
গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী ১৩টি কারণে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সুফল মিলছে না। কারণগুলো হলো-
১) প্রকল্পের শুরুটা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। যেকোনো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা (ফিজিবিলিটি স্টাডি) একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলেও গবেষক দল প্রকল্পের কোনো সমীক্ষা করেনি।
২) প্রকল্পের শুরুতে সব খালের সীমানা নির্ধারণ করে উন্নয়নকাজ শুরু করার আবশ্যকতা থাকলেও কোনো জরিপ করা হয়নি। এতে মূল খালের দুই পাশে কংক্রিটের স্থায়ী সীমানা দেয়ালের ফলে খালের মূল জায়গা বেদখল হয়ে খাল সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে খালের পানি ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।
৩) খালের সংখ্যা কমে যাওয়া এবং খালের জায়গা দখল। ১৯৯৫ সালে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী খালের সংখ্যা ছিল ৭২টি, ২০১৬ সালে ছিল ৫৭টি এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালে কমে ৩৬টি খালের সংখ্যার মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন করছে।
৪) মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের মতামতের ভিত্তিতে স্টেকহোল্ডারদের পরামর্শ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও এ ধরনের কোনো আলোচনার তথ্য পাওয়া যায়নি।
৫) প্রাথমিকভাবে কিছু প্রাইমারি খাল সংস্কারের জন্য প্রকল্পের আওতায় আনলেও প্রায় অর্ধেক খাল প্রকল্পের আওতায় আনা হয়নি। অন্যদিকে সবগুলো সেকেন্ডারি এবং টারশিয়ারি খাল সংস্কার হয়নি।
৬) চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) শহরে পানির উন্মুক্ত জলাধার ভরাট করে অপরিকল্পিতভাবে আবাসিক এলাকা করছে।
৭) প্রকল্পের অপরিকল্পিত উন্নয়নকাজ। যেমন- প্রকল্পের আওতায় খালের কংক্রিটের সীমানা দেয়ালের উচ্চতা ও খালের পাড়সংলগ্ন ভূমির উচ্চতা তুলনামূলক উঁচু হওয়ায় খালগুলোতে পানির স্বাভাবিক নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
৮) শহরের খালের ওপর পুরোনো ব্রিজ, রেললাইন ও কালভার্টগুলোর নিচে ইউটিলিটি পাইপগুলোতে পানি প্রবাহে বাধা।
৯) চসিকের সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অভাব। গৃহস্থালি বর্জ্য পলিথিন, পচনশীল-অপচনশীল বর্জ্য, বিভিন্ন ছোট-মাঝারি শিল্পকারখানা, বাজারগুলোর বর্জ্য সরাসরি খালে ফেলার প্রবণতা।
১০) সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য স্থাপনা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আবাসিক ভবন, মার্কেট, অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রভাবশালী দখলদাররা খালের সীমানা নিজেদের মতো ব্যবহারের প্রবণতা।
১১) পাহাড়ি কাটার ফলে মাটি ধুয়ে খালের তলদেশ ভরাট হয়ে নাব্য হ্রাস পাচ্ছে। চলমান প্রকল্পটি পাহাড়ি এলাকা হিসেবে প্রকল্পের প্ল্যান যাচাই করা হয়নি।
১২) বর্তমান প্রকল্প কাজের ধীরগতি, আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব, প্রযুক্তিগত দুর্বলতা ও প্রশিক্ষিত জনশক্তির অভাব।
১৩) আন্তবিভাগীয় সমন্বয়হীনতা। যেমন- চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম ওয়াসা পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা।