ঢাকা ২৫ আষাঢ় ১৪৩২, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫
English

ঈদে সোনামসজিদ স্থলবন্দর ১০ দিন বন্ধ

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০৬:৫০ পিএম
ঈদে সোনামসজিদ স্থলবন্দর ১০ দিন বন্ধ
ছবি: খবরের কাগজ

আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে টানা ১০ দিন বন্ধ থাকবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর। এ সময় বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানিসহ যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ছুটি শেষে আগামি ১৫ জুন থেকে আবারও সচল হবে। 

মঙ্গলবার (৩ জুন) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান পানামা পোর্ট লিংকের ব্যবস্থাপক মাঈনুল ইসলাম। তবে স্বাভাবিক থাকবে সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে দুই দেশের পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার।

ব্যবস্থাপক মাঈনুল ইসলাম বলেন, আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ভারত থেকে আগামী ৫ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত আমদানি বন্ধ থাকবে। এই সময়ের মধ্যে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে কোনোপণ্য রপ্তানি করা হবে না। ফলে ১০ দিন বন্দরটির আমদানি-রপ্তানিসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ছুটি শেষে আবার ১৫ জুন থেকে পুনরায় আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক হবে।

পাসপোর্টধারীরা পারাপারের বিষয়ে সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন উপপরিদর্শক মো. জামিরুল ইসলাম বলেন, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে এই চেকপোস্ট দিয়ে দুই দেশের যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক থাকবে। পাসপোর্টধারীরা নির্বিঘ্নে পারাপার হতে পারবেন।


মো. আসাদুল্লাহ/মাহফুজ

 

চাঁদপুরে জলাবদ্ধতায় বেড়েছে দুর্ভোগ, ১৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০১:১৫ পিএম
চাঁদপুরে জলাবদ্ধতায় বেড়েছে দুর্ভোগ, ১৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড
ছবি: খবরের কাগজ

টানা দুদিনের বৃষ্টিতে চাঁদপুরে বেড়েছে জলাবদ্ধতা ও জনদুর্ভোগ। কখনো মাঝারি, আবার কখনো মুষলধারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্কুল, কলেজগামী শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষ। বিশেষ করে নীচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় অনেক বসতঘরে পানি ঢুকে পড়েছে।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে চাঁদপুর শহরে নীচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। 

বুধবার (৯ জুলাই) সকালে দেখা গেছে শহরের বিষ্ণুদী মাদ্রাসা রোড, নাজির পাড়া, পালপাড়া, আলিমপাড়া, রহমতপুর কলোনীসহ বেশ কিছু সড়কে জলাবদ্ধতা রয়েছে। এতে করে দুর্ভোগে পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। 

এদিকে টানা বৃষ্টিতে জেলার গ্রামীণ সড়কগুলো ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি শাহরাস্তি ও ফরদিগঞ্জ উপজেলায় গেল বছরের মতো জলাবদ্ধতায় শিকার স্থানীয় বাসিন্দারা। 

অন্যদিকে যাত্রী সংকটে লঞ্চ চলাচলে শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। যাত্রী পেলে ২ থেকে ৩ ঘণ্টার পর ছাড়ছে ঢাকাগামী লঞ্চ।

চাঁদপুর শহরের বিষ্ণুদী মাদ্রাসা রোড এলাকার ব্যবসায়ী বেলাল হোসাইন বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে দোকানের সামনে হাঁটু পানি জমে আছে। যার কারণে কোন ক্রেতা আসছে না। বৃষ্টি চলমান থাকলে দোকানে পানি ঢুকে যাবে।

শহরের মিশন রোড এলাকার বাসিন্দা আলম খান বলেন, টানা বৃষ্টিতে শহরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত এবং শ্রমিকরা কাজে যেতে পারছে না।

চাঁদপুর জেলা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা শাহ মো. শোয়েব জানান, গত ৪৮ ঘণ্টায় সকাল ৬টা পর্যন্ত ১২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বুধবার সকাল ৯ ঘটিকা পর্যন্ত তা বেড়ে ১৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। বৃষ্টিপাত আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মেহেদী/

চট্টগ্রামে ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতা, পাহাড় ধসের শঙ্কা

