
মে মাসের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলায় বইছে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ। চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড হয়েছে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। ঠাকুরগাঁওয়েও বইছে মাঝারি তাপপ্রবাহ। এতে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। দিনমজুর ও শ্রমিক শ্রেণির পাশাপাশি স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা বেশি বিপাকে পড়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্য বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কমে আসবে।
চুয়াডাঙ্গা
চুয়াডাঙ্গায় টানা পাঁচ দিন ধরে তীব্র তাপপ্রবাহ বইছে। গতকাল রবিবার বেলা ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন গত শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসও রেকর্ড করা হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায়। যা এ মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। সকাল থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের বাড়ে উত্তাপ।
এ পরিস্থিতিতে রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল কমে গেছে। দিনমজুর, রিকশাচালকসহ শ্রমজীবীরা কাজ করতে না পেরে অলস সময় কাটান। চুয়াডাঙ্গা ভালাইপুর মোড় এলাকার কৃষক আবদুল গফুর বলেন, ‘সকাল থেকেই প্রচণ্ড রোদ। খোলা মাঠে কাজ করা যাচ্ছে না। রোদে মাথা ফেটে যাওয়ার মতো অবস্থা।’ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত তুহিন হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন সকালেই মোটরসাইকেল নিয়ে বের হই। সারা দিন রোদে ঘুরতে হয়। গত কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড রোদ, এতে অসুস্থ হয়ে পড়েছি।’
চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশন এলাকায় সত্তরোর্ধ্ব কুদরত বলেন, ‘৭০ বছরের জীবনে এত গরম দেখিনি। আগে গরম পড়লে গাছের ছায়ায় বসতাম, বাতাসও ছিল মন জুড়ানো। এখন চারদিকে শুধু বড় বড় বিল্ডিং, গাছগাছালি নেই, বাতাসও আসে না।’
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় টানা পাঁচ দিন ধরে তাপপ্রবাহ বইছে। গতকাল বেলা ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল মাত্র ২৬ শতাংশ। আজ বা আগামীকালের মধ্যে তাপমাত্রা কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঠাকুরগাঁও
এদিকে উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে দ্বিতীয় দফায় মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। প্রতিদিন তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রির আশপাশে থাকছে। এই তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বিপদে পড়েছেন খেটে খাওয়া দিনমজুর শ্রেণির মানুষ। কাজের খোঁজে বের হলেও প্রচণ্ড রোদের কারণে ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না।
রিকশাচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আগে দিনে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা আয় হতো। এখন সকাল ১১টার পর মানুষ রাস্তায়ই থাকে না। দুপুরের পর তো একদমই যাত্রী পাই না। এই গরমে শরীরও চলছে না।’ রাজমিস্ত্রি কামাল হোসেন বলেন, ‘গরমে মাথা ঘোরে, চোখে ঝাপসা দেখি। গায়ে পানি ঢেলে কাজ করছি।’
তবে এই অবস্থায় কিছু ব্যবসায়ীর মুখে হাসি ফুটেছে। ঠাণ্ডা পানীয়, ডাব, তরমুজ, আখের রস বিক্রি বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। ডাব বিক্রেতা সেলিম মিয়া জানান, এখন দিনে ৫০ থেকে ৬০টি ডাব বিক্রি হচ্ছে, আগের তুলনায় দ্বিগুণ। আখের রস বিক্রেতা মামুন বলেন, যত গরম, তত ক্রেতা। দুপুরের পর তো সামাল দিতেই কষ্ট হয়। রস ঠাণ্ডা রাখতে ফ্রিজ চালাতে হচ্ছে সারা দিন।
অনেকে তীব্র গরম সহ্য করতে না পেরে ছুটে যাচ্ছেন নদীতে বা পুকুরে। একটু স্বস্তি খোঁজে টাঙ্গন নদীতে দল বেঁধে গোসল করতে দেখা গেছে। নদীতে গোসল করা কিশোর আল আমিন বলেন, ‘বাসায় ঠিকমতো ফ্যান চলে না। তাই বিকেলে আমরা সবাই নদীতে চলে আসি।’
তাপপ্রবাহে স্কুলপড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সে জন্য অনেক অভিভাবক বাধ্য হয়ে সন্তানদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। অভিভাবক তানিয়া বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলে গিয়ে মাথা ব্যথা করে, বমি করে। তাই গত দুই দিন ধরে স্কুলে পাঠাচ্ছি না।’
রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে বর্তমানে মাঝারি তাপপ্রবাহ চলছে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। তবে আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কমে যাবে।