ঢাকা ১৬ বৈশাখ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

দুর্বল কোম্পানি জেড গ্রুপে স্থানান্তর করতে পারবে ডিএসই

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৪, ১২:০৭ পিএম
আপডেট: ২৩ মে ২০২৪, ১২:১২ পিএম
দুর্বল কোম্পানি জেড গ্রুপে স্থানান্তর করতে পারবে ডিএসই

পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানি ঘোষিত লভ্যাংশের কমপক্ষে ৮০ শতাংশ নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে পরিশোধ বা বিতরণ করতে ব্যর্থ হলে ওই প্রতিষ্ঠানকে জেড গ্রুপে স্থানান্তর করতে পারবে স্টক এক্সচেঞ্জ, এমন বিধান করে এ বিষয়ে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এখন থেকে এ নীতিমালার আলোকে দুর্বল কোম্পানিগুলোকে ‘জেড’ গ্রুপে স্থানান্তর করবে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। এ জন্য আলাদা করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কোনো অনুমোদন নিতে হবে না।

গত সোমবার (২০ মে) এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। আগামী ২ জুলাই থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে। নতুন নিয়মানুযায়ী, পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ছাড়িয়ে গেলে ওই কোম্পানি জেড গ্রুপে যাবে।

বিএসইসির নির্দেশনায় বেশ কিছু শর্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তার যে কোনো একটি শর্ত লঙ্ঘন করলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ওই কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করতে পারবে।

বিএসইসির নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানি শেষ লভ্যাংশ ঘোষণার তারিখ থেকে বা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির তারিখ থেকে পরপর দুই বছরের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে ব্যর্থ হলে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হবে। পাশাপাশি আইন অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতে ব্যর্থ হলেও একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তবে কোনো রিট পিটিশন বা আদালতে বিচারাধীন কোনো আইনি প্রক্রিয়ার ফলস্বরূপ এজিএম অনুষ্ঠিত না হওয়ার ক্ষেত্রে, অর্থাৎ উপ-বিচারের বিষয় বা জোরপূর্বক ঘটনা ঘটলে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ বছর সময় পর্যন্ত বিবেচনা করা যেতে পারে।

এতে বলা হয়েছে, যদি তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংস্কার বা বিএমআরই (ভারসাম্য, আধুনিকীকরণ, পুনর্বাসন এবং সম্প্রসারণ) এর জন্য এই ধরনের কোনো সময় ব্যতীত ন্যূনতম ছয় মাস ধরে একটানা উৎপাদনে না থাকলে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হবে।

এ ছাড়াও পুঁঞ্জিভূত লোকসানের পরিমাণ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ছাড়িয়ে গেলে ওই কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা যাবে।
এ ছাড়া কোনো কোম্পানি ঘোষিত বা অনুমোদিত লভ্যাংশের কমপক্ষে ৮০ শতাংশ নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে পরিশোধ বা বিতরণ করতে ব্যর্থ হলে সেটিকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করতে পারবে স্টক এক্সচেঞ্জ।

ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান ছাড়া জেড ক্যাটাগরিভুক্ত অন্য কোনো কোম্পানির উদ্যোক্তা-শেয়ারহোল্ডার ও পরিচালকদের শেয়ার লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। বিএসইসির অনুমতি ছাড়া তারা ওই কোম্পানির কোনো শেয়ার কিনতে, বেচতে বা হস্তান্তর করতে পারবেন না।
টি+৩ ভিত্তিতে জেড ক্যাটাগরির শেয়ারের লেনদেনের নিষ্পত্তি হবে।

নতুন এ আদেশের মাধ্যমে এর আগে ২০০৮ সালের ১৫ জানুয়ারি, ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর ও চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএসইসির জারি করা আদেশ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে রদ কিংবা প্রাধান্য দেওয়া হবে।

এর আগে কিসের ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেড গ্রুপে যাবে, সে বিষয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি। ওই নির্দেশনার শেষ পয়েন্টে বলা হয়, ইস্যুয়ার কোম্পানির পরবর্তী লভ্যাংশসংক্রান্ত ঘোষণা অথবা বার্ষিক/অন্তর্বর্তী লভ্যাংশসংক্রান্ত ঘোষণার দিন থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনায় এমন বলা হলেও চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি ২২ কোম্পানিকে জেড গ্রুপে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। 

