ঢাকা ১০ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
English
বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

গুলশানে ব্যবসায়ী খুন চাঁদাবাজি নিয়ে দুগ্রুপের দ্বন্দ্ব, কিলিং মিশনে অংশ নেয় ৫ জন

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৮:১৭ পিএম
চাঁদাবাজি নিয়ে দুগ্রুপের দ্বন্দ্ব, কিলিং মিশনে অংশ নেয় ৫ জন
নিহত ব্যবসায়ী সুমন মিয়া

গুলশান ও বাড্ডা এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্থানীয় মেহেদী ও রবিন নামে দুটি সন্ত্রাসী গ্রুপের দ্বন্দ্ব চলছিল। সেই দ্বন্দ্বে মেহেদীর নির্দেশে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবসায়ী সুমন মিয়াকে হত্যা করা হয়। এই কিলিং মিশনে অংশ নেয় পাঁচজনের একটি গ্রুপ। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

বুধবার (২৬ মার্চ) র‍্যাবের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

র‌্যাব জানিয়েছে, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০ মার্চ সুমনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত মঙ্গলবার পটুয়াখালী থেকে ওয়াসির মাহমুদ ওরফে সাঈদকে (৫৯) ও টঙ্গী পূর্ব থানা এলাকা থেকে মামুন ওরফে বেলালকে (৪২) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। 

জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানায়, মেহেদী নামের এক ব্যক্তি মো. ওয়াসির মাহমুদের মাধ্যমে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে কয়েক বছর ধরে গুলশান ও বাড্ডা এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছিলেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মেহেদী পালিয়ে বিদেশে চলে যান। সেখান থেকে তিনি ওয়াসির মাহমুদের মাধ্যমে গুলশান ও বাড্ডা এলাকার চাঁদা সংগ্রহ করতেন। কিন্তু তখন অন্য একটি সন্ত্রাসী দল রবিন গ্রুপের হয়ে ভুক্তভোগী সুমন গুলশান বাড্ডা এলাকায় চাঁদাবাজি শুরু করে। গুলশান এলাকার বিভিন্ন বিপণিবিতানে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মেহেদী গ্রুপের সঙ্গে রবিন গ্রুপের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। এই বিরোধের জেরে মেহেদীর নির্দেশে সুমনকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন ওয়াসির মাহমুদ।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, হামলার ৮ থেকে ১০ দিন আগে সুমনকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিল্লাল ও মামুনের নেতৃত্বে পাঁচজনের একটি কিলার গ্রুপ গঠন করেন ওয়াসির মাহমুদ। এরপর তারা সুমনের ওপর নজর রাখা শুরু করেন। ঘটনার দিন ২০ মার্চ ওয়াসির মাহমুদের বাসায় সবাইকে নিয়ে বৈঠক হয়। এরপর তার বাসা থেকে অস্ত্র নিয়ে গুলশান এলাকায় যায় কিলিং মিশনের সদস্যরা। রাত ৯টার দিকে সুমনকে গুলশান পুলিশ প্লাজার সামনে ডা. ফজলে রাব্বি পার্কে বসে থাকতে দেখে গুলি ছোড়ে সন্ত্রাসীরা। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সুমন দৌড়ে পালাতে গেলে তাকে আরও কয়েকটি গুলি করা হয়।

সুমনের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায়। তার বাবার নাম মাহফুজুর রহমান। তিনি রাজধানীর ভাষানটেক এলাকায় থাকতেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

আড়াইহাজারে স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা, স্বামী আটক

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৪৯ পিএম
আড়াইহাজারে স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা, স্বামী আটক
ছবি: খবরের কাগজ

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে পারিবারিক কলহের জেরে সুলেখা নামে এক গৃহবধূর গলা কেটে হত্যার দায়ে স্বামী রব মিয়াকে আটক করেছে পুলিশ।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকালে উপজেলার হাইজাদী ইউনিয়নের নারান্দী পশ্চিমপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত সুলেখা বেগম (৪০) পার্শ্ববর্তী কলাগাছিয়া নয়পাড়া গ্রামের আব্দুলের মেয়ে। তিনি ৪ কন্যা সন্তানের জননী।

