ঢাকা ২০ আশ্বিন ১৪৩১, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪

আমরা আঁকি

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৪, ০৯:২২ পিএম
আমরা আঁকি

শব্দার্থ আচার্য গদ্য
চতুর্থ শ্রেণি
কাকলি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ
ধানমন্ডি, ঢাকা।

/আবরার জাহিন

পড়বি পড় তিমির মুখে

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০০ এএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২০ পিএম
পড়বি পড় তিমির মুখে
তিমির মুখে ঢুকেগিয়েছিলেন মাইকেল প্যাকার্ড চাচ্চু

মাইকেল প্যাকার্ড চাচ্চু বাস করেন আমেরিকার ম্যাসাচুসেটসে। এক দিন তিনি পড়েছিলেন মহা ঝামেলায়। কী ঝামেলা- চলো শুনি।

২০২১ সালের জুন মাসের ঘটনা। ডুব দিয়ে চিংড়ি মাছ ধরার জন্য এক দিন তিনি সাগরের পানিতে নেমেছিলেন। বেশ খানিকটা গভীরে যাওয়ার পর হঠাৎ কী যেন এসে তাকে মুখের মধ্যে নিয়ে নেয়। মাইকেল চাচ্চু প্রথমে বুঝতে পারেননি কী হয়েছে। হঠাৎ তাকিয়ে দেখেন চারদিক অন্ধকার। একদম নড়তে পারছেন না।

তখনই বুঝতে পারলেন, বিশাল কোনো প্রাণী তাকে খাবার জন্য মুখের মধ্যে নিয়েছে। তিনি কোনো কামড় অনুভব করলেন না।

হাত দিয়ে খুঁজে দেখলেন, প্রাণীটির কোনো দাঁতও নেই। তখনই বুঝতে পারলেন- এটি একটি তিমি।

এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে প্রায় ২০ সেকেন্ড। মাইকেল চাচ্চু জানতেন, তিমিরা ক্রিল নামের গুঁড়া চিংড়ি খায়। মানুষ খায় না। তাহলে কী কারণে তিমিটা তাকে মুখে নিল বুঝতে পারলেন না। তিমির মুখ থেকে বের হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলেন, কিন্তু বিশাল আকারের তিমির সঙ্গে কী পারা যায়। তিনিও পারলেন না।

ওদিকে তিমিটা তাকে গিলে ফেলার চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না। আসলে মানুষের মতো বড় প্রাণী খাবার অভ্যাস তার নেই। মাইকেল চাচ্চু শেষ চেষ্টা করলেন। ঠিক এই সময় তিমিটা তাকে মুখ থেকে বের করে দিল। মাইকেল সাঁতরে তীরে ওঠে এলেন। তখনই চিনতে পারলেন তিমিটাকে। হ্যাম্পব্যাক তিমি ওটা।

সম্ভবত চিংড়ি খেতে গিয়ে ভুলে মাইকেল চাচ্চুকে মুখে পুরে নিয়েছিল তিমিটা। ৩০ থেকে ৪০ সেকেন্ড তিনি তিমিটার মুখের মধ্যে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে মাইকেল চাচ্চুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এখন তিনি সুস্থ আছেন।

 

মেহেদী আল মাহমুদ

গোঁফওয়ালা পালোয়ান

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০১:১১ পিএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০১:১৪ পিএম
গোঁফওয়ালা পালোয়ান
এঁকেছেন মাসুম

অনেক দিন আগে চট্টগ্রামের আনোয়ারার ফুলতলা গ্রামে বাস করত এক গোঁফওয়ালা পালোয়ান। নাম তার মিজান শেখ। তার ছিল ইয়া বড় এক গোঁফ। দীর্ঘদিনের চর্চার ফলে সে তার গোঁফটাকে সামনে, পেছনে, ডানে, বাঁয়ে, ওপরে, নিচে যেদিকে ইচ্ছে সেদিকে নাড়াতে পারত। ফুলতলা গ্রামের শিশু-কিশোররা কিন্তু তাকে খুব পছন্দ করত। কারণ গোঁফওয়ালা পালোয়ান বাচ্চা-কাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে খুব পছন্দ করত এবং বাচ্চাদের সে গাছ থেকে আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, গোলাপজাম ইত্যাদি পেড়ে খাওয়াত।

