কুমিল্লার হোমনায় ঘরের ভেতর থেকে মা-ছেলেসহ তিনজনের লাশ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। আলোচিত এই ট্রিপল মার্ডারের একমাত্র অভিযুক্ত আক্তার হোসেনকে (২৭) নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে হোমনার শ্রীমদ্দি চরের গাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আক্তার হোসেন শ্রীমদ্দি চরের গাঁও এলাকার হক মিয়ার ছেলে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সকালে হোমনার বড় ঘাগুটিয়া এলাকায় শাহ পরাণের ঘরের ভেতর থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বুধবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময় তিনজনকে হত্যা করে লাশ একটি খাটের ওপর ফেলে রাখা হয়।
নিহতরা হলেন, বড় ঘাগুটিয়া এলাকার মো. শাহ পরাণের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার (৩৫), তাদের ৯ বছরের ছেলে সাহাত এবং প্রতিবেশী মামাতো ভাইয়ের মেয়ে তিশা (১৪)।
হত্যাকাণ্ডের পর বৃহস্পতিবার রাতে নিহত মাহমুদার বাবা আবুল হোসেন বাদী হয়ে হোমনা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঘাতক আক্তারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আক্তারকে আদালতে তোলা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে হোমনা থানা ওসি জয়নাল আবেদীন জানান, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেছেন আক্তার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর তদন্তের মাধ্যমে পুলিশ হত্যাকারী আক্তারকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে শ্রীমদ্দি চরের গাঁও এলাকার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার বিকেলে আদালতে তোলা হলে ঘটনার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন ঘাতক আক্তার।’
গ্রেপ্তার আক্তারের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে ওসি জানান, নিহত মাহমুদার সঙ্গে আক্তার হোসেনের পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। সম্পর্কের সুবাদে প্রেমিকের কাছ থেকে মাহমুদা ৪০ হাজার টাকা ধার নেন। সেই টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে আক্তারের সঙ্গে মাহমুদার কয়েক দফা বাগবিতণ্ডা হয়। গত বুধবার সন্ধ্যায় আক্তারকে তার পাওনা টাকা ফেরত দেবেন বলে বাড়িতে ডাকেন মাহমুদা। পরে রাতে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেন মাহমুদা, আক্তার, মাহমুদার ছেলে সাহাত এবং মাহমুদার ভাতিজি তিশা। খাওয়া শেষে তিশা ও সাহাত ঘুমিয়ে গেলে গভীর রাতে ঝগড়া বাধে মাহমুদা ও আক্তারের মধ্যে। ঝগড়ার একপর্যায়ে মাহমুদাকে মাথায় আঘাত করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করেন আক্তার। পরে আক্তারকে খুনি হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে, এই ভয়ে সাক্ষী না রাখার কথা ভেবে তিশা ও সাহাতকেও গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে সে। পরে লাশ তিনটি এক খাটের ওপর রেখে পালিয়ে যায় আক্তার।