
মামলার জামিন করাতে অনেক টাকা নেয় উকিল, ওই টাকা তুলতে উকিলের মুহুরিকে অপহরণ করে জামিন পাওয়া ওই আসামি ও তার সঙ্গীরা। তবে দুর্ঘটনার জেরে মাইক্রোবাসটি স্থানীয় জনতা আটক করলে রক্ষা পান ওই মুহুরি। গ্রেপ্তার হয় দুই অপহরণকারী।
রবিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসমাউল হক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহসিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মুহুরি পারভেজ রানা (৩৪) নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী ইউপির কেশবপুর গ্রামের মকছেদ আলী প্রামানিকের ছেলে। তিসনি নাটোর জজ কোর্টের আইনজীবি মোখলেছুর রহমান মিলনের সঙ্গে কাজ করেন।
গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- পাবনা জেলার আমিনপুর থানার নয়াবাড়ী এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে নুরুজ্জামান হোসেন ওরফে মোক্তার (৫৩) এবং গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার উত্তর হিজলতলী এলাকার আসলাম হোসেনের ছেলে রবিন হোসেন (২৪)।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহসিন মামলার অভিযোগসূত্রে জানান, গ্রেপ্তার দুইজনসহ পাঁচজনের নাম ও অজ্ঞাত আরও ২/৩ জনের বিরুদ্ধে মামলার দাবি করেন পারভেজ রানা।
আসামিরা আন্তঃজেলা অপরাধ চক্রের সদস্য। দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা সংঘবদ্ধ অপরাধ করে বেড়ায়। আনুমানিক ৬/৭ মাস আগে জামিনের সূত্রধরে মোক্তারের সঙ্গে তার এবং আইনজীবি মোখলেছুর রহমান মিলনের পরিচয় হয়। মোক্তার একাধিক মামলার আসামি হওয়ায় প্রায় সময় সে নাটোর কোর্টে আসে।মোক্তারের জামিনের ব্যবস্থা করেন তারা।
মুহুরি অভিযোগ করে বলেন, শনিবার বিকেল চারটার দিকে মোক্তার তাকে ফোন দিয়ে বলে যে, দুটি মামলার নকল তুলতে হবে এবং ওকালতনামা পাঠাতে হবে, তুমি তাড়াতাড়ি নাটোর জজ কোর্টের সামনে আসো। পরে বাড়ি থেকে রওনা দিয়ে নাটোর জজ কোর্টের সামনে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কেএকটি সাদা রংয়ের হাইয়েচ মাইক্রোবাসের কাছে গেলে আসামিরা তাকে জোরপূর্বক ওই মাইক্রোবাসে উঠায়। এরপর তার হাত-মুখ বেঁধে মাঝখানে বসিয়ে দ্রুত বেগে সিংড়ার দিকে রওনা করে। এ সময় তারা মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ কেড়ে নেয়। পরে আসামিরা গালে মুখে চড় থাপ্পর দিতে থাকে এবং বলে তোর উকিলকে ফোন দিয়ে বল আমাদের কাছ থেকে জামিনের টাকা যা নিয়েছে তা ফেরত দিতে। নইলে তোকে মেরে ফেলবো। এছাড়া তিনি পিছনের সীটে একজন ব্যক্তিকে অচেতন অবস্থায় শুয়ে থাকতে দেখেন।
তিনি আরও দাবি করেন, গাড়িটি সিংড়া পার হয়ে জামতলী বাজারের দিকে আসার পর আসামিরা গাড়িটি নিয়ে জামতলী হয়ে বামিহালের দিকে রওনা করে। মাইক্রোবাসটি দ্রুত গতিতে চালানোর ফলে সিংড়া থানার বিনগ্রাম বাজারের মধ্যে একটি সিএনজিকে ধাক্কা দেয়। তখন বাজারে থাকা লোকজন মাইক্রোবাসটিকে থামানের চেস্টা করে কিন্তু মাইক্রোবাসটি আরও দ্রুত গতিতে বামিহালের দিকে যেতে থাকলে রাতাল বাজারে থাকা আরও কয়েকজন লোককে ধাক্কা দিয়ে বেপরোয়া ভাবে চলতে থাকে। রাতাল বাজারের লোকজন বামিহাল বাজারের লোকদের ফোন দিলে সিংড়া থানার সুকাশ ইউনিয়নের বামিহাল বাজারে থাকা অনুমান ১০০/১৫০ লোক রাস্তায় বেরিকেড দিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে রহমত আলী ডিগ্রি কলেজের সামনে থামায়। অবস্থা বেগতিক দেখে ২/৩ জন আসামি মাইক্রোবাস থেকে দ্রুত নেমে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা বাকী দুজনকে আটক করে।
ওসি আসমাউল হক জানান,স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ওই মুহুরি এবং মাইক্রোবাসের পিছনের সিটে থাকা জিন্নাত আলী নামে অচেতন উদ্ধারসহ ও ওই দুজনকে গ্রেপ্তার করে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তারা পরস্পর যোগসাজশে গত দুইদিন আগে মাইক্রোবাসের মালিক আব্দুল্লা মিয়াকে মোবাইলে যোগাযোগ করে মাইক্রোবাসটি কৌশলে ভাড়া করে। পরে শনিবার সকাল ৯টার দিকে টাঙ্গাইল হতে রওয়ানা দিয়ে মাইক্রোবাসটির চালক জিন্নাত আলীকে পানীয়ের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অচেতন করে মাইক্রোবাসের পিছনের সিটে ফেলে রাখে।
কামাল মৃধা/মেহেদী