নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আবদুল কাদের মির্জার ঘনিষ্ঠ সহযোগী আবদুল কাদের মিলন (৩৫) নামে এক যুবলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
শনিবার (১২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
এর আগে শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে চরপার্বতী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে ওই গণপিটুনির ঘটনা ঘটে।
নিহত আবদুল কাদের মিলন চরহাজারী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মো. ইসমাইলের ছেলে এবং চরহাজারী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া তিনি স্থানীয় আল মদিনা সমাজের সহসভাপতি এবং সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোটভাই আবদুল কাদের মির্জার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিলন রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফেনীর দাগনভুইয়া থেকে ছোটভাই আবদুর রহিম রাকিবের সিএনজিচালিত রিকশাযোগে বাড়ি যাওয়ার পথে একদল যুবক তাকে ফ্যাসিস্ট পালাচ্ছে বলে বেদম পিটুনি দেয়।
নিহতের ভাই আবদুর রহিম রাকিব বলেন, 'আমরা বাড়ি যাওয়ার সময় চরপার্বতীর চুকানীর টেক থেকে একদল যুবক মোটরসাইকেলযোগে আমাদের গাড়িকে অনুসরণ করে। পরে রহিমিয়া এতিমখানার কাছে পৌঁছলে তারা ধর ধর বলে আক্রমণ করে আমার ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করে। তাদের হাতেপায়ে ধরেও ভাইকে বাঁচতে পারিনি।'
জানা গেছে, খবর পেয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ মিলনকে উদ্ধারে গেলেও হামলাকারীদের রোষানলে পড়ে উদ্ধারে ব্যর্থ হয়। পরে সেনাবাহিনী মিলনকে উদ্ধার করে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ডা. আবদুল আহাদ বলেন, আবদুল কাদের নামে একজন রোগীকে রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে জরুরি বিভাগে আনা হয়। পরে অবস্থার অবনতি দেখে রাত ১টা ১০ মিনিটে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নিহতের স্ত্রী বিবি জুলেখা বলেন, 'ঢাকা নেওয়ার পথে আমার স্বামী মারা যান। মিলন ৫ আগস্টের পর থেকে বাড়ি ছাড়া। তিনি সম্প্রতি ওমরা শেষে দেশে আসেন। আমার বড়ভাই ইউসুফ আলী গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় তাকে দেখতে মিলন বাড়ি আসতেছিল। পথে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থকরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তার হাতে থাকা ঠিকাদারির লেনদেনের হিসাবসহ মোবাইল ফোনটি সন্ত্রাসীরা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। আমি এ হত্যার বিচার চাই।'
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমান রিপন বলেন, মিলন হত্যাকাণ্ডে জামায়াত-বিএনপির কেউ জড়িত নয়। গত ১৬ বছর তিনি যাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করেছেন তারাই মিলনকে হত্যা করেছে। হামলাকারীদের মধ্যে জামায়াত-বিএনপির কেউ আছে কিনা তা আমার জানা নেই।'
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবদুল কাদের মিলন একজন ঠিকাদার। তিনি মেসার্স মিলন এন্টারপ্রাইজের মালিক। কোম্পানীগঞ্জে তার দায়িত্বে থাকা মেসার্স তানভীর এন্টারপ্রাইজের কোটি টাকার কাজ নিয়ে একটি মহলের সঙ্গে মিলনের ১৩ লাখ টাকার লেনদেন রয়েছে। ওই টাকা চাওয়ায় মহলটি তার উপর ক্ষুব্ধ ছিল। এ নিয়ে তাকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।'
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম বলেন, 'খবর পেয়ে পুলিশ-সেনাবাহিনীর যৌথদল মিলনকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে ঢাকা থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরিবারের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
মজনু/মেহেদী/