
কক্সবাজারে খুলনার সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করেন নিহত হুজি শহিদের ভাতিজা শেখ শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পু। চাচা হত্যার প্রতিশোধ নিতেই তিনি এ হত্যাকাণ্ড ঘটান।
এর অংশ হিসেবে ডিভোর্সী নারী ঋতুর ফাঁদে ফেলানো হয় টিপুকে। ঋতুর দেওয়া তথ্য মতে, কক্সবাজারে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী গেল ৯ জানুয়ারি টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
ইতোমধ্যে চাঞ্চল্যকর টিপু হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. রহমত উল্লাহ।
গ্রেপ্তাররা হলেন- খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৪নং ওয়ার্ডের দেওয়ান মোল্লা পাড়ার ঋতু (২৩), একই এলাকার শেখ শাহরিয়ার ইসলাম ওরফে পাপ্পু (২৭) ও তার সহযোগী সিটি কর্পোরেশনের ৬নং ওয়ার্ডের মধ্যম কারিকর পাড়ার গোলাম রসূল (২৫)।
গ্রেপ্তার পাপ্পুর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া তিনি চরমপন্থীর সাবেক নেতা হুজি শহিদুল ইসলামের ভাতিজা। তাকে ২০১৫ সালে হত্যা করা হয়। সেই মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপু।
যেভাবে শনাক্ত হয় হত্যাকারীরা
হত্যাকাণ্ডের পর থেকে লাপাত্তা নারী ও হত্যাকারীরা এসেছিলেন ইম্পেরিয়াল এক্সপ্রেসের একটি বাসে। হোটেল কক্ষে পাওয়া সেই বাসের একটি লাগেজের ট্যাগ পায় তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এটির সুত্র ধরেই কাজ শুরু করে তারা। এই বাসের অন্যান্য যাত্রীসহ নাম্বার তল্লাশি হয়।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এক পর্যায়ে ঋতুর নাম আসে। তারপর থেকে ঋতুর অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করা হয়। এক পর্যায়ে মৌলভীবাজার জেলার জিরি থানার কাপনা পাহাড় এলাকা থেকে এই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সহযোগী ঋতুসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার জেলা পুলিশ। যার নেতৃত্ব দিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আহমেদ পেয়ার।
পুলিশ সুপার মো. রহমত উল্লাহ বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত। এদের মধ্যে ওই নারী কক্সবাজার ঘুরতে এসে কাউন্সিলর টিপুর সঙ্গে হোটেলে উঠেছিলেন। আর ঘটনার পর থেকে ওই নারীর সন্ধান পাচ্ছিল না পুলিশ। এছাড়া গ্রেপ্তার অপর দুইজন হত্যাকাণ্ডের মিশনে সরাসরি অংশ নিয়েছেন।
গ্রেপ্তার ঋতু খুলনার দৌলতপুর এলাকায় ‘কলগার্ল’ হিসেবেও বেশ পরিচিত। শাহরিয়ার পাপ্পু এলাকায় ‘শুটার পাপ্পু’ হিসেবে পরিচিতি। তার সহযোগী গোলাম রসূল।
কাউন্সিলর টিপু হত্যার তিন কারণ
স্থানীয় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচন ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের সম্পৃক্ততা। যা খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। তাদের দেওয়া তথ্যমতে- টিপু স্বেচ্ছাসেবক লীগের খুলনা মহানগর শাখার সহসভাপতি ছিলেন। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি পলাতক। এরই মধ্যে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা তার বাড়িতে হামলা করেছে।
সবশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা শরিফুল আনাম ও তার ছেলে আশিকুল আনামসহ একটি পক্ষ গোলাম রব্বানী টিপুর প্রতিপক্ষ প্রার্থী মো. কবির হোসেন কবু মোল্লাকে সমর্থন করেন। এ নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। ৫ আগস্টের পর গোলাম রব্বানী টিপুর বাড়িতে হামলার সঙ্গে এদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া টিপু দৌলতপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চরমপন্থী নেতা শহিদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহিদকে (৪২) হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। ২০১৫ সালের অক্টোবরে দৌলতপুর খান এ সবুর রোডে ইসলামি ব্যাংকের সামনে শহিদুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
২০২২ সালের ৩০ জুন নগরীর মুজগুন্নী এলাকায় জুলকার নাঈম মুন্নাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি পূর্ববাংলা কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্য ছিলেন।
চরমপন্থি নেতা গাজী কামরুলের সঙ্গে গোলাম রব্বানী টিপুর দ্বন্দ্ব ছিল। গাজী কামরুলের সঙ্গে শহিদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহিদের সম্পৃক্ততা ছিল। হুজি শহিদ নিহত হওয়ার পর গাজী কামরুলের সঙ্গে টিপুর দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে যায়।
টিপু হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র-গুলি উদ্ধার
র্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দাদের ধারণা-ঘটনাস্থলে পড়েছিল টিপু লক্ষ্য করা পিস্তলের গুলির খোসা। সে খোসার তথ্য মতে এটি ৯ এমএম ইউএসএর প্যারাবলিয়াম ৯.৯ মিলিমিটার পিস্তল।
গত বৃহস্পতিবার ৯ জানুয়ারি রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন হোটেল সি-গালের সামনের রাস্তায় টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
মুহিববুল্লাহ মুহিব/জোবাইদা/অমিয়/