পুলিশ জানায়, গত কয়েকদিন ধরে সুলেখা বেগমের সঙ্গে ঝগড়া চলছিল রব মিয়ার। এর জেরে বুধবার সকালে সুলেখাকে গলা কেটে হত্যা করেন তিনি। পরে ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখে। এ সময় প্রতিবেশীরা জানালা দিয়ে গলাকাটা অবস্থায় নিহতের মরদেহ বিছানায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ স্বামী রব মিয়াকে আটকসহ রক্তমাখা ধারালো ছুরি উদ্ধার করে।

আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনায়েত হোসেন বলেন, নিহতের গলায় ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জেরে এ হত্যাকাণ্ড। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলাসহ পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

বিল্লাল/মেহেদী/

শার্শায় জমি নিয়ে বিরোধে বাড়িতে হামলা, আহত ২

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:০৫ পিএম
আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২১ পিএম
শার্শায় জমি নিয়ে বিরোধে বাড়িতে হামলা, আহত ২
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ওসি জাহাঙ্গীর আরিফ

যশোরের শার্শা উপজেলায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে একটি পরিবারের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক নারী ও এক বৃদ্ধ আহত হয়েছেন। 

বুধবার (২৩ এপ্রিল) নিরাপত্তা চেয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে রিপন হোসেন শার্শা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। 

অভিযুক্তরা হলেন- বাইকোলা গ্রামের মৃত জামাল উদ্দিনের ছেলে তরিকুল ইসলাম, সাময়িক বরখাস্ত ওসি জাহাঙ্গীর আরিফ ও তাদের মা।

অভিযোগে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে দুই পরিবারের জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। পূর্ব বিরোধের কারণে মঙ্গলবার রাতে তরিকুল ইসলাম তার সাঙ্গপাঙ্গসহ নাজিম উদ্দিনের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে বাড়ির লোকজনদের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও মারপিট করে।

রিপন হোসেন বলেন, ‘গতকাল সকালে আমরা সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করছিলাম। এর পর রাত ৮টার দিকে ওসি জাহাঙ্গীর আরিফের নির্দেশে তার ভাই তরিকুলসহ আরও ৫/৬ জন আমাদের বাড়িতে এসে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। আমার ভাবী ডালিয়া খাতুন তাদের গালিগালাজ করতে নিষেধ করলে তারা বাড়ির গেট ভেঙে দিয়ে আমার ভাবীকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে। এ সময় আমার ভাইজি ঠেকাতে গেলে তাকেও মারপিট করে, তার গলায় থাকা দেড় ভরি স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়। এর পর তারা আমাদের পুরানো বাড়িতে গিয়ে আমার বাবা-মাকে খুঁজতে থাকে। বাবা-মা পাশের বাড়িতে লুকিয়ে ছিল, কিন্তু তাদের বের করে এনে লাঠি দিয়ে মারপিট করে।’

রিপন আরও বলেন, ‘এ সময় তাদের চিৎকারে পাশের বাড়ির লোকজন এগিয়ে আসলে অভিযুক্তরা হুমকি দিয়ে চলে যায়। আমি পরবর্তীতে আহত বাবা ও ভাবীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। পরে তরিকুলের ভাই ওসি জাহাঙ্গীর আরিফ মুঠোফোনে আমাদেরকে হত্যার হুমকি দেন। এ কারণে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই নিরাপত্তা চেয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছি।’ 

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আরিফের কাছে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি একজন পুলিশ কর্মকর্তা, আমি কেন তাদের হুমকি দেব? হুমকির ঘটনা মিথ্যা।’

শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জাহাঙ্গীর আরিফ আগে ফরিদপুরের ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেখানে চাঁদাবাজির অভিযোগে তাকে প্রত্যাহার করে সিলেট রেঞ্জে পাঠানো হয়েছিল। পরে ঢাকার রমনা থানায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক হিসেবে পোস্টিং দেওয়া হয়। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হত্যার দুটি মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন জাহাঙ্গীর আরিফ। কিন্তু আদালতে ওই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেই বিষয়টি জানাজানি হয়। ওই সময় পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিফকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। যা নিয়ে দেশের শীর্ষ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।

নজরুল/তাওফিক/ 

সিলেটের ৬ শ্রমিককে ২০ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হয়েছিল

