ঢাকা ২৫ আষাঢ় ১৪৩২, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫
English

ময়মনসিংহ নগরী ডুবছে সামান্য বৃষ্টিতেই

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৫, ০১:৫৩ পিএম
আপডেট: ০৪ জুন ২০২৫, ০১:৫৬ পিএম
ময়মনসিংহ নগরী ডুবছে সামান্য বৃষ্টিতেই
কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে জমে গেছে পানি। বাধ্য হয়ে হাঁটুপানি মাড়িয়ে কয়েকজন ক্রেতা নিত্যপণ্য কিনতে দোকানে গেছেন। ময়মনসিংহ নগরের ধোপাখলা এলাকা থেকে গত রবিবার তোলা/ খবরের কাগজ

ময়মনসিংহ নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন খাল খনন, পরিষ্কার ও ড্রেন নির্মাণকাজে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে সিটি করপোরেশন। অথচ প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই নগরে পানি জমে যায়। নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ডুবে যাওয়াসহ বাসাবাড়িতে পানি উঠে পড়ে। তখন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। কিন্তু চলতি বছর বর্ষা মৌসুমের আগে সিটি করপোরেশন জানিয়েছিল, এবার জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। নগরে এবার জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা কম। কিন্তু এরই মধ্যে দেখা গেল উল্টো চিত্র।

গত রবিবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ময়মনসিংহে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। মাত্র তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর সানকিপাড়া, আকুয়া, গোলকিবাড়ী, বলাশপুর, খাগডহর, চরপাড়া, ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড, বদরের মোড়, ধোপাখলা, কাশর মসজিদের মোড়, জেলখানা রোড, আনন্দ মোহন কলেজ ও ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ওইদিন বিকেল পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নগরবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে দেখা যায়।

তখন স্থানীয়রা জানান, নোংরা ও ময়লাযুক্ত পানিতে বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে গেছে। আবাসিক বাসাবাড়ি, দোকানপাট, কাঁচাবাজার ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ময়লাযুক্ত পানি ঢুকে পড়েছে। এতে তারা তখন চরম ভোগান্তিতে পড়েন। তারা জানান, সারা বছর নগরীর বিভিন্ন সড়কে ড্রেনের উন্নয়নকাজ করা হয়। প্রতিবছর খালও পরিষ্কার করা হয়। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ড্রেন নির্মাণসহ খাল খনন ও পরিষ্কারকাজে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছেন সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অথচ তা কোনো কাজেই আসছে না। মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে গেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের নামে মোটা অঙ্কের টাকা হরিলুট করা হয়েছে। ফলে প্রতিবছর কার্যক্রম চললেও ফলাফল শূন্য।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) সূত্রে জানা যায়, সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য ২০২০ সালে বিশেষ প্রকল্প হিসেবে ৮৬টি প্যাকেজে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এখনো শতভাগ কাজ শেষ হয়নি। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীর বিভিন্ন খাল খনন ও পরিষ্কারে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৫ লাখ ১৬ হাজার ৮৫০ টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৪ লাখ ৮৫ হাজার ৮৪০ টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬০ লাখ ৩০ হাজার এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয় করেছে সিটি করপোরেশন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে খাল খনন, পরিষ্কার ও ড্রেন নির্মাণকাজ এখনো চলমান।

নগরীর আকুয়া এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘রবিবার মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এমন চিত্র দেখেই বোঝা যায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া কার্যক্রম ব্যর্থ হয়েছে। যদি জলাবদ্ধতাই থাকে, তাহলে কোটি কোটি টাকা খরচ করার কারণ কি?’

তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের ২০ মে সকাল পৌনে ১০টা থেকে ময়মনসিংহে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়। মাত্র ৪৫ মিনিটের এই বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। কিছুক্ষণের বৃষ্টিতে নগরবাসীর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। টানা কয়েকদিন বৃষ্টিপাত হলে চরম জলাবদ্ধতায় নগরবাসীকে মাত্রাতিরিক্ত ভোগান্তি পোহাতে হবে।’

গোলকিবাড়ী এলাকার বাসিন্দা নাজমুল হক বলেন, ‘বিগত কয়েকবছরে জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীর বিভিন্ন খাল খনন ও ড্রেন নির্মাণে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অথচ আমরা জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাচ্ছি না। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।’

