা, চুরি, চোরাই পণ্য পরিবহন, মাদকদ্রব্য বহনসহ বিভিন্ন অভিযোগে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশের জব্দ করা মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, পিকআপ ভ্যান, ট্রাক আটক করার পর মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এসব যানবাহন অযত্নে পড়ে থাকছে থানার ভিতরে খোলা আকাশের নিচে। দিনের পর দিন সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে যানবাহনগুলো। একটা সময় পরে এগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এতে করে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। 

জানা যায়, মূলত তিনটি কারণে থানায় জব্দ যানবাহন নষ্ট হচ্ছে। গাড়ি ছাড়িয়ে নিতে মালিকের না আসা, আদালতের নির্দেশনা ছাড়া এসব যানবাহন নিলামে বিক্রি করতে না পারা এবং থানা কর্তৃপক্ষও জব্দ যানবাহন সম্পর্কে আদালতকে অবগত না করায় কোটি টাকার সম্পদ অনায়াসে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে। এতে করে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে। 

মামলার আলামত হিসেবে এসব যানবাহন জব্দ করা হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে খোলা আকাশের নিচে মাসের পর মাস পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। দিনে দিনে যানবাহনগুলো বিকল হয়ে পড়লেও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের।  

কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক হোসাইন মোহাম্মদ দিদার খবরের কাগজকে বলেন, 'মডেল থানায়  অনেক গাড়ি পড়ে আছে। এসব গাড়ি বিক্রি করে দিলে যেমন থানার পরিবেশ সুন্দর হয়, তেমনি সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পাবে। এমন কোনো উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। আমি আশা করব দ্রুত কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে। 

দাউদকান্দি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জুনায়েত চৌধুরী বলেন, 'গাড়িগুলো বিভিন্ন মামলার আলামত। আদালত নির্দেশনা না দিলে আমাদের কিছু করার নেই। কাগজপত্র না থাকলে কিংবা আদালতে মামলা থাকলে নিষ্পত্তির জটিলতায় বেশিরভাগ মালিক যোগাযোগ করেন না। আদালতের নির্দেশনা না আসায় গাড়িগুলো মালিককে ফেরত দেওয়া যাচ্ছে না।'

বাদল/জোবাইদা/

রানা প্লাজা ধসের ১ যুগ গাইবান্ধায় হতাহতদের পরিবারের পুনর্বাসন হয়নি

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:০৫ এএম
গাইবান্ধায় হতাহতদের পরিবারের পুনর্বাসন হয়নি
ছবি: সংগৃহীত

রানা প্লাজা ধসের ১২ বছর পেরিয়ে যাচ্ছে আজ। এক যুগ পার হলেও গাইবান্ধায় হতাহতদের পরিবারের পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থা হয়নি। অঙ্গ ও চাকরি হারিয়ে অনেকেই কষ্টে জীবন যাপন করছেন। 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের ঘটনা ঘটে। এতে জেলার নারীসহ ৪৯ জন নিহত হন। ওই সময় ১১ জন নিখোঁজ হন। আহত হন শতাধিক। এ ঘটনায় অনুদান হিসেবে তিন দফায় হতাহতের পরিবারকে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। এরপর গত ১২ বছরে আর কোনো আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়নি।  

রানা প্লাজা ধসে জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের সায়েব মণ্ডলের মেয়ে সোনিয়া বেগমের (২৮) অবস্থা করুণ। ২০১১ সালে পূর্ব দামোদরপুর গ্রামের নজির উদ্দিনের ছেলে মিজানুর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। জীবিকার তাগিদে বিয়ের পর দুজন ঢাকায় যান। সেখানে তারা রানা প্লাজার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। চাকরি নেওয়ার মাত্র ২২ দিনের মাথায় ভবন ধস হয়। এতে সোনিয়া বেগম গুরুতর আহত হন। তার স্বামী মিজানুর রহমান অন্য কাজে বাইরে থাকায় তিনি বেঁচে যান।

