ময়মনসিংহ নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন খাল খনন, পরিষ্কার ও ড্রেন নির্মাণকাজে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে সিটি করপোরেশন। অথচ প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই নগরে পানি জমে যায়। নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ডুবে যাওয়াসহ বাসাবাড়িতে পানি উঠে পড়ে। তখন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। কিন্তু চলতি বছর বর্ষা মৌসুমের আগে সিটি করপোরেশন জানিয়েছিল, এবার জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। নগরে এবার জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা কম। কিন্তু এরই মধ্যে দেখা গেল উল্টো চিত্র।
গত রবিবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ময়মনসিংহে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। মাত্র তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর সানকিপাড়া, আকুয়া, গোলকিবাড়ী, বলাশপুর, খাগডহর, চরপাড়া, ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড, বদরের মোড়, ধোপাখলা, কাশর মসজিদের মোড়, জেলখানা রোড, আনন্দ মোহন কলেজ ও ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ওইদিন বিকেল পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নগরবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে দেখা যায়।
তখন স্থানীয়রা জানান, নোংরা ও ময়লাযুক্ত পানিতে বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে গেছে। আবাসিক বাসাবাড়ি, দোকানপাট, কাঁচাবাজার ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ময়লাযুক্ত পানি ঢুকে পড়েছে। এতে তারা তখন চরম ভোগান্তিতে পড়েন। তারা জানান, সারা বছর নগরীর বিভিন্ন সড়কে ড্রেনের উন্নয়নকাজ করা হয়। প্রতিবছর খালও পরিষ্কার করা হয়। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ড্রেন নির্মাণসহ খাল খনন ও পরিষ্কারকাজে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছেন সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অথচ তা কোনো কাজেই আসছে না। মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে গেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের নামে মোটা অঙ্কের টাকা হরিলুট করা হয়েছে। ফলে প্রতিবছর কার্যক্রম চললেও ফলাফল শূন্য।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) সূত্রে জানা যায়, সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য ২০২০ সালে বিশেষ প্রকল্প হিসেবে ৮৬টি প্যাকেজে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এখনো শতভাগ কাজ শেষ হয়নি। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীর বিভিন্ন খাল খনন ও পরিষ্কারে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৫ লাখ ১৬ হাজার ৮৫০ টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৪ লাখ ৮৫ হাজার ৮৪০ টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬০ লাখ ৩০ হাজার এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয় করেছে সিটি করপোরেশন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে খাল খনন, পরিষ্কার ও ড্রেন নির্মাণকাজ এখনো চলমান।
নগরীর আকুয়া এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘রবিবার মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এমন চিত্র দেখেই বোঝা যায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া কার্যক্রম ব্যর্থ হয়েছে। যদি জলাবদ্ধতাই থাকে, তাহলে কোটি কোটি টাকা খরচ করার কারণ কি?’
তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের ২০ মে সকাল পৌনে ১০টা থেকে ময়মনসিংহে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়। মাত্র ৪৫ মিনিটের এই বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। কিছুক্ষণের বৃষ্টিতে নগরবাসীর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। টানা কয়েকদিন বৃষ্টিপাত হলে চরম জলাবদ্ধতায় নগরবাসীকে মাত্রাতিরিক্ত ভোগান্তি পোহাতে হবে।’
গোলকিবাড়ী এলাকার বাসিন্দা নাজমুল হক বলেন, ‘বিগত কয়েকবছরে জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীর বিভিন্ন খাল খনন ও ড্রেন নির্মাণে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অথচ আমরা জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাচ্ছি না। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।’
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, ‘নগরীতে অনেকগুলো ড্রেনের পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। আবার নতুন করে ১২০ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ হচ্ছে। এগুলো শেষ হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুমনা আল মজীদ বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে আমাদের চেষ্টার কমতি নেই। প্রয়োজনীয় কাজের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসীর ভোগান্তি নিরসনের চেষ্টা চলছে। তবে নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে। ড্রেনে ডাবের খোসা, চিপসের প্যাকেট ও পলিথিন ফেলা যাবে না। এতে অনেক সময় ড্রেন দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে না পেরে পানি রাস্তায় উঠে পড়ে।’