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, ‘নগরীতে অনেকগুলো ড্রেনের পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। আবার নতুন করে ১২০ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ হচ্ছে। এগুলো শেষ হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।’

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুমনা আল মজীদ বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে আমাদের চেষ্টার কমতি নেই। প্রয়োজনীয় কাজের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসীর ভোগান্তি নিরসনের চেষ্টা চলছে। তবে নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে। ড্রেনে ডাবের খোসা, চিপসের প্যাকেট ও পলিথিন ফেলা যাবে না। এতে অনেক সময় ড্রেন দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে না পেরে পানি রাস্তায় উঠে পড়ে।’

১২ দিন পর মুরাদনগরে ধর্ষণের শিকার নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, কারাগারে ৪ আসামি

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ১০:৪৪ পিএম
১২ দিন পর মুরাদনগরে ধর্ষণের শিকার নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, কারাগারে ৪ আসামি
ছবি: খবরের কাগজ

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পাঁচকিত্তা গ্রামে ঘরে ঢুকে এক নারীকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ১২ দিন পর ভুক্তভোগীর স্বাস্থ্যপরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) কুমিল্লার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মুরাদনগর থানার উপ-পরিদর্শক রুহুল আমিন। এর আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ভুক্তভোগীকে হাসপাতালে পাঠানো হলেও তিনি পরীক্ষা করতে অসম্মত হন।

এদিকে ওই ঘটনার অশালীন সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার পর্নোগ্রাফি মামলায় গ্রেপ্তার চার যুবককে তিন দিনের রিমান্ড শেষে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

মঙ্গলবার বিকেলে কুমিল্লার আমলি আদালত-১১-এর বিচারক মমিনুল হকের আদালতে আসামিদের হাজির করা হলে শুনানি শেষে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, গ্রেপ্তারের পর আসামিদের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে তাদের আবার আদালতে হাজির করা হয়। 

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- মো. সুমন (২২), রমজান (২৩), মো. আরিফ (২৪) ও মো. অনিক (২২)।

উপপরিদর্শক রুহুল আমিন বলেন, ‘আমরা সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলাম, আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত তিন দিন রিমান্ডে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে সেগুলো এখন প্রকাশ করা হচ্ছে না। সময়মতো বিস্তারিত জানানো হবে। আজ আদালতে চারজনের মধ্যে দু’জনের জবানবন্দি দেওয়ার কথা জানালেও পরে তারা তা দেননি। পরে আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠান।’

এদিকে ওই নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা ধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তার এক মাত্র আসামি ফজর আলী এখনো অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সে সুস্থ হলে মামলার পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করা যাবে বলেও জানিয়েছে মুরাদনগর থানা পুলিশ।

জহির শান্ত/মাহফুজ

ঝিনাইদহে পিকআপের ধাক্কায় প্রাণ গেল ২ ভাইয়ের

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ১০:০৮ পিএম
ঝিনাইদহে পিকআপের ধাক্কায় প্রাণ গেল ২ ভাইয়ের
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় শফিকুল ইসলাম (১৯) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী ও তার চাচাতো ভাই হাবিব নিহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকেলে কোটচাঁদপুর উপজেলার বলুহর এলাকার ডাকাততলা ব্রিজের উপর মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত শফিকুল ইসলাম ও হাবিব মহেশপুর উপজেলার আজমপুর গ্রামের বাসিন্দা। 

স্থানীয়রা খবরের কাগজকে জানান, মঙ্গলবার বিকেলে শফিকুল ইসলাম কোটচাঁদপুর থেকে মোটরসাইকেলে করে তার চাচাতো ভাই হাবিবকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে উপজেলার ডাকাততলা ব্রিজের ওপর পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পিকআপ তাকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেল আরোহী শফিকুল ইসলাম মারা যান। আহত হাবিবকে কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে রেফার করেন। রাত ৮টার দিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে হাবিব মারা যান।

কোটচাঁদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন মাতুব্বর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে খবরের কাগজকে জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। ঘাতক পিকআপটি আটক করা যায়নি। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মাহফুজুর রহমান/

 

