এক.
‘কুলার বন্ধ হয়ে গেছে!’ চিৎকার করে উঠল শিনকু।
‘এখন উপায়?’ জানতে চাইল নিনো।
‘স্পেসশিপ নামাও। কুলার পাল্টাতে হবে। নয়তো ইঞ্জিন হিট হয়ে বার্স্ট করতে পারে।’
‘কোথায় নামাব? চারদিকে তো শুধু পানি আর পানি।’
‘আমরা আছিই নদীমাতৃক একটা দেশের ওপর। এখানে নদী আর খাল-বিলই বেশি।’
‘নদীর ওপর স্পেসশিপ নামাব?’ জানতে চাইল নিনো। মাত্র কয়েক দিন হলো স্পেসশিপ চালানো শিখতে শুরু করেছে সে। শিনকু ওর প্রশিক্ষক। ওরা দুজনেই লিবাবা গ্রহের বাসিন্দা। সেখানে সবাইকে একটা বয়সে স্পেসশিপ চালনা শিখতে হয়। বাধ্যতামূলক। প্রথম কয়েক দিন অবশ্য নিনো ওর গ্রহের আশপাশেই স্পেসশিপ চালিয়েছে। আজ একটু বেশি দূরে চলে এসেছে।
‘খবরদার নিনো, পানিতে স্পেসশিপ নামাবে না। ডুবে যাবে।’
‘তাহলে কী করব? কোথায় নামাব স্পেসশিপ?’ নিনো চিৎকার করে জানতে চাইল। শিপের যান্ত্রিক আওয়াজ বেড়ে গেছে।
‘একটা কাজ করতে পারো। আরও নিচে নামাও শিপ।’
‘পৃথিবীর মানুষের চোখে ধরা পড়ে যাব না?’
‘ভয় নেই, এখানে এখন রাত। তুমি নিচে নামাও।’
বেশ কিছুক্ষণ চলার পর শিনকু বলল, ‘ওই যে দেখত পাচ্ছ, মাঠের ওপর পরপর পিলার- ওইখানে নামাও।’
‘ওগুলো আসলে কী?’
জবাবে হাসল শিনকু।
‘হাসছ যে!’
‘ব্রিজ বানানোর জন্য পিলার করেছিল। ব্রিজ আর বানায়নি। পিলার পড়ে আছে। ভালোই হলো, আমাদের স্পেসশিপ নামানোর জন্য একেবারে পারফেক্ট ল্যান্ডিং স্পেস।’
‘কিন্তু মাঠের মধ্যে ব্রিজ কেন? রাস্তা কই?’ নিনো জানতে চাইল।
‘সে জন্যই তো হাসছি। পৃথিবীর মানুষ পারে শুধু অপচয় করতে।’
দুই.
‘সময় অপচয় করা একদম ঠিক হবে না ভাগনে?’ বিড়বিড় করে বলল সোহান।
‘কিছু বললে মামা?’ সিফাত জানতে চাইল।
‘বললাম, যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। জলদি চল।’
মামা-ভাগনে চুরি করতে বেরিয়েছে। নিজেদের গ্রাম থেকে দূরে অন্য গ্রামে চুরি করতে যাচ্ছে ওরা। চুরি করা মালামাল নিয়ে আবার ফিরেও আসতে হবে।
‘অন্ধকারে চলতে একটু অসুবিধা হচ্ছে মামা।’ সিফাত বলল।
‘চুপ। একদম চুপ। তাড়াতাড়ি পা চালা।’ মামা ধমক দিল।
ঠিক তখনই শব্দ তুলে মাথার ওপর দিয়ে কী যেন উড়ে গেল।
একটু পরই ওদের চোখের সামনে বড় একটা অবয়ব ধীরে ধীরে নামতে শুরু করল। মাঠের মধ্যে একটা ব্রিজের দুটি পিলার অনেক দিন ধরেই পড়ে আছে। অবয়বটা ঠিক সেটার ওপর বসল।
‘মামা, এটা কী?’ ফিসফিস করে জানতে চাইল।
‘ভাগনে, এটা রেডিমেড ব্রিজ। দেশ কত উন্নত হয়েছে, দেখতেই পাচ্ছিস। রাতারাতি ব্রিজ তৈরি করে ফেলেছে। কত বড় উন্নয়ন দেখেছিস।’
‘দিনের বেলায় করল না কেন?’
‘আরে দিনের বেলায় কি অত বড় ব্রিজ আনতে পারত! পাবলিকের ভিড়ে ঠিকমতো বসাতেই পারত না।’
‘চলো মামা, কাছ থেকে দেখি।’
‘আরে, এখন এসব দেখলে চলবে। চুরি করতে যেতে হবে না।’
‘মামা, যদি এখানেই কিছু চুরি করতে পারি। কাছে গিয়ে দেখিই না কী কী আছে।
মনে মনে ভাগনের প্রশংসা করল সোহান। পায়ে পায়ে এগিয়ে চলল ওরা ‘নতুন ব্রিজ’-এর দিকে।
একটু পরই ওটার ওপর উঠে এল ওরা। তখনই আবছা একটা বাতি জ্বলে উঠল। সামনে হঠাৎ করে কী যেন খুলে গেল। আবছা আলোয় ওরা দেখল, কিম্ভূতকিমাকার দুটি চার পেয়ে প্রাণী। খোলা দরজা দিয়ে উঠে আসছে।
‘ভূ...ভ‚...ত!’ ভয় পেল দুজনে।
ওদের গলার আওয়াজ শুনে শিনকু আর নিনোও ভয় পেল।
‘মা...মা...নুষ!’
পিছিয়ে গিয়ে ঢাকনা বন্ধ করল ওরা।
একটু পরই আলো নিভে গেল। থরথর করে কাঁপতে শুরু করল ‘ব্রিজ’। নড়ে উঠল যন্ত্র। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই উল্টে পড়ল মামা-ভাগনে। জ্ঞান হারাল দুজনেই। পরদিন সকালে ব্রিজের নিচ থেকে অজ্ঞান অবস্থায় মামা-ভাগনে দুজনকেই উদ্ধার করল গ্রামবাসী। জ্ঞান ফেরার পর দুজনেই ‘ভূত ভূত’ বলে চিৎকার করতে লাগল। তবে সেটা কেন, গ্রামবাসীর কেউই বুঝতে পারল না।
মেহেদী আল মাহমুদ