তখন বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেছিলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনায় বলা হয়েছে এক রকম, আর বাস্তবায়ন হয়েছে অন্যভাবে। বিএসইসির নির্দেশনায় যেভাবে বলা হয়েছে, তাতে কোম্পানিগুলোর পরবর্তী লভ্যাংশসংক্রান্ত ঘোষণা আসার পর জেড গ্রুপে স্থানান্তরসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। 

অন্যদিকে বিএসইসির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সার্বিক বাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে জেড গ্রুপ নিয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোম্পানিগুলোকে জেড গ্রুপে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি বাস্তবায়ন করেছে স্টক এক্সচেঞ্জ। সুতরাং স্টক এক্সচেঞ্জ থেকেই এ বিষয়ে প্রকৃত ব্যাখা দিতে পারবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পক্ষ থেকে বলা হয়, নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনার আলোকেই ২২ কোম্পানিকে জেড গ্রুপে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিআরও) এ বিষয়ে বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তার ভিত্তিতেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে।

জেড গ্রুপ নিয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জারি করা বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়, যেসব কোম্পানি পরপর দুই বছর লভ্যাংশ দেবে না এবং দুই বছর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করবে না সেগুলো জেড গ্রুপভুক্ত হবে। এ ছাড়া ছয় মাস কোনো কোম্পানি উৎপাদনে না থাকলেও জেড গ্রুপভুক্ত হবে। এমনকি কোম্পানির রিটেইনড আর্নিংস পরিশোধিত মূলধনের থেকে বেশি হলেও, ওই কোম্পানির ঠিকানা হবে জেড গ্রুপে।

তবে নির্দেশনার শেষ পয়েন্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ইস্যুয়ার কোম্পানির পরবর্তী লভ্যাংশসংক্রান্ত ঘোষণা অথবা বার্ষিক/অন্তর্বর্তী লভ্যাংশসংক্রান্ত ঘোষণার দিন থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর হবে।

কিন্তু বিএসইসির নির্দেশনা জারির পর ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকেই হুট করে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, আরামিট সিমেন্টস, আজিজ পাইপস, ডেল্টা স্পিনিং, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, জিবিবি পাওয়ার, ইনটেক, ইন্টারন্যাশনল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, কেয়া কসমেটিকস, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, ন্যাশনাল টি, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইনান্স, রিজেন্ট টেক্সটাইল, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, রিং শাইন টেক্সটাইল, সাফকো স্পিনিং, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, ঢাকা ডাইং, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ইয়াকিন পলিমার এবং জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজকে জেড গ্রুপভুক্ত করেছে ডিএসই।

চলতি বছরের ৪ মার্চ আরও ৬টি জেড শ্রেণিভুক্ত হয়। তাতে ডিএসইতে জেড শ্রেণির কোম্পানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫টিতে।

এ সময়ে যে ৬টি কোম্পানিকে জেড শ্রেণিভুক্ত করা হয় তার মধ্যে প্রাইম টেক্সটাইল, প্রাইম ফিন্যান্স, এএফসি অ্যাগ্রো ও অ্যাকটিভ ফাইন ‘বি’ শ্রেণি থেকে এবং নিউলাইন ক্লথিংস ও ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ‘এ’ শ্রেণি থেকে জেড শ্রেণিতে স্থানান্তর হচ্ছে।

জেড গ্রুপভুক্ত হওয়ায় এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারের বিপরীতে মার্জিন ঋণসুবিধাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। হুট করে এমন সিদ্ধান্ত আসায় ১৮ ফেব্রুয়ারি লেনদেনের শুরুতেই বড় ধরনের দরপতনের মধ্যে পড়ে কোম্পানিগুলো। 

শহিদুল ইসলাম নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, দুই দফায় ২৮ কোম্পানিকে জেড গ্রুপে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিন কোম্পানিতে আমার বিনিয়োগ রয়েছে। এতে আমি বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে পড়েছি। জানি না আর কত লোকসান হবে।

রফিকুল ইসলাম নামের আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, ২৮ কোম্পানি জেড গ্রুপ নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থবিরোধী হয়ে গেছে।

