
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে সপ্তাহে দুই দিন (মঙ্গলবার ও বুধবার) দলিল রেজিস্ট্রেশন করা হয়ে থাকে। এই অফিসে আবাসিক ভূমি রেজিস্ট্রেশনের করতে প্রতি শতকে ১ হাজার টাকা, নকল তোলতে প্রতি দলিলে ১ হাজার টাকা ঘুষ প্রদান করা হচ্ছে ওপেন সিক্রেট। এছাড়া যদি কোনো জমির কাগজপত্রে সমস্যা থাকে তাহলে মোটা অঙ্কের ঘুষ প্রদান না করলে কোনো কাজই হয় না। জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে ঘুষ নেওয়া নিয়মে রূপান্তরিত করেছিলেন গোয়াইনঘাটের সাব রেজিস্টার মাসুদ পারভেজ।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট অভিযানে তারই প্রমাণ পাওয়া গেছে।
দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জুয়েল মজুমদারের নেতৃত্বে কোর্ট পরিদর্শক মো. জাহিদুল ইসলাম এবং উপসহকারী পরিচালক নিঝুম রায় প্রান্তর সমন্বয়ে এই এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। এই অভিযানে গোয়াইনঘাট উপজেলা সাব-রেজিস্টারের কার্যালয়ে দলিল রেজিস্ট্রেশন, তল্লাশি, নকল উত্তোলনসহ অন্যান্য কাজে সেবা প্রার্থীদের হয়রানি এবং ঘুষ দাবিসহ নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
অভিযান পরিচালনাকালে দলিল লেখক মো. নাসির উদ্দিন, মো. আব্দুল হান্নান, মো. জালালউদ্দিনসহ প্রায় ২০ জনের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়। তারা তাদের বক্তব্যে বলেন, গোয়াইনঘাটে আবাসিক ভূমি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে প্রতি শতকে ১ হাজার টাকা, নকল তোলার ক্ষেত্রে প্রতি দলিলে ১ হাজার টাকা ঘুষ প্রদান করতে হয়। যদি কোনো জমির কাগজপত্র সম্পর্কিত সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের ঘুষ প্রদান করতে হয়। উক্ত কাজগুলো সাব রেজিস্টার মাসুদ পারভেজের নির্দেশে মোহরার মো. আব্দুল মালেক ও দালাল সবুজ আহমদ সম্পন্ন করে থাকেন।
অভিযানকালে নলজুরি গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী মো আব্দুল হান্নান জানান, তার একটি দলিল সম্পন্ন করার জন্য তিনি গোয়াইনঘাট সাব রেজিস্টার অফিসের নকল নবীশ মনি দাসের মাধ্যমে দালাল সবুজ আহমদকে ৪০ হাজার টাকা প্রদান করেন। এ ব্যাপারে এনফোর্সমেন্ট টিম মনি দাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি লিখিতভাবে জানান যে, সাব-রেজিস্টার মাসুদ পারভেজ এবং তার পার্সোনাল এজেন্ট সবুজ আহমদ পরস্পর যোগসাজশে প্রতিটি দলিলে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে। তারা ঘুষ ছাড়া রেজিস্ট্রেশন ও কোনো কাজই করেন না। পাশাপাশি সবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।
প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জুয়েল মজুমদার।
শাকিলা ববি/মাহফুজ