সুন্দরবনসংলগ্ন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী সীমান্ত এখন মানব পাচারকারীদের জন্য ‘নিরাপদ রুট’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই রুটে চলছে মানব পাচার।
সোমবার (২১ এপ্রিল) রাতে এই সীমান্তপথেই পাচারকালে নারী-শিশুসহ ১২ বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বিজিবির কৈখালী ক্যাম্পের সুবেদার আবু বক্করের নেতৃত্বে কালিন্দি নদীর বয়ারসিং বকচরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আটকদের মধ্যে রয়েছেন- নূর নাহার কয়াল (৪০), রাজ সিকদার (১৪), সোহান (০৭), ইশা মনি (০৩), শামীম আহমেদ (৪০), নিলা মল্লিক (৩২), সচিব সানা (১৮), অনুপম সরকার (২৯), দেবরাজ সরকার (০৮), পিংকি বৈরাগী (২৫), সুইটি ইসলাম (২১) ও রুমি (১৮)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি ল্যাপটপ, চারটি মোবাইল ফোন, ৪ হাজার ৫০০ ভারতীয় রুপি ও ২৪০ বাংলাদেশি টাকা।
সুবেদার আবু বক্কর জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় পাচারকারীরা পালিয়ে গেলেও আটক ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, দালালচক্রের মাধ্যমে তারা বিনা পাসপোর্টে ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। মামুন কয়াল, আজিজুল কয়ালসহ একাধিক পাচারকারী তাদের সেখানে জড়ো করে পাচারের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
এ বিষয়ে নীলডুমুর রিভারাইন বর্ডার গার্ডের (আরবিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সৈয়দ আব্দুর রউফ জানান, ভালো কাজের প্রলোভনে মামুন কয়াল, আইজুলসহ মানব পাচারচক্রের খপ্পরে পড়ে আটকরা বেশ কয়েক দিন যাবৎ কৈখালী সীমান্ত এলাকার পাচারকারীদের বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করে। এর পর পাচারের উদ্দেশ্যে তাদেরকে কৈখালী সীমান্তের কালিন্দি নদীর বয়ারসিং বকচরা এলাকায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদেরকে আটক করা হয়।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা জানান, এ ঘটনায় পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে আটকদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হবে। এ ছাড়া পলাতক পাচারকারীদের ধরতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।
এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সীমান্তসংলগ্ন অংশবিশেষ করে কালিন্দি ও রায়মঙ্গল নদীপথের বয়ারসিং, ঝাড়াখাল, কচুখালী এবং রায়মঙ্গল ঝেটামুখ এলাকা মানব পাচারের মূল রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশ অংশে মামুন কয়াল, আইজুল গাজী, রেজাউল গাজীসহ বড় একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে, যাদের সহযোগী রয়েছে ভারতের দক্ষিণ ২৪ পরগনার হেমনগর ও কালীতলা এলাকায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক জানান, এই রুট দিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষ পাচার হচ্ছে এবং প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তির ‘ম্যানেজমেন্টে’ এই চক্র নির্বিঘ্নে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সীমান্তে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকেই বিষয়টি জানলেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
শাহজান/তাওফিক/