ঢাকা ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গাইবান্ধায় একসঙ্গে ৬ ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫, ০৯:০৯ এএম
গাইবান্ধায় একসঙ্গে ৬ ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় বুধবার (২১ মে) গ্রেপ্তার হওয়া ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান   খবরের কাগজ

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

বুধবার (২১ মে) দুপুরে উপজেলা চত্বর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা সবাই আওয়ামী লীগের  রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

আটক ব্যক্তিরা হলেন ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল রানা সালু, উড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান কামাল পাশা, গজারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান খোরশেস আলম খুশু, ফুলছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান, এরেন্ডাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান, ফজলুপুর ইউপি চেয়ারম্যান আনছার আলী মণ্ডল। 

এ বিষয়ে ফুলছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, “তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে রাষ্ট্রকে অচল করার পরিকল্পনা করে আসছিলেন তারা। তাই ‘ডেভিল হান্ট অভিযানের’ অংশ হিসেবে তাদের আটক করা হয়েছে। পরে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।”

চাঁদপুরে মাটির গন্ধে বেড়ে ওঠা জীবন

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০৯:৩৬ এএম
চাঁদপুরে মাটির গন্ধে বেড়ে ওঠা জীবন
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার নিজমেহার গ্রামের পালপাড়ায় ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। খবরের কাগজ

একসময় চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার নিজমেহার গ্রামের পালপাড়া ও রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের প্রসন্নপুর পালপাড়া ছিল মৃৎশিল্পের জীবন্ত নিদর্শন। ঘরের কোণে কোণে মাটির কলস, হাঁড়ি-পাতিল, প্রদীপ, খেলনা, সবখানেই ছিল মাটির ছোঁয়া। আজ সেই শিল্পের আলো নিভু নিভু প্রায়। কিন্তু হার মানেননি কিছু সংগ্রামী শিল্পী। এখনো এই প্রাচীন ঐতিহ্য আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, নিজমেহার গ্রামের মনি রানী পাল (৪৬) প্রায় তিন দশক ধরে রেখেছেন মৃৎশিল্পের এই প্রাচীন পেশা। একই গ্রামের সুভাষ পাল (৬৬) ও কুমেশ্বর পাল (৬৮) অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত আছেন। তারা শুধু কাজই করছেন না, এককভাবে বহন করছেন একটি সংস্কৃতির উত্তরাধিকার।

একই পাড়ার আরও ২০টি পরিবার, যাদের মধ্যে আছেন দুলাল পাল, নেপালী রানী পাল, মঞ্জু রানী পাল ও শেফালী পাল। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও তারা ধরে রেখেছেন পূর্বপুরুষের এই ঐতিহ্যবাহী পেশা। অথচ একসময় এই পাড়ার প্রায় ৩০০টি পরিবার মাটিরসামগ্রী তৈরি ও বিপণনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল।

মৃৎশিল্পী সুভাষ পাল বলেন, ‘জন্ম থেকেই যেন মাটির গন্ধ লেগে আছে শরীরে। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে থেকে কাজ শিখেছি, কাঁধে করে মাটির হাঁড়ি-বাটি নিয়ে বিক্রি করেছি ধান, চাল বা টাকার বিনিময়ে।’ তিনি জানান, বাঁশঝাড় থেকে সংগ্রহ করা হতো কাঁচামাল। কখনো হেঁটে, কখনো ভ্যানে করে ঘুরে বেড়াতেন গ্রামে গ্রামে। পরে রহিমানগর ও ঠাকুরবাজারে দোকান দেন। কিন্তু এখন আর মৃৎপণ্য তৈরি না করে কুমিল্লার বিজয়পুর ও হাজীগঞ্জ বাজার থেকে মাল এনে বিক্রি করছেন তিনি। তার একমাত্র ছেলে সঞ্জয় পাল থাকেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে।

আরেক মৃৎশিল্পী কুমেশ্বর পাল বলেন, ‘বরিশাল থেকে সামগ্রী এনে হাটে বিক্রি করি। হাটের দিনে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা আয় হলেও, অন্য দিনগুলোতে দুই-চার শ টাকাও রোজগার হয় না।’

এদিকে মনি রানী পাল এখনো নিজের হাতে মাটির সামগ্রী বানান, আগুনে পোড়ান, বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেন। কিন্তু এঁটেল মাটির অভাব ও কাঁচামালের দাম বাড়ায় এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে তার। অর্থাভাবে বাজারের চাহিদা পূরণ করাও কঠিন হয়েছে পড়েছে।

