ঢাকা ৫ বৈশাখ ১৪৩২, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫
English
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

পটুয়াখালীতে নদীভাঙনে বাড়ছে সম্পর্কের দূরত্ব

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ০৩:০৪ পিএম
পটুয়াখালীতে নদীভাঙনে বাড়ছে সম্পর্কের দূরত্ব
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের লোহালিয়া নদীর ভাঙনে ভিটেহারা হয়েছেন অনেক বাসিন্দা। ছবি: সংগৃহীত

‘ছোটবেলা থেকে নদীভাঙন দেখে আসছি। আমাদের ঘর কতবার ভেঙেছে, হিসাব নেই। এখন আর কোথায় যাব? জায়গা নেই, জমি নেই। সরকার যদি কিছু করে, তা হলে আমাদের একটু শান্তি হয়।’ লোহালিয়া নদীর ভাঙনের ভয়াবহতা বোঝাতে কথাগুলো বলছিলেন পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের ৬৫ বছর বয়সী বেগম জিবন্নেছা।

স্থানীয়রা জানান, এক শতাব্দী ধরে বারবার ভিটেমাটি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়ছে শত শত পরিবার। গত ১০০ বছরে অনেক পরিবারকে কমপক্ষে পাঁচ থেকে দশবার বসতবাড়ি স্থানান্তর করতে হয়েছে। ফলে শুধু দারিদ্র্যই নয়, বাড়ছে পারিবারিক ও সামাজিক দূরত্ব। এর প্রভাব পড়েছে শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে।

এবার শুষ্ক মৌসুমেও নদীভাঙনের শিকার হয়ে অন্তত ১০টি পরিবার বসতি হারিয়েছে। বর্ষা মৌসুম এলে এ দুর্ভোগ আরও তীব্র হয়। ২০০৭ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডরে এই বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রাণ হারিয়েছিলেন একই পরিবারের চারজনসহ ছয়জন। আজও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এ এলাকার হাজারো মানুষ। যেকোনো সময় আবারও বাঁধটি ভেঙে কেড়ে নিতে পারে প্রাণ। নদীভাঙনের শিকার এই চারটি গ্রামের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। যদি বেড়িবাঁধটি ভেঙে যায়, তা হলে রবিশস্য এবং মৌসুমি ফসলের ভয়াবহ ক্ষতি হবে। এতে শুধু কৃষকরাই নয়, পুরো এলাকার অর্থনৈতিক কাঠামো বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। পাশাপাশি নারী ও শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য, স্বাভাবিক বিকাশ এবং শিক্ষায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মরিয়ম ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবার নদী ভাঙলে আমাদের ঘরবাড়ি নদীতে ভেসে যায়। স্কুলেও যেতে পারি না। আমাদের নতুন জায়গায় যেতে হয়, নতুন স্কুলে ভর্তি হতে হয়। অনেক কষ্ট হয়।’

কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে নদীভাঙন রোধের জন্য দাবি জানিয়ে আসছি। নানা প্রতিশ্রুতি মিলেছে। কিন্তু এখনো টেকসই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

স্থানীয় মানবাধিকারকর্মী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘নদীভাঙনের কারণে এই জনপদ ভয়াবহ আর্থিক, সামাজিক ও মানবিক সংকটের সম্মুখীন হতে পারে। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে শত শত পরিবার চরম দুর্দশায় পড়বে। সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণই হতে পারে এ সমস্যার একমাত্র সমাধান।’

এ বিষয়ে পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন বলেন, ‘নদীভাঙন রোধে আমরা জরুরি কিছু উদ্যোগ নিতে পারি। তবে টেকসই সমাধানের জন্য বড় প্রকল্পের প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাওয়া গেলে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ করা সম্ভব।’

ভাড়া নির্ধারণের ভুয়া গণবিজ্ঞপ্তি নিয়ে চাঞ্চল্য

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১২ এএম
ভাড়া নির্ধারণের ভুয়া গণবিজ্ঞপ্তি নিয়ে চাঞ্চল্য
ছবি: সংগৃহীত

বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) এলাকায় থ্রি-হুইলারের ভাড়া নির্ধারণের একটি গণবিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর থাকা ওই বিজ্ঞপ্তিতে নগরীর ১৯টি রুটের ভাড়া উল্লেখ করা হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। যদিও ছড়িয়ে পড়া ওই গণবিজ্ঞপ্তি ভুয়া বলে দাবি করেছে বিসিসি কর্তৃপক্ষ। ওই গণবিজ্ঞপ্তি দেখে বিভ্রান্তিতে না পড়তে অনুরোধ করা হয়েছে।

