অভিযুক্ত মোহাম্মদ আলী। ছবি: খবরের কাগজ
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ষষ্ঠ শ্রেণিপড়ুয়া মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে বাবা মোহাম্মদ আলীকে (৪০) আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন ভুক্তভোগীর মা ও আত্মীয়স্বজন।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সকাল ৮টার দিকে উপজেলার কেরানিহাটের একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে অভিযুক্ত বাবাকে আটক করে সাতকানিয়া থানায় এনে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
মোহাম্মদ আলী উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মনোহর চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা মৃত এমদাদ আলীর ছেলে।
এ ঘটনায় অভিযুক্তের স্ত্রী নাহিদা আক্তার (২৪ এপ্রিল) সকালে বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সাতকানিয়া থানায় একটি মামলা করেছেন।
জানা গেছে, গত ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পেট ব্যথাসহ বমি হওয়ায় গত ২২ এপ্রিল তাকে অভিযুক্ত বাবা মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে উপজেলার কেরানীহাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠান নাহিদা আক্তার। ওই সময় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক নাহিদাকে ফোন দিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বলেন। নাহিদা তাৎক্ষণিক হাসপাতালে গিয়ে দেখেন তার মেয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। তিনি চিকিৎসকের কাছে কি হয়েছে জানতে চাইলে চিকিৎসক জানান তার মেয়ে গর্ভবতী। গর্ভবতী হওয়ার কারণে তার পেট ব্যথাসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। পরে অভিযুক্ত বাবা মোহাম্মদ আলীর অনুরোধে কর্তব্যরত চিকিৎসক মেয়েটির গর্ভপাত করান। এর পর নাহিদা তার মেয়েকে এ ঘটনা কে ঘটিয়েছে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার দিকে এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টার দিকে দুই দফায় তার শয়নকক্ষে ঢুকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন তারই বাবা মোহাম্মদ আলী। এ ঘটনা কাউকে প্রকাশ করলে হত্যার হুমকিও দেন অভিযুক্ত মোহাম্মদ আলী। পরে নাহিদা তার ভাই মো. নাজিম উদ্দিনকে ফোন দিয়ে হাসপাতালে ডেকে আনেন। এ সময় তারা ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মোহাম্মদ আলী ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেন। পরে মোহাম্মদ আলীকে আটক করে সাতকানিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
মামলার এজাহারসূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে অভিযুক্ত মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে বাদী নাহিদা আক্তারের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে দুটি ছেলে ও দুটি মেয়ে রয়েছে। ধর্ষণের শিকার বড় মেয়ের বয়স এখন ১২ বছর। সে উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের কেফায়েত উল্লাহ কবির আহমদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। গত ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পেট ব্যথাসহ বমি শুরু হলে মা নাহিদা আক্তার মেয়েকে এর ব্যথার কারণ জানতে চাইলে সে জানায় যে, ভয়ে সে ধর্ষণের বিষয়টি গোপন রেখেছিল।
ধর্ষণের শিকার মেয়েটির মা নাহিদা আক্তার খবরের কাগজকে বলেন, মেয়েকে গর্ভপাত করানোর পরে জিজ্ঞেস করলে সে আমাকে জানায় তার বাবা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ধর্ষণের বিষয়ে আমার স্বামী মোহাম্মদ আলীর কাছে জিজ্ঞেস করলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন। পরে এ বিষয়ে কাউকে না জানানোর জন্য অনুরোধ করেন। একপর্যায়ে আমি মুঠোফোনে কল দিয়ে আমার ভাই মো. নাজিম উদ্দিনকে হাসপাতালে ডেকে আনি। এর পর তার সহায়তায় আমার স্বামীকে থানায় এনে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছি। যে মানুষ নিজের মেয়েকে ধর্ষণ করতে পারে, সে কখনোই আমার স্বামী হতে পারে না। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় তার মা ও আত্মীয়স্বজন অভিযুক্ত বাবাকে থানায় এনে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে। এ ঘটনায় মেয়েটির মা বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। আইনি প্রক্রিয়া শেষে আসামিকে আদালতে পাঠানো হবে।
আরিফুল/মেহেদী/