
সুন্দরবনে দুই জেলেকে অপহরণের পর বনদস্যুদের দাবি করা মুক্তিপণের টাকা পরিশোধ করা হলেও পাঁচ দিন পরও দুই জেলে এখনও বাড়িতে ফেরেনি।
গত সপ্তাহে সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে সুন্দরবনের ফিরিঙ্গি ও ডিঙিমারী এলাকা থেকে মফিজুর রহমান (৪৫) ও আব্দুর রহিম (২৮) নামে ওই দুই জেলে অপহরণের শিকার হন। তারা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগর গ্রামের মৃত নেছার শেখ ও আশরাফ আলী গাজীর ছেলে।
এদিকে মুক্তিপণ পরিশোধের পর পাঁচদিন পার হলেও অপহৃতরা স্বজনদের কাছে না ফেরায় উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে তাদের পরিবার।
অন্যদিকে, সুন্দরবনের আগুনজ্বালা এলাকা থেকে একই বাহিনীর হাতে অপহরণের শিকার রবিউল ইসলাম তিনদিন পর রবিবার (২৩ মার্চ) বাড়িতে ফিরেছেন বলে জানা গেছে।
জিম্মি দুই জেলের স্বজনসহ তাদের সহযোগী জেলেরা জানান, গত সপ্তাহে মাছ শিকারে যাওয়ার পর দুলাভাই বাহিনীর পরিচয়ে একদল জলদস্যু মফিজুর ও আব্দুর রহিমকে অপহরণ করে। পরবর্তীতে উভয়ের মুক্তিপণ বাবদ ৭৫ হাজার ( একজনের ৩৫ হাজার অন্য জনের ৪০ হাজার) টাকা দাবি করা হয়। একপর্যায়ে পাঁচদিন আগে জলদস্যুদের দাবি করা টাকা মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের মাধ্যমে পরিশোধের পরও জিম্মি দুই জেলেকে মুক্তি দেওয়া হয়নি।
ফিরে আসা জেলেরা জানায়, ৯ সদস্যের জলদস্যু দলটি নিজেদের ‘দুলাভাই বাহিনী’ হিসেবে দাবি করে। তবে ইতঃপূর্বে 'গাজী বাহিনী' পরিচয়দানকারী জলদস্যুদের আটজনকে নতুন পরিচয়ে দেখা গেছে। এসব জেলেদের দাবি দলনেতা পরিবর্তন করে একই দল নতুন বাহিনীর পরিচয়ে সুন্দরবনে দস্যুতা করছে।
ফিরে আসা জেলেদের দাবি, কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর এলাকার আবজাল ও তার শ্যালক একই উপজেলার রবিউল এই বাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছে। এসব দস্যুরা ২০১৮ সালে র্যাবের হাতে অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেও আবারও তারা সুন্দরবনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। উক্ত বাহিনীর ৯ সদস্যের প্রত্যেকে একটি করে অস্ত্র বহন করছে বলেও অপহৃত জেলেদের ফিরে আসা এসব সহযোগীরা নিশ্চিত করেছেন।
এসব বিষয়ে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. মশিউর রহমান জানান, অপহরণের শিকার জেলেদের স্বজনরা এসব বিষয় তাদের কাছ গোপন করে। বরং কাউকে কিছু না জানিয়ে জলদস্যুদের সঙ্গে আপোষ করে টাকার বিনিময়ে স্বজনদের ফিরে পাওয়ার চেষ্টা চালায়।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হুমায়ুন কবীর মোল্যা জানান, অপরাপর বাহিনীর সহায়তা ছাড়া সুন্দরবনের ভিতরে অভিযান চালানো দুরূহ ব্যাপার। অপহরণের শিকার জেলেদের স্বজনরা তাদের কাছে কোন ধরনের অভিযোগ করেনি। নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে তারা গোপন সমঝোতায় স্বজনদের মুক্তির চেষ্টা চলায় বলে তিনিও জানান।
সুলতান/মেহেদী/