সোনিয়া বেগম বলেন, ‘ঘটনার দিন ভবনটির সাত তলায় আটকা পড়ি। কিছু বুঝার আগেই হঠাৎ একটা বিকট শব্দ হয়। পরে ভবনটি ধসে পড়ে। নিজেকে বাঁচাতে দৌড়ে বের হওয়ার চেষ্টা করি। এ সময় আমার ডান পা ভবনের একটি পিলারের নিচে চাপা পড়ে। পরে এনাম হাসপাতালে আমার ডান পা কোমরের নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়। 

ঘটনার পর সরকার ১০ লাখ টাকা অনুদান দেয়। ওই টাকা থেকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে লাভ পাচ্ছি। এই টাকায় এখনো চিকিৎসা ও সংসার চালাতে হচ্ছে। সরকার আমার স্বামীকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু কোনো চাকরি দেওয়া হয়নি।’ 

এদিকে রানা প্লাজার ভবন ধসে নিহত পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসন হয়নি। এর মধ্যে সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের কিশামত হলদিয়া গ্রামের স্মৃতি রাণীর (২৭) পরিবারের অবস্থা খুবই খারাপ। স্মৃতি রাণীর চাকরির টাকায় তাদের সংসার চলত। কিন্তু তার মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এরপর ১২ বছরেও তাদের আর কোনো অনুদান দেওয়া হয়নি। একই ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাঙ্গামোড় গ্রামের দিনমজুর ওয়াহেদ আলীর ছেলে সবুজ মিয়া (২০) ভবন ধসের ঘটনায় নিহত হন। তার পরিবারের অবস্থাও একই রকম।  

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনার পরপরই সরকারের পক্ষ থেকে হতাহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। এরপর তাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে কোনো সরকারি নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।’

রাজশাহীতে কৌশল পাল্টে চলছে মাদকের রমরমা কারবার

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৫ এএম
আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫৩ এএম
রাজশাহীতে কৌশল পাল্টে চলছে মাদকের রমরমা কারবার
রাজশাহী

দেশজুড়ে পুলিশ-র‍্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকলেও রাজশাহীতে মাদক কেনাবেচার কৌশল পাল্টে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে রমরমা বাণিজ্য চালাচ্ছে কারবারিরা। এই মাদক চোরাচালানের অন্যতম রুট হিসেবে পরিচিত পেয়েছে রাজশাহীর সীমান্তবর্তী দুই উপজেলা চারঘাট ও বাঘা। প্রশাসনের শত চেষ্টার পরও বন্ধ হচ্ছে না মাদক বাণিজ্য। এতে মাদকের ভয়াবহতায় দিশাহারা হয়ে পড়েছে অভিভাবকসহ স্থানীয়রা। তবে স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, মাদকের বিরুদ্ধে চলছে জিরো টলারেন্স নীতি।

কয়েক দিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন মাদকপ্রবণ এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এক সময় ভারত থেকে পদ্মা নদী দিয়ে ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য চারঘাট-বাঘার সীমান্তের বিভিন্ন রুট দিয়ে প্রবেশ করে দেশের অভ্যন্তরে চলে যেত। তবে গত দুই-তিন বছর ধরে বিজিবি ও পুলিশের হাতে বড় কোনো ফেনসিডিলের চালান ধরা পড়েনি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

প্রথম দিকে মাদক পাচার কমেছে মনে হলেও সম্প্রতি বেরিয়ে এসেছে থলের বিড়াল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে নতুন কৌশলে ফাঁদ পেতেছে মাদক কারবারিরা। ভারত থেকে তরল ফেনসিডিল, অন্যতম কাঁচামাল কোডিন পাওডার ও বোতলের লেভেল আনছে তারা। এরপর পুরোনো বোতলে ফেনসিডিল ভরে বিক্রি হচ্ছে খুচরায়।