কীভাবে? তার ইয়া বড় সেই গোঁফটি ব্যবহার করে। যেমন- দুষ্টু ছেলের দল কোনো উঁচু আমগাছে আমের নাগাল না পেলে গোঁফওয়ালা পালোয়ানকে এসে বলত, চাচা, আমাদের ওই উঁচু আমগাছের আমগুলো পেড়ে দাও। আর তখনই গোঁফওয়ালা পালোয়ান মিজান শেখ তার মস্ত বড় গোঁফ ওপরে তুলে আমগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে দিত হেঁচকা টান। আম মাটিতে পড়ত টুপটাপ করে। আর শিশু-কিশোররা সেই আম কুড়িয়ে নিয়ে হইচই করতে করতে বাসায় ফিরে যেত।

একবার কর্ণফুলী নদীতে গোঁফওয়ালা পালোয়ান শিশু-কিশোরদের সঙ্গে নৌ ভ্রমণে গেল। তীব্র খরস্রোতা নদীর জলে নৌকা চলছে ঢেউয়ের তালে তালে। গোঁফওয়ালা পালোয়ান বাচ্চাদের সঙ্গে গল্প করতে করতে চলেছে। বেখেয়ালের কখন যে তার বিশাল গোঁফ নদীর জলে ডুবে গেছে, তা সে খেয়াল করেনি। হঠাৎ মস্ত বড় একটা বোয়াল মাছ জড়িয়ে গেল গোঁফের সঙ্গে। গোঁফওয়ালা পালোয়ান গোঁফে টান ওজন অনুভব করে গোঁফ ধরে টানতে টানতে বোয়াল মাছটাকে নৌকায় তুলে ধপাস করে ফেলল। বাচ্চারা খুশিতে যথারীতি হইচই করে উঠল। গোঁফওয়ালা পালোয়ান সেই বিশাল আকৃতির বোয়াল মাছটাকে বাসায় এনে রান্না করিয়ে সারা গ্রামের শিশু-কিশোরদের খাওয়াল। শিশু-কিশোরের দল তো বেজায় খুশি। তারা খাওয়া-দাওয়া সেরে গোঁফওয়ালা পালোয়ানকে নিয়ে আনন্দ মিছিল বের করল।

এভাবেই দিন যাচ্ছিল। দেখতে দেখতে বাংলা নববর্ষ চলে এল। বৈশাখ মাস। মাসে চট্টগ্রামের লালদীঘির ময়দানে ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলার আয়োজন হয়। সেই ১৯০৯ সাল থেকে এই বলীখেলা হয়ে আসছে। এটা আসলে এক ধরনের কুস্তি। আর কুস্তি খেলায় গোঁফওয়ালা পালোয়ান মিজান শেখের অনেক নামডাক। কাজেই জব্বারের বলীখেলার আয়োজনে যথাসময়ে তার ডাক পড়ল।

সে একের পর এক বলী কুস্তিগিরদের হারিয়ে অবশেষে ফাইনালে উঠে গেল। ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বী বিখ্যাত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বলী কুস্তিগির মর্মর সিং। মর্মর সিং তরুণ, অন্যদিকে মিজান শেখের বেশ বয়স হয়েছে তখন। সে ফাইনাল খেলায় অনেকক্ষণ ধরে সমানে সমানে ফাইট দিলেও, শেষ পর্যন্ত আর পেরে উঠছিল না। উপস্থিত শিশু-কিশোররা তাকে চেঁচামেচি করে উৎসাহ দিচ্ছিল। হঠাৎ গোঁফওয়ালা পালোয়ান মিজান শেখ এক কাণ্ড করে বসল। সে মর্মর সিংকে তার গোঁফে পেঁচিয়ে দিল এক আছাড়। আছাড় খেয়ে মর্মর সিং বলীখেলার মাঠে গড়াগড়ি দিতে লাগল, আর উঠতে পারল না। অবশেষে গোঁফওয়ালা পালোয়ানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হলো। ফুলতলা গ্রামের শিশু-কিশোররা সবাই গোঁফওয়ালা পালোয়ান মিজান শেখকে কাঁধে চড়িয়ে, তার গোঁফটাকে নানা রং মেখে সাজিয়ে বিজয় মিছিল বের করল। সে কী আনন্দ! সে কী উচ্ছ্বাস!! তা আর কী বলব।

 

মেহেদী আল মাহমুদ

ইচ্ছে-খুশির দেশ

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:০০ এএম
আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫১ পিএম
ইচ্ছে-খুশির দেশ
ইচ্ছে-খুশির দেশ

ইশ! কী সুন্দর। ঠিক যেমনটি আমি চাইতাম। চারপাশ দারুণ ফুলে সাজানো। ফুলের ঘ্রাণে সুবাসিত সবখান। এটা কি পরীর রাজ্য?

