সাতক্ষীরার শ্যামনগরের কৈখালী সীমান্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে একদল জেলেকে মারধর করে নৌকা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সীমান্তবর্তী কৈখালীর কালিন্দি নদীর বয়ারসিং সংলগ্ন উলোখালীর চর এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। এসময় জেলেদের মারধর করে তাদের দু’টি নৌকা বিএসএফ সদস্যরা ছিনিয়ে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী জেলেরা।
হামলার সময় ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া জেলেরা সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে পায়ে হেঁটে লোকালয়ের উদ্দেশে রওনা হন বলে দাবি তাদের স্বজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির।
বিএসএফের হামলার শিকার জেলেরা হলেন- শ্যামনগর উপজেলার টেংরাখালী গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে রমজান আলী, শাহাজান আলী, ফরেজ গাজীর ছেলে শাহাদাৎ হোসেন, শাহাজান গাজী, আতাউর রহমান, সৈয়দ গাজীর ছেলে আব্দুল রহমান, মানিকপুর গ্রামের কেরামত আলী ও কৈখালীর নুর মোহাম্মদ।
ঘটনার শিকার শাহাদাৎ হোসেন জানান, পশ্চিম সুন্দরবনের কৈখালী ষ্টেশন থেকে পাস (অনুমতিপত্র) নিয়ে চারদিন আগে তারা সুন্দরবনে যান। তিনটি নৌকার ১২ জন জেলে দু’দিন ধরে বাংলাদেশের সীমানাভুক্ত উলোখালীর চরে পাটা জাল পেতে মাছ ধরছিলেন। একপর্যায়ে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে দু’টি স্পিডবোট নিয়ে বিএসএফ সদস্যরা আকস্মিকভাবে সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদের মারধর শুরু করেন।
তিনি আরও বলেন, এসময় তারা পেতে রাখা জাল ও সেখানে থাকা নৌকা ফেলে বনের মধ্যে ঢুকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে। এসময় জাল একইভাবে পাতা থাকলেও নৌকা দু’টি নিয়ে হামলার সঙ্গে জড়িত বিএসএফ সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। বর্ডার এলাকায় মাছ ধরতে যাওয়ার কারণে তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে বলে জানান এই জেলে।
স্থানীয় রমজাননগর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ লাল্টু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিএসএফের মারধরের শিকার আট জেলের মধ্যে ছয়জন তার এলাকার। বিএসএফ নৌকা নিয়ে উলোখালীর চর থেকে তাড়িয়ে দেওয়ায় তারা উপায়ন্তর না পেয়ে পায়ে হেঁটে বনের মধ্য দিয়ে ও নদী সাঁতরে লোকালয়ে ফিরছেন। ভারতীয় বিএসএফ অন্যায়ভাবে তাদের ওপর এ কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে দাবি এই জনপ্রতিনিধির।
পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন কৈখালী ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) আব্দুস সালাম বলেন, অনুমতিপত্র নিয়ে জেলেরা পাটা জাল দিয়ে মাছ ধরছিলেন। সেখান থেকে বিএসএফ দুইটি নৌকা নিয়ে গেছে বলে জানতে পেরেছি। জেলেদের অফিসে আসতে বলা হয়েছে। আসলে বিস্তারিত জানা যাবে।
এ বিষয়ে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. মশিউর রহমান জানান, এ বিষয়ে এখনো কেউ তাদের অবহিত করেনি। খোঁজখবর নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ঘটনায় বিজিবি কৈখালী ক্যাম্পের সুবেদার আবু বক্কার জানান, স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি বিষয়টি তাদের অবহিত করেছেন। ঘটনাটি বয়ারসিং এলাকার হওয়ায় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ জানাতে সেখানকার বিজিবি (রিভারাইন) ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, এ বিষয় নিয়ে সীমান্তবর্তী কৈখালী, রমজাননগর ও টেংরাখালী এলাকার কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারতীয় অবৈধ পণ্য চোরাচালানের অন্যতম রুটের একটি অংশ সীমান্তবর্তী কৈখালীর সুন্দরবনের ওই (কালিন্দি নদীর বয়ারসিং) এলাকা। কালিন্দি নদী পাড়ি দিয়ে মাদক, ভারতীয় গরু, ক্যান্সার প্রতিরোধক কেমোসহ ভারতীয় অবৈধ পণ্যের চালান এ রুট হয়ে দেশে ঢোকার পর সর্বত্র ছড়িয়ে যায়। এর আগে বিভিন্ন সময়ে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশের হাতে বড় বড় পণ্যের চালান ধরা পড়তো। তবে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে কখনো কখনো ছোট ছোট চালান ধরা পড়লেও বড় চালানের হদিস মিলছে না। কারণ মাদক ও চোরাকারবারীরা কৌশল পাল্টে ফেলেছে। তারা জেলেদের ছদ্মবেশে এসব পণ্য চোরাচালান করছে। কালিন্দি নদী ও সুন্দরবনে মাছ ধরার অজুহাতে মাদক ও চোরাকারবারীরা অবৈধভাবে ভারত থেকে ভারতীয় গরু, মাদক, ক্যান্সার প্রতিরোধক কেমোসহ বিভিন্ন ভারতীয় অবৈধ পণ্য বাংলাদেশ নিয়ে আসছে। এছাড়াও বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধ পথে ধুড় (মানুষ) ও বিভিন্ন পণ্য পার করছে।
সুলতান শাহাজান/মাহফুজ