সীমান্তবাসী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ইউনিটের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বোতলজাত ফেনসিডিলের ক্ষেত্রে চালান বড় হলেই ধরা পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ কারণে বর্তমানে বোতলজাত ফেনসিডিল আসছে না বললেই চলে। নৌপথে তেলের ৫ থেকে ১০ লিটারের জারে তরল ফেনসিডিল ও বোতলের লেবেল আনা হচ্ছে। এ ছাড়া ফেনসিডিল তৈরির পাউডার কোডিনও আসছে। এরপর সীমান্তবর্তী চরে অথবা ফাঁকা মাঠে এগুলো পুরোনো বোতলে ভরে খুচরা বিক্রি করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়া সহজ হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জায়গাও একই পদ্ধতিতে তরল ফেনসিডিল পাঠানো হচ্ছে।

চারঘাট মডেল ও বাঘা থানা থেকে জানা যায়, গত এক বছরে এ দুই থানায় ৮১৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৮২টিই (৮৩ শতাংশ) মাদকের। কিন্তু এই সময়ে মাদক মামলার অধিকাংশই ১০-২০ বোতল ফেনসিডিল জব্দের। 

সরেজমিন চারঘাট ও বাঘা সীমান্তে পদ্মা নদীর পাড়ে কথা হয় জেলেদের সঙ্গে। কার্ডধারী জেলে সাহাবুদ্দিন আলী জানান, দুই উপজেলা মিলে প্রায় ৩ হাজার কার্ডধারী জেলে আছেন। কিন্তু সবাই মাছ ধরতে নদীতে যান না। অনেকেই নৌকা-জাল নিয়ে নদীতে নেমে ভারতীয় জেলেদের জন্য অপেক্ষা করেন। ভারতীয় জেলেরা মাঝ নদীতে এসে নৌকা থেকে পাউডার কিংবা বোতলে করে তরল ফেনসিডিল, লেবেল দিয়ে যান। পরে সুবিধাজনক জায়গায় এনে পুরোনো বোতলে ভরা হয়। এরপর বিশেষ যন্ত্র দিয়ে নতুন লেবেল লাগিয়ে বিক্রি করা হয়।

স্থানীয় কয়েকজন মাদক কারবারির সঙ্গেও কথা হয়। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা দুই লিটার তরল ফেনসিডিল নিয়ে আসতে পারলে এর সঙ্গে দেশীয় বিভিন্ন কোম্পানির কাশির সিরাপ ও ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে ৫০-৬০ বোতল ফেনসিডিল তৈরি করেন। আসল ফেনসিডিলের দাম প্রতি বোতল ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা। তারা এক বোতল বিক্রি করেন ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকায়। সংগ্রহে থাকা পুরোনো বোতল পরিষ্কার করে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে বোতলের গায়ে ও মুখে নতুন লেবেল সাঁটিয়ে তারা এগুলো বিক্রি করেন।

চারঘাট উপজেলা মাদক প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাদশা বলেন, আশপাশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে গাড়ি নিয়ে এসে লোকজন ফেনসিডিল সেবন করে চলে যাচ্ছে। কিন্তু কোথাও বোতল পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে না। প্রথম আমরা মনে করেছিলাম, হয়তো মাদক পাচার কমে গেছে। এখন খোঁজ নিয়ে জেনেছি, পুরোনো বোতলে নতুন মাদক ঢুকিয়ে বিক্রি হচ্ছে। কৌশল পাল্টে আরও বেপরোয়া হয়েছে মাদক কারবারিরা।’

বাঘার মীরগঞ্জ এলাকার ভাঙারি ব্যবসায়ী শরীফ আলী বলেন, ‘আগে সীমান্তের এসব এলাকা থেকে প্রতি মাসে অন্তত ১০ বস্তা ফেনসিডিলের খালি বোতল কেজি দরে বিক্রির জন্য আসত। কিন্তু এখন আধা বস্তাও হয় না। কিছু বোতল গ্রামে ফেরি করা ভাঙারিদের কাছে পাওয়া গেলেও সেগুলো পিস হিসেবে অতিরিক্ত দামে অনেকে কিনে নিয়ে যায়।’

