আষাঢ়ে বৃষ্টি
বেণীমাধব সরকার
আষাঢ়ে আসার নামে টিপ টিপ করে,
নতুন জোয়ার জলে নদী নালা ভরে।
জলতলে ঝাঁকে চলে ছোটবড় মাছ
জেলেগণ জালে ধরে করে উচ্ছ্বাস।
নাও চলে পাল তুলে মাঝি ধরে হাল
উজানী নগর পানে ছুটে বেসামাল।
পালে বায়ু লেগে নাও হয় বেগবান,
মাঝির কণ্ঠে থাকে ভাটিয়ালি গান।
আশু ধান মাঠে মাঠে জুল জুল ভাসে
চাষিগণ হাসি মুখে কেটে নিয়ে আসে।
গুড়- গুড়- ডাকে মেঘ আকাশের ’পরে
বিদ্যুৎ চমকায় থর থর করে।
আচমকা আসমান হতে নামে ধারা
উঠোনের ধানপাট ভিজে হয় সারা।
ক্ষণিকেই নামে ধারা ক্ষণিকেই শেষ
আলো আন্ধারি খেলা জমে ওঠে বেশ!
কোলার বন্ধু কুনো
অজিতা মিত্র
বৃষ্টি এলো, কোলা-কুনো
করছে নাচানাচি।
নাচের সময় হ্যাচ্চো হ্যাচ্চো...
কুনোর সে কী হাঁচি!
ছুটল কোলা বদ্যিবাড়ি
বৃষ্টি মাথায় নিয়ে,
বদ্যি দিল রসুনপড়া
সর্ষে তেলে দিয়ে!
দাওয়াই দিল গরম চায়ে
তুলসী পাতা, আদা,
তাবিজ দুটো থাকতে হবে
কুনোর হাতে বাঁধা
রসুনপড়া মেখে কুনো
জোরসে দিল হাঁচি,
এক হাঁচিতে বেরিয়ে এলো
মস্ত কালো মাছি!
বাদলের দিন
মুজাহিদ আল কারিম
টাপুরটুপুর সকাল-দুপুর
ঝুমুর ঝুমুর বাজে নূপুর
গাছের পাতায়
ব্যাঙের ছাতায়
মনের খাতায়,
দারুণ ছন্দ-তাল!
যায় ভরে যায় নদীনালা
গাঁয়ের ছোট খাল।
বৃষ্টি এলে দস্যিছেলে
বৈঠা হাতে গাঁয়ের জেলে
আলাভোলা মন
মেঘের আচ্ছাদন
খুশির নিমন্ত্রণ,
পাখির মতো স্বাধীন
মনের গহিন বাজনা বাজে
তা-ধিন তা-ধিন তা-ধিন।
গাঁয়ের বড়ো বাগানটাতে
যেতাম সবাই আম কুড়াতে
দারুণ সুখের ভোর
কাটে না তো ঘোর
দুরন্ত কৈশোর
মিষ্টি অলস ঘুম,
মনেও সুখের বৃষ্টি ঝরে
ঝুমঝুমাঝুম ঝুম।
আষাঢ়ের বৃষ্টিতে
এম. আব্দুল হালীম বাচ্চু
আষাঢ়ের বৃষ্টিতে, মাটি সুখ পায়,
গাছপালা ভিজে ভিজে, মোটা হতে চায়।
কুনোব্যাঙ গেছো ব্যাঙ, অস্থির থাকে
ঝিঁঝিঁপোকা রাত এলে, অবিরাম ডাকে!
মুরগির দিকে থাকে, শেয়ালের চোখ
খালবিলে নেচে নেচে, বড় হয় জোঁক!
বিড়ালের বিচরণ, ঘর থেকে ঘরে
কুকুরের ডাক শুনি, মৃদু মৃদুস্বরে!
কাকগুলো ভুলে যায়, কা-কা ডাক
পেঁচাগুলো খুঁজে ফেরে, সুযোগের ফাঁক!
শহরের চিরিতন, আলোকিত থাকে
গ্রামগুলো ঘুম পাড়ে, আঁধারের বাঁকে!
চুপচাপ ভিজে যায়, দালানের ছাদ,
ঘাসগুলো ভিজে ভিজে, করে আহ্লাদ!
কী চমৎকার! দেখা যায় কদমের রূপ
এত ঘ্রাণ দেহে তার, থাকে তবু চুপ!
বর্ষার পানি এলো
ওলি মুন্সী
আম জাম পেকে গেছে
কাঁঠাল আর লিচু
বর্ষার পানি এলো
বেয়ে উঁচুনিচু।
ভরে গেছে ডোবা নালা
নদী আর খাল
বাবুইয়ের সাথে দেখি
কাঁচা কাঁচা তাল।
ঘুমন্ত নৌকা মেখে গায়ে তেল
দুপুরের রোদে কাকে খায় পাকা বেল
বিকেলের মেঘ দেখি
ফের এলো ঢল
বর্ষার পানি এসে করে কলকল।
ব্যাঙের ছানা
মো.আলমামুন হোসেন
দুষ্ট একটা ব্যাঙের ছানা
ভিজে সারা রাতি,
সর্দি কাশি জ্বর বাঁধালে
শাসন করে হাতি।
বোদ্ধা হাতি এনে দিল
তেঁতুল পাতার রস,
সুস্থ হয়ে ব্যাঙের ছানা
হলো হাতির বশ।
ব্যাঙ ছানাটি ভাব জমিয়ে
হাতির পিঠে চড়ে,
বন বাদাড়ে মনের সুখে
সওয়ার হয়ে ঘোরে।
মেঘের মেয়ে বিষ্টি
রাফিয়া নাওয়ার
মেঘের রানির একটা মেয়ে
দেখতে কী যে
মিষ্টি
রেগে গেলে কান্না করে
নাম হলো তার
বিষ্টি।
তার কাঁদনে আকাশ থেকে
বিজলী মেয়ে
চমকায়
গুড়ুম গুড়ুম বিজলী মেয়ে
জোরে জোরে
ধমকায়।
বৃষ্টি এলো
যাকারিয়া মাহমুদ
রোদের গায়ে মেঘ জমেছে
কমে গেছে উষ্ণতাপ,
বৃষ্টি এলো বৃষ্টি এলো
দেবো সবে জলে ঝাপ।
চারদিকে আজ শীতল হাওয়া
পশুপাখির কলরব,
বৃষ্টি এলেই ছোটাছুটি
জবুথবু ভিজে সব।
ধমকা হাওয়ায় ধুলোবালি
এলোমেলো উড়ছে দেখ,
গাছের ডালে ভূত চেপেছে
মড়মড়িয়ে ভাঙছে দেখ।
ছোট্ট খোকা ভয় পেয়েছে
মেঘের বুকে বজ্রডাক,
উদাস মনে ফিরছে নীড়ে
শত শত পাখির ঝাঁক।
জাহ্নবী