পালপাড়ার উচ্চশিক্ষিত যুবক গণেশ পাল বলেন, ‘একসময় ৩০০ পরিবারের মধ্যে ১৫/২০টি পরিবার এখনো মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত আছে। তবে সব কিছু বাড়ায় তারা চাপে পড়েছেন। নতুন প্রজন্ম এ পেশার ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।’

শাহরাস্তি মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এই ঐতিহ্য বাঁচাতে হলে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী, বাজারজাতকরণসহ নানা উদ্যোগ নিতে হবে।’ 

শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. মঈনুল ইসলাম কাজল বলেন, ‘আজ মানুষ প্লাস্টিক, মেলামাইন, স্টিলের দিকে ঝুঁকছে। ফলে এই শিল্প চরম সংকটে পড়েছে। একে টিকিয়ে রাখতে হলে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’

বিশেষজ্ঞদের অভিমত ও জিজ্ঞাসা, এই শিল্প শুধু মাটি নয়, এই শিল্পে গাঁথা আছে বাংলার আত্মা, ইতিহাস, সংস্কৃতি। যত দিন এই পরিবারগুলো টিকে থাকবে, ততদিন শাহরাস্তির মাটিতে মৃৎশিল্পের আলো জ্বলবে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এই আলো জ্বালিয়ে রাখার দায়িত্ব কি কেবল ওদেরই?

চুয়াডাঙ্গায় গ্রেপ্তারের ১৮ ঘণ্টা পর আসামির মৃত্যু

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০৯:১৬ এএম
আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫, ০৯:১৬ এএম
চুয়াডাঙ্গায় গ্রেপ্তারের ১৮ ঘণ্টা পর আসামির মৃত্যু
ছবি: সংগৃহীত

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার কুড়ালগাছি পশ্চিমপাড়া এলাকার বাসিন্দা মহিরুল ইসলাম (৪০)। মাদকের একটি মামলায় রবিবার (১ জুন) বেলা ১১টায় তাকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে দর্শনা থানা পুলিশ। 

এরপর তাকে আদালতে মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। রাত ২টার দিকে তিনি সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২টা ২৫ মিনিটে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৫টা ৪০ মিনিটে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। হাসপাতাল থেকে বলা হয়, সম্ভবত তিনি ‘স্ট্রোক করে’ মারা যেতে পারেন। তবে মহিরুলের স্বজনদের দাবি, ‘পুলিশের নির্যাতনে তিনি মারা গেছেন।’

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের একটি মাদক মামলায় মহিরুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। গত রবিবার বেলা ১১টার দিকে দর্শনা থানা পুলিশের সদস্যরা তাকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। এরপর দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাকে চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

কারাগার কর্তৃপক্ষ জানায়, রবিবার রাত ১টা ৫৫ মিনিটে মহিরুল হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত ২টা ২৫ মিনিটে তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।

এদিকে, মহিরুলের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তোলা হয়েছে। নিহতের ভাই সুবার আলী খবরের কাগজের কাছে দাবি করেন, ‘গ্রেপ্তারের সময় তার (মহিরুল) শরীরে কোনো আঘাত ছিল না। কিন্তু মৃত্যুর পর হাতে স্পষ্ট আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশই মারধর করে আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে।’

মহিরুলের ভাতিজি কাজল রেখা বলেন, ‘সাদা পোশাকের দুই পুলিশ সদস্য হঠাৎ ঘরে ঢুকে মহিরুলকে মারধর করে তুলে নিয়ে যায়।’ ভাতিজা মো. গাফ্ফারের অভিযোগ, ‘গ্রেপ্তারের সময় আমি ওয়ারেন্ট দেখানোর অনুরোধ করেছিলাম। তখন আমাকে হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি হেনস্তা করা হয়।’

সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. রকিব সাদী বলেন, ‘কারাগার থেকে আনার সময় মহিরুল অচেতন ছিলেন। তার অবস্থা গুরুতর ছিল। সম্ভবত স্ট্রোকজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে।’ দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদ তিতুমীর বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর দ্রুত তাকে আদালতে হাজির করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। প্রহারের কোনো সুযোগ ছিল না, এমন কোনো ঘটনাও ঘটেনি।’

এদিকে সোমবার (২ জুন) দুপুর ১২টায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সুরতহাল শেষে লাশ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ময়মনসিংহে কৃষককে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয় আমগাছে

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০৯:০৬ এএম
ময়মনসিংহে কৃষককে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয় আমগাছে
ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের নান্দাইলে এক কৃষককে হত্যার পর লাশ আমগাছে ঝুলিয়ে রাখে দুর্বৃত্তরা। রক্তাক্ত অবস্থায় ঝুলন্ত লাশটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। 

সোমবার (২ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলার খারুয়া ইউনিয়নের চর মহেশকুর গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

