
ঢাকার ধামরাইয়ে নিজেদের ঘর থেকে দুই ছেলে ও তাদের মা নারগিস আক্তারের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য উন্মোচন করেছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এই ঘটনার চার দিন পর নারগিস আক্তারের মেয়ের স্বামী রবিনকে (২২) গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
মৃত শ্বশুর রাজা মিয়ার ডেকোরেটরের ব্যবসা দখল নিতেই রবিন এই তিনজনকে হত্যা করে বলে দাবি করে পিবিআই।
পিবিআই বলছে, খুনি রবিন মাদকাসক্ত।
গত বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দুপুরে পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানান।
তিনি জানান, ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় পিবিআই হত্যাকাণ্ডের পরই নজরদারিতে রাখেন ওই পরিবারের অন্য সদস্যদের। এর মধ্যে নিহতের মেয়ে ও মেয়ের জামাই রবিন, নিহতের ভাসুরসহ একাধিক ব্যক্তি রয়েছেন। কিন্তু তাদের সন্দেহের মধ্যে রাখলেও দেখা যায়, তারা কেউ এর সঙ্গে জড়িত নয়। কিন্তু সন্দেহ থেকে যায় মেয়ের স্বামী রবিনের প্রতি। তাকে জিজ্ঞাসার জন্য নিয়ে আসা হলে খুনের রহস্য উন্মোচন হয়ে যায়।
নিহত নারগিস আক্তারের ভাই আব্দুর রশিদ গত ৪ জুন বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত মেয়ের স্বামী রবিন উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের কামারপাড়া এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে।
এর আগে গত ২ জুন দুপুরে উপজেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের রক্ষিত গ্রামে নারগিসের নিজের বসতঘর থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের পরই তদন্তে নামে পিবিআই। তাদের তদন্তে মেয়ের জামাই রবিনের জড়িত থাকার বিষয়টি চলে আসে। এর পর রবিনকে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পরে সানোড়া ইউনিয়নের মধুডাঙা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রবিন একাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জানান।
নিহতরা হলেন- মৃত রাজা মিয়ার স্ত্রী নারগিস আক্তার (৪০), বড় ছেলে শামীম (১৬) ও ছোট ছেলে সোলাইমান (৮)।
নিহত নারগিস আক্তারের মেয়ে নাসরিন আক্তার জানান, প্রতিদিনের মতো তার মা নারগিস আক্তার তার দুই ভাইকে রাতে ঘুমাতে যান। পরদিন সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও তাদের কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না।
মেয়ে নাসরিন আক্তার সকাল থেকেই মা নারগিস আক্তারকে ফোন দিলেও কেউ ফোন রিসিভ করেনি। পরে নাসরিন আক্তার শ্বশুর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি চলে আসেন। বাড়িতে এসে দেখেন ঘরের দরজা বন্ধ। অনেক ডাকাডাকি করার পরও তাদের কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘরের দরজা ভেঙে ঘরের ঢুকে দেখেন মা নারগিস আক্তার ও দুই ভাই শামীম এবং সোলাইমানের নিথর দেহ বিছানায় পড়ে রয়েছে।
বিষয়টি ধামরাই থানায় জানালে পুলিশ এসে মরদেহগুলো উদ্ধার করে।
পিবিআই জানায়, রবিন রাতে বাড়ির টিনের দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকে প্রথমে শামীমকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তার শাশুড়ি নারগিস আক্তারকে বালিশচাপা দেন। নারগিস আক্তার আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন বলে জানা যায়। শাশুড়িকে হত্যার পর ছোট শ্যালক সোলাইমানকে একইভাবে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেন।
তিনজনের মৃত্যু নিশ্চিত করার পর মরদেহগুলো খাটের উপর কাঁথা দিয়ে মুড়িয়ে নিজের বাড়ি চলে যান।
মূলত, শ্বশুর রাজা মিয়ার ডেকোরেটরের ব্যবসা দখলে নিতেই মাদকাসক্ত রবিন এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।
রুহুল আমিন/অমিয়/