
অল্প বৃষ্টি হতেই জমে হাঁটুপানি। বেশি বৃষ্টি হলে ডুবে দোকান, বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে অলিগলি। কোনটি ড্রেন আর কোনটি রাস্তা, আঁচ করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। নালার ঢাকনা উল্টে ঘটে দুর্ঘটনা। বিক্রি বন্ধের পাশাপাশি নষ্ট হয় মূল্যবান মালামাল। তখন চরম বেকায়দায় পড়ি। হতাশার স্বরে কথাগুলো বলছিলেন, নগরের ভিআইপি এলাকা জিইসি মোড়ের শপিং কমপ্লেক্স সেন্ট্রাল প্লাজা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি তৌহিনূর আলম টিটু।
কেন জিইসি মোড়ে জলাবদ্ধতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের মার্কেটের সামনে যে ড্রেন রয়েছে সেটি অত্যন্ত সরু। এতদিন চসিক সেদিকে নজর দেয়নি। অথচ এটি শহরের প্রাণকেন্দ্র এবং অন্যতম ভিআইপি এলাকা। কুসুমবাগ, গরীবুল্লাহ শাহ আবাসিক এলাকাসহ চারপাশ থেকে জিইসি মোড়ে পানি আসে। ড্রেনগুলোও বছরের পর বছর পরিষ্কার করা হয় না বলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। তা ছাড়া ড্রেনের নিচে অসংখ্য কেবল নেওয়া হয়েছে। এতে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এগুলো আরও বড় করতে হবে।’
শুধু নগরের জিইসি মোড় নয়, বেশির ভাগ ভিআইপি এলাকা বর্ষাকালে থাকে জলমগ্ন। নগরের চকবাজার, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, কাতালগঞ্জ আবাসিক, পাঁচলাইশ আবাসিক, নাসিরাবাদ আবাসিক, আলফালাহ গলি আবাসিক, গরীবুল্লাহ শাহ হাউজিং, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক, হালিশহরের বিভিন্ন ব্লকসহ গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকা ও মার্কেটগুলোতে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা।
নগরের ভিআইপি এলাকাগুলোতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অভিজাত আবাসিক, হাসপাতাল, কমিউনিটি সেন্টার, সরকারি স্থাপনা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শপিংমল ও হোটেল-রেস্টুরেন্ট রয়েছে। রয়েছে একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল, ব্যাংক, কমিউনিটি সেন্টার, নামিদামি শোরুমও। বর্ষায় এসব এলাকায় শত শত শিক্ষার্থীর পাশাপাশি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, পথচারী, দূর থেকে আগত শহরযাত্রী সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন। সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েন আবাসিকে থাকা বাসিন্দারা। পাশাপাশি জলাবদ্ধতার কারণে বিদেশি পর্যটকরা বন্দরনগরী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পাচ্ছেন।
বর্ষাকালে জিইসি মোড় এলাকায় বায়তুল আমান আবাসিক, কুসুমবাগ আবাসিক, গরীবুল্লাহ শাহ হাউজিং, আল ফালাহ গলি হাউজিং সোসাইটি পানিতে ডুবে থাকে। কুসুমবাগ আবাসিকের বাসিন্দা ফারুক সিকদার বলেন, ‘তিনটি আবাসিক একেবারে পাশাপাশি হলেও ড্রেন আছে মাত্র একটি।’ সংকীর্ণ ড্রেনগুলো বড় করার কোনো বিকল্প নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেসব ড্রেনে পানি চলাচল করে সেগুলোর সঙ্গেও আমাদের এলাকার ড্রেনটি সংযুক্ত নয়। আমরা নিরুপায় হয়ে ঘরে বন্দি হয়ে পড়ি। পানির সঙ্গে অনেক ময়লা আবর্জনা ভেসে এসে ঘরে ঢুকে পড়ে।’
এ বিষয়ে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি প্রকৌশলী সুভাস বড়ুয়া বলেন, ‘কীভাবে পানি দ্রুত সরানো যায়, সেই চেষ্টা করা উচিত। পুরো শহরের যতগুলো খাল রয়েছে সবগুলোর একটা মাস্টারপ্ল্যান করতে হবে। যেন খালাগুলো একই নেটওয়ার্কে চলে আসে। এটি করা না গেলে জলাবদ্ধতা দূর করা কখনো সম্ভব নয়।’
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান বলেন, ‘জলাবদ্ধতা দূর করতে সমন্বিত প্রকল্প প্রয়োজন। আগে জলাবদ্ধ এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করতে গিয়ে নতুন এলাকা জলাবদ্ধ হচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে পরিকল্পনার মধ্যে কোনো একটা গলদ রয়ে গেছে।’