ছড়িয়ে পড়া গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে, কিছু অসাধু হলুদ অটো ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। যাত্রীদের ন্যায্য ভাড়া নিশ্চিতের জন্য সিটি করপোরেশন থেকে রুটভিত্তিক ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হলো। সেখানে আরও উল্লেখ করা হয়, নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কেউ বেশি দাবি বা আদায় করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যদিও সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আহসান উদ্দিন রোমেল বলেছেন, ‘ভাড়া নির্ধারণের ছড়িয়ে পড়া গণবিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া। এমন কোনো সিদ্ধান্ত সিটি করপোরেশন নেয়নি। এ ছাড়া নোটিশে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার যে স্বাক্ষর রয়েছে, তাও ভুয়া। পাশাপাশি যেসব রুট উল্লেখ করা হয়েছে, এর মধ্যে অনেকগুলোর রুটের কোনো অস্তিত্ব নেই। কেউ হয়তো বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য এসব করেছে। নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ, ভুয়া গণবিজ্ঞপ্তি দেখে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়বেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘নোটিশটিতে দুই ধরনের ফন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। কোনো সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একটি নোটিশ, আদেশ কিংবা চিঠিতে দুই ধরনের ফন্ট ব্যবহার করা হয় না। এ ছাড়া যে স্মারক ব্যবহার করা হয়েছে, সেটিও বিসিসির নয়।’ 

এদিকে কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন রুটের ভাড়া নিয়ে ব্যাটারিচালিত হলুদ অটো ও সিএনজিচালকদের সঙ্গে সাধারণ যাত্রীদের বিভিন্ন সময় বচসা হতে দেখা গেছে। নগরীর ভাটিখানা এলাকার বাসিন্দা ভবেশ হালদার বলেন, ‘জেলখানার মোড় থেকে ভাটিখানার বাজার পর্যন্ত এসেছি। সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত পাঁচ টাকার জায়গায় চালক ১০ টাকা চেয়েছে। তাই তার সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে। পরে শুনেছি সিটি করপোরেশন এমন কোনো ভাড়া নির্ধারণ করেনি।’ 

লঞ্চঘাট থেকে নথুল্লাবাদ রুটের সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক রুহুল আমিন গাজী বলেন, দুই দিন ধরে যাত্রীদের কাছ থেকে বিসিসির নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ নিয়ে প্রায় বাগবিতণ্ডা হচ্ছে। পরে সিটি করপোরেশন থেকে জানতে পারি, তারা কোনো ভাড়া নির্ধারণ করেনি। 

রুপাতলি রুটের চালক শেখ সাদি বলেন, গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত জেলখানা-লঞ্চঘাট, লঞ্চঘাট-বেলস পার্ক ও মেডিকেল কলেজ, নথুল্লাবাদ-চকবাজার, চকবাজার-সদর রোড, বান্দ রোড-বেলস পার্ক, বেলস পার্ক-মেডিকেল কলেজ, মেডিকেল কলেজ-রুপাতলি, সদর রোড-লঞ্চঘাট নামে কোনো রুট নেই। লঞ্চঘাট-রুপাতলি এবং নথুল্লাবাদ রুটের মধ্যে কয়েকটি স্টেশন রয়েছে।  

বোরো ফসলের ক্ষতি ‘সোনালি স্বপ্ন ভেঙে গেছে’

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০৫ এএম
‘সোনালি স্বপ্ন ভেঙে গেছে’
মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘির হাওরপারের বিরাইমবাদ এলাকার কৃষকরা বোরো ফসল তুলে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। ছবি: খবরের কাগজ

‘বোরো ধানের প্রতিটি ছড়ায় পর্যাপ্ত ধান দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ধান কাটার পর দেখা মিলছে চিটা। প্রতি বিঘায় যেখানে ১৮ থেকে ২০ মণ ধান পাওয়ার কথা ছিল, সেখানে ৮ থেকে ১০ মণ ধান পাব। ভাগ্য খারাপ, আমন ফসলের ক্ষতি বোরো ফসলে পুষিয়ে নেব ভেবেছিলাম। কিন্তু এবার তাও হলো না। আমার সোনালি স্বপ্ন ভেঙে গেছে।’ 

আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন, মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘি হাওরপারের চাষি আহমদ মিয়া। টানা খরা ও অনাবৃষ্টিতে জেলার বিস্তীর্ণ হাওরের জমি শুকিয়ে যায়। ফলে ধানে পোকা ও চিটা দেখা দেয়। এ ছাড়া শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধান বাড়িতে তুলতে পারবেন কি না, তা নিয়েই শঙ্কায় আছেন হাওরপারের কৃষকরা। 

স্থানীয় চাষিরা জানান, ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় জেলায় আমন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। আমনের ক্ষতি পুষিয়ে বোরো মৌসুমে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ছিল অনেক চাষির। কিন্তু বোরো মৌসুমে অনাবৃষ্টি ও খরায় পোকা ধরে ধান চিটা হয়ে গেছে। আমনের পর বোরো ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে উঠতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। সংসারে টানাপোড়েন শুরু হবে। 

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার বড় তিনটি হাওর হাকালুকি, হাইলহাওর ও কাউয়াদীঘি ছাড়াও ছোট ছোট হাওর এবং উপরিভাগে এ বছর ৬২ হাজার ২৪০ হেক্টর  জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। 

৮ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেন রসুলপুর এলাকার চাষি আবদুর রকিব। প্রতি বিঘায় প্রায় ৭ হাজার টাকা খরচ হয়। তিনি বলেন, ‘প্রতি বিঘায় যেখানে ২০ মণ ধান পাওয়ার কথা ছিল, সেখানে ১০ মণ ধান পাব কি না সন্দেহ আছে। এখন ধারদেনা করে সংসার চালাতে হবে।’

পাড়াশিমইল গ্রামের চাষি মিজু আহমদ বলেন, ‘এবার আমাদের এলাকার অনেকেই আমন ধান ঘরে তুলতে পারেননি। বন্যায় সব তলিয়ে গিয়েছিল। বোরো ফসলই ভরসা ছিল, কিন্তু সেই বোরো ফসলেও পোকা ও চিটা হয়েছে। ১০ বিঘা জমি চাষ করি। খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা, এখন খরচ তোলাই দায়।’

বানেশ্রী এলাকার চাষি পরিমল বিশ্বাস জানান, টানা খরা ও অনাবৃষ্টিতে হাওরের জমি শুকিয়ে যায়। ফলে ধানে পোকা ও চিটা দেখা দেয়। যে পরিমাণ ধান পাওয়ার কথা, এখন তার ধান অর্ধেক পাবেন। 

মৌলভীবাজার সদর উপজেলা হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এ অঞ্চলে ২০২৪ সালের বন্যায় আমন ফসলে ব্যাপক ক্ষতি হয়। এখন শিলাবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ও পানির অভাবে বোরো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলো। হাওরের নদী-খাল খনন ও পানির উৎস থাকলে এ সমস্যার অনেকটা সমাধান হতো। কৃষকদের কৃষি ভর্তুকি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাই।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপপরিচালক জালাল উদ্দীন বলেন, ‘প্রকৃতির বিরূপ প্রভাবে কিছু জায়গায় বোরো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা করা হবে।’

চুয়াডাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০৩ এএম
চুয়াডাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২
ছবি: খবরের কাগজ

চুয়াডাঙ্গায় বাসের ধাক্কায় পাখিভ্যানের চালক ও এক যাত্রী নিহত হয়েছেন।

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সদর উপজেলার নয়মাইল বাজারে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আরও একজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

নিহতরা হলেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের পাখিভ্যানের চালক আব্দুর রাজ্জাক (৭০) ও মোহাম্মদজমা গ্রামের খান্দার পাড়ার সরোয়ার হোসেন (৭৫)।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শুক্রবার ভোরে পাখিভ্যানযোগে সরোজগঞ্জ বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন তারা। এ সময় একটি যাত্রীবাহী বাস ভ্যানটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ভ্যানচালক ও যাত্রী ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। পরে স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মরদেহ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদুর রহমান জানান, দুর্ঘটনায় দুজন নিহতের খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আইনগত বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। 

মিজানুর/সালমান/

কুমিল্লায় গ্রামীণ হাডুডু ও বলীখেলা

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০১ এএম
আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০২ এএম
কুমিল্লায় গ্রামীণ হাডুডু ও বলীখেলা
কুমিল্লা নগরীর টাউন হল মাঠে বিকেলে হাডুডু ও বলীখেলার আয়োজন করা হয়। ছবি: খবরের কাগজ

বাংলা নববর্ষ উদযাপনকে রাঙিয়ে তুলতে ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন করেছে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপি। ইট-কংক্রিটের দালানঘেরা শহুরে জীবনে প্রাণের স্পন্দন জাগাতে নগরীর প্রাণকেন্দ্র টাউন হল মাঠে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী হাডুডু ও বলীখেলার আয়োজন করা হয়। বৈশাখের তৃতীয় দিন গত বুধবার সন্ধ্যায় গ্রামীণ এসব খেলা দেখতে মাঠের চারপাশে ভিড় করেন উৎসুক জনতা। সন্ধ্যায় শুরু হওয়া খেলা চলে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। খেলা শুরু থেকে শেষ হওয়া পর্যন্ত মধ্যরাতেও টাউন হল মাঠে দর্শক ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। মাঠের চারপাশে উঁচু দালানে ঘেরা, খুব বেশি মানুষের বসার জায়গা নেই। এর পরও দাঁড়িয়ে থেকেই হাজারও দর্শক খেলা উপভোগ করেছেন। 

আয়োজনের শুরুতে বুধবার বিকেলে জেলা হাডুডু দলের খেলোয়াড়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও উপজেলা থেকে আসা খেলোয়াড়দের নিয়ে লাল ও সবুজ নামে দুটি দল করা হয়। দুই পর্বের খেলায় সবুজ দলকে ৮ পয়েন্টে হারায় লাল দল। টান টান উত্তেজনাপূর্ণ খেলায় দর্শকদের বেশিরভাগ ছিল স্কুল, কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। খেলার প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মুহূর্তগুলোতে করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো টাউন হল মাঠ। 

সবুজ দলের খেলোয়াড় তানভীর আহমেদ বলেন, ‘এর আগে আমরা কুমিল্লা স্টেডিয়ামের ইনডোরে হাডুডু খেলেছি। এবার নিজের শহরে উন্মুক্ত মাঠে হাডুডু খেলে খুবই ভালো লাগছে। খোলা মাঠে মানুষের সমর্থন থাকে অন্য রকম। দর্শকরা যেমন উপভোগ করেছেন, তেমনি খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের জন্যও ছিল উপভোগ্য।’ 

খেলা দেখতে আসা নগরীর কান্দিরপাড় এলাকার বস্ত্র ব্যবসায়ী নূর নবী বলেন, ‘ছোটবেলায় স্কুল-কলেজে হাডুডু খেলেছি। এর পর সময়ের অভাবে আর খেলাও হয়নি, দেখাও হয়নি। আজ আবার খেলা দেখে ভালো লাগল।’

বিকেলে হাডুডু খেলা শেষে সন্ধ্যার পরপরই শুরু হয় বলীখেলা। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের কুস্তি খেলা বলীখেলা নামে পরিচিত। ‘মামা-ভাগিনার বলীখেলা’ শিরোনামে ম্যাচগুলোতে অংশ নেন বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা খেলোয়াড়রা। ১০ মিনিটের প্রতিটি ম্যাচে যে বলী বিজয়ী হয়েছেন, তিনি পেয়েছেন অর্থ পুরস্কার।  পরাজিতরাও পুরস্কারের তালিকা থেকে বাদ যাননি। এবারের এই আয়োজনে যারাই অংশ নিয়েছেন, তারা সবাই পুরস্কৃত হয়েছেন। 

জেলা সদরের দক্ষিণ উপজেলার সোনাগাজী থেকে বলীখেলায় অংশ নেন মীর হোসেন জনি। তিনি বলেন, ‘এর আগে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বলীখেলায় অংশ নিয়েছি। শীতের সময় বিভিন্ন গ্রামে এ খেলা বেশি হয়। এবারে প্রথম শহরে এসে খেলছি। অনেক দর্শক দেখে ভালো লাগছে।’  

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘এর আগে চট্টগ্রামের বলীখেলার নাম শুনেছি। টেলিভিশনে-পত্রিকায় বলীখেলার খবর দেখেছি। এই প্রথম বলীখেলা সামনাসামনি দেখছি। এ ধরনের খেলা আয়োজন করলে ক্রীড়াপ্রেমীরা সব সময়ই আনন্দ পাবে।’