আমি ভুল দেখছি না তো? চশমাটা খুলে একটু মুছে আবার পরলাম। না, আমি ভুল দেখছি না। এটা তো সত্যিই পরীর রাজ্য। আমাকেই তো পরীরা ঘিরে আছে।

কখন পরলাম এত সুন্দর পরীর জামা!

ওমা! আমি দেখি নীলপরী। মাথায় পরীর মুকুট। সারা গায়ে ঝিকিমিকি গহনা পরানো। আমি তো নিজেই নিজেকে চিনতে পারছি না।

হঠাৎ এক পরীর ডাকে ঘোর কাটল।

ওগো নীলপরী, তোমার সকালের নাশতা রেডি। তাড়াতাড়ি খেতে এসো প্লিজ।

আমি বুঝতে পারছি না কাকে বলছে। তাই চুপচাপ বসে রইলাম। পরে পরীরা এসেই আমাকে নাশতার টেবিলে নিয়ে গেল।

ইয়াম্মি! কত মজার মজার খাবার। এগুলো সবই আমার প্রিয়।

পরীরা বলে উঠল, তুমি খাও। লাগলে আরও দেব।

খাওয়া শেষ। পরীরা আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হলো। কিন্তু আমার জানি কেমন কেমন লাগছে। ভাবতে ভাবতে মনে পড়ল। আমি তো আজ স্কুল মিস করেছি।

আম্মু আমাকে বকা দেবে- কথাটি জোরেই বলে ফেললাম।

পরীরা শুনে হেসে উঠল।

এখানে তোমার আম্মু নেই। এখানে কেউ কাউকে বকে না। এটা হলো খুশির রাজ্য, ইচ্ছার রাজ্য। এখানে যা খুশি তাই করা যায়। এখানে কোনো শাসন-বারণ নেই।

যাক বাবা, বাঁচা গেল। থেকে থেকে আর আম্মুর ভয়ে কাঁচুমাচু হতে হবে না। এখানে আমি স্বাধীন। আমি এখন আমার খুশির রাজ্যে। আম্মু চাইলেই বকতে পারবে না। কী মজা! কী মজা!

এখানে কত ফুল! লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি, সাদা সব ফুলই আছে। দেখেই চোখ জুড়িয়ে গেল। পরীরা আমাকে ফুলে ফুলে সাজাল। এখন আমি ফুলপরী!

ঘোরা শেষে পরীর রাজ্যে ফিরে এলাম। দুপুর হয়ে গেল। এখন গোসলের পালা। পরীরা আমাকে ঝর্ণায় নিয়ে গেল। ঝরনার ঝিরঝির পানি দেখে আমি নেমে পড়লাম। ঝরনার নিচে দাঁড়িয়ে ভিজছি তো ভিজছি। মন বলছে এখান থেকে আর যাব না। আজ আমি সারা দিন গোসল করব। আম্মু তো নেই। তাড়াতাড়ি করো, বাথরুম থেকে বের , ঠাণ্ডা লাগবে- এসব বলে বলে আর কেউ বকবক করবে না।

আহা কী আনন্দ কী আনন্দ!

যা খুশি তাই করব

ঝর পানি ধরব।

আজকে সারা দিন

স্বাধীন গো স্বাধীন।

গোসল শেষ। নতুন জামা পরলাম। এখন আমি লালপরী।

খাবারের গন্ধে জিহ্বায় পানি চলে এল। লোভ সামলাতে না পেরে খাবার টেবিলে গেলাম। পরীরা তো আমাকে দেখে অবাক। কেননা, সকালে জোর করে খেতে এনেছিল। এখন একাই হাজির। সবাই খুব ব্যস্ত। সব খাবার আমার সামনে রাখল। সবগুলোই আমার প্রিয়। কী যে মজা লাগছে না। কোনো সবজি-টবজি নেই। এখানে শুধু মাছ, মাংস আর ডিমের রেসিপি। বিশ্রী কোনো সবজি-টবজি নেই। আম্মুও নেই। আমাকে কেউ আর সবজি খেতেও বলছে না। ইচ্ছামতো পেট পুরে খেলাম। ইয়াম্মি টেস্ট!