জলবায়ু বাস্তুচ্যুতদের জন্য মৃত্যু নয়, বেঁচে থাকাই শাস্তি

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫২ পিএম
জলবায়ু বাস্তুচ্যুতদের জন্য মৃত্যু নয়, বেঁচে থাকাই শাস্তি
১৯৮৮ সালের ঘূর্ণিঝড়ে গৃহহারা হয়ে সাতক্ষীরা শহরের বলফিল্ড বস্তিতে আশ্রয় নেন আমিরুন বেগম। ৩৭ বছরের বস্তি জীবনে তার ঘরে কখনও বিদ্যুতের আলো জ্বলেনি।

১৯৮৮ সালের এক শীতল সকালে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের এক বিধ্বস্ত গ্রামে দাঁড়িয়ে ছিল বারো বছরের এক কিশোরী। নাম তার আমিরুন বেগম। ঘূর্ণিঝড়ে ভেসে যাওয়া ঘর, নিঃস্ব পরিবার আর অশ্রুসিক্ত চোখে সে বুঝে গিয়েছিল—এই দেশ, এই মাটি তাকে আর আগলে রাখবে না। স্বামীর হাত ধরে যখন বস্তিতে আশ্রয় নেয়, তখনও জানত না, সামনে অপেক্ষা করছে দীর্ঘতর এক দুঃস্বপ্ন।

৩৭ বছর কেটে গেছে। কিন্তু আমিরুনের জীবন থেমে আছে সেই প্রথম বাস্তুচ্যুতির দিনে। তার ঘরে নেই বিদ্যুৎ, নেই স্যানিটেশন, নেই নিরাপদ পানি। রাত হলে একটি মাত্র কেরোসিন ল্যাম্পের আলোতে কাঁপে তার ছায়া, যেমন কাঁপে তার ভবিষ্যতের সমস্ত সম্ভাবনা। ৬ সন্তানের কেউ দেখে না তাকে। 

‘পায়ে বল থাকলে ভিক্ষা করি, না থাকলে খালি পেটে শুয়ে থাকি। বস্তির এ মাথা থেকে ও মাথা কেউ জানে না, কে বাঁচে, কে মরে,’—নীরব গলায় বলেন আমিরুন।

স্বামীকে হারিয়েছেন দুই যুগ আগে। কিন্তু এই রাষ্ট্র এখনো খোঁজ নেয়নি তার। কোনো বিধবা ভাতা নেই, স্বাস্থ্যসেবা নেই, এমনকি কেউ জানতেও চায় না—তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কেমন আছে এই নারী। তার জীবনের প্রতিটি দিন যেন নিষ্ঠুরতার নতুন অধ্যায়। এই গল্প কেবল আমিরুনের নয়, এই গল্প সাতক্ষীরার বাস্তুচ্যুত এক লাখ মানুষের। 

১৯৮৮ সালের সেই বিভীষিকাময় ঝড়ে শ্যামনগরের নিঃস্ব ঘরে শেষ নিঃশ্বাস ফেলেছিল অনেক স্বপ্ন। দশ বছরের নববধূ আমিরুন বেগম তখনও বুঝে উঠতে পারেননি—ঘর ভাঙার অর্থ কী। সেই থেকে শুরু হয় তার জীবনের একপক্ষীয় যুদ্ধ—যেখানে প্রতিপক্ষ ছিল অনাহার, অন্ধকার আর রাষ্ট্রীয় অবহেলা।

৩৭ বছর ধরে তিনি আটকে আছেন সাতক্ষীরা পৌরসভার কুখরালী বলফিল্ড বস্তির একচালা ঘরে। বিদ্যুৎ নেই, ফ্যান নেই, রোদ বা বৃষ্টির দিনে ছাউনির টিন কাঁপে, আর রাত হলে একটি মাত্র ল্যাম্পের বাতিতে জ্বলে ওঠে তার জীবনের অন্তহীন ক্লান্তি। ‘পায়ে বল থাকলে ভিক্ষা করি। না থাকলে উপোস করে ঘুম,’—এই বাক্যেই বন্দি তার ৩৭ বছরের বেঁচে থাকা। স্বামী হারিয়েছেন দুই যুগ আগে, রাষ্ট্র দিয়েছে কেবল নীরবতা।

ইব্রাহীমের ঘরে আলো নেই, ছেলের শরীরে জীবন নেই

ইব্রাহীম হোসেন জন্ম নিয়েছেন বস্তিতে, নদীভাঙনে উদ্বাস্তু এক বাবার সন্তান। এখন তিনিও বন্দি—এক প্রতিবন্ধী সন্তানের কান্না আর রাষ্ট্রের নীরবতার ভেতর।

