
টিনা এখন গল্প লিখতে পারে। এই তো গতকালই লিখেছে এক মজার গল্প। রূপকথার গল্প। গল্পটি টিয়া পাখিদের নিয়ে। টিয়া পাখির ঠোঁট কেন লাল হলো! শুনতে চাও? বলছি তাহলে।
সুন্দরপুর রাজ্যের রাজবাড়িটাও সুন্দর। রাজবাড়ির ভেতরের দিকটায় ছিল বিশাল এক তালগাছ। তালগাছের ছোট্ট গর্তে বাস করত এক টিয়া জুটি। ওই টিয়াপাখির ডানার পালক সবুজ। গায়ের পশম সবুজ। ঠোঁট সবুজ। দুটো পা তাও সবুজ। কিছুদিন যেতে না যেতেই তাদের ডিম ফুটে বের হলো ফুটফুটে চারটি ছানা। তুলতুলে- নাদুসনুদুস।
তিন বছরের বাণিজ্য শেষ করে ঘরে ফিরেছেন সুন্দরপুরের রাজা। একদিন হঠাৎ তিনি তালগাছের নিচে দাঁড়িয়ে আদেশ দিলেন, তালগাছটি কাটতে হবে। রাজা তো জানেন না, তালগাছের গর্তে মাংসের দলার মতো এখনো দুটো ছানা আছে। ও হ্যাঁ, চারটি ছানার দুটি তখন উড়তে শিখেছে। সামান্য উড়তে পারে, এ ডাল থেকে ও ডালে।
পরের দিন তালগাছ কাটা শুরু হলো। একটু পরেই ধপাস করে পড়ল ফাঁকা দিকটায়। মা-বাবা আর উড়তে পারা ছানা দুটি গিয়ে বসল পাশের সুপারি গাছের মাথায়। ভাগ্যিস গর্তে থাকা ছানাদের কিছুই হলো না। চিউচিউ করে ডেকে উঠল ওরা, চিউচিউ চিউচিউ...
রাজার ছিল ছোট্ট এক মেয়ে। ওর নাম কমলা। কমলার কিন্তু চোখ এড়ায়নি কিছুই। টিয়া ছানাদের প্রতি খুব মায়া হলো তার, খু-উ-ব মায়া। ছানা দুটোকে তুলে নিয়ে ঘরে ঢুকল সে। খাবার তুলে দিল মুখে, থাকতে দিল নরম তুলার ওপর।
কয়েক দিনের যত্নে ওদের শরীরে বেশ পশম গজিয়ে উঠল। ঠোঁট আর পায়ের নখ শক্ত হলো। কমলার সঙ্গে পাখি দুটির হয়ে উঠল দারুণ বন্ধুত্ব। খাঁচার দরজা সব সময়ই খোলা থাকে। টিয়া দুটি খুব সকালে উড়ে যায় দূরের বনে। পাকা ফলমূল খায়। সূর্যমুখীর পাকা বীজ খায়। খেতের লাল টুকটুকে পাকা মরিচ খায়। আবার ফিরে আসে ঘরে। কমলার হাতের ওপর বসে। কাঁধের ওপর বসে। মাথার ওপর বসে। রাজকন্যার নাম ধরে ডাকে। বলে, কমলা উঠো উঠো উঠো, পড়ো পড়ো পড়ো...ভোর হয়েছে। আরও অনেক কথা।
দেখতে দেখতে কমলাও বড় হয়ে উঠল। ভালো দিনক্ষণ দেখে গোলাপগড় রাজ্যের রাজপুত্রের সঙ্গে ঠিক হলো বিয়ে। রাজবাড়িতে খুশির হাওয়া বইতে লাগল। সবার মুখে মুখে একটাই কথা, রাজকন্যার বিয়ে, রাজকন্যার বিয়ে। এই তো আগামী শুক্রবার।
গায়ে হলুদের দিনে রাজকন্যার মতো দাসী-পড়শি সবাই খুব সেজেছে। এক একটা পরী যেন সবাই। টিয়া পাখিকে হাতের ওপর তুলে খুব আদর করল রাজকন্যা কমলা। হঠাৎ কী ভেবে কমলার চোখ ছল ছল করে উঠল। রাজকন্যা বলল, ভালো করে শোন পাখিরা, কাল থেকে তোমরা মুক্ত হাওয়ায় উড়বে। বনে ফিরে যাবে দুজন। বনে বাসা বাঁধবে। চলো দুজনকে একটু সাজিয়ে দিই।
রাজকন্যা এগিয়ে গেল ঘরের কোণে রাখা আলতার বিশাল ভাঁড়ের দিকে। সবুজ টিয়ার ঠোঁট আর পায়ে মাখিয়ে দিল খানিক আলতা। সবুজ ঠোঁট হয়ে উঠল টুকটুকে লাল।
রাজকন্যার বিয়ের পর লাল ঠোঁট নিয়ে বনে ফিরে এল টিয়াপাখি। বনের অন্য সব টিয়া তো অবাক! অমন সুন্দর ঠোঁট! তাদেরও চাই অমন একটা লাল টুকটুকে ঠোঁট। কী আর করা, লাল ঠোঁটের টিয়া বলেই দিল সেই আলতা ভাঁড়ের ঠিকানা। একে একে রাজবাড়িতে ছুটে এল সব টিয়া। নিজেরা ঠোঁট লাল করে অন্যদের জন্যও নিয়ে গেল কিছু আলতা। আর সেই থেকে সবুজ টিয়ার ঠোঁট হলো অমন লাল। তেমনি লাল হলো পায়ের কিছুটা অংশ।