নিহত মো. সুজন মিয়া (২৮) কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার চর জামাইল গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে। তিনি কৃষিকাজ করতেন।

বিষয়টি খবরের কাগজকে নিশ্চিত করেছেন নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন। 

তিনি বলেন, ‘রবিবার (১ জুন) রাতের যেকোনো সময় সুজন মিয়াকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। এরপর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় লাশটি চরমহেশকুর গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশে নিয়ে এসে আমগাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখা হয়। সোমবার বেলা ১১টার দিকে ঝুলন্ত লাশটি দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেয় স্থানীয়রা। পরে দুপুর দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।’

ওসি আরও বলেন, ‘নিহত সুজন মিয়ার মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হত্যার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা প্রক্রিয়াধীন।’

কুমিল্লায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চার স্কুলের মাঠে পশুর হাট

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০৮:৫৬ এএম
কুমিল্লায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চার স্কুলের মাঠে পশুর হাট
ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার চান্দিনায় চার স্কুলের মাঠে পশুর হাট বসিয়েছেন ইজারাদাররা। এ কারণে ওই স্কুলগুলোতে ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হওয়ার আগের দিন পাঠদান সম্ভব হয়নি। মাঠ ছাপিয়ে বিদ্যালয় ভবনের বারান্দায়ও গরু-ছাগল বেঁধে রাখা হয়। 

সোমবার (২ জুন ) উপজেলার দোল্লাই নবাবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাদুটি উচ্চবিদ্যালয়, শ্রীমন্তপুর উচ্চবিদ্যালয়, ধেরেয়া সরকারি প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ে এ চিত্র দেখা গেছে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলা বছরের শুরুতে উপজেলার চারটি স্থায়ী পশুর হাট ইজারা দেয় প্রশাসন। এর মধ্যে প্রতিবছরের মতো উপজেলার দোল্লাই নবাবপুর পশুর হাটটি ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু ঈদের আগ মুহূর্তে সেই পশুর হাট নিয়ে আসা হয় দোল্লাই নবাবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে। এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসন এবারও ২১টি অস্থায়ী পশুর হাট ইজারা দেয়। এর মধ্যে শ্রীমন্তপুর পশুর হাট বসে শ্রীমন্তপুর উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে, কাদুটি পশুর হাট বসে কাদুটি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে ও ধেরেয়া পশুর হাট বসে ধেরেয়া সরকারি প্রাথমিক ও উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে। উপজেলা প্রশাসন ওইসব পশুর হাট নির্ধারিত বাজারে ইজারা দিলেও ইজারাদাররা তাদের সুবিধার্থে স্কুলের মাঠে হাট বসান। বিদ্যালয়ের মাঠে পশুর হাট বসায় একদিকে যেমন ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান, অপরদিকে বিদ্যালয়ের মাঠ কর্দমাক্ত হয়ে খেলাধুলার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

দোল্লাই নবাবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘বাজারের নির্ধারিত জায়গা থাকলেও প্রতিবছর স্কুলমাঠেই বসে পশুর হাট। সোমবার সকালে বৃষ্টি হওয়ায় গরু-ছাগল নিয়ে স্কুলের বারান্দায় চলে আসেন বিক্রেতারা। বারান্দায় বসানো হয়েছে ক্যাশ কাউন্টার। গত বছরগুলোতে আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনেক বার বলেছি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ বছর কাউকে কিছুই বলিনি।’ 

কাদুটি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বছরের পর বছর এভাবেই চলছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয় সোমবার খোলা ছিল। এর মধ্যে গরুর হাটের কার্যক্রম ও চলছে।’

দোল্লাই নবাবপুর বাজারের ইজারাদার মো. শাহজাহান সাজু বলেন, ‘পশুর হাটের নির্ধারিত স্থানে জায়গা অনেক কম। এ কারণে অনেক বছর ধরে স্কুলের মাঠেই পশুর হাট বসে। এবারও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে হাট চালাচ্ছি।’

শ্রীমন্তপুর গরুর হাটের ইজারাদার জাকির হোসেন বলেন, ‘স্কুলের মাঠের বেশির ভাগ অংশই খাস জমি। আমরা ইজারা নিয়ে সেই খাস জায়গায় গরুর হাট বসিয়েছি।’

চান্দিনা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল হক বলেন, ‘কোনো স্কুলের মাঠেই পশুর হাট বসানোর অনুমতি দিইনি। সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনে উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। যারাই স্কুল মাঠে বাজার বসিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সিরাজগঞ্জে নির্মাণের ১ মাসেই সড়ক বেহাল

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০৮:৪৭ এএম
সিরাজগঞ্জে নির্মাণের ১ মাসেই সড়ক বেহাল
এক মাসে আগে বানানো সড়কটি এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বিরইল এলাকা থেকে তোলা। খবরের কাগজ