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৩ এএম
আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৭ পিএম
সিলেটের ৬ শ্রমিককে ২০ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হয়েছিল
ছবি: খবরের কাগজ

সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রামের ছয়জন রাজমিস্ত্রি কাজের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার গিয়ে ৬ দিন ধরে নিখোঁজের পর মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার দিকে টেকনাফের রাজারছড়া গ্রামের দুর্গম পাহাড় থেকে পুলিশ তাদের উদ্ধারের পর তারা জানান, সেখানকার শহিদুল নামে এক ঠিকাদার জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে তাদেরকে বিক্রি করে দেয়। একটি মানবপাচার চক্র মালয়েশিয়া পাঠানোর জন্য শহিদুলের কাছ থেকে তাদেরকে কিনে নেয়।

উদ্ধার হওয়া খালেদ হাসান (১৯) বলেন, আমাদের যে ঠিকাদার ছিলেন তার শ্যালক এসে আমাদের খাওয়া-দাওয়া করায়। এর পর আমাদেরকে একটি সিএনজিচালিত রিকশায় তুলে দেয়। পরে কয়েকবার রিকশা বদলানো হয়। আমাদেরকে বলে কাজের সাইট একটু পরে। একটু পরে বলে বলে আমাদের জঙ্গলের ভেতর দিয়ে পাহাড়ে নিয়ে যায়। এর পর আমরা জানতে পারি আমাদের ঠিকাদার আমাদেরকে জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে বিক্রি করে দিয়েছে। তারা আমাদের কোনো নির্যাতন করেনি। তিন বেলা খাবার দিয়েছে। আমাদের কাছে কোনো টাকা-পয়সা ছিল না। তারা আমাদের মোবাইলগুলো নিয়ে যায়।

আব্দুল জলিল (৫৫) বলেন, শহিদুল নামে এক রাজমিস্ত্রির সঙ্গে আমরা দুই মাস কাজ করেছি। এই সূত্রে তার সঙ্গে পরিচয়। আমরা বাড়িতে যাওয়ার পর ৮ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত সে আমাদেরকে শুধু কল করে। প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ বার কল দিয়ে বলত কাজে আসো তোমরা। বলত ভালো কাজ আছে। ৫ তালা বিল্ডিংয়ে তোমরা কাজ করবা। শহিদুল আমাদের এখানে এনে দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়। আমাদের খোঁজে যখন নিউজ হয়, ইন্টারনেটে আমাদের ছবি ছড়িয়ে পড়ে তখন তারা আমাদের বলে তোমাদের এনে আমরা আতঙ্কে আছি। তোমরা মালয়েশিয়া কি যাবে না। আমরা বলছি আমরা মালয়েশিয়া যাব না, আমাদের বাড়ি পাঠিয়ে দাও। নিউজের কারণে পুলিশের আসা-যাওয়া শুরু হয়। তখন তারা আমাদের রাতে ছেড়ে দেয়। এর পর পুলিশ আমাদের উদ্ধার করে। আমরা কাউকে চিনতে পারিনি। তবে দেখলে চিনতে পারব।

শাহিন আহমদ (২১) বলেন, তারা আমাদের নিয়ে একটি ঘরে রাখে। একদিন পরে তাদের বস আসে। বস এসে বলে আমাদের মালয়েশিয়া পাঠিয়ে দেবে। সেখানে আমরা গেলে অনেক কাজ করতে পারব, অনেক টাকা ইনকাম করতে পারব। এ রকম বিভিন্ন ধরনের লোভ দেখায় তারা আমাদের। কিন্তু আমরা মানিনি। আমরা বলছি আমাদের মা-বাবার কাছে চলে যাব। আমরা রাজমিস্ত্রি। কাজের জন্য আসছি, মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য আসিনি আমরা। এর পরও আমাদের ছাড়েনি। যখন আমাদের বাড়ি থেকে খোঁজ নেওয়া শুরু হয় নিউজ হয় তখন তারা আমাদের ছেড়ে দেয়। এর পর টেকনাফ থানা পুলিশ আমাদের উদ্ধার করে।