ইব্রাহীমের ৪ বছর বয়সী ছেলে নয়ন গাজীর শরীরে পুষ্টি নেই, চোখে দৃষ্টি আছে, কিন্তু ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সারা দিন মাটিতে পড়ে থাকে—একটা শরীর, যেটা কেবল শ্বাস নেয়, বাঁচে না।

‘ভাতার টাকায় একদিনের ওষুধ হয় না,’—বলতে বলতে গলা কাঁপে ইব্রাহীমের। হুইলচেয়ার নেই, চিকিৎসা নেই। ইব্রাহীম বলেন, ‘ঘরে জ্বলে একমাত্র বাল্ব—সেটিও টানা তারে। অন্যের বাসা থেকে সাইট লাইনে বিদ্যুৎ আসে, মাসে ১০০ টাকার বিনিময়ে। ফ্যান, ফ্রিজ নিষিদ্ধ। মোবাইল চার্জ দেওয়া যায়—কিন্তু, শর্ত একটাই—বাল্ব যেন বেশি না জ্বলে। আলো নয়, অভাবই এই ঘরের নিয়তি।”

ডলি শান্তা: পানি মানেই লড়াই

শহর যেখানে বোতলজাত পানি টেবিলে উঠে, সেই শহরেরই আরেক পাশে পিপাসার নাম—সাতক্ষীরা। সেখানেই বাস করেন ডলি শান্তা, সাতক্ষীরা পৌর এলাকার এক বস্তিতে। তার সকাল শুরু হয় আধা কিলোমিটার দূরের টিউবওয়েলে। তিন শতাধিক পরিবারের ভিড়ে পানির লাইনে দাঁড়িয়ে। এক কলস পানির জন্য প্রতিদিন হারান ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আর সময় হারালে কাজ হারান। যার প্রভাব পড়ে সংসারে।

“কাজ করতে পারি, ঘাম ঝরাতে পারি—কিন্তু মালিকের চোখে আমি ‘পানি আনতে দেরি করা মেয়েমানুষ’। একটা কলসের জন্য অনেক বার কাজ চলে গেছে।”

কংক্রিটের শহরের নিচে চাপাপড়া মানুষ

শুধু আমিরুন-ইব্রাহীম নন। বরং সাতক্ষীরা পৌরসভার ৪৭ বস্তিতে বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা প্রায় এক লাখ মানুষের গল্প একই ধরনের। এ সমস্ত বস্তিবাসীর একটি বড় অংশ এসেছে উপকূলীয় ও নদীভাঙন প্রবল অঞ্চল থেকে। সহায়-সম্বল হারিয়ে বেঁচে থাকার আশা নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে বাঁচার জন্য তাদের অধিকাংশ বছরের পর বছর সাতক্ষীরা পৌর শহরের ঘিঞ্জি এলাকায় কোনোভাবে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু অভাব, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, বন্যা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তাদের পিছু ছাড়ে না। কয়েক ফুটের ছোট্ট ঘরেই রান্নাবান্না খাওয়া ঘুম এক ঘরেই। আর সেই ঘরে বন্দি তাদের কষ্টের জীবন।

পানি সংকট: বেঁচে থাকাটাই বিলাসিতা

সাতক্ষীরার বস্তিগুলোতে সুপেয় পানি পাওয়াই সবচেয়ে বড় যুদ্ধ। প্রতিটি টিউবওয়েলের ওপর নির্ভর করে শত শত পরিবার। গ্রীষ্মকালে টিউবওয়েল শুকিয়ে যায়। তখন জারের পানি কিনতে হয় ২৫-৩০ টাকা দিয়ে। সেই পানি দিয়েই রান্না। আর নোংরা অপরিচ্ছন্ন পানিতে গোসল, প্রস্রাব–পায়খানা সবকিছু হয়।

স্যানিটেশন: স্বাস্থ্য নয়, অপমান

সাতক্ষীরা পৌর এলাকার প্রতিটি বস্তিতে শৌচাগারের অবস্থা ভয়াবহ। অধিকাংশই রিংবিহীন, খোলা পরিবেশে, পলিথিন বা টিন দিয়ে ঘেরা। নারীরা রাতে টয়লেট যেতে ভয় পান, আর শিশুদের জন্য এটি জীবনের ঝুঁকি।

কামালনগরের এক গৃহবধূ জানান, গর্ভবতী অবস্থায় টয়লেটের কাছে পড়ে গিয়ে দুইবার রক্তপাত হয়েছে। ডাক্তার বলেছিল বিশ্রাম দরকার, কিন্তু বিশ্রামের জায়গা কোথায়?

