ঢাকা ২৬ আষাঢ় ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২

কারখানার ১২৩ রোল কাপড় চুরি, গ্রেপ্তার ৫ কর্মকর্তারা

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০৬:২৯ পিএম
আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫, ০৬:৪১ পিএম
কারখানার ১২৩ রোল কাপড় চুরি, গ্রেপ্তার ৫ কর্মকর্তারা
গ্রেপ্তার ৫ আসামি। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামে চীন থেকে আমদানি করা ১২৩ রোল নিট কাপড় একটি পোশাক কারখানার গোডাউন থেকে চুরি হওয়ার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে। কাপড়গুলোর আনুমানিক মূল্য ২৫ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। একইসঙ্গে ৫ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা ওই কারখানার কর্মকর্তা ও কর্মচারী। 

সোমবার (২ জুন) রাত দেড়টায় আসামিদের গ্রেপ্তার ও চুরি হওয়া কাপড় উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাঁচলাইশ থানার ওসি মুহাম্মদ সুলাইমান। 

থানা সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ মে রাত ৮টায় পাঁচলাইশ থানাধীন শাহ-নূর মার্কেটের তৃতীয় তলার পূর্ণা ফ্যাশন লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানার গোডাউন থেকে কারখানার ডিরেক্টরের অনুপস্থিতিতে কাটিং ম্যানেজার নুর নবী ওরফে মিজান (৪০), স্টোর ম্যানেজার সাইমুম ইসলাম (৪৮), সহকারী স্টোর কিপার মো. মহিউদ্দিন রাকিব (২৬) ১২৩ রোল কাপড় চুরি করে নিয়ে যায়। যার দাম ২৫ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। এই কাজে সহযোগিতা করে চুরির পরামর্শকারী মো. বিল্লাল হোসেন (৩৪) ও মো. হাসান (৩২)। তারা তাদের ব্যবহৃত পিকআপ দিয়ে সেগুলো সরিয়ে নেয় এবং বিক্রি করে দেয়। 

এ ঘটনায় কারখানার মালিক গোলাম রাব্বানী বাদী হয়ে মামলা করেন। তারই প্রেক্ষিতে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক সাজ্জাদ হোসেনের নেতৃত্বে ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় একটি টিম অভিযান চালিয়ে সোমবার রাতে নগরের আতুরার ডিপো থেকে প্রথমে মহিউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। এরপর বিল্লালকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

উদ্ধার করা পিকআপ ও কাপড়ের রোল। ছবি: সংগৃহীত

পরে জানা গেছে, রোলগুলোর মধ্যে ৬৪ রোল বায়েজিদের বিডি জুট ফ্যাশনে ও ৫৯ রোল নারায়ণগঞ্জের এক ব্যবসায়ীর কাছে আসামি হাসানের মাধ্যমে বিক্রি করেছে। একই রাতে হাসানকে বায়েজিদ বোস্তামীর বাংলাবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর আসামি মোরশেদ আলম ও আবু রায়হানকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিডি জুট ফ্যাশন কারখানার গোডাউন থেকে ৬৪ রোল নিট কাপড় উদ্ধার করা হয়। পরে নারায়ণগঞ্জ সদরের উকিল পাড়ার ‘মোহাম্মদ ট্রেডার্স’ থেকে ৫৯ রোল কাপড়ও উদ্ধার করা হয়। একইসঙ্গে একটি কাভার্ডভ্যান (চট্টমেট্রো-ম-৫১০৮-২৭) জব্দ করা হয়। 

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- ভোলা জেলার তজিমুদ্দিন থানার মো. মহিউদ্দিন রাকিব, পাঁচলাইশের মো. বিল্লাহ হোসেন, বাকলিয়ার বউ বাজার মাস্টারপুল এলাকার মো. হাসান, কুমিল্লার মুরাদনগর চালিয়কান্দির মো. মোরশেদ আলম ও নেত্রকোণার পূর্বধলা থানার বইর আটি ইউনিয়নের আবু রায়হান। 

