
তুলনমূলক কম দাম এবং মানসম্পন্ন হওয়ায় ভারতীয়দের আস্থা বাড়ছে বাংলাদেশি সিমেন্টে। বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে যেসব পণ্য সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় তার মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে সিমেন্ট। প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ টন সিমেন্ট যাচ্ছে ত্রিপুরায়।
এর মাধ্যমে ত্রিপুরার নির্মাণসামগ্রীর বাজারে শক্ত অবস্থান করে নিচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিমেন্ট। ক্রমবর্ধমান এ চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে সিমেন্টের রপ্তানি আরও বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের রপ্তানি আয় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৪ সাল থেকে আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য চলছে। বাণিজ্যিক গুরুত্ব বিবেচনায় ২০০৮ সালে পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় আখাউড়া স্থলবন্দর। তবে এ বন্দর দিয়ে অনিয়মিত আমদানি বাণিজ্য। রপ্তানি তুলনামূলক বেশি হওয়ায় রপ্তানিমুখী বন্দর হিসেবেই ধরা হয় আখাউড়া স্থলবন্দরকে। প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের হিমায়িত মাছ, সিমেন্ট, প্লাস্টিক, ফার্নিচার, খাদ্যসামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয় ভারতে।
বাসাবাড়ি ও বেসরকারি স্থাপনার পাশাপাশি সরকারি স্থাপনাগুলোতেও এখন বাংলাদেশি সিমেন্ট ব্যবহার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ত্রিপুরার ব্যবসায়ীরা। ত্রিপুরায় কোনো সিমেন্ট কারখানা না থাকায় নির্মাণকাজের জন্য বাংলাদেশি সিমেন্টই ভরসা সেখানকার বাসিন্দাদের। এ ছাড়া ভারতীয় সিমেন্টের তুলনায় দাম কম এবং মান ভালো হওয়ায় ত্রিপুরার বাজারগুলোতে ক্রমেই চাহিদা বাড়ছে বাংলাদেশি সিমেন্টের। বর্তমানে ব্র্যান্ডভেদে প্রতি টন সিমেন্ট রপ্তানি হচ্ছে ৭৯ থেকে ৮৬ মার্কিন ডলারে।
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতে ২২ হাজার টন সিমেন্ট রপ্তানি হয়। যার রপ্তানি মূল্য প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা। আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জানুয়ারি পর্যন্ত ত্রিপুরায় রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১১ হাজার টন সিমেন্ট। যার রপ্তানি মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা।
আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, ত্রিপুরায় মেঘালয় থেকে সিমেন্ট আসে। তবে সে সিমেন্টের দাম বাংলাদেশের সিমেন্টের তুলনায় কিছুটা বেশি। এ ছাড়া গুণগতমানের দিক থেকেও বাংলাদেশি সিমেন্টে আস্থা রাখেন সেখানকার মানুষরা। তবে বর্তমানে ৫ থেকে ৬টি কোম্পানির সিমেন্ট রপ্তানি হচ্ছে। দেশে আরও যেসব সিমেন্ট কোম্পানি আছে সেগুলো যদি তাদের বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মার্কেটিংয়ে জোর দেয়, তাহলে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে সিমেন্ট রপ্তানি আরও বাড়বে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের সিমেন্ট রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান সুয়েব ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রাজীব উদ্দিন ভূইয়া বলেন, ‘করোনা মহামারির সময় নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় সিমেন্টের রপ্তানি কমে গিয়েছিল। তবে এখন রপ্তানি স্বাভাবিক হয়েছে। দিনে ৫ থেকে ৬ ট্রাক সিমেন্ট ত্রিপুরায় যাচ্ছে। এরমধ্যে ক্রাউন এবং সেভেন রিংস সিমেন্টই বেশি। আমরা চেষ্টা করছি রপ্তানির পরিমাণ আরও বাড়ানোর জন্য।’
ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলদেশি সিমেন্টের পরিবেশক তারকেশ্বর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী প্রিয়নাথ সাহা বলেন, ‘ত্রিপুরায় সিমেন্ট কারখানা নেই। মেঘালয় থেকে সিমেন্ট ত্রিপুরায় আনতে খরচ বেশি হয়। এর চেয়ে কম দামে বাংলাদেশি সিমেন্ট পাওয়া যায়। এ ছাড়া বাংলাদেশি সিমেন্টের সরবরাহও সবসময় থাকে। সেজন্য বাংলাদেশি সিমেন্টের ব্যবহার বেড়েছে ত্রিপুরায়। এ ছাড়া আগরতলার প্রথম এবং একমাত্র ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজে ক্রাউন সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। আমি নিজে আগরতলার সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় বাংলাদেশি সিমেন্ট সরবরাহ করেছি। এ চাহিদা দিন দিন বাড়ছে এবং বাড়বে।’
আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কম দামে ভালো সিমেন্ট সরবরাহ করছি। এর ফলে ত্রিপুরার বাজারে আমাদের সিমেন্ট শক্ত অবস্থান করে নিচ্ছে। রপ্তানিতে ভ্যাট না থাকার কারণে কম দামে সিমেন্ট পাঠানো যাচ্ছে। সিমেন্ট রপ্তানি আরও কীভাবে বাড়ানো যায়- সেটি নিয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি। আমাদের আরও যেসব সিমেন্ট কোম্পানি আছে- সেগুলো যদি ভালো মার্কেটিং করা যায়, তাহলে রপ্তানি দ্বিগুণ হবে।’
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা কামরুল পারভেজ বলেন, ‘গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে ভারত থেকে পণ্য আমদানি কমেছে। তবে বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দা এবং ডলারসংকটের কারণে রপ্তানি বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীদের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। ফলে চলতি অর্থবছরে রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে। সিমেন্টও বেশি পরিমাণে রপ্তানি হচ্ছে। আমরা বন্দরে আসা রপ্তানি পণ্যের ট্রাকগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষ করে রপ্তানির জন্য ছাড় দিয়ে থাকি।’