
বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে জ্বলতে থাকা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ৩ কিলোমিটার দূরে মরা ভোলা নদী থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি নিয়ে আগুন নেভানো হয়। বনে আগুনের ওই এলাকায় মাঝে মধ্যে ধোঁয়া দেখা যায়। আগুনে এরই মধ্যে প্রায় ৪ একর বনভূমি পুড়ে গেছে।
রবিবার (২৩ মার্চ) সকালে সুন্দরবনের আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে বলে বন বিভাগ এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে সুন্দরবনে আগুনের ঘটনায় বন বিভাগ রবিবার ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ওই কমিটিকে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম জানান, গত শনিবার রাতভর বন বিভাগ এবং গ্রামবাসী মিলে আগুন নেভানোর কাজ করে। ভোলা নদী থেকে পানি নিয়ে তারা জ্বলতে থাকা আগুনে ছিটিয়েছে।
রবিবার (২৩ মার্চ) সকাল ৮টার দিকে তাদের সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর কাজে যুক্ত হয়। ৩ কিলোমিটার দূরে মরা ভোলা নদীতে পাইপ লাইন বসিয়ে পানি নিয়ে আগুন নেভানোর কাজ চলে।
ডিএফও কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম আরও জানান, রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বনে আগুন জ্বলতে দেখা যায়নি। তবে বিচ্ছিন্নভাবে মাঝে মধ্যে কোনো কোনো স্থানে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। ধোঁয়া দেখলে সঙ্গে সঙ্গে পাইপ দিয়ে সেখানে পানি ছিটানো হচ্ছে। আগুনে প্রায় চার একর বনের ক্ষতি হয়েছে।
ডিএফও কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিমের তথ্য মতে, ২০২৪ সালের ৪ মে সুন্দরবনে আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী সুন্দরবনের ২৪, ২৫ এবং ২৭ নম্বর কম্পারমেন্টাল এলাকায় মৌয়ালদের পাশ (অনুমতি) দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। এ বছর ১ এপ্রিল থেকে সুন্দরবনে মধু আহরণ মৌসুম শুরু হবে।
ডিএফও কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিমের ধারণা, মৌসুম শুরুর আগেই অবৈধ কোনো মৌয়াল সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারে। মৌয়ালের মশাল অথবা বিড়ি সিগারেটের অংশ থেকে সুন্দরবনে আগুন ধরতে পারে। এ ছাড়া আইনভঙ্গ করে কোনো কোনো রাখাল ভোলা নদী পারি দিয়ে তাদের গবাদি পশু নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। ওই রাখালদের ফেলে রাখা বিড়ি-সিগারেটের আগুন থেকেও সুন্দরবনে আগুনের ঘটনা ঘটতে পারে।
ডিএফও কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিমের তথ্য মতে, সুন্দরবনে আগুনের সূত্রপাত এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব জানতে ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) দ্বীপেন চন্দ্র দাসকে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা বিপুলেশ্বর চন্দ্র দাস এবং কলমতেজি টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম। কমিটির সদস্যদেরকে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ডিএফও।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) দ্বীপেন চন্দ্র দাস জানান, সুন্দরবনে যে স্থানে আগুন লেগেছে ওই এলাকার দেড় কিলোমিটার জুড়ে ফায়ার লেন কাটা হয়েছে। আগুন ফায়ার লেন অতিক্রম করতে পারেনি। গতকাল সকালের পর থেকে বন বিভাগের সদস্যরা একটানা আগুন নেভানোর কাজ চালিয়ে যায়। আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আগুনে কিছু বনের ক্ষতি হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত স্টেশন কর্মকর্তা আফতাব-ই আলম আরও জানান, বাগেরহাট, মোড়েলগঞ্জ এবং শরণখোলা ফায়ার স্টেশনের ৩টি ইউনিট, বন বিভাগ এবং গ্রামবাসী মিলে আগুন নেভানোর কাজ করা হয়। বন বিভাগের তদন্ত প্রতিবেদন পেলে আগুনের সূত্রপাত এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে বলে তিনি জানান।
ভারপ্রাপ্ত স্টেশন কর্মকর্তা আফতাব-ই আলমের তথ্য মতে, গতকাল সকালে সুন্দরবনের গুলিসাখালী এলাকায় আগুনের খবর শুনে ফায়ার ব্রিগেডের কিছু কর্মী সেখানে গিয়ে কাজ করে।
শনিবার সকাল ৭টার দিকে বাগেরহাটের শরণখোলার সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজি ক্যাম্পের টেপার বিল এলাকায় আগুন জ্বলতে দেখে বন বিভাগের সদস্যরা। এর পর আগুন নেভানোর কাজ শুরু করা হয়।
আগুন যাতে বনের মধ্যে ছড়াতে না পারে সে জন্য দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ফায়ার লেন কাটা হয়। সুন্দরবনে কাছাকাছি পানির উৎস না থাকায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়। এ নিয়ে ১৯ বছরে সুন্দরবনে ২৯ বার আগুনের ঘটনা ঘটেছে। গত ৪ মে সুন্দরবনে আগুনের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন সময়ে সুন্দরবনে আগুনে এ পর্যন্ত প্রায় ৮৫ একর বনভূমি পুড়ে গেছে। সূত্র: ইউএনবি