আসামিদেরকে মঙ্গলবার (৩ জুন) দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান পাঁচলাইশের ওসি মুহাম্মদ সুলাইমান।

মনির/মাহফুজ/

ফেনীতে ফের বন্যা, ২০টি স্থানে বাঁধ ভেঙে ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫৬ পিএম
ফেনীতে ফের বন্যা, ২০টি স্থানে বাঁধ ভেঙে ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি
বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। ছবি: খবরের কাগজ

বুধবার বিকাল থেকেই ঘরের পাশের বন্যা রক্ষা বাঁধের উপর দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল মুহুরী নদীর পানি। এলাকার সবাই মিলে নদীরক্ষা বাঁধের উপর বিভিন্ন ধরনের বস্তা দিয়ে পানি গড়ানো বন্ধ করার চেষ্টা করছিলাম। পুরো বিকাল ভাঙন রোধে যুদ্ধের পর সন্ধ্যায় হঠাৎ দেখি আমার ঘরের পাশেই বেড়িবাঁধ ভেঙে হু হু করে গ্রামে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। অবস্থা বেগতিক দেখে মা, স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয়ে রেখে আসি। সন্ধ্যার মাঝেই বাঁধভাঙা পানির তীব্র চাপে ঘরের একটি অংশ ভেঙে তলিয়ে যায়। একে একে ঘরের দেয়াল, পিলারসহ ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্র চোখের সামনে ভেসে যেতে দেখেছি। স্বপ্নের ঘর পানির তোড়ে ভেসে যেতে থাকলেও দেখে দেখে কান্নাকাটি করা ছাড়া কিছুই করার ছিল না আমার। 

বুধবার (৯ জুলাই) বিকেলে এসব কথা বলছিলেন ফেনীর ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর শ্রীপুর পূর্বপাড়া গ্রামের খন্দকার বাড়ির আলী আশরাফ। মুহুরী নদীর পানির চাপে তার নব নির্মিত আধাপাকা ঘরটি পানির তোড়ে বিলীন হয়েছে।

ছবি: খবরের কাগজ

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (৮ জুলাই) থেকে শুরু হওয়া ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামে বন্যা পরিস্থিতি বুধবার পর্যন্ত আরও অবনতি হয়েছে। ফেনী সদর, দাগনভূঞা ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় নিম্নাঞ্চলে সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতা এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। এছাড়াও ফেনী পৌরসভার শহিদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক এখন পর্যন্ত হাটু পরিমাণ পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে এবং শহরের বিভিন্ন পাড়ার সড়ক, অলিতে-গলিতেও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। বুধবার বিকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে ফেনীর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ ও নদীতে পানির পরিমাণ কমলেও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধভাঙায় লোকালয়ে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় মুহুরী, কহুয়া ও ছিলোনিয়া নদী রক্ষা বাঁধের ২০টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে দুই উপজেলায় অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং আরও নতুন নতুন বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হতে শুরু করেছে। বেড়িবাঁধের পরশুরামের ১৪টি স্থানে এবং ফুলগাজী উপজেলা ৬টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও দুই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে পানি গড়িয়ে যেতে দেখা গেছে। প্লাবিত গ্রাম সমূহের মধ্যে পরশুরাম উপজেলায় ১৫ টি ও ফুলগাজী উপজেলায় ১২টি গ্রাম রয়েছে। প্লাবিত এসব গ্রামের পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। আমনের বীজতলা ও সবজি ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এদিকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফেনী-পরশুরাম অঞ্চলিক সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্লাবিত গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ  ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

ছবি: খবরের কাগজ

পরশুরামের পশ্চিম অলকা গ্রামের আবুল হাসেম জানান, ২৪ এর বন্যায় আমাদের এলাকায় ব্যাপক ক্ষতির পর আমরা এখনো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারিনি। এর মাঝেই আবার বন্যার কবলে পড়েছি। বাড়ির সামনের পুকুরের মাছ ভেসে গেছে, বীজতলা তলিয়ে গেছে। ঘরে পানি ঢুকে গেছে। বাড়িঘর ডুবে যাবার উপক্রম হয়েছে। সর্বস্ব হারাতে বসেছি। আমরা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের স্থায়ী সমাধান চাই।  

ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, মুহুরী ও কহুয়া নদীর ২০টি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এখনো নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি ক্রমান্বয়ে কমতে শুরু করলেও বাঁধভাঙা পানির চাপে লোকালয়ে পানি বাড়তে শুরু করেছে।

ছবি: খবরের কাগজ

এদিকে ফেনীর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান বলেন, বুধবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ১৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জেলায় ভারী বৃষ্টি কমলেও বুধবার দিনভর গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হয়েছে। 

ফেনী জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলার ফুলগাজী, পরশুরাম ও ফেনী সদর উপজেলার একাংশে ইতোমধ্যে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিপন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে দেড় হাজার জন বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে। তাদের খাবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। পরশুরাম উপজেলা ৯৯টি, ফুলগাজী উপজেলায় ৩২টি এবং ফেনী সদর উপজেলায় ২২টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলায় ২ হাজার ৫৩৭ জন প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক  সংগঠনের পক্ষ থেকেও স্বেচ্ছাসেবকরা মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। জেলায় ইতোমধ্যে ত্রাণ কাজের জন্য সাড়ে ১৭ লাখ টাকা উপবরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জেলা ১২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর বাহিরে ফুলগাজী ও পরশুরামে ইতোমধ্যে ৪০০ প্যাকেট শুকনা খাবারের প্যাকেট সরবরাহ করা হয়েছে।

এর আগে, ২০২৪ সালের আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় ফেনীতে ২৯ জনের প্রাণহানী-সহ হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার ফুলগাজী পরশুরামে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত তার বাস্তবতা দৃশ্যমান হয়নি।

তোফায়েল আহমদ নিলয়/মাহফুজ

 

মিরসরাই মেলখুমে নিখোঁজ ২ পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৮:২৩ পিএম
আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৮:২৩ পিএম
মিরসরাই মেলখুমে নিখোঁজ ২ পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার
নিহত গালিব ও রিদয়। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মেলখুম ট্রেইলর ঘুরতে এসে দুই পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে আরও তিনজন। বুধবার (৯ জুলাই) বিকাল ৪ টার দিকে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

নিহতরা হলেন গালিব- (২২) ও রিদয় (২২)। আহতরা হলেন- মো. মিরাজ, রায়হান ও ফাহিম। আহতদের দুপুর ২টার দিকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা।

স্থানীয় বাসিন্দা সাকিব জানায়, মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকালে ফেনী থেকে ৩ বন্ধু ঘুরতে আসে মেলখুমে। পরে স্থানীয় ২ জন যুবকসহ ৫ জন একত্রিত হয়ে ঘুরতে যায় মেলখুম ট্রেইলে। অতি বৃষ্টির কারণে পথ হারান ওই ৫ যুবক। পরে আজ বুধবার দুপুরে স্থানীয়রা ৩ যুবকে উদ্ধার করে। নিখোঁজ হওয়া আরও ২ জনের মৃত মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

নিখোঁজ হওয়া মো. রায়হান জানান, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ৫ জন ঘুরতে যায় মেলখুমে। তাদের মধ্যে রিদয় পড়ে গিয়ে তলিয়ে যায় পানি স্রোতে। পরে গালিব তাকে উদ্ধার করতে গিলে সেইও নিখোঁজ হয়। রায়হান বলেন, ‘সে নানুর বাড়িতে এসেছে। মিরাজের সঙ্গে ঘুরতে বাহির হয়। পরে ফেনী থেকে ঘুরতে আসা নিহত গালিব, রিদয়, আহত ফাহিম জোর করলে ৫ জন এক হয়ে মেলখুমে ট্রেইলে ঘুরতে যায়। পরে গতকাল মঙ্গলবার পানির স্রোতে তালিয়ে মৃত্যু হয় ২ জনের। সারারাত পাহাড়ের উপরে ছিল তারা। পরে দুপুরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে।’ 