খাওয়াটা বেশিই হয়েছে। এখন একটু ঘুমানো দরকার। যাক এবার আম্মু খুশি হবে। দুপুরে ঘুমানোর জন্য কত কী করে! সত্যি সত্যি বিছানায় শুতেই ঘুমিয়ে গেলাম। আহা কী শান্তির ঘুম!

এই সিমি ওঠ, আর কত ঘুমাবি?

-..... আম্মু, আরেকটু ঘুমাই না।

- না, আর ঘুমালে স্কুলে লেট হবে।

স্কুলের কথা শুনেই আমি লাফিয়ে উঠলাম। আমি তো পরীর রাজ্যে ছিলাম। সেখানে আম্মু, স্কুল, সবজি, শাসন-বারণ কিছুই নেই।

-কীরে, ধ্যানে বসলি কেন?

-ধ্যাৎ আম্মু, তুমি যে কী করো না। দিলে তো আমার স্বপ্নটা ভেঙে। কী সুন্দর পরীর রাজ্যে ছিলাম।

- চলো সোনামণি, আমিও তোমাকে পরীর রাজ্যে নিয়ে যাব।

-হুম, শুধু পড়া আর পড়া। এটা করো, ওটা করো, ওখানে যাস না- তোমার রাজ্যে তো এসবই।

সিমির মা হো হো করে হেসে দিলেন।

-হ্যাঁ, সোনামা। নিয়ম মেনে পড়াশোনা শিখে বড় হতে হবে। তবেই না মনের মতো রাজ্য পাবে। তখন আর স্বপ্ন দেখতে হবে না, তখন তুমি নিজেই পরীর রাজ্য বানাতে পারবে।

-সত্যি বলছ মা?

-হ্যাঁ। সত্যি বলছি আমার সিমি সোনা।

-তাহলে চলো, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে স্কুলে যাই। আমি তাড়াতাড়ি বড় হয়ে পরীর রাজ্য বানাতে চাই।

 

মেহেদী আল মাহমুদ

পৃথিবীর আকাশে মিনি মুন

প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৪৩ পিএম
আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৪৫ পিএম
পৃথিবীর আকাশে মিনি মুন
পিটি৫ নামের গ্রহাণুকে মিনি মুন বা ক্ষুদ্র চাঁদ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে

 

দিনের আকাশ মানে একচেটিয়া সূর্যের রাজত্ব; আর রাতের আকাশ হলো অগণিত গ্রহ-উপগ্রহ, তারা-নক্ষত্র, গ্যালাক্সি-নীহারিকা, ধূমকেতু-উল্কা গ্রহাণু নিয়ে এক বিপুল আয়তনের মহাকাশ।

দিনের আকাশে যেমন রয়েছে সূর্যের দাপট আর আলোর বর্ণালি; তেমনি রাতের আকাশজুড়ে রয়েছে কোটি কোটি নক্ষত্রের নিবাস; আর নক্ষত্রের ফাঁকে দৃশ্যমান কালচে রঙের আভা। রাতের শুরুতে আকাশের যে বস্তুটি আমাদের সবার দৃষ্টি কাড়ে, সেটি হলো চাঁদ। চাঁদ পৃথিবীর একটি উপগ্রহ। সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহেরও চাঁদ আছে। ব্যতিক্রম শুধু বুধ এবং শুক্র। ওদের কোনো চাঁদ নেই। কিছু গ্রহের রয়েছে একাধিক চাঁদ। বৃহস্পতি গ্রহের চাঁদ ৯৫টি। শনির চাঁদ আছে ১৪৬টি। অন্যদিকে আমাদের পৃথিবীর চাঁদ মাত্র একটি। খুবই আনন্দের খবর হলো মাত্র ৫৭ দিনের জন্য দ্বিতীয় একটি ছোট্ট চাঁদ পেতে যাচ্ছে পৃথিবী। ২৯ সেপ্টেম্বর আকাশে দৃশ্যমান হবে এটি। চাঁদের মতো পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করবে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত। এর পরে চাঁদটি আমাদের মহাকর্ষীয় বল থেকে মুক্ত হয়ে সূর্যের চারপাশে তার কক্ষপথে ফিরে যাবে।