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি আঞ্চলিক সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্মাণের এক মাস না যেতেই সড়কটির বিভিন্ন জায়গায় গর্ত ও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে এই সড়কের স্থায়িত্ব নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এক মাস আগে বানানো এই সড়কের একাংশের কাজ হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে। এতে রাস্তার কাজ শেষ হতে না হতেই সামান্য বৃষ্টিতে সড়কের বিভিন্ন জায়গা ধসে পড়েছে। আবার কোনো কোনো জায়গায় পানি জমে খানাখন্দ ও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রতিদিন হাজারো যানবাহন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে। খানাখন্দের মধ্যে পড়ে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে এলজিইডির কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করা হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

জানা গেছে, উপজেলা এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী তারিকুল ইসলাম খান এ কাজের তদারকির দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, তিনি ঠিকাদারের সঙ্গে আঁতাত করায় রাস্তার কাজ মানসম্মত হয়নি। এর আগেও উপজেলার একটি সেতু নির্মাণ ও হাটের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। তাই বিতর্কিত কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে একজন সৎ ও দক্ষ প্রকৌশলীকে এ কাজের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য দাবি করেছেন এলাকাবাসী।

তাড়াশ এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাবনা ও বগুড়া গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কাজটি করার সিদ্ধান্ত হয়। ২ কোটি ৩২ লাখ ৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ১ হাজার ৮০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটির কাজ শুরু হয়। কাজের ব্যাপ্তি ছিল উপজেলার হামকুড়িয়া-নওগাঁ আঞ্চলিক সড়কের হামকুড়িয়া ওয়াপদা বাঁধ থেকে বিরইল জামে মসজিদ পর্যন্ত। কাজ পায় মেসার্স ভাবী কনস্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তারা ফিরোজ হোসেন নামে এক ঠিকাদারের কাছে কাজটি বিক্রি করে দেয়। কাজের মেয়াদ ছিল ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি মাত্র ২৬ শতাংশ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা নির্মাণে মাটিমিশ্রিত বালু ব্যবহারের কারণে সামান্য বৃষ্টিতে তা ধুয়ে খোয়া বের হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও রাস্তা ভেঙে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ সৃষ্টি হওয়ার যানবাহন চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে।

মহেষরৌহালী গ্রামের বাসিন্দা সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘রাস্তায় যে বালু ও খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো খুবই নিম্নমানের। রাস্তায় কোনো সাইনবোর্ড নেই। কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে কখনো কাজ পরিদর্শনে আসতে দেখা যায়নি। যে উচ্চতায় রাস্তাটি করা হচ্ছে, বর্ষায় নিশ্চিত পানি উঠে রাস্তাটি ভেঙে যাবে। ঠিকাদার কাজ ফেলে চলে গেছেন। আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’

মহেষরৌহালী গ্রামের আরেক বাসিন্দা আরমান আলী বলেন, ‘রাস্তার কাজ খুবই খারাপ হচ্ছে। রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। কারণ যেভাবে রাস্তাটি হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না। নির্মাণকাজে ব্যবহার হওয়া বালুগুলো মূলত মাটিমিশ্রিত। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় এ রাস্তা বেশিদিন টিকবে না।’

ওই এলাকার বাসিন্দা এরশাদ আলী বলেন, ‘এখানে সঠিক নিয়মে কাজ হয়নি। ২ নম্বর ইট দেওয়া হয়েছে। অর্ধেক বালি ও অর্ধেক খোয়া দেওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। বালিতে মাটি মেশানো হয়েছে। ফলে বৃষ্টির পানিতে সব ধুয়ে যাচ্ছে।’ একই অভিযোগ তোলেন ওই এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম, সবুজ আলী, জয়নাল হোসেন, হোসেন আলীসহ একাধিক বাসিন্দা।

ইজিবাইকচালক রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তায় বৃষ্টির পানি জমে গর্ত হওয়ার কারণে গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায় না। আমাদের অনেক কষ্ট হয়। অনেক সময় গাড়ির ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়। গাড়ির অনেক ক্ষতি হয়।’ এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য ঠিকাদার ফিরোজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তার বক্তব্য জানা যায়নি।’ 

তাড়াশ উপজেলা এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী তারিকুল ইসলাম খান দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো সঠিক নয়। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় কোনো নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হয়নি। বৃষ্টির কারণে বালু ধুয়ে গিয়ে খোয়া বের হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে সেখানে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা ঠিকাদারকে বালু ফেলে জায়গাগুলো ঠিক করে দিতে বলেছি।’ সিরাজগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’