
সুযোগ বুঝে পথচারীদের কৌশলে কিংবা টেনেহিঁচড়ে প্রাইভেট কারে তোলা হতো। তারপর চোখ, মুখ ও হাত বেঁধে সঙ্গে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র ও টাকা কেড়ে নিত। তারপর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (বিকাশ, নগদ, রকেট) মাধ্যমে বড় অঙ্কের মুক্তিপণ চাওয়া হতো। টাকা পেলেই দেওয়া হতো মুক্তি।
ময়মনসিংহ শহরে দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র সাধারণ মানুষকে এভাবেই অপহরণ করে টাকা আদায় করে আসছিল। শেষ পর্যন্ত ওই চক্রের মূল হোতাসহ চারজন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের জালে ধরা পড়েছে। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে নগদ টাকাসহ একটি প্রাইভেট কার।
রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন বরগুনার পাথরঘাটার খালমাগা গ্রামের ছোট পাথরঘাটা এলাকার শাহাদত হোসেন (৪৬), তার আপন ছোট ভাই আব্দুস সালাম (৪৫), শেরপুরের বাখেরকান্দা গ্রামের বাগবাড়ী বাজার এলাকার শিখন আলী (২০) ও ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার সোনাপুর গ্রামের আবু তাহের (৩৫)।
গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, চক্রটির মূল হোতা শাহাদত। তিনি প্রায় আট বছর আগে গাজীপুরের মাওনা বাসস্ট্যান্ডে প্রাইভেট কারচালক থাকা অবস্থায় অপহরণ চক্রের সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর বিভিন্ন সময় অর্ধশতাধিক মানুষকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করেন। এই দীর্ঘ সময়ে শাহাদত তিন দফায় প্রায় দুই বছর কারাভোগ করেছেন। সর্বশেষ কাশিমপুর কারাগারে আটক থাকা তাহেরের সঙ্গে পরিচয় হয় এবং প্রায় দুই মাস আগে তারা জেল থেকে মুক্তি পেয়ে আবারও তাদের পুরোনো পেশায় ফিরে আসেন।
শাহাদতের ছোট ভাই সালাম ও তার আত্মীয় শিখন এই কাজে তাদের সহযোগিতা করতেন। তিনি মূলত ভিকটিমকে গাড়িতে তোলা, চোখ, হাত বেঁধে মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নেওয়া এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ফোনে কথা বলাসহ বিভিন্ন ভূমিকা পালন করতেন।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আবুল হোসেন বলেন, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকের ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (সার্কুলেশন) আবুল বাশারকে একটি চক্র নগরীর দিঘারকান্দা বাইপাস থেকে অপহরণ করে প্রাইভেট কারে উঠিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে সঙ্গে থাকা নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এ ছাড়া তার মোবাইল ফোন থেকে স্বজনদের কল করে বিকাশের মাধ্যমে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে। ওই দিন রাত ১০টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশালের চেলেরঘাট বেইলি ব্রিজের পাশে তাকে চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় ফেলে দিয়ে অপহরণকারী চক্রটি ঢাকার দিকে চলে যায়।
ওসি আবুল হোসেন বলেন, এ ঘটনার পর ময়মনসিংহের ভালুকা, ফুলপুরসহ গাজীপুর, শ্রীপুর ও মাওনাতে একই ধরনের একাধিক ঘটনা সম্পর্কে জেলা পুলিশের কাছে তথ্য আসে। বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে গোয়েন্দা পুলিশ। গত ৫ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) চক্রটি একইভাবে আরও এক ব্যক্তিকে অপহরণের জন্য প্রাইভেট কার নিয়ে বের হলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন বৃহস্পতি ও শুক্রবার জেলার ত্রিশাল, ভালুকা, গফরগাঁও সড়ক এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মাওনা ও শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের মূল হোতা শাহাদতসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেট কারসহ নগদ ৮৭ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ব্যবহৃত বিকাশ অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তারা গত দুই মাসে ১০ লক্ষাধিক টাকার লেনদেন করেছে। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত আরও ছয় সক্রিয় সদস্যের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।