স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সংকট: ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকা

বস্তিগুলোতে শিশুরা জন্ম নেয়, কিন্তু বড় হয় না—ওজন কম, শরীর দুর্বল, চোখে অনাগত অসুখের ছায়া। BRAC Urban Health Survey অনুযায়ী, সাতক্ষীরা পৌরসভার বস্তিগুলোর অন্তত ৪৬ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে ভোগে। জন্ম থেকেই তাদের শরীর হয় লড়াইয়ের মাঠ—ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড যেন ঘরোয়া রোগ।

অপুষ্টি শুধু পেটের ক্ষুধা নয়, এটি দৃষ্টি নষ্ট করে, শিখতে দেয় না, জীবনকে ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে।

সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আবুল বাশার আরমান বলেন, ‘বস্তির শিশুরা শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী প্রজন্ম অসুস্থ, দুর্বল ও বিপন্ন হবে। এটা শুধু স্বাস্থ্য সমস্যা না, এটা জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন।’

কর্মসংস্থান ও আয় সংকট: ঘামের বদলে অপমান

এই বস্তিগুলোর অধিকাংশ পুরুষ ও নারী কাজ পান না প্রতিদিন। কেউ রিকশা চালান, কেউ দিনমজুরি করেন, কেউ কেউ হকারি। কিন্তু আয় অস্থায়ী। দিনে ২০০–৩০০ টাকা, কোনো দিন খালি হাতে ফিরতে হয়। দিনে যেটা পান সেই টাকায় খাওয়া, ভাড়া, ওষুধ, স্কুল সবকিছু সামলানো অসম্ভব।

ইব্রাহীম হোসেন বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি। কাজ পাই না। ছেলে প্রতিবন্ধী, বছরে ৩ বার ভাতা পাই। সেটা দিয়ে সংসার চালাতে হয়। আর এভাবে ৪ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী নয়নের তিন বছর ধরে পাওয়া ভাতার টাকাতে ইব্রাহীমের সংসার চলছে।’

সুদের চক্র: পুঁজি নয়, বেঁচে থাকার মূলধনই বন্ধক

সাতক্ষীরা পৌর এলাকার বস্তিবাসীরা চিকিৎসা, খাবার কিংবা স্কুলের খরচ সবকিছুর জন্যই ঋণ করেন। তাদের কাছে ঋণ মানে করুণা নয়, এক জ্যান্ত দাসত্ব। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বস্তিবাসীরা সহায়তা পান না। এক হাজার টাকা ধার নিলে, সেখানে সুদ দিতে হয়। কেউ সুদের টাকা ফেরাতে ফেরাতে শেষমেশ নিজের শরীরটাই বিকিয়ে দিতে বসেন। এই চক্র থেকে কেউ বের হতে পারেন না। কারণ, ঋণ থেকে বেরিয়ে আসা মানে বাঁচা নয়, বরং অস্তিত্ব হারানো।

কেউ এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে হাঁস-মুরগি পালন শুরু করেন, কেউ ছোট চায়ের দোকান দেন। কিন্তু পুঁজি বাড়ার আগেই কিস্তি এসে দাঁড়ায় দরজায়—জীবন থেমে যায়, ব্যবসা ভেঙে পড়ে।

এদিকে সাতক্ষীরা শহরের বস্তি এলাকাগুলোতে সুদের চক্রে আটকে আছে শত শত পরিবার। একাধিক ভুক্তভোগী বলেন, ‘ঋণ করে সরকারি জমিতে একচালা ঘর বা দোকান তুলছিলাম। কিন্তু গত বছর প্রশাসন সেই ঘর-দোকান উচ্ছেদ করে দেয়। এখন কিস্তির টাকা দিতে না পেরে বাড়ি ফেলে পালিয়ে থাকতে হয়। সুদের লোক ঘরে এলে, শুধু টাকা না—আমাদের বেঁচে থাকার জায়গাটুকুও আর থাকে না।’