তখন ডিএসইর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. এটিএম তারিকুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেছিলেন বিএসইসি যেভাবে বলেছে, সেভাবেই করা হয়েছে। আমাদের সিআরও বিএসইসি সংশ্লিষ্ট অফিসারের সঙ্গে আলোচনা করে এটা ঠিক করেছেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর এক সদস্য খবরের কাগজকে বলেন, ফ্লোর প্রাইস দিয়ে দীর্ঘদিন বাজার এক প্রকার বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর বাজারে যখন গতি ফিরছিল, তখন জেড গ্রুপ নিয়ে নির্দেশনা আবার নতুন অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। বিএসইসির নির্দেশনায় ছিল একরকম। বাস্তবায়ন হয়েছে অন্যভাবে। এর ফলে বিএসইসি এবং ডিএসইর মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে।

তবে নতুন নির্দেশনার ফলে এ দ্বন্দ্ব কিছুটা নিরসন হবে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। 

তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কোনগুলো জেড (জাঙ্ক) ক্যাটাগরিভুক্ত হবে, সে বিষয়ে বিএসইসি গত তিন বছরে ৫ বার আইন বদলেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের সাড়ে তিন মাস পর জেড ক্যাটাগরি নির্ধারণে ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর একটি নির্দেশনা জারি করে। কিন্তু তার কার্যকারিতা স্থগিত রাখে বিএসইসি। এ কারণে টানা দুই বছর নগদ লভ্যাংশ দেওয়ায় ব্যর্থ কোম্পানিকে জেড ক্যাটেগরিভুক্ত করার কথা বলা হলেও টানা চার বছর কোনো লভ্যাংশ না দিয়েও তারা ‘এ’ বা ‘বি’ ক্যাটেগরিতে ছিল।

দেশের ঋণমান পুনর্বিবেচনার আহ্বান বাংলাদেশ ব্যাংকের

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৫৪ পিএম
দেশের ঋণমান পুনর্বিবেচনার আহ্বান বাংলাদেশ ব্যাংকের
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

বহুজাতিক কয়েকটি প্রধান ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা বাংলাদেশের রেটিং একাধিকবার কমিয়েছে। সংস্থাগুলোকে দেশের রেটিং পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

সোমবার (২৮ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে কয়েকটি রেটিং এজেন্সির সঙ্গে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এই আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। 

তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে রেটিং এজেন্সিগুলোকে বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমান বিভিন্ন সূচকের অগ্রগতি নিয়ে রেটিং এজেন্সিগুলো সন্তুষ্ট। তাদের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে রেটিংয়ের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।’ 

আরিফ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ ২০২৬ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে যাবে। তখন বৈদেশিক ঋণ বা সহায়তা পাব না। যেটুকু সময় আছে তার থেকে যাতে বঞ্চিত না হয়, তাই রেটিং এজেন্সিগুলোকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করার কথা বলা হয়েছে।’ 

গত বছরের জুলাইতে বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঋণমান যাচাইকারী কোম্পানি এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের ঋণমান ‘বিবি মাইনাস’ থেকে কমিয়ে ‘বি প্লাস’ করেছে। এর আগে সর্বশেষ যে প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের ঋণমান অবনমন করেছিল, সেটি হলো ফিচ রেটিংস। গত মে মাসের শেষ দিকে তারা ৮ মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দেয়। তখন প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের ফরেন কারেন্সি ইস্যুয়ার ডিফল্ট রেটিং (আইডিআর) ‘বিবি মাইনাস’ থেকে ‘বি প্লাস’ করে, যদিও দেশের অর্থনীতি সম্পর্কিত পূর্বাভাস স্থিতিশীল রাখে তারা। এরপর রেটিং এজেন্সি মুডিসও দীর্ঘমেয়াদে দেশের ঋণমান কমিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে দেশের বেশ কয়েকটি বড় ব্যাংকেরও ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি। 

সে সময়ই বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছিল, মুডিস রেটিংস বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি ঋণমান কমানো যথাযথ হয়নি। এই বিষয়ক এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছিল, গণ-অভ্যুত্থানের পর নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করেছে, তা মুডিস রেটিংসে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি। মুডিসের প্রতিবেদনে ব্যাংক খাতের সংস্কার, ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন বিষয়ে বর্তমান সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে বলা হয়েছিল, ‘আমরা আশা করি, মুডিস শিগগিরই বাংলাদেশ সফরের পর দেশের অর্থনীতির আরও ব্যাপকভাবে মূল্যায়ন করবে। তখন তারা সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও অভিজ্ঞ অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সরাসরি পরামর্শ করবে। এর ফলে সরকারের নেওয়া নীতি ও উন্নয়নের সঠিক মূল্যায়ন করতে সক্ষম হবে তারা।’

