
চট্টগ্রামে তেলবাহী জাহাজের চালক মোস্তফা কামালকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ তুলে হালিশহর থানায় মামলা করা হয়েছে।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) মোস্তফা কামালের বড় ভাই রফিক উদ্দিন এ মামলা করেন। তার দাবি, নিজের ভাতিজাকে ‘ইঞ্জিনচালক’ পদে বসাতে মোস্তফা কামালকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন ওই জাহাজের মাস্টার রমজান আলী খোকন।
মোস্তফা কামাল তেলবাহী জাহাজ এমটি মার্কেন্টাইল ট্যাংকারের ইনচার্জ ড্রাইভার ছিলেন।
পুলিশ ও লাইটার জাহাজ শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্র জানায়, গত ২৪ এপ্রিল রাতে তেলবাহী জাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে খুলনার উদ্দেশে রওনা দেয়। এরপর ২৭ এপ্রিল সকালে হালিশহর এলাকায় সাগর থেকে ওই জাহাজের চালক মোস্তফা কামালের লাশ উদ্ধার করে কোস্টগার্ড। এ ঘটনায় হালিশহর থানায় মামলা হয়েছে। তবে মামলার তদন্ত করছে সদরঘাট নৌ থানা-পুলিশ।
বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সিনিয়র সহসভাপতি নবী আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘জাহাজের ইঞ্জিনচালক থাকেন ভেতরে। সেখান থেকে তার লাফ দেওয়ার সুযোগ নেই। মাস্টার রমজান আলী খোকন ও তার সহযোগীরা নিজ এলাকা হাতিয়ায় অর্থাৎ সুবিধামতো জায়গায় গিয়ে চালক নিখোঁজের ঘোষণা দিয়েছেন।’
নবী আলম আরও বলেন, ‘হাতিয়ায় কেউ সাগরে পড়ে মারা গেলে তার লাশ যাবে লক্ষ্মীপুরের রামগতির দিকে। সেই লাশ কখনোই চট্টগ্রামে দিকে আসবে না। লাশটি সাগরে পড়েছে কমপক্ষে তিন দিন আগে। যে কারণে লাশ ফুলে বিকৃত হয়ে গেছে। চামড়া ওঠে গেছে। এসব লক্ষণ দেখে আমরা বুঝতে পারছি, চালককে চট্টগ্রামেই হত্যা করা হয়েছে। পরে তারা চট্টগ্রামেই লাশ ফেলে দিয়েছে। মূলত রমজান তার ভাতিজাকে প্রধান চালক পদে বসাতেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।’
এ বিষয়ে মোস্তফা কামালের বড় ভাই মাস্টার রফিক উদ্দিন বলেন, ‘আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। কারণ জাহাজে এমন কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি যে, চালক সাগরে পড়ে যাবে।’
আমি নিজেও জাহাজের একজন মাস্টার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চালকরা জুতা ছাড়া রুম থেকে বের হন না। আমার ভাইয়ের কেবিনে জুতা পড়ে আছে। ওই জাহাজে যে ১০-১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন, তার বেশির ভাগই মাস্টারের আত্মীয়-স্বজন। তারা চান না ওই জাহাজে তাদের বাইরে কেউ কাজ করুক। মোস্তফা কামাল কিছুদিন আগে বিষয়টি আমার সঙ্গে শেয়ার করেছে। তখন আমি তাকে অন্য জাহাজে চাকরি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। চাকরি নেওয়ার আগেই তাকে হত্যা করা হলো। মামলার পর রমজানসহ ছয়জনকে হাতিয়া পুলিশ আটক করেছে। নৌ-পুলিশ তাদের আনতে গেছে।’
হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, ‘মামলার তদন্ত করছে সদরঘাট নৌ থানা-পুলিশ।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদরঘাট নৌ-থানার সাব ইন্সপেক্টর কামাল উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। লাশ ফুলে চামড়া ওঠে গেছে, তাই আঘাতের চিহ্ন ছিল কি ছিল না, তা বুঝার উপায় নেই। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের পর আসল তথ্য জানা যাবে। তবে নিহতের পরিবার এবং জাহাজ শ্রমিকরা যে সন্দেহ করছেন, তা উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।’