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রাজশাহীর (সার্কেল-খ) পরিদর্শক সাইফুল আলম বলেন, ‘প্রতি মাসে চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় ১০-১৫টি অভিযান পরিচালনা করি। কিন্তু এখন ফেনসিডিল ধরা অনেক কঠিন। কোডিন পাউডার দেশে এনে কাশির সিরাপের সঙ্গে মিশিয়ে ফেনসিডিল তৈরি করা হচ্ছে। বোতলের পাশাপাশি পলিথিনেও লিকুইড ফেনসিডিল পরিবহন করা হচ্ছে। কিছুদিন আগে এমন একটি চালান জব্দ করা হয়। কৌশল পরিবর্তন করায় চালান ধরতে বেগ পেতে হচ্ছে।’

বিজিবি চারঘাটের ইউসুফপুর কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘তেলের জার কেউ সন্দেহ না করায় মাদক কারবারিরা এ কৌশল নিয়েছে। এখন আরও সতর্কতার সঙ্গে সীমান্তে দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে।’

চা বেচে চালান লেখাপড়ার খরচ

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৮ এএম
আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫৩ এএম
চা বেচে চালান লেখাপড়ার খরচ
পার্কে চা বিক্রি করছেন গাইবান্ধা কৃষি ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ। ছবি: খবরের কাগজ

নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পার্কে এক বেলা করে চা-কফি বিক্রি করছেন গাইবান্ধা কৃষি ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ।

বগুড়ার শাহজাহানপুরের ভ্যানচালক বাবার পক্ষে সংসারের খরচ চালানোর পর বুলবুলের তিন ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ চালানো সম্ভব হয় না। তাই বুলবুল নিজেই চালাচ্ছেন নিজের লেখাপড়ার খরচ। সঙ্গে কিছু কিছু করে টাকা জমাচ্ছেন বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য। সম্প্রতি বুলবুলের সঙ্গে কথা হয় গাইবান্ধা পৌর পার্কে।

বুলবুল জানান, রোজ বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৩টায় মধ্যে চা-কফি বিক্রি শুরু করেন তিনি। চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

গাইবান্ধা পৌর পার্কেই চা-কফি বিক্রি করেন বুলবুল। মাঝে মধ্যে পার্কে লোক সমাগম কম থাকলে আশপাশের বিপণিবিতানগুলোতেও চা-কফি বিক্রি করেন তিনি। বুলবুলের এ ভ্রাম্যমাণ কফি শপে ১৮ ধরনের পাওয়া যায় চা।

তার এই কফি শপে কফি তৈরির সব সরঞ্জাম, তার পোশাকের সঙ্গেই আটকানো থাকে। এর জন্য বুলবুল ব্যবহার করেন বিশেষ ধরনের একটি জ্যাকেট। সেখানে বুকের সামনে লাগানো থাকে গরম পানির ফ্লাক্স। জ্যাকেটের কোনো পকেটে থাকে কফির পাতা, কোনো পকেটে দুধ, কোনো পকেটে চিনি। জ্যাকেটের এক পাশে আবার লাগানো থাকে কফির কাপ। এভাবে ফেরি করে কফি তৈরির সব সরঞ্জাম শরীরে নিয়ে হেঁটে বিক্রি করেন চা-কফি।

কথা বলে জানা যায়, বুলবুলের ভ্রাম্যমাণ কফি শপে পাওয়া যাচ্ছে ১৮ ধরনের চা-কফি। এর মাঝে রয়েছে ব্ল্যাক কফি, সাধারণ কফি, স্পেশাল কফি ছাড়াও রয়েছে ১৫ রকমের চা। এর সবকিছুর দামই ২৫ টাকার মধ্যে। প্রতিদিন পার্কে চা-কফি বিক্রি করে যে লাভ হয়, তা দিয়েই চলছে বুলবুলের লেখাপড়ার খরচ। প্রতি বিকেলে বিক্রি হচ্ছে এক থেকে দুই ফ্লাক্স কফি। প্রতি ফ্লাক্স কফি বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। এটা থেকে বুলবুলের লাভ থাকছে ১৫০-২০০ টাকা।