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০১:১৩ পিএম
চট্টগ্রামে ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতা, পাহাড় ধসের শঙ্কা
নগরের আগ্রাবাদ এলাকায় ভারী বর্ষণে সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রাম নগরে ভারী বর্ষণে সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গত তিন দিনের বর্ষণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হলেও মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। যা বুধবার (৯ জুলাই) বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে জলজটের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত এবং পাহাড়ধসের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। 

বুধবার সরেজমিন দেখা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরের আগ্রাবাদ, চৌমুহনী, হালিশহর, জিইসি, মুরাদপুর, কাতালগঞ্জ, পাঁচলাইশসহ বেশ কিছু সড়কে জলজট তৈরি হয়েছে। পানিতে আগ্রাবাদ এলাকায় কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার ইঞ্জিন বিকল হতে দেখা গেছে। পাশাপাশি ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সড়কে যান চলাচল তুলনামূলক কম দেখা গেছে। এ কারণে বিপাকে পড়েন শিল্পকারখানা, অফিসগামীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ সময় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা ভাড়া বাড়তি আদায়ের অভিযোগ তুলেছেন অনেকেই। 

চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় কথা হয় চাকরিজীবী মো. শাহ আলমের সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার বাসা আগ্রাবাদ। জিইসিতে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করি। স্বাভাবিক সময়ে আমি গণপরিবহনে যাতায়াত করি। আজ গাড়ি কম ছিল। অফিসের দেরি হওয়ায় সিএনজি অটোরিকশা নিতে হয়েছে। ১২০ টাকার ভাড়া আজ ২০০ টাকা দিয়েছি।’ 

আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. আলতাফ বলেন, ‘আমরা এই জলাবদ্ধতা থেকে কবে পরিপূর্ণ রেহাই পাব জানি না। একদিকে হাঁটুসমান পানি, অন্যদিকে ভাঙা রাস্তা। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই জলাবদ্ধতা আমাদের জন্য অভিশাপ। জানি না এই ভোগান্তির শেষ কোথায়।’

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) চট্টগ্রামে ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। 

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মাহমুদুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে বুধবার সকাল থেকে পরবর্তী ১২ ঘণ্টা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া চট্টগ্রামে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।’

সালমান/

 

দাউদকান্দিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার, সেতু চান এলাকাবাসী

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০১:১০ পিএম
আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০১:১৮ পিএম
দাউদকান্দিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার, সেতু চান এলাকাবাসী
ক্যাপশন: ঝুঁকি নিয়ে ইঞ্জিলচালিত ট্রলার দিয়ে গোমতী নদী পার হচ্ছেন এলাকাবাসী। সম্প্রতি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার দাউদকান্দি উত্তর ইউনিয়নে/ খবরের কাগজ

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার দাউদকান্দি উত্তর ইউনিয়নের গোলাপের চর চেঙ্গাকান্দি, গঙ্গাপ্রসাদ ও পার্শ্ববর্তী মেঘনা উপজেলার বাটেরারচর, আলীপুর গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষের কষ্ট যেন দেখার কেউ নেই। এসব গ্রামের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীসহ কয়েক হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন ইঞ্জিলচালিত ট্রলার দিয়ে গোমতী নদী পার হয়ে দাউদকান্দি পৌর সদরে আসেন। তাই এলাকাবাসীর দাবি, এই নদীতে দ্রুত সেতু নির্মাণ করে তাদের দুর্ভোগ দূর করা হোক।

জানা গেছে, গোমতী নদীর স্রোত বেশি। তাই ট্রলার দিয়ে নদী পারাপার হতে গিয়ে প্রতিনিয়ত গ্রামগুলোর সাধারণ মানুষ ও স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। অনেক সময় রাতে ট্রলার বা নৌকার মাঝি না থাকায় পারাপারে ভোগান্তি পোহাতে হয় গ্রামবাসীকে। জরুরি রোগীদের ক্ষেত্রে ভোগান্তির মাত্রা আরও বেশি। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এই গোমতী নদী পার হওয়া অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। 

গোলাপেরচর গ্রামের মো. রবিউল মিয়া বলেন, ‘নদী পারাপারের সময় আমরা আতঙ্কে থাকি। প্রায় সময় এখানে ট্রলার বা নৌকা ডুবে যায়। স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আরও বিপজ্জনক। কারণ অনেক ছাত্র-ছাত্রী সাঁতার জানে না।’