যেটাকে আমরা চাঁদ বলছি, সেটা আসলে গ্রহাণু বেল্ট থেকে উড়ে আসা একটি গ্রহাণু। আকারে এটা মাত্র ৩৬ ফিট। মঙ্গল বৃহস্পতি গ্রহের মধ্যবর্তী অঞ্চলকে গ্রহাণু বেল্ট বলে। যেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে লাখ লাখ গ্রহাণু উল্কাপিণ্ড। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ২০২৪ পিটি৫ নামের এই গ্রহাণুকে মিনি মুন বা ক্ষুদ্র চাঁদ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন; যদিও এটিকে খালি চোখে দেখা যাবে না। এটি চাঁদের মতো আলোও দেবে না; তবু এটি আকাশপ্রেমীদের জন্য বিশাল কৌতূহলের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। তারা টেলিস্কোপের চোখে চোখ রেখে চাঁদ দেখার উৎসবে মেতে ওঠবে।

পৃথিবীর মহাকর্ষে আকৃষ্ট হয়ে চাঁদ বা গ্রহাণুটির পৃথিবীর কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করার ঘটনা অবশ্য এটিই প্রথম নয়। অতীতে বেশ কয়েকবার পৃথিবীর অতিথি হয়ে এসেছিল বেশ কিছু গ্রহাণু। পৃথিবীর দিকে দ্রুতগতিতে ধেয়ে আসা গ্রহাণুগুলো সাধারণত বায়ুমণ্ডলে আছড়ে পড়ে বা ভস্মীভূত হয়ে যায়। উপগ্রহ বা চাঁদের মতো পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে হলে একটি গ্রহাণুকে সঠিক গতি বজায় রেখে এবং দিক মেনে পৃথিবীর দিকে আসতে হবে। মিনি মুনে পরিণত হতে হলে গ্রহাণুকে ঘণ্টায় হাজার ২৩৭ মাইল গতিতে পৃথিবীর কক্ষ সীমানায় পৌঁছাতে হবে।

এর অধিক গতিতে ধেয়ে আসা গ্রহাণু বা উল্কাপিণ্ড পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণে পুড়ে অঙ্গার হয়ে মহাকাশে ভেসে বেড়ায়। যদি বিশাল সাইজের গ্রহাণু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আঘাত করে তাহলে কিন্তু মহাবিপদ। কেননা এটি বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে সংঘর্ষে ভস্মীভূত হলেও এর খণ্ডাংশ পৃথিবীর ওপর আছড়ে পড়ে মানবসভ্যতাকে বিলুপ্ত করে পারে।

 

মেহেদী আল মাহমুদ

বিস্ময় বালক ঋতুরাজ!

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৪, ০১:৩৩ পিএম
আপডেট: ০৯ আগস্ট ২০২৪, ০১:৩৬ পিএম
বিস্ময় বালক ঋতুরাজ!

বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী সিরিজ বইয়ের লেখক হিসেবে মাত্র ৯ বছর বয়সে সে পেয়েছে গিনেস বুক অব অ্যাওয়ার্ড। একই বছরে ইংল্যান্ড থেকে পেয়েছে প্রিন্সেস ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া আরও অনেক অর্জনে তার ঝুলি ভরপুর। বলছিলাম, ঋতুরাজ ভৌমিকের কথা।

তার আত্মপ্রকাশ হয় বাবা শুভাশীষ ভৌমিকের হাত ধরে। মাত্র ছয় বছর বয়সে বাবার সঙ্গে তার গানের হাতেখড়ি। ‘বাপকা বেটা’ নামে একটা ফেসবুক পেজ আছে তাদের। সেখানে সব কার্যক্রম তারা পোস্ট করতে থাকেন। ২০১৯ সালে তাদের জনপ্রিয়তার শুরু সেখান থেকেই। করোনা মহামারির সময় ঘরে বসে তারা একের পর এক গান করেছেন। সেসব গান শেয়ার করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তাদের বাপ-বেটা জুটিকে সবাই সাদরে গ্রহণ করেছিলেন।