এ বিষয়ে বারইয়ারহাট ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন তিতাস বলেন, সোনাপাহাড় মেলখুম ট্রেইলে পাঁচ পর্যটক নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে গালিব এবং রিদয়ের মরদেহ উদ্ধার করি। এছাড়া আহত তিনজনকে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে প্রেরণ করা হয়।

জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হালিম বলেন, নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

ইকবাল হোসেন জীবন/মাহফুজ

 

নলছিটিতে মা ও ছেলের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৭:৪১ পিএম
নলছিটিতে মা ও ছেলের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ
ছবি: খবরের কাগজ

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার ষাটপাকিয়া গ্রামের এক মা ও তার ছেলে আনুষ্ঠানিকভাবে সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। আদালতের হলফনামার মাধ্যমে ধর্মান্তরের এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

ধর্মান্তরিত ওই যুবকের পূর্বের নাম ছিল প্রীতিশ মল্লিক। ইসলাম গ্রহণের পর তার নতুন নাম রাখা হয়েছে আবদুর রহমান মল্লিক। তার পিতার নাম প্রয়াত বিষ্ণুপদ মল্লিক। তার মায়ের আগের নাম ছিল কল্পনা মল্লিক, বর্তমান নাম ফাতেমা মল্লিক।

আবদুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘আমি সুস্থ, বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন এবং নিজ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার বলপ্রয়োগ বা চাপ প্রয়োগ করা হয়নি। ছোটবেলা থেকেই মুসলিম বন্ধুদের সঙ্গে বড় হয়েছি। তাদের চলাফেরা, আচার-আচরণ, ধর্মীয় অনুশাসন এবং বই-পুস্তক ও আলেমদের বক্তৃতা শুনে বুঝতে পারি, ইসলাম শান্তি ও সত্যের ধর্ম। এই ধর্মের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই আমি কালেমা পাঠ করে স্থানীয় মুসলমানদের উপস্থিতিতে মাওলানা সাব্বির হোসেনের মাধ্যমে ইসলাম গ্রহণ করি।’

ধর্মান্তর প্রক্রিয়ার পুরো ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধানে ছিলেন নলছিটি হাসপাতাল সড়কের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মো. আল আমিন। তিনি নবদীক্ষিত মা ও ছেলের হাতে ইসলামিক বইসহ প্রয়োজনীয় উপহার তুলে দেন।

স্থানীয়রা নব মুসলিমদের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং তাদের নতুন জীবনের পথচলায় সফলতা কামনা করেছেন।

কামরুজ্জামান সুইট/মাহফুজ

 

দ্রুত বাড়ছে গোমতীর পানি, ২৪ ঘণ্টায় ১২৯ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৭:৩২ পিএম
আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৯:২৯ পিএম
দ্রুত বাড়ছে গোমতীর পানি, ২৪ ঘণ্টায় ১২৯ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড
টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে পানি বেড়েছে গোমতীতে। ছবি: খবরের কাগজ

গত ৪৮ ঘণ্টার টানা বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি পানি হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে। এতে করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে গোমতীর চর ও দুই তীরের বাসিন্দাদের মাঝে। গেল বছরের আগস্টে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় গোমতীর বাঁধ ভেঙে পাশের তিন উপজেলা প্লাবিত হয়ে যায়। ফলে এবার পানি বাড়তে থাকায় সে শঙ্কা আরও বেড়েছে।

কুমিল্লার কোল ঘেষে বয়ে চলা গোমতী নদীর পানি প্রতি ঘণ্টায় ১০ সেন্টিমিটার করে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর ফলে নদীর বাঁধের ভেতর জমি-জমা ও বসতি ডুবতে শুরু করেছে। তবে নদীর পানির উচ্চতা বুধবার (৯ জুলাই) বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিপৎসীমার ৭ ফুট নিচে রয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালীউজ্জামান।  