চেঙ্গাকান্দি গ্রামের আকলিমা আক্তার বলেন, ‘ব্রিজের অভাবে এই গ্রামের মানুষকে সারা বছর দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে স্কুলের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রী এবং গর্ভবতী নারীদের জন্য নৌকায় পার হওয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। যদি সরকার একটি ব্রিজ তৈরি করে দেয়, তাহলে আমাদের যাতায়াতের জন্য অনেক সুবিধা হতো।’ 

দাউদকান্দি আদর্শ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী তাসলিমা বলে, ‘বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বেশি থাকায় প্রায়ই নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। কর্তৃপক্ষ যেন এখানে সেতু নির্মাণের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।’

চেঙ্গাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘নদীর দুই পাশ মিলিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসাসহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিক্ষার্থীসহ প্রায় ১৫ থেকে থেকে ২০ হাজার মানুষ প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে বা নৌকায় গোমতী নদী পারাপার হন। তাই এখানে দ্রুত একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানাই।’

দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাঈমা ইসলাম বলেন, ‘সেতু না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে নদী পারাপারে শিক্ষার্থী, গর্ভবতী মা ও সাধারণ রোগীরা কষ্ট পাচ্ছেন- বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। গ্রামবাসী যদি একটি ব্রিজ দাবি করে লিখিতভাবে জানান তাহলে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হবে।’

দাউদকান্দিতে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১২:০৫ পিএম
দাউদকান্দিতে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত
ছবি: খবরের কাগজ

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় সোমবার (৭ জুলাই) থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষজন। বৃষ্টির কারণে ব্যাহত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার পৌর সদর, গৌরীপুর,  ইলিয়টগঞ্জ, রায়পুর, মেঘনা - গোমতী  টোলপ্লাজা ও গৌরীপুর আঞ্চলিক সড়কসহ বেশ কিছু গ্রামীণ সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ সমস্ত রাস্তা দিয়ে পানি উপেক্ষা করে চলাচল করছে মানুষ। এ ছাড়াও গ্রামগুলোতে অনেক দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতি বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া ও দিনমজুর শ্রেণীর মানুষ। অন্যদিকে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় গোমতী নদ-নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. বাবুল মিয়া জানান, এমন টানা বৃষ্টিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজকর্মও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেকে প্রয়োজনীয় কেনাকাটাও করতে পারছেন না। স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী  শিশু ও বৃদ্ধদের ঘর থেকে বের হওয়াই দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে।

সবজিকান্দি গ্রামের অটোরিকশাচালক মো. লাল মিয়া বলেন, সোমবার দুপুর এখন পর্যন্ত প্রচুর বৃষ্টি। ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। রাস্তায় যাত্রী নেই, বৃষ্টিতে রিকশা চালানো যাচ্ছে না। সকাল থেকে বসে আছি রাস্তায় কোনো মানুষের দেখা নাই। ইনকামও নাই। এভাবে চলতে থাকলে সংসার চালানো বড় কষ্টকর হয়ে যাবে। 

সবজি বিক্রেতা মো. মিজানুর রহমান বলেন, সারারাত ও সকাল থেকে এত বৃষ্টিতে বাড়ি থেকে বের হওয়ায় কঠিন। কাজ-কাম কি ভাবে করব। বিপদে আছি। খামু কি? চিন্তা করে পাচ্ছি‌ না আল্লাহই জানে। 

দাউদকান্দি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী শিউলী আক্তার বলে, প্রচণ্ড বৃষ্টিতে ইউনিফর্ম ভিজে গেছে তবুও আজকে আমাদের পরীক্ষা আছে। তাই বৃষ্টি উপেক্ষা করে পরীক্ষা দিতে স্কুলে যেতে হচ্ছে। 

জেলা আবহাওয়া সূত্রে জানা গেছে আগামী কয়েকদিন এমন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। 


লিটন/মেহেদী/

টানা বৃষ্টিতে ডুবে গেছে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল, বিপর্যস্ত জনজীবন

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১১:৪১ এএম
আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১১:৪৫ এএম
টানা বৃষ্টিতে ডুবে গেছে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল, বিপর্যস্ত জনজীবন
ছবি: খবরের কাগজ

