
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে সিলেটের কুশিয়ারা নদীর বাঁধে তিনটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ওই তিন স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে কুশিয়ারার বেড়িবাঁধে আরও ভাঙন দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এর আগে রবিবার (১ জুন) সকাল ৬টায় টানা তিন দিনের বৃষ্টি ও ভারতের পাহাড়ি ঢলের পানিতে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর অমলশীদ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। রবিবার অমলশীদ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ১৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আজ সোমবার বেলা ১২টায় কুশিয়ারা নদীর অমলশীদ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৮৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, রবিবার রাত আড়াইটার দিকে জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই গ্রামের পাশে কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ শুরু করে। সোমবার ভোররাতে একই ইউনিয়নের বাখরশাল ও সকাল ৮টার দিকে খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমহল গ্রামের পাশে কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। এতে আশপাশের উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জকিগঞ্জ পৌর শহরের নিকটবর্তী কেছরী গ্রামের পাশে বাঁধের ওপর দিয়ে শহরে ঢুকছে কুশিয়ারার পানি। মাইজকান্দি গ্রামের কাছে ডাইকের একাংশ ধসে পড়েছে নদীতে। জকিগঞ্জ ইউনিয়নের ছবড়িয়া, সেনাপতিরচক, সুলতানপুর ইউনিয়নের ইছাপুর, খলাছড়া ইউনিয়নের একাধিক স্থান, বারঠাকুরী ইউনিয়নের পিল্লাকান্দি ও আমলশীদসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক জায়গায় কুশিয়ারা নদীর বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। স্থানীয়রা বালু ও মাটি ভর্তি বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই গ্রামের প্রায় ১০০ফুট ও বাখরশাল গ্রামে ৪০ থেকে ৫০ ফুট, খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমহল এলাকার ৩০ থেকে ৪০ ফুট বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে পার্শ্ববর্তী এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তীরবর্তী এলাকার লোকজনের বসতঘরে ইতোমধ্যে পানি ঢুকে গেছে। রবিবার রাত থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজন নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া শুরু করেছেন। উপজেলা প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কন্ট্রোল রুম চালু করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট কার্যালয়ের তথ্য মতে, সোমবার বেলা তিনটায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশিদ পয়েন্ট বিপৎসীমার ১৪৩ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান জানান, প্রশাসন সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে। বন্যা কবলিত এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনার প্রস্তুতি চলছে। আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। তবে কতটি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে সেটা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে প্রশাসন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
সুমন/