
নাসার সরাসরি আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিচ্ছেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম ভয়েজার্স। তাদের গন্তব্য বিশ্বের সর্ববৃহৎ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথমবারের মতো কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের পাঁচ তরুণ উদ্ভাবক সেখানে যাচ্ছেন। নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২৩-এ বেস্ট স্টোরিটেলিং ক্যাটাগরিতে বিশ্বসেরা হওয়ার পুরস্কার হিসেবে তারা এই সুযোগ পেয়েছেন।
অফিশিয়াল আমন্ত্রণ অনুযায়ী, আগামী ৪ জুন ২০২৫ মেরিল্যান্ডে নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারে গ্লোবাল উইনার্স সেলিব্রেশন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে তারা বিশেষ সম্মাননা পাবেন।
টিম ভয়েজার্সের সদস্যরা হলেন, মো. খালিদ সাকিব (টিম লিডার), মো. আব্দুল মালেক (অ্যাপ ডেভলপার), মো. আতিক (লেভেল ডিজাইনার), মোসা. ফাহমিদা আক্তার (রিসার্চার) এবং মো. সাখাওয়াত হোসেন (প্রোটোটাইপ ডিজাইনার)।
রবিবার (২৫ মে) তারা ঢাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা দেবেন। এ সফরে তারা গ্লোবাল উইনার্স সেলিব্রেশনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন গবেষণাগার পরিদর্শন, আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং তাদের প্রকল্প উপস্থাপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
এভরিথিং স্টার্টস উইথ ওয়াটার নামের একটি চ্যালেঞ্জ থেকে সিএসই বিভাগের এ দলটি (টিম ভয়েজার্স) একটি প্রজেক্ট (অ্যাকুয়া এক্সপ্লোরার) তৈরি করে। যার মাধ্যমে সহজ করে শিক্ষার্থীদের কাছে জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানির গুরুত্ব বোঝানো যায়। উদ্দেশ্য ছিল, পৃথিবীতে পানির প্রবাহ বোঝাতে একটি ইন্টারঅ্যাক্টিভ টুল নির্মাণ। বিশ্বে যেখানে ৩৭০ কোয়ান্টিলিয়ন গ্যালন পানি আছে, তার মাত্র শূন্য দশমিক ০১ শতাংশ নিরাপদ ও ব্যবহারযোগ্য। এই প্রকল্পে শিক্ষার্থীরা তুলে ধরেন, কীভাবে পানি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল, জীববৈচিত্র্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ডিজিটাল মাধ্যমে অভিনব উপস্থাপন এবং পরিবেশন কৌশলের জন্যই তারা বিচারকদের নজর কাড়েন এবং বেস্ট স্টোরি টেলিং ক্যাটাগরিতে বিশ্বসেরার স্বীকৃতি অর্জন করেন।
২০২৩ সালের নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ছিল এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় পরিসরে আয়োজনকৃত আসর। বিশ্বের ১৫২টি দেশের ৮ হাজার ৭১৫টি দল এবং প্রায় ৫৮ হাজার প্রতিযোগী এতে অংশ নেন। মোট ৫ হাজার ৫৫৬টি প্রজেক্ট জমা পড়ে। যার মধ্যে বাংলাদেশ একাধিক উদ্ভাবনী প্রকল্পের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের জায়গা করে নেয়। বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম ভয়েজার্সের এই সাফল্য বাংলাদেশের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এটি দেশের পক্ষে টানা তৃতীয় এবং সর্বমোট চতুর্থবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ঘটনা।
এ বিষয়ে টিম লিডার খালিদ সাকিব বলেন, ‘২০২৩ সালের ৬ ও ৭ অক্টোবর, সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। যেখানে ১৫২টি দেশ থেকে ৮ হাজার ৭১৫টি দলে ৫৭ হাজার ৯৯৯ শিক্ষার্থী একযোগে এই ৩৬ ঘণ্টার অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। আমরা টিম ভয়েজার্স এতে বাংলাদেশ পর্বের লোকাল রাউন্ডে রাজশাহী রিজিওনে চ্যাম্পিয়ন হই এবং আমাদের ক্যাম্পাসের টিম এরোর ৪০৪ রানার্স আপ হয়। পরবর্তী সময়ে আমাদের টিম গ্লোবাল নোমিনেশন পায় এবং ফাইনালিস্ট হয়ে বেস্ট স্টোরি টেলিং অ্যাওয়ার্ড ক্যাটাগরিতে গ্লোবাল উইনার হওয়ার গৌরব অর্জন করে। যেখানে আমাদের চ্যালেঞ্জ এভরিথিং স্টার্টস উইথ ওয়াটার এ আমরা একোয়া এক্সপ্লোরার নামক একটি প্রোজেক্ট উপস্থাপন করি। যার মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্বের পানি প্রবাহের পথ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানির মতো এই মহামূল্যবান সম্পদে কি ধরনের প্রভাব পড়ছে এই বিষয়টা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে সহজভাবে ইন্টারঅ্যাক্টিভ গেম ও স্টোরি টেলিং-এর মাধ্যমে বোঝানো।’
সিএসই বিভাগের প্রধান সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘এ রকম প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া সত্যিই গর্বের। নাসা আমাদের শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা নাসা পরিদর্শন করবে। তারা বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে। এটা তাদের আরও বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখাবে।’
এনায়েত করিম/মাহফুজ