ঢাকা ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ফরিদপুরের বাস দুর্ঘটনায় আরও একজনের মৃত্যু

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:১৬ পিএম
আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৩৪ পিএম
ফরিদপুরের বাস দুর্ঘটনায় আরও একজনের মৃত্যু
ছবি: খবরের কাগজ

ফরিদপুর সদর উপজেলার বাখুন্ডায় বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যাওয়ার ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হলো সাত। এখনো আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন অনেক যাত্রী। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সকাল সোয়া ১১টার দিকে সদর উপজেলার বাখুন্ডা শরীফ জুটমিলের সামনে ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত সাতজনের নাম পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- নগরকান্দার শিয়ালকান্দি গ্রামের জোয়াত সরদার (৭০), তার সন্তান ইমন সরদার (২২), লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ফকির পাড়া গ্রামের আজিবর শেখ (৪৫), নগরকান্দার তালমা গ্রামের ভারতী সরকার (৪০), নগরকান্দার দিপা খান (৩৪), চর ভদ্রাসনের হাজিগঞ্জ এলাকার আলম শেখ (৪৫) ও ফজিরুন নেসা (৬৫)। 

বাসের যাত্রীরা জানান, বাসের মূল চালক না থাকায় হেলপার চালাচ্ছিলেন বাস। তিনি কিছুটা ঘুমন্ত ভাবে ছিল। আর এ কারণেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস নিয়ে উল্টে খাদে পড়ে যান।

উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে দ্রুত গিয়ে উদ্ধার কাজ চালানো হয়। বাসে প্রায় ৪০ জনের মতো যাত্রী ছিল। প্রায় সবাই আহত হয়েছে। পরে তাদের উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। 

এ বিষয়ে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান জানান, বাসটি উল্টে খাদে পড়ে ঘটনাস্থলে ৪০ জনের মতো আহত হয়েছেন। তাদেরকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক পাঁচজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় মোট সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি যারা রয়েছেন আহত তাদেরকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. দিলরুবা জেবা জানান, আমরা আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছি।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্লা নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ৩০-৩৫ হাজার টাকা দাফনের জন্য সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এছাড়া, এই দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি।

সঞ্জিব দাস/মেহেদী/অমিয়/

বাসাইলে সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা ও ২ ছেলে নিহত

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১১:০২ এএম
আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫, ১১:১২ এএম
বাসাইলে সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা ও ২ ছেলে নিহত
ছবি: খবরের কাগজ

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার করাতিপাড়ায় ট্রাকের সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। তারা সম্পর্কে বাবা-ছেলে। এতে আহত হয়েছেন আরও তিনজন।

মঙ্গলবার (৩ জুন) সকাল ৯টায় ঢাকা-টাঙ্গাইল যমুনা সেতু মহাসড়কের করাতিপাড়া বাইপাস এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। 

নিহতরা হলেন, শেরপুর সদর উপজেলার আমজাদ হোসেন ও তার দুই ছেলে আতুল ও অতুল।

বাসাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন দুর্ঘটনার বিষয়টি খবরের কাগজকে নিশ্চিত করেছেন।

ওসি বলেন, ঢাকা থেকে ঈদ উপলক্ষে তারা শেরপুরে বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পথে করটিয়া এলাকায় তারা নাস্তা করতে বিরতি দেন। এ সময় পেছন থেকে একটি ট্রাক মাক্রোবাসে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে আমজাদ হোসেন ও তার দুই ছেলে অতুল ও আতুল মারা যান।

মরদেহ উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।

জুয়েল রানা/অমিয়/

বায়েজিদ লিংক রোড়ের একপাশ বন্ধ পাঁচ দিন ধরে

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১০:২৫ এএম
বায়েজিদ লিংক রোড়ের একপাশ বন্ধ পাঁচ দিন ধরে
বায়েজিদ লিংক রোড়। খবরের কাগজ

পাহাড়ধসের আশঙ্কায় চট্টগ্রামের বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড় পাঁচ দিন ধরে একপাশ বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে ওই সড়কে থেমে থেমে যানজট হচ্ছে। উল্টো পথে গাড়ি চলায় দেখা দিয়েছে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কাও। তবে তেমন কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 

সোমবার (২ জুন) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বায়েজিদ লিংক রোড়ে এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটির সামনে ফৌজদারহাটমুখী লেনে কয়েকটি সিমেন্টের বার দেওয়া হয়েছে। সেখান অংশ থেকে স্পেক্টা কনস্ট্রাকশনের একটি রিসোর্ট সংলগ্ন ইউটার্ন পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে উভয় পাশের সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, ট্রাক, বাসসহ সব ধরনের যানবাহন একই লেন অর্থাৎ বায়েজিদমুখী লেন দিয়ে চলাচল করছে। ফলে রাতের বেলায় এক ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে মুখোমুখি সংঘর্ষের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। কেননা সেখানে পার্শ্ববর্তী ছিন্নমূল এলাকার শত শত সিএনজিচালিত অটোরিকশা উল্টো পথে চলাচল করে।

সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক আবদুল মালেক বলেন, ‘আমাদের অটোরিকশাগুলো পার্শ্ববর্তী এলাকা ছিন্নমূলে চলাচল করে। আমরা এক নম্বর এলাকা দিয়ে ছিন্নমূলের ভেতরের সড়কে চলে যাই। একপাশ দিয়ে উভয় লেনের গাড়ি চলাচল করায় আমাদের ঝুঁকি নিয়ে যেতে হচ্ছে। অনেক সময় রাতের বেলায় বড় গাড়ি বিকল হয়ে থাকে সড়কের ওপর। আবার অনেক বাইকার দ্রুতগতিতে গাড়ি চালান এই রোডে। কিছু দিন পরপর এখানে দুর্ঘটনা ঘটে।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী জসিম বলেন, ‘ছিন্নমূলের সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলো উল্টো পথে আসে। তারা যে সড়ক দিয়ে প্রবেশ করে, সেখানে কোনো ইউটার্ন রাখা হয়নি। এ জন্য তারা দূরের ইউটার্ন দিয়ে না এসে উল্টো পথে গাড়ি চালায়। যাত্রীরা বললেও শুনে না।’ এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে চালকরা কথা বলতে রাজি হননি।

সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদ বিন আনোয়ার বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে পাহাড়ধসের ঝুঁকি এড়াতে সড়কটির একপাশ পাঁচ দিন ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। বৃষ্টি থেমে গেলে খুলে দেওয়া হবে।’

ঈদের দিন বিকেলের মধ্যেই বর্জ্য পরিষ্কার হবে,চসিক মেয়র

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১০:১৯ এএম
ঈদের দিন বিকেলের মধ্যেই বর্জ্য পরিষ্কার হবে,চসিক মেয়র
ছবি: সংগৃহীত

ঈদুল আজহার দিন নগরীতে তৈরি হওয়া বর্জ্য ঈদের দিন বিকেল ৫টার মধ্যেই পরিষ্কার করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। 

সোমবার (২ জুন) দুপুরে চসিক কার্যালয়ে পরিচ্ছন্নতা বিভাগের সঙ্গে প্রস্তুতি সভায় মেয়র শাহাদাত হোসেন এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন। 

শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমাদের টার্গেট, ঈদের দিন ৫টার মধ্যে পুরো নগরী পরিষ্কার করে একটি পরিচ্ছন্ন শহরে রূপান্তর করা। আমরা ছয় থেকে আট ঘণ্টার মধ্যে, অর্থাৎ বিকেল ৫টার মধ্যে নগরী থেকে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করব। এ লক্ষ্যে আমাদের প্রায় ৪ হাজার ২০০ কর্মী কাজ করবেন। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ৩৬৯টি গাড়ি বর্জ্য অপসারণে কাজ করবে। বর্জ্য অপসারণের জন্য ডাম্প ট্রাক, কম্পেক্টর, পে-লোডার কাজ করবে। রক্ত পরিষ্কার করার জন্য পানির ভাউজার থাকবে। কোনো কর্মী অসুস্থ হলে জরুরি চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল টিম প্রস্তুত থাকবে।’

মেয়র আরও বলেন, ‘কোরবানির চামড়া নির্দিষ্ট জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে। নগরীর বাইরের চামড়া নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নগরীতে ঢুকতে পারবে না।’ নগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, ‘পশু জবাইয়ের আগে পানি পান করানো, জবাইয়ের জায়গায় পরিষ্কার রাখা এবং রক্ত-পানি ড্রেনে পড়ে না যায়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।’

এ ছাড়া নগর ভবনের দামপাড়ায় একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কন্ট্রোল রুম) খোলা থাকবে, যেখান থেকে সার্বক্ষণিক নজরদারি চালানো হবে। দুটি হটলাইন নম্বর ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ অভিযোগ বা পরামর্শ জানাতে পারবেন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহি, উপপ্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা প্রমুখ।

প্লাস্টিক দৈত্য-দানব হয়ে ফিরে আসছে

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১০:০৬ এএম
প্লাস্টিক দৈত্য-দানব হয়ে ফিরে আসছে
খবরের কাগজ

প্লাস্টিক মানুষের জন্য দৈত্য-দানব হয়ে ফিরে আসছে বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। 

সোমবার ( ২ জুন) ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ উপলক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তারা। 

‘প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় টেকসই উদ্ভাবন: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শিরোনামে সেমিনারে বক্তারা আরও বলেন, ‘ধীরে ধীরে প্লাস্টিক মানবজীবনকে গ্রাস করে ফেলছে। মরণব্যাধি ক্যানসারসহ জটিল সব রোগ নিয়ে ধরা দেবে আমাদেরই ছুড়ে ফেলা প্লাস্টিক। তাই ছোট থেকে বড় সবাইকে সচেতন হয়ে এগিয়ে আসতে হবে প্লাস্টিকের ব্যবহার রোধে। বিশেষ করে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। আমরা এগুলো বর্জন করতে না পারলে সামনে অনিশ্চিত, অনিরাপদ এক ভবিষ্যৎ উঁকি দিচ্ছে।’ 

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) নুরুল্লাহ নূরী। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক সোনিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে এতে আরও উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক জমির উদ্দিন।

মাটির গন্ধে বেড়ে ওঠা জীবন

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০৯:৩৬ এএম
আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫, ০৯:৪২ এএম
মাটির গন্ধে বেড়ে ওঠা জীবন
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার নিজমেহার গ্রামের পালপাড়ায় ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। খবরের কাগজ

একসময় চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার নিজমেহার গ্রামের পালপাড়া ও রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের প্রসন্নপুর পালপাড়া ছিল মৃৎশিল্পের জীবন্ত নিদর্শন। ঘরের কোণে কোণে মাটির কলস, হাঁড়ি-পাতিল, প্রদীপ, খেলনা, সবখানেই ছিল মাটির ছোঁয়া। আজ সেই শিল্পের আলো নিভু নিভু প্রায়। কিন্তু হার মানেননি কিছু সংগ্রামী শিল্পী। এখনো এই প্রাচীন ঐতিহ্য আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, নিজমেহার গ্রামের মনি রানী পাল (৪৬) প্রায় তিন দশক ধরে রেখেছেন মৃৎশিল্পের এই প্রাচীন পেশা। একই গ্রামের সুভাষ পাল (৬৬) ও কুমেশ্বর পাল (৬৮) অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত আছেন। তারা শুধু কাজই করছেন না, এককভাবে বহন করছেন একটি সংস্কৃতির উত্তরাধিকার।

একই পাড়ার আরও ২০টি পরিবার, যাদের মধ্যে আছেন দুলাল পাল, নেপালী রানী পাল, মঞ্জু রানী পাল ও শেফালী পাল। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও তারা ধরে রেখেছেন পূর্বপুরুষের এই ঐতিহ্যবাহী পেশা। অথচ একসময় এই পাড়ার প্রায় ৩০০টি পরিবার মাটিরসামগ্রী তৈরি ও বিপণনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল।

মৃৎশিল্পী সুভাষ পাল বলেন, ‘জন্ম থেকেই যেন মাটির গন্ধ লেগে আছে শরীরে। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে থেকে কাজ শিখেছি, কাঁধে করে মাটির হাঁড়ি-বাটি নিয়ে বিক্রি করেছি ধান, চাল বা টাকার বিনিময়ে।’ তিনি জানান, বাঁশঝাড় থেকে সংগ্রহ করা হতো কাঁচামাল। কখনো হেঁটে, কখনো ভ্যানে করে ঘুরে বেড়াতেন গ্রামে গ্রামে। পরে রহিমানগর ও ঠাকুরবাজারে দোকান দেন। কিন্তু এখন আর মৃৎপণ্য তৈরি না করে কুমিল্লার বিজয়পুর ও হাজীগঞ্জ বাজার থেকে মাল এনে বিক্রি করছেন তিনি। তার একমাত্র ছেলে সঞ্জয় পাল থাকেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে।

আরেক মৃৎশিল্পী কুমেশ্বর পাল বলেন, ‘বরিশাল থেকে সামগ্রী এনে হাটে বিক্রি করি। হাটের দিনে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা আয় হলেও, অন্য দিনগুলোতে দুই-চার শ টাকাও রোজগার হয় না।’

এদিকে মনি রানী পাল এখনো নিজের হাতে মাটির সামগ্রী বানান, আগুনে পোড়ান, বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেন। কিন্তু এঁটেল মাটির অভাব ও কাঁচামালের দাম বাড়ায় এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে তার। অর্থাভাবে বাজারের চাহিদা পূরণ করাও কঠিন হয়েছে পড়েছে।

পালপাড়ার উচ্চশিক্ষিত যুবক গণেশ পাল বলেন, ‘একসময় ৩০০ পরিবারের মধ্যে ১৫/২০টি পরিবার এখনো মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত আছে। তবে সব কিছু বাড়ায় তারা চাপে পড়েছেন। নতুন প্রজন্ম এ পেশার ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।’

শাহরাস্তি মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এই ঐতিহ্য বাঁচাতে হলে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী, বাজারজাতকরণসহ নানা উদ্যোগ নিতে হবে।’ 

শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. মঈনুল ইসলাম কাজল বলেন, ‘আজ মানুষ প্লাস্টিক, মেলামাইন, স্টিলের দিকে ঝুঁকছে। ফলে এই শিল্প চরম সংকটে পড়েছে। একে টিকিয়ে রাখতে হলে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’

বিশেষজ্ঞদের অভিমত ও জিজ্ঞাসা, এই শিল্প শুধু মাটি নয়, এই শিল্পে গাঁথা আছে বাংলার আত্মা, ইতিহাস, সংস্কৃতি। যত দিন এই পরিবারগুলো টিকে থাকবে, ততদিন শাহরাস্তির মাটিতে মৃৎশিল্পের আলো জ্বলবে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এই আলো জ্বালিয়ে রাখার দায়িত্ব কি কেবল ওদেরই?