কিছুদিন আগে চীনে চার বছরের ডিপ্লোমা করার সুযোগ পান বুলবুল। কিন্তু সেই সময় পাসপোর্ট-ভিসা করার মতো টাকা না থাকায় চীনে পড়তে যাওয়া হয়নি তার। তাই বিদেশে লেখাপড়া করতে যাওয়ার এমন কোনো সুযোগ এলে তা যেন টাকার অভাবে আগের মতো আর হাতছাড়া না হয়, সে জন্যই কফি শপের এ ব্যবসা শুরু করেন বুলবুল। নিজের জমানো টাকার সঙ্গে আরও কিছু টাকা ধারদেনা করে চলছে তার কফি শপের ব্যবসা। বুলবুলের স্বপ্ন, ভ্রাম্যমাণ কফি শপ থেকে টাকা জমিয়ে তিনি বিদেশে যাবেন কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে লেখাপড়া করতে।

লক্ষ্মীপুর গ্রামের জহুরুল নামের এক পথচারী বলেন, ‘ব্যবসার কাজে সপ্তাহে দুই-এক দিন গাইবান্ধা শহরে আসতে হয়। বিকেলের মধ্যে কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে পার্কে এসে বুলবুলের এক কাপ চা খেয়ে যাই।’ 

কলেজপাড়ার এনামুল হক বলেন, ‘বিকেলে পার্কে ঘুরতে এলে বুলবুলের কাছে এক কাপ চা খাই। তবে আমি জানতাম না, বুলবুল একজন শিক্ষার্থী। নিজের লেখাপড়ার খরচ সে নিজেই চালিয়ে নিচ্ছে।’

এদিকে ভ্রাম্যমাণ কফি শপের ব্যবসায় এসে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের প্রশংসা ও সহযোগিতা পাচ্ছেন বুলবুল। পার্কে যারা তার কফি খাচ্ছেন, তারাও বুলবুলের এ প্রচেষ্টার প্রশংসা করছেন। কলেজে অন্য শিক্ষার্থীরাও তাকে উৎসাহ দিচ্ছেন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বুলবুলের ঋণ নিয়ে কফি শপের ব্যবসা শুরুর কথা জানতে পেরে এক প্রবাসী বাংলাদেশি বুলবুলের সব ধারদেনাও পরিশোধ করে দিয়েছেন।

ধোবাউড়ায় খাবার পানির জন্য হাহাকার

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:২৮ এএম
আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫২ এএম
ধোবাউড়ায় খাবার পানির জন্য হাহাকার
ময়মনসিংহের সীমান্ত এলাকা ধোবাউড়ায় দেখা দিয়েছে খাবার পানির তীব্র সংকট। ফলে নদীনালা থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন গ্রামবাসী। ছবি: খবরের কাগজ

ময়মনসিংহের সীমান্ত এলাকা ধোবাউড়ায় দেখা দিয়েছে খাবার পানির তীব্র সংকট। উপজেলার মাইজপাড়া ও ঘোষগাঁও ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের মানুষ খাবার পানির জন্য হাহাকার করছে। পানি খেয়ে বেঁচে থাকতে তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি আর শুষ্ক মৌসুমে নদী-নালা, খাল-বিলের ওপর। এসব জেনেও নির্বিকার আছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষুব্ধ হলেও বাধ্য হয়ে অস্বাস্থ্যকর পানি খেতে হচ্ছে গ্রামবাসীকে।

