নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বারদীতে আধ্যাত্মিক সাধক লোকনাথ ব্রহ্মচারীর ১৩৫তম তিরোধান দিবস পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে আশ্রম ও এর আশেপাশের এলাকা ভক্তদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে।
মঙ্গলবার (৩ জুন) সকালে পুজা আর্চনার মধ্য দিয়ে তিরোধান দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
এর আগে গত দুই দিন ধরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে ভক্তরা আশ্রমে তিরোধান উৎসবে যোগ দিতে আসেন। মঙ্গলবার সকালে ঊষাকীর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর চলে পূজা-অর্চনা, গীতাপাঠ, কীর্তন, রাজভোগ, বাল্যভোগ ও প্রসাদ বিতরণ।
মঙ্গলবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকজনেরও সমাগমও বাড়ে। তিরোধান উৎসব উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় স্থানীয় প্রশাসন।
এদিকে তিরোধান উৎসব ঘিরে বারদী এলাকায় বসেছে ৫ দিনব্যাপী মেলা।
এলাকাবাসীর অভিযোগম, এ মেলায় কতিপয় লোক বিভিন্ন স্থানে জুয়ার আসর বসিয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে।
লোকনাথ ব্রহ্মচারী ১৭৩০ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশপরগনা জেলার বারাসাতের দে গঙ্গা থানার কচুয়া (কাঁকড়া) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা রামনারায়ণ ঘোষাল ও মা কমলা দেবী। লোকনাথ ছিলেন তাঁর মা-বাবার ছোট ছেলে। তিনি হিমালয়ে গিয়ে ৪০ বছর সাধনা করেন। তিনি আফগানিস্তানের কাবুলে আরবি ভাষা ও কোরআন শাস্ত্র শিক্ষা করে ইসলাম ধর্ম এবং এর দর্শন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন। লোকনাথের যখন ১০ বছর বয়স, তখনই তাকে সর্বশাস্ত্র পারদর্শী সন্ন্যাসী ভগবান গাঙ্গুলীর হাতে তুলে দেন বাবা রামনারায়ণ। মানবতাই মানুষের শ্রেষ্ঠ ধর্ম এ বাক্য অন্তরে লালন করে মানবজাতির কল্যাণে কাজ করে দীর্ঘ ২৬ বছর বারদী এলাকায় অবস্থান করেন মহাসাধক লোকনাথ ব্রহ্মচারী। ১৬০ বৎসর বয়সে ১৯ জৈষ্ঠ্য তারিখে বারদী আশ্রমে এ মহাসাধকের মহাপ্রয়াণ হয়।
এ উপলক্ষে লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম কর্তৃপক্ষ আয়োজন করেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা। এর মধ্যে প্রভাত কীর্তন, গীতাপাঠ, আলোচনা, বাল্যভোগ, রাজভোগ বিতরণ, ভক্তিমূলক গান, সন্ধ্যা আরতি, ফল প্রসাদ, জল প্রসাদ বিতরণসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান।
অন্যদিকে, উৎসবে আগতদের মধ্যে বিনামূল্যে শিশুখাদ্য, ওষুধ, চিকিৎসাসেবা, মিষ্টি, চিড়ামুড়ি, বাতাসা, পানি ও শরববত বিতরণ করে লোকনাথ সেবা সংঘ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, সীতা রাম সংঘ, শারদাঞ্জলি ফোরাম বাংলাদেশসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
বারদী লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব সাংবাদিক শংকর কুমার দে জানান, তিরোধান উৎসবে অংশ নিতে ভারত, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কা থেকেও বহু লোকনাথ ভক্ত বারদী আশ্রমে এসেছেন। তাদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজুর রহমান জানান, লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রমে আসা ভক্তদের নিরাপত্তায় পুলিশ সব সময় কাজ করেছে। আশ্রম এলাকায় সেনা, পুলিশ, র্যাব, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন ছিল। এ ছাড়াও আশ্রম এলাকায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে সিসি ক্যামেরার আওতায় ছিল। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
ইমরান হোসেন/অমিয়/