টানা বর্ষণে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। শহরজুড়ে জল, কোথাও কলাগাছে ভেলা, কোথাও ককশিটে করে শিশুসহ জিনিসপত্র নিয়ে নৌকার মতো ভেসে চলেছেন বিপন্ন মানুষ। রান্না, পানীয় জল ও স্যানিটেশনের ভয়াবহ সংকটে পড়েছেন হাজার হাজার পরিবার।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিস জানায়, গত দুই দিনে প্রায় ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এতে সাতক্ষীরা পৌরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ডে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কামালনগর, ইটাগাছা, পলাশপোল, মধুমোল্লারডাঙি, মেহেদীবাগ, রসুলপুর, বদ্দিপুর কলোনি, রইচপুর, মধ্য কাটিয়া, রথখোলা, রাজারবাগান, গদাইবিল, মাঠপাড়া, পার-মাছখোলা ও পুরাতন সাতক্ষীরা অঞ্চলে পানি থৈ থৈ করছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ৭ ও ৯নং ওয়ার্ডে।

ইটাগাছা বিলপাড়ার বাসিন্দা নাজমুল হাসান বলেন, 'ঘের মালিকরা বিলে পানি আটকে রেখেছে। বাইপাসের স্লুইস গেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানি খালে নামছে না। ফলে ঘর-পথ-আঙিনা সব পানিতে তলিয়ে গেছে।'

বদ্দিপুর কলোনির গৃহবধূ শাহানারা বেগম বলেন, '১০ বছর ধরে প্রতিবছর এমনটা হয়। কিন্তু কোনো সমাধান নেই। এবার রান্নাঘরেও পানি উঠেছে, হাঁড়ি-পাতিল নষ্ট হয়ে গেছে। পোকামাকড়ের উপদ্রবে ঘুমানোও যাচ্ছে না। সন্তানদের নিয়ে নিরাপদ জায়গায় যেতে হয়েছে।'

বিল দখলে মাছের ঘের, সংকটে শহর:

কুখরালি এলাকার বাসিন্দা ইকরামুল হাসান অভিযোগ করে বলেন, 'প্রভাবশালীরা বিলের মুখ বন্ধ করে মাছের ঘের করছে। খালের মুখে নেট-পাটা বসিয়ে দিয়েছেন। ফলে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।'

এইচএসসি পরীক্ষার্থী আফসানা মিমি বলেন, 'পানির কারণে সময়মতো পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে পারছি না। টিউবওয়েল পানিতে ডুবে গেছে। বাধ্য হয়ে পানি কিনে ব্যবহার করতে হচ্ছে।'

ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে:

সমাজকর্মী সাজেদুল ইসলাম বলেন, 'নদী ও খাল খননে অনিয়ম হয়েছে। কাগজে-কলমে পাড় উঁচু করে গভীরতা দেখানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে পানি বের হওয়ার পথ বন্ধ। ফলে বর্ষার পানি লোকালয়ে ঢুকে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে।'

সাতক্ষীরা আদালতের আইনজীবী ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, 'বছরের পর বছর সাতক্ষীরার মানুষ একই দুর্ভোগে পড়ে আছে। পৌর মেয়র ও কাউন্সিলররা শুধু নির্বাচনের সময় এলাকায় দেখা দেন। এখন বলছেন, সরকার পরিবর্তনের পর ঠিকাদার পালিয়ে গেছে তাই কাজ হয়নি। অথচ সমাধান খুব সহজ- নেটপাটা সরানো, স্লুইস গেট সচল রাখা, প্রকৃত গভীরতা অনুযায়ী খাল খনন ও বাঁধ সংস্কার।'

প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া:

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমাদ বলেন, '২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫০ কিমি খাল ও সেচনালা সংস্কার করা হয়েছে। দ্রুত স্লুইস গেট খুলে দেওয়া হবে। প্রাণসায়ের খালে পানি ফেলার বিকল্প ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশা করছি, এতে জলাবদ্ধতা কিছুটা কমবে।'

সাতক্ষীরার জনগণ এখন টেকসই ড্রেনেজ পরিকল্পনা ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য অপেক্ষা করছে। বর্ষা আসলেই বিপর্যয় যেন নতুন নয়, এটা রুটিন দুর্যোগে রূপ নিয়েছে।

নাজমুল/মেহেদী/