সরেজমিনে উপজেলার মাইজপাড়া ও ঘোষগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এক বাড়িতে টিউবওয়েল থাকলেও আরেক বাড়িতে নেই। যে বাড়িতে টিউবওয়েল আছে, সেটা দিয়ে বের হচ্ছে ময়লাযুক্ত পানি। আবার কিছু টিউবওয়েলে পানিও বের হচ্ছে না। ফলে বাড়ির নারীরা গৃহস্থালি, গোসল ও খাওয়ার জন্য ছুটছেন নদীনালা, পুকুর কিংবা পাহাড়ি ছড়ার দিকে। পাহাড়ি ছড়ার বালু সরিয়ে গর্ত করে পানি সংগ্রহ করছেন অনেকে।

স্থানীয়রা জানান, এই উপজেলা ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেঁষা। বর্ষা মৌসুমে পাহাড় থেকে টপটপ করে ঝরনার পানি নিচে পড়ে। এই পানিই ভরসা অনেকের। পাহাড়ি ছড়ায় বালু সরিয়ে গর্ত করেও পানি সংগ্রহ করেন তারা। পানির সংকট দেখা দিলে সংগ্রহ করা হয় নদীনালা ও পুকুরের পানি। তবে বর্ষা মৌসুমে একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠে বৃষ্টির পানি। টিনের চালের সঙ্গে কলাপাতা ধরে সংগ্রহ বৃষ্টির পানি কলস ভর্তি করে রেখে তৃষ্ণা মেটান তারা। দক্ষিণ মাইজপাড়া ও ঘোষগাঁও ইউনিয়নের গিলগড়া, কাশিপুর, বাকপাড়া, শানখলা, পঞ্চনন্দপুর, গোলইভাংগা ও চন্দকোনাসহ ১০টি গ্রামের মানুষ বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার করছেন।

উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের গিলগড়া গ্রামের বাসিন্দা আতাহার আলী খবরের কাগজকে বলেন, ‘ময়লাযুক্ত পানির অভাব নেই। তবে দীর্ঘ বছর ধরে অভাব রয়েছে খাবার পানির। বাধ্য হয়ে নদীনালা, পুকুরের পানি কিংবা পাহাড়ি ছড়ার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এই পানি পান করে পেটের পীড়া ও চর্মসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। বিষয়টি জানার পরও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।’

ঘোষগাঁও ইউনিয়নের গোলইভাংগা গ্রামের লতিফা খাতুন বলেন, ‘নদনদীতে পশুপাখি ও মানুষের লাশ পড়ে পচে যায়। নলকূপ না থাকায় বাধ্য হয়ে সেই পানিই আমাদের খেতে হয়।’ হুমাইরা বেগম নামের আরেকজন বলেন, ‘খাওয়ার জন্য নিয়মিত পাহাড়ি ছড়ায় বালু সরিয়ে গর্ত করে পানি সংগ্রহ করি। তবে প্রচণ্ড গরমের কারণে এই পানিও এখন পাওয়া যাচ্ছে না। তাই পুকুর থেকে পানি নিচ্ছি। প্রত্যেকটি বাড়িতে গভীর নলকূপ স্থাপন করে দেওয়ার জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।’

ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া করা হবে।’ 

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ ছামিউল হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি ময়মনসিংহে নতুন যোগ দিয়েছি। ধোবাউড়ায় খাবার পানির সংকটে থাকা গ্রামগুলোতে শিগগিরই পরিদর্শনে যাব। যারা খাবার পানির অভাবে কষ্টে আছেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের নলকূপ স্থাপন করে দিতে চেষ্টা করব।’

৭৫ বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি ঐতিহাসিক খাপড়া ওয়ার্ড দিবসের

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৬ পিএম
৭৫ বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি ঐতিহাসিক খাপড়া ওয়ার্ড দিবসের
ছবি: খবরের কাগজ