এই শহরে আশ্রয় নেই, ব্যবসা নেই, আস্থাও নেই। থেকে যায় শুধু কিস্তির খাতা আর ভাঙা ঘরের স্মৃতি। এ নিয়ে অনেকের মাঝে আক্ষেপ থাকলে বাস্তবতাকে মেনে এই জীবনে অভ্যস্ত হয়েছেন তারা।

শিক্ষা সংকট: ভবিষ্যৎহীন প্রজন্ম

বস্তির শিশুরা স্কুলে যায় না বললেই চলে। সরকারি স্কুলে জায়গা হয় না, বেসরকারি স্কুলে ফি দেওয়া অসম্ভব। মেয়েদের জন্য নিরাপদ যাতায়াত নেই বলে ১২–১৩ বছরেই তাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়।

সাতক্ষীরা প্রাণসায়ের খালধারের বস্তিতে বাস করা আজিবার রহমান বলেন, ‘আমার মেয়ে ক্লাস থ্রিতে থাকতে বিয়ে দিয়েছি। মেয়ের বয়স এখন সতেরো। তার কোলে তিন বছরের সন্তান।’ 

তিনি বলেন, ‘ভাবছিলাম মেয়েটারে পড়াব, কিন্তু ছেলেরা উত্ত্যক্ত করত। সম্মানের তাগিদে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিই।’

প্রাণসায়েরে এখন স্রোত নয়, শোক বইছে

যে খালে একসময় জল বইত, এখন সেখানে বইছে বস্তির গন্ধ, গ্লানি আর গর্হিত রাষ্ট্রের মুখোশহীনতা। সাতক্ষীরা শহরে বস্তিগুলোর জন্য নেই কোনো বর্জ্য ব্যবস্থা। যা পচে, যা দগদগে, যা সমাজ ছুঁতে চায় না— তার বড় একটি অংশ ফেলে দেওয়া হয় প্রাণসায়ের খালে। এখন আর এটা খাল নয়—একটা চলমান শবগৃহ। প্লাস্টিক, ডায়াপার, পচা খাবার, মল-মূত্র… আর দিনের দুবার সেই গন্ধভরা স্রোত ফিরে আসে জোয়ারে। শহরের মিনারেল ওয়াটার ঘরে ঢোকে, আর খালে ভেসে চলে গরিবের অপমান। এই পানিতে গোসল করে শিশুরা, খেলে, হাসে, কাশে, ঘুমায়… এবং চুপচাপ অসুস্থ হয়। সাতক্ষীরা কুখরালী এলাকার খালধারের বাসিন্দারা বলেন, ‘খাল ছাড়া পথ নাই। ওখানেই ধুই। এরপর জ্বর, পুঁজ, গা-পোড়া লাগে। কিন্তু কিছু তো করার নাই!’

শৌচাগার: অপমানের অপর নাম

সাতক্ষীরার বিভিন্ন বস্তি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এখানে টয়লেট মানে নয় গোপনতা, নয় নিরাপত্তা—বরং এক অমানবিক খাঁচা। রিংবিহীন গর্ত, চারদিকে পলিথিনে মোড়া লজ্জার দেয়াল। মেঝেতে পানি, কাদা এবং ভেসে থাকা মানুষের অপমান। সকালে যেতে লজ্জা, রাতে যেতে ভয়। মায়েরা তাদের কিশোরী মেয়েকে দুপুরে যেতে দেয় না—‘দিনের আলোয় ওখানে গেলে, মেয়েটা আর মেয়ে থাকে না।’ 

এই টয়লেটগুলো কেবল মলমূত্র রাখে না—এগুলো গিলে ফেলে নারীর সম্মান, শিশুর নিরাপত্তা, আর মানুষের মর্যাদা। শৌচাগার নয়, এ যেন প্রতিদিনের এক বোবা অত্যাচার—যেখানে প্রতিটি প্রবেশ এক অপমান, আর প্রতিটি বের হওয়া এক ক্ষত।

ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প: অন্ধকারেও সম্ভাবনার আলো

সব অন্ধকারে কিছু মানুষ জ্বলে ওঠেন আশার মতো। পারকুখরালী এলাকার বস্তির ইয়াসমিন খাতুন ছিলেন একসময় গৃহবধূ, স্বামীর অকার্যকর সংসারের বোঝা। এখন নিজের ঘরের সামনে গড়ে তুলেছেন পুষ্টি বাগান, পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রান্নার কাজ করেন।

৫ হাজার টাকার এনজিও ঋণেই শুরু করেছিলেন। আজ দিনে আয় হয় ৫০০–১০০০ টাকা।

‘স্বামী আয়ে সংসার চলছিল। বাধ্য হয়ে ১২ বছরের মেয়ে বিয়ে দিয়েছিলাম। তারপরেও সংসারে স্বচ্ছতা ফিরিনি। একদিন ভাবলাম—এই ঘর বাঁচাতে হলে আমাকে দাঁড়াতেই হবে। এখন কিস্তিও দেই, কিছু জমেও যাচ্ছে।’ — বলেন ইয়াসমিন।

একই এলাকার আজমির হোসেন। অনেক কষ্টে টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ নিয়ে হয়েছেন একজন স্যানিটারি মিস্ত্রি। আগে ছিলেন বেকার, এখন দিনে আয় করেন ৫০০–৭০০ টাকা।

‘সবসময় কাজ থাকে না। কিন্তু একটা জিনিস বুঝেছি—নিজের হাতের কাজ থাকলে কেউ ঠকাতে পারে না।” — বলেন আজমির।

এই গল্পগুলো ছোট, কিন্তু বার্তা বড়

সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ আর সম্মান পেলে, প্রান্তিকরাও পেছনে থাকেন না—তারা উঠতে জানেন। যারা অন্ধকারে জন্মায়, তারাও আলো বানিয়ে নেয়।

সাতক্ষীরার বাস্তুচ্যুতরা কী জানেন, আর কী জানেন না

সাতক্ষীরা শহরের যেসব এলাকায় জলবায়ু বাস্তুচ্যুত মানুষজন বসতি গড়েছেন—সেগুলো শহরের মানচিত্রে থাকলেও, নাগরিক সেবার খাতায় প্রায় অদৃশ্য। বস্তির মানুষ জানেন না কোথায় গেলে পানীয় জল মিলবে, কোথায় গেলে চিকিৎসা পাওয়া যাবে, আর কীভাবে সরকারি সহায়তা পাওয়ার আবেদন করতে হয়।

পৌরসভার দৃষ্টিভঙ্গি

সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রশাসক মাশরুবা ফেরদৌস বলেন, ‘সাতক্ষীরা শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। জমির সংকট, পুরোনো অবকাঠামো আর বাজেটের ঘাটতি আমাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে দিচ্ছে না। যেখানে ডাস্টবিন বসাতে চাই, সেখানেও স্থানীয়ভাবে বাধা আসে।’

তিনি আরও জানান, পৌরসভা এখন উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করছে এবং মন্ত্রণালয়কে বলেছে যেন এ জন্য বিশেষ প্রকল্প নেওয়া হয়।

গবেষক ও উন্নয়ন সংস্থার দৃষ্টিভঙ্গি

শিশুদের পুষ্টি, নারীর স্বনির্ভরতা, নিরাপদ পানি ইত্যাদি নিয়ে কাজ হয় বটে, কিন্তু তা প্রকল্পভিত্তিক। প্রকল্প শেষ মানেই সহায়তা শেষ। স্থানীয় বাস্তবতা নীতিতে প্রতিফলিত হয় না—এটাই সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।

বস্তিবাসীর উপলব্ধি ও অজ্ঞতা

অনেকে জানেন না, তারা কোথায় অভিযোগ জানাতে পারেন। কীভাবে চিকিৎসার ভাতা পাওয়া যায়, সেটাও স্পষ্ট না। কেউ কেউ নিজের চেষ্টা ও এনজিওর সহায়তায় ঘুরে দাঁড়িয়েছেন—তবে এসবই বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ। কিন্তু অনেকেই জানেন না—তাদেরও আছে বলার অধিকার, জানার অধিকার।

রাষ্ট্রীয় আইন কী বলছে?

