
মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে যোগাযোগ হয় গৃহবধূ মাধুরী বিশ্বাস ও বিধান দাসের। পরিচয় ও আলাপচারিতার একপর্যায়ে তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। একপর্যায়ে সেটি অনৈতিক সম্পর্কে গড়ায়। এরপর মাধুরী বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন বিধানকে। কিন্তু রাজি হননি বিধান। মাধুরী নানাভাবে চাপ দিতে থাকলে বিধান ভিন্ন চিন্তা করতে থাকেন। একদিন মাধুরী তার মেয়েসহ বিধানের সঙ্গে দেখা করতে গেলে কৌশলে তাদের বিষ খাইয়ে হত্যা করেন বিধান। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর অভিযুক্ত বিধান দাস এমনই জবানবন্দি দিয়েছেন।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, অনৈতিক সম্পর্কের জেরে দ্বন্দ্ব তৈরি হলে বিধান ওই মা ও মেয়েকে কৌশলে পানির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে পান করান। এরপর গত ৬ ডিসেম্বর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের ৪ নম্বর গেটের সামনে তাদের ফেলে পালিয়ে যান। একজন পথচারী মাধুরী ও তার মেয়ে শ্রেষ্ঠাকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাধুরীকে (৩৬) মৃত ঘোষণা করেন। তার শিশুকন্যাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে স্বজনরা খবর পেয়ে শ্রেষ্ঠাকে তার আত্মীয়স্বজন নিজ এলাকা গোপালগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে ১৪ ডিসেম্বর শ্রেষ্ঠা (৭) মারা যায়। এ ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছিল। পরে পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে অনৈতিক সম্পর্কের জেরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার বিধান দাস পুলিশকে জানান, তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর দশমিনা এলাকায়। তিনি একটি বাল্কহেডের ইঞ্জিন শ্রমিক। ঘটনার চার-পাঁচ মাস আগে তার জাহাজের একজন কর্মচারীর কাছ থেকে মাধুরীর মোবাইল নম্বর পান এবং তাকে কল করেন। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে তা পরকীয়ায় রূপ নেয়। এরপর মাধুরী বিধানকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। কিন্তু তিনি রাজি হন না। তিনি ছুটিতে বরিশাল যেতে চাইলে মাধুরীও তার সঙ্গে যাওয়ার কথা জানান। ২৮ নভেম্বর মাধুরী বাবার বাড়ি বাগেরহাট যাওয়ার কথা বলে শ্বশুরবাড়ি খুলনা থেকে রওনা হন। কিন্তু তিনি মেয়ে শ্রেষ্ঠাকে নিয়ে খুলনা থেকে বাসযোগে বরিশাল যান। একই দিন বিধান ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশে রওনা দেন। ওই দিন বেলা ৩টায় বরিশালের নতুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে তাদের দেখা হয়।
পরে স্থানীয় এক আবাসিক হোটেলে রুম ভাড়া নিয়ে সেখানে অবস্থান করেন। কয়েক দিন বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে গত ৫ ডিসেম্বর ভোরে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের উদ্দেশে মাধুরী ও শ্রেষ্ঠাকে নিয়ে বিধান লঞ্চে ওঠেন। ঢাকায় আসার পথে লঞ্চের ভেতরে কৌশলে মা-মেয়েকে তিনি বিষ পান করান। এরপর ৬ ডিসেম্বর কৌশলে পালিয়ে যান বিধান। পরবর্তী সময়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অবস্থান শনাক্ত করে বিধানকে গ্রেপ্তার করা হয়।