ঐতিহাসিক ‘খাপড়া ওয়ার্ড শহিদ দিবস’ বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল)। ১৯৫০ সালের এই দিনে রাজশাহী কারাগারের খাপড়া ওয়ার্ডে আটক কমিউনিস্ট ও বামপন্থি রাজবন্দিদের ওপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল। সেই নৃশংস ঘটনায় সাতজন নিহত এবং ৩২ জন আহত হয়েছিলেন। সেই থেকে দিবসটি এই উপমহাদেশে ‘খাপড়া ওয়ার্ড হত্যা দিবস’ হিসেবে স্মরণ করা হয়। তবে কমিউনিস্ট ও বামপন্থি নেতারা দাবি জানিয়ে এলেও দীর্ঘ ৭৫ বছরে এই দিনটিকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। 

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর মুসলিম লীগের শাসকরা প্রথম এ দেশের কমিউনিস্ট ও বামপন্থি সমর্থক কৃষক, শ্রমিক ও ছাত্র সমাজকে আঘাত করেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলে বেশ কয়েকটি রক্তক্ষয়ী কৃষক আন্দোলন সংঘটিত হয়। রাজশাহী অঞ্চলে কমিউনিস্ট নেত্রী ইলা মিত্রের নেতৃত্বে তেভাগা আন্দোলন; ময়মনসিংহ অঞ্চলে কমিউনিস্ট নেতা মণি সিংহ এবং যশোর অঞ্চলে আবদুল হকের নেতৃত্বে কৃষক আন্দোলন সংঘটিত হয়। গোটা বাংলায় কৃষক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। 

পাকিস্তান আমলে কারাবন্দিদের ওপর প্রচণ্ড নির্যাতন চালানো হতো নানা অজুহাতে। তেলের ঘানি টানানো, গম মাড়াই-পেষাইসহ নানা কাজ করতে হতো বন্দিদের। এসব কাজে দেরি হলে তাদের ভয়াবহ নির্যাতন করা হতো। কারা কর্তৃপক্ষের এরকম দুর্ব্যবহারের পাশাপাশি নিম্নমানের খাবার সরবরাহ এবং কারাবিধান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সুযোগ না দেওয়ার প্রতিবাদে রাজবন্দিরা ১৯৫০ সালের ৫ এপ্রিল অনশন শুরু করেন। আইজি প্রিজন আমীরউদ্দিন ২৪ এপ্রিল ১২ জন রাজবন্দিদের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায় বসেন। ওই আলোচনায় মতবিরোধ দেখা দিলে তৎকালীন জেলার বিনা উসকানিতে পাগলা ঘণ্টা বাজিয়ে বন্দিদের ওপর গুলিবর্ষণের নির্দেশ দেন। পুলিশের নির্বিচার গুলিতে খাপড়া ওয়ার্ডের ৭ জন বন্দি নিহত এবং ৩২ জন আহত হন। নিহতরা হলেন, কমরেড বিজন সেন (রাজশাহী), কম্পরাম সিং (দিনাজপুর), আনোয়ার হোসেন (খুলনা), সুধীন ধর (রংপুর), হানিফ শেখ (কুষ্টিয়া), সুখেন ভট্টাচার্য (ময়মনসিংহ) ও দেলোয়ার হোসেন (কুষ্টিয়া)।
 
বৃহস্পতিবার দিবসটি উপলক্ষে রাজশাহীতে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। সিপিবি রাজশাহীর সভাপতি হুমায়ূন রেজা জেনু বলেন, ‘খাপড়া ওয়ার্ডের শহিদদের স্বপ্ন ছিল শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা। তাদের আত্মত্যাগ আমাদের অনেক বড় দায়িত্ব অর্পণ করে গেছে।’ আজ সকাল ১১টায় কারাগারের ভেতর শহিদদের বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে। পরে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
 
তিনি আরও বলেন, ‍‍‘খাপড়া ওয়ার্ডে দেশের প্রথম জেল হত্যার ঘটনা ঘটলেও দীর্ঘ ৭৫ বছরেও একে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।’ তিনি ২৪ এপ্রিলকে ‘জাতীয় শহিদ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা, পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং নিহত সাত বিপ্লবীকে জাতীয় শহিদ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান। 

এনায়েত করিম/মাহফুজ