
হঠাৎ ঝড়ো বৃষ্টি, মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যাপার। কিন্তু সেই ঝড়ই পাল্টে দেয় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল বাসেদ ও বাসিরন বেগমের জীবন। যে ঘর একদিন ছিল তাদের একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়, সেটি এখন কেবল ভাঙা টিন আর ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন বাঁশের বেড়ার মাথা গোঁজার ঠিকানা।
বয়সের ভারে নুয়ে পড়া বাসেদ আজ স্ত্রী ও একমাত্র শিশুসন্তানকে সঙ্গে নিয়ে বসবাস করছেন একটি অস্থায়ী ভাঙা টিনের ছাউনির নিচে। খাবার নেই, নিরাপত্তা নেই। ঈদের দিনটিও কেটেছে অনাহারে ও কান্নায়।
এর আগে গত ১১ মে ঝড়ে তাদের একমাত্র কাঁচাঘরটি সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে। এর পর থেকেই মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তারা। স্থানীয় কিছু যুবক মিলে ভাঙা টিন ও বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী একটি ছাউনি তৈরি করে দিলেও সামান্য বৃষ্টি বা বাতাসেই সেটি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। নিরাপত্তাহীন অবস্থায় স্ত্রী ও শিশুকে নিয়ে বাস করছেন বাসেদ। তিনি বলেন, ‘আমার একমাত্র ঘরটি ঝড়ে ভেঙে গেছে। অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছি। কয়েকবার উপজেলা পরিষদে গিয়েছি। কিন্তু কোনো সহযোগিতা পাইনি। খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি।’
বাসিরন বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী অসুস্থ। কিছুই করতে পারেন না। ঈদও কেটেছে না খেয়ে কান্না করে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো লোক দেখতে আসা তো দূরের কথা, খবরটুকুও নেয়নি। আমাদের একটা ঘরের ব্যবস্থা হলে অনেক উপকার হতো।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একসময় পাথর ভাঙার শ্রমিক ছিলেন বাসেদ। বয়স ও অসুস্থতার কারণে এখন কর্মক্ষম নন। সামান্য আয়ে সংসার চালাতেন স্ত্রী। ঘর হারানোর পর সেই আয়ের পথও বন্ধ। এই দুঃসময়ে উপজেলা প্রশাসনের শরণাপন্ন হলেও মেলেনি কোনো সহায়তা।
আব্দুর সাত্তার নামে এক প্রতিবেশী বলেন, ‘আমরা নিজেরাই কয়েকবার খবর দিয়েছি। কিন্তু বাসেদের ঘর দেখতে কোনো সরকারি লোক আসেনি।’ জাকির হোসেন নামে আরেক প্রতিবেশী বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে কোনো রকম থাকার ঘরটি দাঁড় করিয়ে দিয়েছি।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি জানা ছিল না। গত সপ্তাহে আমরা জেনেছি। সে সময় ইউএনও স্যারসহ যাওয়ার কথা ছিল। পরে নানা জটিলতায় যাওয়া হয়নি। আশা করছি, ঈদের ছুটির পর এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলার ইউএনও আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, ‘ভুক্তভোগীকে আমরা টিন দেব, টাকাও দেব।’