নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার চাঁদ ডাইংয়ের মালিক শিল্পপতি জসিম উদ্দিন মাসুমকে হত্যার পর লাশ সাত টুকরা করে ডিপ ফ্রিজে রাখা হয়। এরপর গতকাল বুধবার (১৩ নভেম্বর) লাশের অংশগুলো কালো পলিথিনে প্যাকেট করে পূর্বাচল ৫ নম্বর সেক্টরের একটি লেকে ফেলে দেওয়া হয়। হত্যায় জড়িত জসিমের প্রেমিকা রুমাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাতে খবরের কাগজকে এসব তথ্য জানান নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার।
তিনি বলেন, ‘এক বছর ধরে জসিমের সঙ্গে রুমার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। রুমাকে মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় একটি ভাড়া বাসায় রেখেছিলেন জসিম। রুমার বাসা ভাড়া থেকে শুরু করে সব খরচই জসিম বহন করতেন। সম্প্রতি একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন জসিম। অন্যদিকে রুমাকে বিয়ে ও ব্যবসার অংশীদার করার কথা থাকলেও জসিম দীর্ঘদিন ধরে তাকে ঘোরাতে থাকেন।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রুমা জানিয়েছেন, গত ১০ নভেম্বর জসিম রুমার বাসায় এলে তাকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়। এরপর বালিশ চাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। জসিমের মৃত্যু হয়েছে নিশ্চিত হওয়ার পর রুমাসহ তার কয়েকজন সহযোগী জসিমের লাশ টুকরা করে। পরে লাশের টুকরাগুলো ওই বাসাতেই ডিপ ফ্রিজে রাখা হয়। এই টুকরাগুলো গত বুধবার পূর্বাচল ৫ নম্বর সেক্টরের একটি লেকের বিভিন্ন স্থানে ফেলে আসে তারা।
পুলিশ সুপার আরও জানান, প্রচণ্ড ক্ষোভ থেকে জসিমকে হত্যা করেন রুমা। লাশ কাটায় ব্যবহৃত চাপাতি ও জামার টুকরা উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত একাধিক ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
রুমার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে এবং জসিমের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বলে জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।
গত ১০ নভেম্বর বিকেলে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নিজ বাসা থেকে প্রাইভেট কার নিয়ে বের হন জসিম। গুলশানে নিজের গাড়িটি ছেড়ে দেন। আরেকটি গাড়িতে নারায়ণগঞ্জ যাবেন বলে চালককে জানান। সেদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি স্ত্রীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। তবে রাতে তিনি বাসায় ফেরেননি। পরদিন সকালে তার দুটি মুঠোফোন নম্বরে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। কোথাও খোঁজ না পেয়ে রাতে গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পরিবার।
গতকাল বুধবার পূর্বাচল ৫ নম্বর সেক্টরের একটি লেকে হাত-মুখ ধোয়ার সময় দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে পলিথিন দিয়ে মোড়ানো লাশের টুকরাগুলো দেখতে পান স্থানীয় এক রিকশাচালক। লোকজন পুলিশকে জানালে তিনটি কালো পলিথিনে মোড়ানো লাশের সাত টুকরা উদ্ধার করা হয়। পরে লাশের খণ্ডাংশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ-১০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই দিন পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে গিয়ে পরিবারের সদস্যরা জসিমের লাশ শনাক্ত করেন।