দেশের সংবিধান (ধারা ১৫) অনুযায়ী: প্রত্যেক নাগরিকের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আর ২০০১ সালের হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী: পুনর্বাসন ছাড়া কোনো বস্তি উচ্ছেদ করা যাবে না।

ঘরহীনদের নামে নীরব রাষ্ট্র—কী হতে পারে সমাধান

মাধব চন্দ্র দত্ত, সাতক্ষীরার বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও নাগরিক নেতা। দীর্ঘদিন ধরে বস্তিবাসীর মানবিক অধিকার ও পুনর্বাসনের দাবিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘সাতক্ষীরায় উপকূল ও নদীভাঙন থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বস্তিতে ঠাঁই নেওয়া মানুষরা এখন রাষ্ট্রীয় সেবাব্যবস্থার বাইরে। তারা নাগরিক, কিন্তু নাগরিক হিসেবে গণ্য নন।’

এই বাস্তুচ্যুতি শুধুই পরিবেশগত নয়, এটি একটি জটিল মানবিক সংকট—যেখানে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টি, নিরাপত্তা ও মর্যাদা সবই অনিশ্চিত। অথচ দেশের সংবিধান বলছে, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে সিডিজি (SDG), সেন্ডাই ফ্রেমওয়ার্ক ও UN Guiding Principles on Internal Displacement–এ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেখানে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু সাতক্ষীরা আজ সেই প্রতিশ্রুতির বিপরীতে দাঁড়িয়ে এক নীরব বিপর্যয়ের নাম। এই নীরবতা শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়—এটি আন্তর্জাতিক দায় অস্বীকারের সমান। সাতক্ষীরার বাস্তুচ্যুতরা এখন আমাদের উন্নয়ন নীতির আয়নায় সবচেয়ে স্পষ্ট অথচ উপেক্ষিত প্রতিবিম্ব। তাদের পাশে দাঁড়ানো এখন আর দয়ার বিষয় নয়, এটি রাষ্ট্র ও বিশ্বের যৌথ নৈতিক, সাংবিধানিক ও আন্তর্জাতিক দায়িত্ব।

 

 

গোলাম দস্তগীর গাজীর কোম্পানির শেয়ার-ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৮:০৩ পিএম
গোলাম দস্তগীর গাজীর কোম্পানির শেয়ার-ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
গোলাম দস্তগীর গাজী ও তার স্ত্রী হাসিনা গাজী

সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর ১২ কোম্পানির শেয়ার, ৯টি ব্যাংক হিসাব ও তিনটি গাড়ি ফ্রিজ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গাজী ও তার স্ত্রী হাসিনা গাজীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

ফ্রিজ হওয়া ১২ কোম্পানির শেয়ার, ৯টি ব্যাংক হিসাব ও তিনটি গাড়ীর সর্বমোট মূল্য ২৪ কোটি ৩১ লাখ ৭১ হাজার ২৩৬ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। 

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের করা আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।

দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

দুদকের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জুলফিকার ওইসব সম্পদ অবরুদ্ধ করার আদেশ চেয়ে পৃথক তিনটি আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, আসামির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে যা তদন্তাধীন।  তদন্তকালে জানা যায়, আসামি অসাধু উপায়ে অর্জিত ও জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন। এ কারণে তার নিজ ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার, বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব, গাড়ি ফ্রিজ করা প্রয়োজন। এ ছাড়া তারা যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন এ জন্য দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া প্রয়োজন। 

জলিল/মেহেদী/

লালমনিরহাটে ২ ভুয়া মেজর আটক

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৭:৫৩ পিএম
লালমনিরহাটে ২ ভুয়া মেজর আটক
ছবি: খবরের কাগজ

সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয়ে দিয়ে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় জমি দখলের নামে চাঁদাবাজি করায় দুই ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় লোকজন।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকেলে ওই উপজেলার বড়খাতা ফেডারেশন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আটক দুই ভুয়া মেজর হলেন- রংপুরের হাজিরহাট এলাকার সাজু আহমেদ ও তারাগঞ্জ এলাকার মাসুম।

পুলিশ জানায়, ওই এলাকার রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বে-দখলে থাকা জমি উদ্ধারের জন্য  সাজু আহমেদ ও মাসুম নামে দুই ভুয়া মেজর ২০ হাজার টাকা নেন। মঙ্গলবার বাকি ৩০ হাজার টাকা নিতে রফিকুলের বাড়ি আসলে সাবেক এক সেনা কর্মকর্তার সহযোগিতায় দুই ভুয়া মেজরকে আটক করে স্থানীয় লোকজন। 

হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুন্নবী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ তাদেরকে আটক করে নিয়ে আসে। দুই ভুয়া মেজরের নামে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

মেহেদী/