নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে মা-মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় চরএলাহী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি নিহত আবদুল মতিন তোতার ছেলে মো. ইব্রাহিমসহ (৪৫) ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে।
রবিবার (২৭ অক্টোবর) ভোরে ভুক্তভোগী মেয়েকের সঙ্গে নিয়ে মা (৩৫) বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। পরে আটক মো. হারুন (৪০) ও মো. হাসানকে (৪০) এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে গত সোমবার (২১ অক্টোবর) রাতে চরএলাহী ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চরবালুয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে শনিবার (২৬ অক্টোবর) ভুক্তভোগীরা চরবালুয়া পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে ঘটনা জানালে দুই আসামি হাসান ও হারুনকে আটক করে থানায় পাঠানো হয়।
মামলার আসামিরা হলেন, চরএলাহী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মৃত আবদুল মতিন তোতার ছেলে মো. ইব্রাহিম (৪৫), চরএলাহী ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মো. সাইফুল ইসলাম (৩৫), মো. রাজিব প্রকাশ রাজু (৩০), ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চরবালুয়া গ্রামের মো. রাসেদ (৩৫), মো. হারুন (৪০) ও মো. হাসান (৪০)। এরমধ্যে আসামি মো. হারুন ও মো. হাসানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আসামিরা সবাই যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
মামলায় বাদির অভিযোগ, আমার স্বামী চট্টগ্রামের কাভার্ড ভ্যান চালক। গত সোমবার (২১ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইব্রাহিমের নেতৃত্বে আসামিরা দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে। এ সময় আমি ও ঘরে থাকা ফুফাতো দেবরকে (২২) তারা মারতে থাকেন এবং বলেন তোদের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক আছে। টাকা দিবি না হলে গ্রামে বদনাম রটিয়ে দিব সালিশ বসাব। এক পর্যায়ে নিরুপায় হয়ে ঘরে থাকা মেয়ের বিবাহ বিচ্ছেদের ৭০ হাজার টাকা তাদের হাতে তুলে দেই।
বাদি অভিযোগে আরও বলেন, টাকা পেয়ে আসামি রাসেদ, ইব্রাহিম ও রাজু আমার মেয়েকে (১৭) তুলে নিয়ে রান্নাঘরের পিছনে খালি জায়গায় জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এতে বাধা দেওয়ায় আমার দেবরকে বেদম মারধর করা হয়। পরে আসামি সাইফুল ও ইব্রাহিম আমাকে পুকুরপাড়ে নিয়ে জোরপূর্বক পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ সময় হাসান ও হারুনকে আমার দেবরের কাছে পাহারা বসায়। রাত ৩টার দিকে এ ঘটনায় মামলা করলে হত্যা হুমকি দিয়ে আসামিরা চলে যায়।
ভুক্তভোগী নারী খবরের কাগজকে বলেন, দুর্গম চরবালুয়া এলাকা এ আসামিদের নিয়ন্ত্রণে। তাদের ভয়ে আমরা ঘটনার পর গত কয়েকদিন ঘর থেকে বের হতে পারিনি। আশপাশের সমাজপতিদের কাছে সাহায্য চেয়েও পাইনি। পরে শনিবার (২৬ অক্টোবর) গোপনে চরবালুয়া সমিতি বাজারে পুলিশ ক্যাম্পে গিয়ে মৌখিক অভিযোগ করি। পুলিশ দুই আসামিকে আটক করে আমাদেরকেসহ কোম্পানীগঞ্জ থানায় পাঠালে মামলা দায়ের করি। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে খবরের কাগজকে বলেন, ভুক্তভোগী মা-মেয়েকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আটক আসামিরা ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা স্বীকার করেছেন। তাদেরকে আদালতে পাঠালে কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
এদিকে প্রধান আসামি মো. ইব্রাহিম ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এলাকায় হামলা লুটপাট জমি, ঘাট, মাছের ঘের, খাল দখলের অভিযোগ ওঠে। এসব ঘটনার জের ধরে গত ৩০ আগস্ট সন্ত্রাসী গ্রুপের হামলায় তার বাবা চরএলাহী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুল মতিন তোতা মারা যান। এ ঘটনায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের আসামি করে এলাকা ছাড়া করা হয়।
তবে হামলা লুটপাটের অভিযোগ অস্বীকার করে মো. ইব্রাহিম খবরের কাগজকে মোবাইলে জানান, আমার বাবার হত্যার আসামিকরা ওই ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে আমাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মা-মেয়ে ধর্ষণ মামলায় আসামি করা হয়েছে।
ইকবাল হোসেন মজনু/এমএ/