এদিকে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকেল ৩টা থেকে বুধবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত কুমিল্লা জেলায় ১২৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গোমতীর চরে বসবাসরত মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ারও সতর্কতা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া টানা ভারী বৃষ্টিপাতে শহরের নিম্নাচল পানিতে ডুবে গেছে, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে নিচু এলাকা গুলোতে।

ছবি: খবরের কাগজ

বুধবার দুপুরে গোমতী নদীর টিক্কার চর, চানপুর ব্রিজ ও সংরাইশ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কিছু কিছু স্থানে চরাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে।

সংরাইশ এলাকার বাসিন্দা নূরে আলম বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি পানি ঘরের একদম কাছাকাছি চলে এসেছে। আমরা খুব আতঙ্কে আছি। গত বছর বন্যায় আমাদের ঘরবাড়ি ভেসে গিয়েছিল। এলাকার লোকজন মিলে আমাদের নতুন ঘর তুলে দিয়েছিল। আবার যদি ঘর ভেসে যায়, তাহলে আমাদের পথে পথে থাকতে হবে।’

টিক্কার চর এলাকার পারভেজ আলম জানান, ‘গতকাল বিকেলেও এত পানি ছিল না। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি পানি অনেক বেড়েছে। এভাবে বাড়তে থাকলে বিকেলের মধ্যে পানি বিপৎসীমার ওপরে চলে যেতে পারে।’

এ বিষয়ে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভির আহমেদ বলেন, ‘গোমতীর পানি এখনো বিপৎসীমার ১০ ফুট নিচে আছে। আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে পানি না এলে পরিস্থিতি তেমন খারাপ হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘গোমতীর চরে বসবাসরত মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশাসন সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। হঠাৎ পানি এভাবে বাড়বে, তা আমরা আগে বুঝতে পারিনি। আমরা সরেজমিনে গোমতীর পাড় ঘুরে দেখছি।’

কুমিল্লা জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, কুমিল্লায় মঙ্গলবার বিকাল ৩টা থেকে আজ বুধবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ১২৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সারাদিনও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কুমিল্লার পাশাপাশি ভারতের ত্রিপুরা অঞ্চলেও ভরী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।

কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খাঁন মোহাম্মদ ওয়ালীউজ্জামান জানান, বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত গোমতী নদীর পানির উচ্চতা ৮.৫ মিটার পর্যন্ত উঠেছে। বিপৎসীমা ১১.৩ মিটার। আমাদের পর্যবেক্ষণে প্রতি ঘণ্টায় ১০ সেন্টিমিটার করে গোমতী নদীর পানির উচ্চতা বাড়ছে। টানা বৃষ্টির ওপর নির্ভর করছে আমরা কতটুকু বিপদের মুখে আছি।

জহির শান্ত/মাহফুজ

পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধে বিশাল ভাঙন, আতঙ্কে অন্তত ৬০০ পরিবার

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৬:৫৩ পিএম
আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৬:৫৪ পিএম
পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধে বিশাল ভাঙন, আতঙ্কে অন্তত ৬০০ পরিবার
ছবি: খবরের কাগজ

বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত সোমবার (৭ জুলাই) বিকেল থেকে বাঁধটির প্রায় ২৫০ মিটার অংশ নদীতে ধসে পড়ে। এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীর পাড়ের ৬০০ পরিবার। কেউ কেউ ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নিলে হুমকিতে পড়বে আশপাশের রাস্তা, হাটবাজার ও শতাধিক বসতবাড়ি।  পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন বলেছে, পূর্ব সতর্কতায় ঘরবাড়ি হারানো পরিবারগুলোকে দেওয়া হচ্ছে সহায়তা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পদ্মার ভাঙনে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে শরীয়তপুরের জাজিরার আলম খারকান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি ও ওছিম উদ্দিন মুন্সিকান্দি গ্রামের অন্তত ৬০০ পরিবার। গতবারের ধসে পড়া বাঁধের মেরামতকৃত ১০০ মিটার-সহ নতুন করে আরও আড়াইশো মিটার এলাকা নদীগর্ভে চলে গেছে। গত সোমবার মাত্র এক ঘণ্টায় ভেঙে পড়ে ২০০ মিটার বাঁধ, বিলীন হয় অন্তত ১০টি ঘরবাড়ি ও ৯টি দোকান। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। 

