
এ যেন ১৯৭১ সালে মত পরিস্থিতি সিলেটে। সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের ফটকের ভিতরে ও বাইরে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যদের নিরাপত্তাবলয়। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল নেতা-কর্মীরা মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পুলিশি বাঁধার সম্মুখীন হয়।
এদিকে পুলিশি বাঁধায় থেমে যাননি ছাত্র নেতারা। স্থানীয় জনতাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিবাদ করেন স্লোগানে স্লোগানে। এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হলে পুলিশ এক পর্যায়ে শহিদ মিনারের ফটক খুলে দেয়। পরে মঙ্গলবার রাত ১টায় পুলিশের বাঁধা অতিক্রম করে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে প্রথম পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা শাখার নেতারা। এর পরপরই পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল সিলেটের নেতা-কর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল সিলেটের নেতা-কর্মীরা সিলেট নগরের চৌহাট্টা এলাকায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে যান। তখন সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাদের শহিদ মিনারে প্রবেশ করতে নিষেধ করেন। পুলিশ সদস্যদের বাধার মুখে দুই সংগঠন নেতা-কর্মী এবং উপস্থিত জনতা শহিদ মিনারের ভেতরে ঢুকতে না দেওয়ার প্রতিবাদে ফটকের সামনে অবস্থান নেন এবং প্রতিবাদী স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় তারা ‘এই রাষ্ট্রের মালিক কারা, কৃষক শ্রমিক সর্বহারা’, ‘এই শহিদ মিনারের মালিক কারা, কৃষক শ্রমিক সর্বহারা’, ‘এই পুলিশের মালিক কারা, কৃষক শ্রমিক সর্বহারা’, ‘আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে আগুন জ্বালো একসাথে’ ‘জবাব চাই জবাব দে, নইলে তালা খুলে দে’ স্লোগান নিজেদের প্রতিবাদ জানান। শহিদ মিনারে প্রবেশ নিয়ে পুলিশ ও ছাত্র-জনতার মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হলে পুলিশ একপর্যায়ে তাদের পুষ্পস্তবক অর্পণ করার সুযোগ দেয়। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রসংগঠন দুটির নেতা-কর্মীরা বের হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদের সভাপতি মনীষা ওয়াহিদ খবরের কাগজকে বলেন, স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে আমরা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে শহিদ মিনারে গেলে শহিদ মিনারের গেটে আর্মি-পুলিশের বিশাল ব্যারিকেড দেখতে পাই। সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যরা আমাদের জানায়, রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা রয়েছে সূর্যোদয়ের আগে কেউ ফুল দিতে পারবেন না। এ সময় আমরা এ-সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা দেখতে চাইলে পুলিশ সদস্যরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলেন। তাই স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে শহিদ মিনার তালাবন্ধ করে রাখার প্রতিবাদে তাৎক্ষনিক স্লোগানে স্লোগানে আমরা প্রতিবাদ জানাই। উপস্থিত ছাত্র-জনতা শহিদ মিনারে এই ঘৃণ্য আমলাতান্ত্রিক সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে পুলিশ-প্রশাসন এক পর্যায়ে তালা খুলে দিতে বাধ্য হয়।
মনীষা ওয়াহিদ আরও বলেন, সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গণশত্রু দানবে পরিণত হয়েছে। নিরীহ শিক্ষক, ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকারী, বকেয়া মজুরির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিক থেকে শুরু করে শহিদ মিনারে ফুল দিতে যাওয়া ছাত্র সংগঠন কেউ এই ফ্যাসিস্ট দানবের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এই দানবের বিরুদ্ধে লাল ব্যারিকেড গড়ে তুলুন। স্বাধীনতা দিবসে যে পোশাক ফুল দিতে বাধা দেয় সেই পোশাককে জনগণের মুখোমুখি হইতেই হবে।
শাকিলা ববি/মাহফুজ