এক কার্যদিবস কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর গতকাল মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দেশের শেয়ারবাজারে আবার দরপতন হয়েছে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম কমার তালিকায়। ফলে কমেছে সব কটি মূল্যসূচক।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে এ বাজারটিতেও মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে শেষ পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হলো।
এর আগে টানা তিন কার্যদিবস দরপতনের পর গত সোমবার শেয়ারবাজারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। টানা পতন থেকে শেয়ারবাজার যখন ঊর্ধ্বমুখী দেখা দেয় সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানানো হয়, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি থাকলে সেসব ব্যাংক লভ্যাংশ দিতে পারবে না।
সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গভর্নরের সঙ্গে ১৭ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্ত ছড়িয়ে পড়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দেয়। একশ্রেণির বিনিয়োগকারী বাজারে শেয়ার বিক্রির চাপও বাড়ায়। ফলে লেনদেন শুরুর দিকে সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও শেষ পর্যন্ত পতন দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১৩৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২১৬টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৪৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩৫ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ২৯৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৭০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৮৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
শেয়ারবাজারের এ পরিস্থিতি সম্পর্কে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব দেখা যাচ্ছে। যখনই শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তখনই কোনো না কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত আসছে। টানা পতনের পর বাজার যখন একটু ঊর্ধ্বমুখী দেখা গেল, তখনই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লভ্যাংশ ঘোষণা নিয়ে একটি সিদ্ধান্তের তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। যে কারণে গতকাল আবার শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য এখন খুবই খারাপ সময় যাচ্ছে। অধিকাংশ বিনিয়োগকারী বড় লোকসানে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজার ভালো করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকা খুবই জরুরি।
এদিকে সব কটি মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫৭৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৭৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ২৫ কোটি ৫৬ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ২৫ কোটি ২৮ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।
এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ইসলামী ব্যাংক, এমজেএল বাংলাদেশ, ফারইস্ট নিটিং, গ্রামীণফোন, বেক্সিমকো ফার্মা, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স এবং ওরিয়ন ফার্মা।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বৃদ্ধির শীর্ষে বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি পিএলসি।
মঙ্গলবার ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর বেড়েছে। আজ কোম্পানিটির শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৩ টাকা ১০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়েছে।
দর বৃদ্ধির দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কেন্টাইল ইসলামী পিএলসি। কোম্পানিটির শেয়ারদর ২ টাকা ২০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়েছে। তৃতীয় স্থানে থাকা মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর বেড়েছে ২ টাকা বা ৯ দশমিক ২১ শতাংশ।
মঙ্গলবার দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসা অপর কোম্পানিগুলো হচ্ছে- এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল হেভি, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, রানার অটোমোবাইলস, নর্দার্ন ইসলামী ইন্স্যুরেন্স এবং সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দরপতনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড।
মঙ্গলবার ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমেছে ২২ টাকা ৫০ পয়সা বা ৭ দশমিক ২১ শতাংশ। তাতে দরপতনের শীর্ষে জায়গা নিয়েছে কোম্পানিটি।
দর পতনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা ফু-ওয়াং ফুডসের শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ৯০ পয়সা বা ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ কমেছে। আর শেয়ারদর ১৬ টাকা ৮০ পয়সা বা ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ কমে যাওয়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
মঙ্গলবার দরপতনের তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো- ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোড, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, ইভিন্স টেক্সটাইল, মনোস্পুল পেপার, ফারইস্ট ফাইন্যান্স এবং ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেড।
গতকাল মঙ্গলবার ডিএসইর ব্লক মার্কেটে ৩২টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মোট ৩২ কোটি ৩০ লাখ ৭২ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হতে দেখা গেছে ছয় প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- বেক্সিমকো ফার্মা, বিচ হ্যাচারি, এমজেএল বিডি, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স এবং ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস পিএলসি। আজ এই ছয় প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকারও বেশি।
এদিন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো ফার্মার। এদিন কোম্পানিটির ১৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
বিচ হ্যাচারির ৪ কোটি ১৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
আর ১ কোটি ৯৬ লাখ ২৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে এমজেএল বিডি।
অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে- সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা এবং ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস পিএলসির ১ কোটি ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৩৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০৭টির এবং ২১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয় ৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।