ব্যতিক্রমী এ আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাজি আমিন উর রশিদ ইয়াছিন। তিনি বলেন, ‘চর্চার মাধ্যমে এসব গ্রামীণ খেলা আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আশা করছি, এ আয়োজন দেখে শহরের মানুষ ও নতুন প্রজন্ম দেশি ঐতিহ্যের খেলাধুলায় আরও বেশি আগ্রহী হবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘কুমিল্লা অঞ্চলের কুস্তিগিরদের অনেক সুনাম রয়েছে। এবার বর্ষবরণ উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী এসব খেলা নগরবাসীকে মাতিয়ে রেখেছে। বিকেলে হাডুডু খেলার পর রাতে আয়োজন করা হয় বলীখেলার। সবাই মনভরে উপভোগ করেছেন। এটাই আমাদের প্রাপ্তি।’

ময়মনসিংহে বেড়েছে সবজি-মাছের দাম, কমেছে মুরগির

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৬ এএম
ময়মনসিংহে বেড়েছে সবজি-মাছের দাম, কমেছে মুরগির
ময়মনসিংহ শহরের মেছুয়া বাজারে কেনাবেচায় ব্যস্ত ক্রেতা-বিক্রেতারা। ছবি: খবরের কাগজ

ময়মনসিংহে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে বেশির ভাগ সবজির দাম। একই সঙ্গে বেড়েছে মাছের দামও। তবে কমেছে মুরগির দাম। ক্রেতারা জানান, বাজারে সবজি ও মাছের প্রচুর সরবরাহ থাকলে যৌক্তিক কারণ ছাড়াই বিক্রেতারা দাম বাড়িয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ময়মনসিংহ শহরের মেছুয়া বাজারে বিভিন্ন সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাউশ ও সিলভার কার্প মাছের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। অন্য মাছও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছিল। ক্রেতারা কিছুটা কম দামে পেতে এক দোকান থেকে আরেক দোকানে ছুটছেন। 

বিক্রেতারা জানান, গত সপ্তাহে চিচিঙ্গা ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবার বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা, পটোল ৪০ টাকার পরিবর্তে ৬০ টাকা, করলা ৫০ টাকার পরিবর্তে ৬০, টমেটো ২০ টাকার পরিবর্তে ৩০, লতা ৬০ টাকার পরিবর্তে ৭০, কাঁচা পেঁপে ৩০ টাকার পরিবর্তে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে অপরিবর্তিত ছিল মটরশুঁটি, বরবটি, বেগুন, সজনে শসা, গাজর, কাঁচা মরিচ ও মিষ্টি লাউয়ের দাম। কমেছে লেবুর দাম। গত সপ্তাহে লেবু ৩০ থেকে ৪০ টাকা হালি বিক্রি হলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা হালি। 

রুই ও কাতল মাছ আকারভেদে ২৫০ থেকে ৩৩০ টাকা, বাউশ (ক্রস, কালো রঙের) ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা, পাঙাশ ১৬০ থেকে ২১০, তেলাপিয়া ১৯০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়।

এদিকে ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত কমেছে মুরগির দাম। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকা, সাদা কক ২৯০ টাকার পরিবর্তে ২৬০ ও লাল কক ৩০০ টাকার পরিবর্তে ২৮০ টাকায় বিক্রি হয়। এ ছাড়া গরুর মাংস ৭৫০ ও খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। অপরিবর্তিত ছিল ডিমের দাম। মুরগির ডিম ৪০ ও হাঁসের ডিম ৭০ টাকা হালি বিক্রি হয়েছে। 

সবজি ও মাছ কিনতে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যারা বেসরকারি চাকরিজীবী, বছর ঘুরলেও বেতন বাড়ানো হয় না। অথচ বিভিন্ন অজুহাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন।’ 

দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সবজি বিক্রেতা ইদ্রিস আলী সরল স্বীকারোক্তি, ‘সব খুচরা বিক্রেতারা দাম বাড়িয়েছেন। তাই আমিও একই দামে বিক্রি করছি। তারপরও খুব বেশি লাভ হচ্ছে না।’

একই বাজারের আড়তদার জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘কোনো আড়তদার ইচ্ছামতো দামে মাছ বিক্রি করেন না। মাছ কেনার ক্ষেত্রে আমাদের বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। এজন্য খুচরা পর্যায়ে দাম কিছুটা বেড়েছে।’

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক আবদুস ছালাম বলেন, ‘বাজারগুলোতে অভিযান চালানো হবে। খুচরা বিক্রেতা ও আড়তদারদের মাছ কেনার রসিদ দেখা হবে। খুচরা পর্যায়ে যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া অতিরিক্ত দামে বিক্রির প্রমাণ মিললে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’