ছবি: খবরের কাগজ

শুধু পদ্মা সেতু প্রকল্প নয়, মাঝিরঘাটের বিভিন্ন পাড়াও এখন ভাঙনের সরাসরি ঝুঁকিতে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে হাটবাজারসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল হারিয়ে যেতে পারে পদ্মার পেটে। দ্রুত ভাঙন ঠেকাতে জিওব্যাগ ডাম্পিংয় ও স্থায়ী বেরি বাঁধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বছরের নভেম্বরে নাওডোবা এলাকায় ১০০ মিটার পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধ ধসে যায়, যার পুনর্নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যয় করে ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সেই সংস্কার করা এলাকার কিছু অংশসহ গত ৭ জুন দু’টি স্থানে প্রায় ২০০ মিটার বাঁধ পদ্মা নদীতে ধসে পরেছে। এক মাসের ব্যবধানে নতুন করে আরও ২৫০ মিটার এলাকা ধসে পড়ে। এতে বিলীন হয়েছে ৯টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ১০টি স্থাপনা, সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বসত ঘর। 

ছবি: খবরের কাগজ

এছাড়া ভাঙনের হুমকিতে পরেছে শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা-পালেরচর সড়ক, মহর আলী মাদবরকান্দি, আলম খাঁরকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি এবং কালাই মোড়লকান্দি গ্রামের অন্তত ছয় শতাধিক বসত বাড়ি। তাই অনেকেই বাঁধের কাছ থেকে বাড়িঘর ও গাছপালা সরিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া হুমকিতে রয়েছে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মঙ্গল মাঝিরঘাট বাজারের দুই শতাধিক দোকানপাট। তাই আতঙ্কে রয়েছে ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দারা।

জানা যায়, ২০১০-২০১১ সালে পদ্মা সেতু থেকে মাঝিরঘাট হয়ে পূর্ব নাওডোবা আলমখার কান্দি জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড’ বাঁধটি নির্মাণ করে সেতু কর্তৃপক্ষ। বাঁধটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয় ১১০ কোটি টাকা। এখন পুরো বাঁধটি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। 

পাইনপাড়া অছিম উদ্দিন কান্দির ছাত্তার শেখ বলেন, হঠাৎ করে ভাঙন দেখা দিয়েছে, আমরা ঘরবাড়ি নিয়ে যে কোথায় যাব, সেটা এখন অনিশ্চিত। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ রইলো আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেন।

ছবি: খবরের কাগজ

অছিমউদ্দিন কান্দির রিনা বেগম বলেন, আমাদের ঘরের পিছনে নদী। পরের জায়গায় থাকি, এখন আতঙ্কে আছি ঘর নিয়ে এখন কোথায় যাব।

মাঝিরঘাট এলাকার সোহারাব, রবিউল, জুয়েল জানান, অবৈধ্য বালু উত্তোলনের কারণে এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। দ্রুত স্থায়ীভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করলে, মাঝিরঘাট এলাকাটি শরীয়তপুরের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।

ফরিদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শাজাহান সিরাজ ধসে পড়া বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করে তিনি জানিয়েছেন, ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে জিওব্যাগ ফালানো হচ্ছে। দ্রুত ভাঙনরোধে কাজ শুরু করা হবে।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী রায় জানিয়েছেন, ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে যারা সতর্কতাবশত ঘরবাড়ি সরিয়েছেন, তাদের সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা ২৬ জনকে ৫ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ ও ঢেউটিন দিয়েছি।

শরীয়তপুরে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদ হোসেন জানান, ভাঙন কবলিত ৩০টি পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। জিওব্যাগ ফালানো হচ্ছে। স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হচ্ছে।


রাজিব হোসেন রাজন/মাহফুজ