কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার আইএফআইসি ব্যাংকের ৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশ হাতে পেয়েছে। সোমবার (২ জুন) সকালে ব্যাংক এবং আশপাশের দোকান থেকে ঘটনার সময়ের ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনের মতোই রবিবার (১ জুন) ব্যাংকের নিয়মিত কার্যক্রম চলছিল। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে আইএফআইসি ব্যাংকের উপশাখাতে রবিবার দুপুর ১টার দিকে ব্যাংকের ম্যানেজার সৌমিক জামান খান-সহ ছয়জন হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ছয়জনকে বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেলে পাঠানো হয়।
এই ঘটনার পর থেকে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। রবিবার দুপুর সাড়ে ১২ টা থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সময়ের ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দুপুর ১টার কিছু সময় আগে ব্যাংকে কয়েকজন গ্রাহক আসে এবং কিছুক্ষণ পর কাজ শেষে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে যান। এরপর বেশ কিছুক্ষণ সময় ব্যাংকে কোনো গ্রাহক প্রবেশ করেন নি। গ্রাহকশূন্য ব্যাংকে হঠাৎ হিসাব বিভাগে কর্মরত হোসনা রহমান ব্যাংকের দ্বিতীয় তলার মেঝেতে পড়ে যান এবং বমি করতে থাকেন। এরপর এক এক করে পাঁচজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী ব্যাংকের মেঝেতে পরে যান। এদের পাঁচ জনের মধ্যে দুই নারী কর্মকর্তা ছিলেন। কেউ কেউ অর্ধ অচেতন অবস্থায় ব্যাংক থেকে বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক সৌমিক জামান খান-সহ দু’জন চেয়ার ছেড়ে উঠতে পারেননি। তাদেরকেও হঠাৎ বমি করতে দেখা গেছে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, আইএফআইসি ব্যাংকের নিরাপত্তা কর্মী কামাল হোসেন অন্যদের থেকে তুলনামূলক সুস্থ ছিলেন। ধীরে ধীরে তিনি ক্যাশ কাউন্টারের দিকে এগিয়ে যান এবং টেলিফোন ধরার চেষ্টা করেন। টেলিফোন ধরতে গিয়ে তিনি ব্যাংক কাউন্টারের কাচের গ্লাস ভেঙে ফেলেন কিন্তু টেলিফোন ধরতে সফল হননি। এমন অবস্থায় একজন গ্রাহক ব্যাংকে প্রবেশ করলে কামাল হোসেন ওই গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। ওই গ্রাহক তাৎক্ষণিক নিচে নেমে যান। এরপর ভবনের অন্য আরেক নিরাপত্তা কর্মী জুয়েল মিয়া এসে অন্যদের সহযোগিতায় অসুস্থ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের বাইরে বের করে আনেন।
ভৈরব-কুলিয়ারচর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. নাজমুস সাকিব সিসিটিভি ফুটেজের এসব তথ্য সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে পুলিশ প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে যে, ঘটনাটি নাশকতা কিংবা ডাকাতির কোনো ঘটনা নয়। ব্যাংকের ভল্ট ও ক্যাশবাক্স থেকে কোনো টাকা-পয়সা এদিক সেদিক হয়নি। সবকিছু অক্ষত অবস্থায় থাকতে দেখা গেছে।
তবে পুলিশের সন্দেহ জেনারেটরকে ঘিরে। একটি বন্ধ ঘরে জেনারেটর রাখা ছিল। দুর্ঘটনার দিন বিদ্যুৎ না থাকায় সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত দীর্ঘ চার ঘণ্টা জেনারেটর চালু ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, একটানা বেশি সময় ধরে জেনারেটর চালু রাখার ফলেই সেই বন্ধ রুম থেকে বিষাক্ত গ্যাস নিঃসরণ হয়ে থাকতে পারে।
তিনি আরও জানান, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। খাবারের সঙ্গে কোনো চেতনানাশক ছিল কি না তা সিআইডি খতিয়ে দেখছে। জেনারেটরের ঘরের গ্যাস থেকে বিষক্রিয়া বা গ্যাসের ধরন কী তা নিয়ে ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে।
কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, অসুস্থ হয়ে যাওয়া ছয় জনের সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই মোটামুটি সুস্থ হয়ে ওঠছেন। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থল থেকে খাবার, পানি, চা ও বমির নমুনা সংগ্রহ করেছে। পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে অজ্ঞান হওয়ার কারণ।
ঘটনার পরপরই ব্যাংকে কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এরপর বাজিতপুর মূল শাখা থেকে কর্মকর্তারা এসে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ নেন। সোমবার সারাদিন বিকল্প কর্মকর্তা কর্মচারী দিয়ে ব্যাংকের কার্যক্রম চালু করা হয়। কুলিয়ারচর থানা সড়কের হাবিব কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় আইএফআইসি ব্যাংকের উপশাখাটি অবস্থিত।
তাসলিমা আক্তার মিতু/মাহফুজ