ছবি: খবরের কাগজ
চাঁপাইনবাবগঞ্জে জায়গা জমির ভাগ না দেওয়ায় মাজেদ বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তির দাফন কাজে বাধা দিয়েছেন তার স্ত্রী হামফুল বেগম। পরে বাড়ির সামনে ফ্রিজিং গাড়িতে মরদেহ রেখে গ্রাম্য সালিশে সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে ২৪ ঘণ্টা পর মরদেহ দাফন করা হয়।
সোমবার উপজেলার সুন্দরপুর ইউপির বড় মরাপাগলা গ্রামে মৃত ব্যক্তির দুই পুলিশ সদস্য ছেলের বিরুদ্ধে সৎমা ও বোনদের বঞ্চিত করে বাবার সম্পত্তি নিজেদের নামে রেজিস্ট্রি করিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদে এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুন্দরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান।
ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, 'দীর্ঘদিন আগে মাজেদ বিশ্বাসের প্রথম স্ত্রী মারা যান। প্রথম স্ত্রীর ১০জন সন্তান ছিল। এর মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। জীবিত সাত সন্তানের মধ্যে চার মেয়ে ও তিন ছেলে। বছর বিশেক আগে হামফুল বেগম নামে এক নারীকে বিয়ে করেন তিনি। এ সংসারে কোনো সন্তান হয়নি। হামফুল মাজেদের ছোট শিশুসন্তানদের আদরযত্নে বড় করেন। মাজেদের দুই ছেলে লতিফুর রহমান ও আবদুল জাব্বার পুলিশে চাকরি করেন। মাস ছয়েক আগে মাজেদ বিশ্বাস অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হলে লতিফুর ও জাব্বার চিকিৎসার কথা বলে বাবাকে অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়ে সম্পত্তি নিজেদের ও এক ভাতিজার নামে লিখিয়ে নেন। পরে গত ১৬ এপ্রিল মাজেদ বিশ্বাসের নামে একটি তালাকনামা উকিল নোটিশের মাধ্যমে হামফুল বেগমের কাছে পাঠানো হয়। হামফুল সেটি গ্রহণ না করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দিলে আগামী ৫ মে গ্রাম্য সালিশের দিন নির্ধারণ হয়।'
হামফুল বেগম বলেন, '২০ বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়। সংসারে এসে আমার সৎ ছেলেগুলোকে মানুষ করি। এখন তারা সরকারি চাকরি করে, ভালোভাবে জীবনযাপন করছে। কিছুদিন আগে ছেলেরা প্রায় ১০ লাখ টাকার গাছ বিক্রি করেছে, তাও কিছু বলিনি। তার পরে ছেলেরা আমার স্বামীকে হঠাৎ করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে জোড় করে তাদের নামে মাটি লিখে নিয়েছে। আমার স্বামীর হুঁশ না থাকা অবস্থায় আমাকে তালাক দিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি আমার স্বামী তালাক দেবে না। এটা ছেলেরা করিয়েছে। তাই আমি ন্যায়বিচার চাই।'
এ বিষয়ে দুই ছেলে লতিফুর রহমান ও জাব্বারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
সুন্দরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, মানবিক কারণে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অধিকার বঞ্চিত মহিলার পাশে দাঁড়িয়েছে। তবে তার সৎ ছেলেরা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। কিন্তু গ্রামবাসী ন্যায়বিচার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান অভিযুক্ত দুই ছেলের পুলিশে চাকরির কথা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ঘটনা শুনে টিম পাঠিয়েছিলাম। সালিশে মীমাংসা হয়ে লাশ দাফনের কথা জেনেছি।’
আসাদুল্লাহ/মেহেদী/