এর আগে গত ১৫ এপ্রিল বিকেলে জকিগঞ্জ উপজেলার ৪নং খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের মৃত লুকুছ মিয়ার ছেলে রশিদ আহমদ (২০), ফারুক আহমদের ছেলে মারুফ আহমদ (১৮), আজির উদ্দিনের ছেলে শাহিন আহমদ (২১), মৃত দুরাই মিয়ার ছেলে এমাদ উদ্দিন (২২), সফর উদ্দিনের ছেলে খালেদ হাসান (১৯) ও মৃত সরবদির ছেলে আব্দুল জলিল (৫৫) সিলেট থেকে থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ১৬ এপ্রিল সকালে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার পৌঁছা পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও এর পর থেকে তাদের সবার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরিবারের লোকজন বারবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কারও কোনো সন্ধান পাচ্ছিলেন না। এর পর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তাদের খোঁজ চেয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। পরে মঙ্গলবার রাতে টেকনাফের রাজারছড়া গ্রামের দুর্গম পাহাড় থেকে তাদের উদ্ধার করে টেকনাফ থানা পুলিশ।

৬ জনকে খুঁজে পাওয়ায় নিখোঁজদের পরিবারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমসহ সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এমাদ উদ্দিনের চাচাতো ভাই আব্দুল বাছিত দুলাল।

এই প্রতিবেদনটি তৈরি করতে উদ্ধার ব্যক্তিদের ভিডিও বক্তব্য নেন খবরের কাগজের টেকনাফ প্রতিনিধি শাহিন আহমদ।

মেহেদী/

মানব পাচারের নিরাপদ রুট কৈখালী সীমান্ত, নারী-শিশুসহ আটক ১২

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫২ এএম
আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫৩ পিএম
মানব পাচারের নিরাপদ রুট কৈখালী সীমান্ত, নারী-শিশুসহ আটক ১২
অবৈধভাবে ভারতে পাচারকালে কৈখালী সীমান্তের মানব পাচার চক্রের সদস্যদের গোপন আস্তানা থেকে আটক নারী-শিশুসহ ১২ জন। ছবি: খবরের কাগজ

সুন্দরবনসংলগ্ন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী সীমান্ত এখন মানব পাচারকারীদের জন্য ‘নিরাপদ রুট’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই রুটে চলছে মানব পাচার।

সোমবার (২১ এপ্রিল) রাতে এই সীমান্তপথেই পাচারকালে নারী-শিশুসহ ১২ বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বিজিবির কৈখালী ক্যাম্পের সুবেদার আবু বক্করের নেতৃত্বে কালিন্দি নদীর বয়ারসিং বকচরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

আটকদের মধ্যে রয়েছেন- নূর নাহার কয়াল (৪০), রাজ সিকদার (১৪), সোহান (০৭), ইশা মনি (০৩), শামীম আহমেদ (৪০), নিলা মল্লিক (৩২), সচিব সানা (১৮), অনুপম সরকার (২৯), দেবরাজ সরকার (০৮), পিংকি বৈরাগী (২৫), সুইটি ইসলাম (২১) ও রুমি (১৮)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি ল্যাপটপ, চারটি মোবাইল ফোন, ৪ হাজার ৫০০ ভারতীয় রুপি ও ২৪০ বাংলাদেশি টাকা।

সুবেদার আবু বক্কর জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় পাচারকারীরা পালিয়ে গেলেও আটক ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, দালালচক্রের মাধ্যমে তারা বিনা পাসপোর্টে ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। মামুন কয়াল, আজিজুল কয়ালসহ একাধিক পাচারকারী তাদের সেখানে জড়ো করে পাচারের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

এ বিষয়ে নীলডুমুর রিভারাইন বর্ডার গার্ডের (আরবিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সৈয়দ আব্দুর রউফ জানান, ভালো কাজের প্রলোভনে মামুন কয়াল, আইজুলসহ মানব পাচারচক্রের খপ্পরে পড়ে আটকরা বেশ কয়েক দিন যাবৎ কৈখালী সীমান্ত এলাকার পাচারকারীদের বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করে। এর পর পাচারের উদ্দেশ্যে তাদেরকে কৈখালী সীমান্তের কালিন্দি নদীর বয়ারসিং বকচরা এলাকায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদেরকে আটক করা হয়।

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা জানান, এ ঘটনায় পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে আটকদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হবে। এ ছাড়া পলাতক পাচারকারীদের ধরতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।

এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সীমান্তসংলগ্ন অংশবিশেষ করে কালিন্দি ও রায়মঙ্গল নদীপথের বয়ারসিং, ঝাড়াখাল, কচুখালী এবং রায়মঙ্গল ঝেটামুখ এলাকা মানব পাচারের মূল রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশ অংশে মামুন কয়াল, আইজুল গাজী, রেজাউল গাজীসহ বড় একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে, যাদের সহযোগী রয়েছে ভারতের দক্ষিণ ২৪ পরগনার হেমনগর ও কালীতলা এলাকায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক জানান, এই রুট দিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষ পাচার হচ্ছে এবং প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তির ‘ম্যানেজমেন্টে’ এই চক্র নির্বিঘ্নে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সীমান্তে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকেই বিষয়টি জানলেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

শাহজান/তাওফিক/ 

বাঁশখালীতে ইউটিউব দেখে চিকিৎসা, চিকিৎসককে জরিমানা

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩৫ পিএম
বাঁশখালীতে ইউটিউব দেখে চিকিৎসা, চিকিৎসককে জরিমানা
ভুয়া ডাক্তার কামরুল ইসলাম (বামে) ও রিকশাচালক খলিলুর রহমান। ছবি: খবরের কাগজ

বাঁশখালীতে ব্যথা নিরাময়ে চিকিৎসা নিতে গিয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি খলিলুর রহমান (৫৫) নামে এক দরিদ্র রিকশাচালক। কামরুল ইসলাম নামে এক ভুয়া চিকিৎসক থেরাপি দেওয়ার নামে তার শরীরের বড় একটি অংশ ঝলসে দিয়েছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ জামশেদুল আলম ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে ওই ভুয়া চিকিৎসককে এক লাখ টাকা জরিমানা ও রোগীর যাবতীয় চিকিৎসা খরচ বহনের সাজা দিয়েছেন।

রবিবার (২০ এপ্রিল) রাত ১২টার দিকে বাঁশখালী হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানো হয়।

এ সময় কামরুল ইসলাম নামে ওই চিকিৎসক ফেসবুক ইউটিউব দেখে চিকিৎসা দিতেন বলে জানান এবং দোষ স্বীকার করেন।

জানা গেছে, রবিবার সন্ধ্যায় কোমর ও পিটের ব্যথা নিয়ে বাঁশখালীর শেখেরখীল ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আলিবলি পাড়া এলাকার মৃত শফিকুর
রহমানের ছেলে রিকশাচালক খলিলুর রহমান নাপোড়া বাজারে শেখেরখীল এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে কামরুল ইসলামের চেম্বারে যান। তিনি দীর্ঘ ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করে আসছিলেন। এদিকে থেরাপি দিতে গিয়ে রিকশা চালক খলিলুর রহমানের শরীর ঝলসে গেলে তার আর্তচিৎকারে লোকজন ছুটে আসলে কামরুল ইসলাম তাকে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করে রাখেন। পরে রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় খলিলুর রহমানকে বাঁশখালী হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা। এ সময় কামরুল ইসলামকেও উপজেলা সদরে নিয়ে আসেন স্থানীয়রা।
পরে খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে ইউএনও মোহাম্মদ জামশেদুল আলম এসে প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে  বাঁশখালী হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক, রোগীর স্বজন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় খলিলুর রহমানের শরীরের ভয়াবহ অবস্থা দেখেন এবং এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কামরুল ইসলামকে জেরা করলে তিনি ফেসবুক ইউটিউব দেখে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা এবং নিজের দোষ স্বীকার করেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী
অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করার পাশাপাশি ওই রোগীর যাবতীয় চিকিৎসা খরচ বহনের নির্দেশ দেন।


গভীর রাতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের এমন অভিযানে এলাকাবাসী ও সাধারণ মানুষ উপজেলা তাকে অভিনন্দন ও মোবারকবাদ
জানিয়েছেন।

বাঁশখালীতে দীর্ঘদিন ধরে বেশ কিছু ব্যক্তি নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা চালিয়ে আসছেন।

ইউএনও মোহাম্মদ জামশেদুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শফকত/মেহেদী/