
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের পথিকৃৎ মমতাজউদদীন আহমদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ ২ জুন। কিংবদন্তি নাট্যকার নির্দেশক অভিনেতা পরিচয়ের বাইরে তার বড় পরিচয় তিনি ভাষাসংগ্রামী। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের দশকে এরশাদের স্বৈরাচার শাসনবিরোধী আন্দোলনে মমতাজউদদীন আহমদ ছিলেন সম্মুখসারির কর্মী।
মমতাজউদদীন আহমদের জন্ম ১৯৩৫ সালের ১৮ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার হাবিবপুর থানার আইহো গ্রামে। দেশভাগের পর তার পরিবার চলে আসে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে। ভাষা আন্দোলন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রাম, নানা দাবিতে সক্রিয় থাকার কারণে একাধিকবার জেলে যেতে হয়েছে তাকে।
মমতাজউদদীন আহমদের নাটক লেখার যাত্রা শুরু হয় ১৯৬০ সালে। ভাষা আন্দোলন নিয়ে তার লেখা প্রথম নাটক ‘বিবাহ’।
১৯৬৪ সালে চট্টগ্রাম কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে শিক্ষকতা শুরু হয় মমতাজউদদীন আহমদের। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি চট্টগ্রাম কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় লিখেছিলেন ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’ নাটকটি। ‘এবারের সংগ্রাম’ নাটকে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের নির্যাতিত মানুষের অবয়ব। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগেও অধ্যাপনা করেছেন মমতাজউদদীন আহমদ। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক ছিলেন।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে তার রচিত ‘সাতঘাটের কানাকড়ি’, ‘কী চাহ শঙ্খচিল’, ‘রাজা অনুস্বরের পালা’ নাটকগুলো আলোড়ন তোলে নাট্যাঙ্গনে। ‘ক্ষতবিক্ষত’, ‘রঙ্গপঞ্চাদশ’, ‘প্রেম বিবাহ সুটকেশ’, ‘জমিদার দর্পণ’, ‘হৃদয়ঘটিত ব্যাপার স্যাপার’সহ তার আরও অনেক মঞ্চনাটক বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের দলিল হয়ে আছে।
টেলিভিশনে নাট্যকার হিসেবে মমতাজউদদীন আহমদের যাত্রা শুরু ‘দখিনের জানালা’ নাটকটি দিয়ে। ‘সহচর’, ‘কূল নাই কিনার নাই’সহ বিটিভির জন্য অনেক নাটক লিখেছেন তিনি। ২০০২ সালে চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘হাছন রাজা’ চলচ্চিত্রের কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছিলেন মমতাজউদদীন আহমদ।
‘বাংলাদেশের নাটকের ইতিবৃত্ত’ এবং ‘বাংলাদেশের থিয়েটারের ইতিবৃত্ত’ নামে দুটি অমূল্য গবেষণা গ্রন্থের রচয়িতা তিনি।