
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি আঞ্চলিক সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্মাণের এক মাস না যেতেই সড়কটির বিভিন্ন জায়গায় গর্ত ও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে এই সড়কের স্থায়িত্ব নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এক মাস আগে বানানো এই সড়কের একাংশের কাজ হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে। এতে রাস্তার কাজ শেষ হতে না হতেই সামান্য বৃষ্টিতে সড়কের বিভিন্ন জায়গা ধসে পড়েছে। আবার কোনো কোনো জায়গায় পানি জমে খানাখন্দ ও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রতিদিন হাজারো যানবাহন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে। খানাখন্দের মধ্যে পড়ে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে এলজিইডির কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করা হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
জানা গেছে, উপজেলা এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী তারিকুল ইসলাম খান এ কাজের তদারকির দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, তিনি ঠিকাদারের সঙ্গে আঁতাত করায় রাস্তার কাজ মানসম্মত হয়নি। এর আগেও উপজেলার একটি সেতু নির্মাণ ও হাটের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। তাই বিতর্কিত কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে একজন সৎ ও দক্ষ প্রকৌশলীকে এ কাজের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
তাড়াশ এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাবনা ও বগুড়া গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কাজটি করার সিদ্ধান্ত হয়। ২ কোটি ৩২ লাখ ৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ১ হাজার ৮০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটির কাজ শুরু হয়। কাজের ব্যাপ্তি ছিল উপজেলার হামকুড়িয়া-নওগাঁ আঞ্চলিক সড়কের হামকুড়িয়া ওয়াপদা বাঁধ থেকে বিরইল জামে মসজিদ পর্যন্ত। কাজ পায় মেসার্স ভাবী কনস্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তারা ফিরোজ হোসেন নামে এক ঠিকাদারের কাছে কাজটি বিক্রি করে দেয়। কাজের মেয়াদ ছিল ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি মাত্র ২৬ শতাংশ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা নির্মাণে মাটিমিশ্রিত বালু ব্যবহারের কারণে সামান্য বৃষ্টিতে তা ধুয়ে খোয়া বের হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও রাস্তা ভেঙে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ সৃষ্টি হওয়ার যানবাহন চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে।
মহেষরৌহালী গ্রামের বাসিন্দা সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘রাস্তায় যে বালু ও খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো খুবই নিম্নমানের। রাস্তায় কোনো সাইনবোর্ড নেই। কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে কখনো কাজ পরিদর্শনে আসতে দেখা যায়নি। যে উচ্চতায় রাস্তাটি করা হচ্ছে, বর্ষায় নিশ্চিত পানি উঠে রাস্তাটি ভেঙে যাবে। ঠিকাদার কাজ ফেলে চলে গেছেন। আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
মহেষরৌহালী গ্রামের আরেক বাসিন্দা আরমান আলী বলেন, ‘রাস্তার কাজ খুবই খারাপ হচ্ছে। রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। কারণ যেভাবে রাস্তাটি হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না। নির্মাণকাজে ব্যবহার হওয়া বালুগুলো মূলত মাটিমিশ্রিত। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় এ রাস্তা বেশিদিন টিকবে না।’
ওই এলাকার বাসিন্দা এরশাদ আলী বলেন, ‘এখানে সঠিক নিয়মে কাজ হয়নি। ২ নম্বর ইট দেওয়া হয়েছে। অর্ধেক বালি ও অর্ধেক খোয়া দেওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। বালিতে মাটি মেশানো হয়েছে। ফলে বৃষ্টির পানিতে সব ধুয়ে যাচ্ছে।’ একই অভিযোগ তোলেন ওই এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম, সবুজ আলী, জয়নাল হোসেন, হোসেন আলীসহ একাধিক বাসিন্দা।
ইজিবাইকচালক রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তায় বৃষ্টির পানি জমে গর্ত হওয়ার কারণে গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায় না। আমাদের অনেক কষ্ট হয়। অনেক সময় গাড়ির ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়। গাড়ির অনেক ক্ষতি হয়।’ এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য ঠিকাদার ফিরোজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তার বক্তব্য জানা যায়নি।’
তাড়াশ উপজেলা এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী তারিকুল ইসলাম খান দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো সঠিক নয়। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় কোনো নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হয়নি। বৃষ্টির কারণে বালু ধুয়ে গিয়ে খোয়া বের হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে সেখানে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা ঠিকাদারকে বালু ফেলে জায়গাগুলো ঠিক করে দিতে বলেছি।’ সিরাজগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’