নিহত শাহিদা আক্তার। ছবি: সংগৃহীত
ঘোরাঘুরি আর রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়াধাওয়া করেই রাত পেরোয় প্রেমিক-প্রেমিকার। এরপর ভোরে বিয়ে করার জন্য চাপাচাপি থেকে উভয়ের মধ্যে শুরু হয় কথা-কাটাকাটি। একপর্যায়ে প্রেমিকাকে গুলি করে হত্যা করেন প্রেমিক।
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে তরুণীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের ঘটনায় প্রেমিক তৌহিদ শেখ তন্ময়কে (২৮) গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
প্রেমিক তৌহিদই রাজধানীর ওয়ারীর তরুণী শাহিদা ইসলাম রাফা ওরফে শাহিদা আক্তারকে (২২) গুলি করে হত্যা করেন।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) ভোরে ভোলার ইলিশা লঞ্চ টার্মিনালে অভিযান চালিয়ে একটি লঞ্চে করে পালিয়ে যাওয়ার সময় তৌহিদকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে এদিন সকালে তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বটতলী গ্রামের বেইলি ব্রিজের নিচে ডোবার পানিতে তল্লাশি চালিয়ে হত্যায় ব্যবহৃত একটি বিদেশি পিস্তল জব্দ করা হয়।
ডিবির ওসি মো. ইশতিয়াক রাসেল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহত প্রেমিকা শাহিদা ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানার বেগুনবাড়ি বরিবয়ান গ্রামের প্রয়াত আব্দুল মোতালেবের মেয়ে। তিনি পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় থাকতেন। প্রেমিক তৌহিদ রাজধানীর ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়ারীর ২২ নম্বর বর্ণগ্রাম রোডের মৃত শফিক শাহের ছেলে।
ডিবি সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার তৌহিদ হত্যা সম্পর্কে নানা তথ্য দিয়েছেন ডিবিকে। শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাতে মোবাইল ফোনে কল করে প্রেমিকা শাহিদাকে ডেকে আনেন প্রেমিক তৌহিদ।
ঢাকা থেকে একটি বাসে চড়ে তারা চলে আসেন মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া ঘাটে। সেখানে রেস্টুরেন্টে বসে রাতের খাবার খান তারা। রাতভর ঘোরাঘুরি শেষে শনিবার ভোরে আবার ঢাকায় ফেরার উদ্দেশে রওনা হন।
পথে এক্সপ্রেসওয়ের জেলার শ্রীনগর উপজেলার দোগাছি এলাকার সার্ভিস লেনে দাঁড়িয়ে কথা হতে থাকে তাদের। এ সময় প্রেমিকা শাহিদা বিয়ে করার জন্য চাপ দেন। এতে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে সঙ্গে থাকা পিস্তল দিয়ে তৌহিদ পরপর কয়েকটি গুলি করেন।
হত্যা ঘটিয়ে তৌহিদ বাসে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। পরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বটতলী গ্রামের বেইলি ব্রিজের নিচে পানিতে পিস্তল ফেলে রাজধানীতে চলে যান তৌহিদ। মোবাইল ফোন বন্ধ করে ঢাকায় তার বোনের বাসায় অবস্থান করেন তিনি। পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা অনুযায়ী রবিবার (৩০ নভেম্বর) ভোরে ঢাকার সদরঘাট থেকে একটি লঞ্চে চড়ে ভোলার মনিপুরার উদ্দেশে রওনা দেন।
সোমবার ভোরে ইলিশা লঞ্চ টার্মিনাল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশের টিম। এর আগে শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকালে জেলার শ্রীনগর উপজেলার দোগাছি এলাকার এক্সপ্রেসওয়ের সার্ভিস লেন থেকে তরুণী শাহিদার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ওই দিন মধ্যরাতে নিহতের মা জরিনা খাতুন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে শ্রীনগর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় রাজধানীর ওয়ারীর তৌহিদ নামে এক যুবকের সঙ্গে মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ও দ্বন্দ্ব থাকার কথা উল্লেখ করেন মা।