চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় তাসনিমুল হাসান সাজিদ (১৫) নামে এক মাদরাসা ছাত্রকে বলাৎকারের পর হত্যার অভিযোগের ২১ দিন পর ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তার মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে।
সোমবার (১৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লোহাগাড়া সদর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাতগড়িয়া পাড়ার সোয়ারী বর জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থান থেকে তার মরদেহ উত্তোলন করা হয়।
এ সময় লোহাগাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন লায়েল, লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চুনতি পুলিশ ফাঁড়ির আইসি মো. আব্বাস উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ২৪ জুন বিকেল ৪টার দিকে লোহাগাড়া সদর ইউনিয়নের সাতগড়িয়া পাড়ার শরিয়ত উল্লাহ জামে মসজিদের পাশে একটি মাঠে সাজিদের নিথর দেহ পড়ে ছিল। সেখান থেকে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তখন তার শরীরের বেশ কয়েকটি জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়।
সে সময় ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সাজিদের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করা হয় এবং দ্রুত তার মরদেহ দাফন করা হয়।
পরে সাজিদের বাবা মো. মাঈনুদ্দিন আজাদের (৩৫) সন্দেহ হলে এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেন।
এর প্রেক্ষিতে, গত (১ জুলাই) সাজিদের বাবা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দুজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। বিজ্ঞ আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে মামলাটি এজাহার (এফআইআর) হিসেবে নথিভুক্ত করার জন্য লোহাগাড়া থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।
এ মামলায় সাজিদের আরবি শিক্ষক ও স্থানীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন নাছির উদ্দিনকে (৩৭) প্রধান আসামি করা হয়। এ ছাড়া সাজিদের নানা আবুল হোসেনকেও (৫৫) এ মামলার আসামি করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের কারণে সাজিদ তার নানার বাড়িতে মায়ের সঙ্গে থেকে আধুনগর ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ালেখা করত। এ ছাড়া সে স্থানীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন নাছির উদ্দিনের কাছে মসজিদের পাশের একটি কক্ষে আরবি পড়ত। প্রতিদিনের মতো ২৪ জুন বিকেল ৩টায় সে আরবি পড়তে গেলে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শিক্ষক নাছির, সাজিদের মাকে ফোন করে জানান, সাজিদ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে। পরে স্থানীয়রা মসজিদের পাশের একটি মাঠ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে আরও জানা যায়, সাজিদের মৃত্যুর খবর পেয়ে শিক্ষক নাছির ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাবার চেষ্টার সময় স্থানীয়রা তাকে আটক করেন। পরে সাজিদের নানা আবুল হোসেনের সহায়তায় নাছির পালিয়ে যান। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে সাজিদের বাবা জানতে পারেন তার ছেলেকে নাছির জোরপূর্বক যৌন নিপীড়ন করার পর মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করে এবং মৃত্যু নিশ্চিত করতে নাক ও মুখে বালিশ চাপা দেয়। শিশু সাজিদের গায়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের কোনো চিহ্ন ছিল না। এ ছাড়াও ঘটনাস্থল থেকে বৈদ্যুতিক তারের দূরত্বও অনেক বেশি।
সাজিদের বাবা বলেন, ‘মৃত্যুর পর আমার ছেলের মরদেহের ছবি আমি দেখেছি, তখন তার শরীরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের কোনো চিহ্ন ছিল না। তার মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। আর ঘটনাস্থল থেকে বৈদ্যুতিক তারের দূরত্ব অনেক বেশি ছিল।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর অভিযুক্ত শিক্ষক নাছির উদ্দিন পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাকে আটক করে। কিন্তু মসজিদ কমিটির লোকজন তাকে নিজেদের জিম্মায় নেন এবং পরে আমার শ্বশুর আবুল হোসেনের সহায়তায় সে পালিয়ে যায়। আমার ছেলের শ্বশুর বিপুল অর্থের বিনিময়ে অভিযুক্ত নাছিরকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। তিনি ময়নাতদন্ত ছাড়া এবং আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই তড়িঘড়ি করে দাফন সম্পন্ন করেন। যা একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা।’
লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কবর থেকে সাজিদের মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর আসল রহস্য জানা যাবে।’
আরিফুল/পপি/