২০২২ সালের বইমেলায় যখন ঋতুরাজের বয়স মাত্র ৮ বছর, তখন তার প্রথম বই প্রকাশিত হয়। এ পর্যন্ত তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৪টি। বইগুলোর নাম গুডউইল ফ্যাক্টরি, গুডউইল ফ্যাক্টরি-২, অ্যারাউন্ড দ্যা ওয়ার্ল্ড পার্ট-১ এবং অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড পার্ট-২। গুডউইল ফ্যাক্টরি এবং গুডউইল ফ্যাক্টরি-২ এ দুটি বইয়ে ঋতুরাজ তুলে ধরেছে এমন কিছু গল্প, যা সমাজে ছোটদের মূল্যবোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। চারপাশের সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে এবং পরিবারের কাছ থেকে সুন্দর শিক্ষা পেয়ে সে পেয়েছে এমন কিছু লেখার অনুপ্রেরণা। অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড পার্ট-১ এবং অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড পার্ট-২ বই দুটি ভ্রমণের ওপর লেখা, যা একই সঙ্গে শিক্ষনীয়। ঋতুরাজ এখন পর্যন্ত বেশ কিছু দেশ ভ্রমণ করেছে। সেসব দেশ ঘুরে যা যা শিখতে পেরেছে, ভ্রমণকাহিনির মাধ্যমে তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। ছোটরা বই দুটি পড়ে যেমন অনেককিছু শিখতে পারবে, তেমনই ভ্রমণেও উৎসাহিত হবে।

ঋতুরাজের বয়স এখন ১১ বছর। সে ক্লাস ৫ শেষ করেছে অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে। এ বয়সেই তার চিন্তার জগৎ, মূল্যবোধ অবাক করে দেয় চারপাশের মানুষকে। সে সবসময় পিছিয়ে পড়া শিশুদের নিয়ে ভাবে। তার মা-বাবা খুব কাছ থেকে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জীবনযাপন দেখিয়েছেন তাকে। অনুভব করতে শিখিয়েছেন তাদের না পাওয়া কিংবা দুঃখগুলোকে। তাদের দারিদ্র্যে নিপীড়িত জীবন তাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়ে যায়। সমাজের প্রান্তিক মানুষদের জন্য কিছু করার ইচ্ছা তার সেখান থেকেই জন্মে। তার লেখা বইগুলো থেকে উপার্জিত সব অর্থ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়াশোনার জন্য ব্যয় হয়। পাশাপাশি ‘আমরাও পড়তে চাই’ নামক এক ক্যাম্পেইনে তার অনুরোধে অনেক মানুষ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়ায়। এত ছোট বয়সে এই মানবতামূলক কাজে যুক্ত থাকার জন্য ঋতুরাজকে প্রিন্সেস ডায়ানার মতো সম্মানজনক অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।

পিছিয়ে পড়া শিশুদের নিয়ে যেমন তার ভাবনার অন্ত নেই, তেমনই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে কীভাবে আরও উপযোগী করে তোলা যায়, তা নিয়েও চেষ্টার কোনো কমতি নেই তার। পড়াশোনা আর লেখালিখি ছাড়াও নিজেকে নানানভাবে ছড়িয়ে দিতে চায় সে। নিজের মেধাকে চাষাবাদ করে ফলাতে চায় সোনার ফসল। ফুটবল খেলা খুব পছন্দ করে ঋতুরাজ। Growing Up নামে একটা ক্লাবে খেলে সে।

গিটার বাজাতে ভীষণ ভালোবাসে। গিটার বাজিয়ে অনেক গানই করেছে ঋতুরাজ। তবে এ পর্যন্ত তার মৌলিক গানের সংখ্যা ৩টি। যা ফেসবুক, ইউটিউব, স্পটিফাইসহ ২০০টির বেশি প্ল্যাটফর্মে রিলিজ হয়। গানগুলো প্রায় ৭০-৮০ লাখ মানুষ শুনেছে এবং বেশ কয়েকটি স্কুলে ছোটদের এই গানগুলো শেখানো হয়।

গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ড অ্যাওয়ার্ড, প্রিন্সেস ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড ছাড়াও ঋতুরাজ তার নানামুখী কার্যক্রমের জন্য শেখ রাসেল পদক, দ্য ডেইলি স্টার ওটিটি অ্যান্ড ডিজিটাল কনটেন্ট অ্যাওয়ার্ড, বাংলা অলিম্পিয়াড অ্যাওয়ার্ড, বিডি ট্যালেন্ট বেস্ট চাইল্ড অ্যাওয়ার্ড এবং UNDP SDG অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। তার বইয়ের অভাবনীয় সাড়া তাকে এনে দিয়েছে রকমারি বেস্ট সেলার অ্যাওয়ার্ড।

জাহ্নবী