সোমবারের বৈঠকে মূল্যস্ফীতি, ডলার রেট, নতুন টাকা ও দুর্বল ব্যাংকসহ দেশের অর্থনীতির প্রতিটি সূচক নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র। 

তিনি বলেন, ‘দুর্বল ব্যাংকের অনিয়মের কারণে কয়েকটি ব্যাংকে তারল্য সংকট পড়ে। তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে দেওয়া হয়। এসব ব্যাংকের প্রকৃত চিত্র দেখার জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ব্যাংক রেজল্যুশন অ্যাক্ট করা হয়েছে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি কাঙ্ক্ষিত হারে কমানো যায়নি। তবে কিছুটা কমছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ায় ডলারের দর স্থিতিশীল রয়েছে, এটা ভালো দিক। 

হকারদের শৃঙ্খলায় আসতে হবে: মেয়র শাহাদাত

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৮ এএম
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৮ এএম
হকারদের শৃঙ্খলায় আসতে হবে: মেয়র শাহাদাত
চসিক কার্যালয়ে হকার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন মেয়র ডা. শাহদাত হোসেন। ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রাম নগরীর যানজট কমাতে হকারদের শৃঙ্খলায় আসতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। 

সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিকালে চসিক কার্যালয়ে হকার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মেয়র এ কথা বলেন। 

তিনি বলেন, ‘আগ্রাবাদ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক এলাকা। এখানে ৫টার আগে হকাররা বসতে পারবেন না এবং রাস্তায় যত্রতত্র চৌকি বসানো যাবে না। নিউ মার্কেটে দুপুর ৩টার পর বসবেন। নগরীতে যত্রতত্র হকাররা বসতে পারবেন না। আমি যেভাবে নিয়ম করে দিয়েছি সেভাবে ব্যবসা করেন। হকারদের ব্যবসা করার স্থান নির্ধারণের জন্য আমি জায়গা খুঁজছি। আমরা প্রয়োজনে হকারদের তালিকা করব। ফ্লাইওভারের নিচে পে-মার্কেট মডলে হকারদের ব্যবসা করার জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে।’

সভায় উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, বিএনপির কেন্দ্রীয় শ্রমিক সম্পাদক এএম নাজিম উদ্দিন, কাজী নুরুল্লা বাহার, শ ম জামাল উদ্দিন, তাহের আহমদ, মো. আনোয়ার, মো. দুলাল, মো. বাতেন, মো জসিম প্রমুখ। 

সভায় চট্টগ্রাম সম্মিলিত হকার্স ফেডারেশনের পক্ষে হকারদের প্রস্তাবিত দাবিসমূহ: ১. জাতীয় শ্রমনীতির আলোকে সিটি করপোরেশন কর্তৃক হকার্স পুনর্বাসন নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে হকারদের পুনর্বাসন করা। পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত হকার অধ্যুষিত এলাকায় ফুটপাতের একপাশে শৃঙ্খলার সহিত ব্যবসা করার সুযোগ প্রদান করা। ২. সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নগরীতে কর্মরত হকার শ্রমিকদের তালিকা প্রণয়ন করে ই-ট্রেড লাইসেন্স ও যৌক্তিকভাবে ফি নির্ধারণ করা। ৩. শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রম দপ্তর নিবন্ধিত ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনসমূহের প্রতিনিধি সিটি করপোরেশন কর্মকর্তার দ্বারা হকার সব সদস্যের তালিকা প্রণয়ন করা। ৪. চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন/ শ্রম অধিদপ্তর/ হকার সংগঠন জাতীয় শ্রমিক সংগঠনের সমন্বয়ে যৌথ কমিটি গঠন করা। ৫. সন্ত্রাস-চাঁদাবাজ-ছিনতাই প্রতিরোধসহ নগরীর আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়নে করপোরেশনের উদ্যোগে শ্রমিক-হকার নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা।

তাওফিক/ 

বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর শেয়ারে মার্জিন ঋণ না দেওয়ার প্রস্তাব টাস্কফোর্সের

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০০ এএম
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর শেয়ারে মার্জিন ঋণ না দেওয়ার প্রস্তাব টাস্কফোর্সের
প্রতীকী ছবি

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর শেয়ার ক্রয়ে মার্জিন ঋণ না দেওয়ার প্রস্তাব করেছে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে গঠিত সংস্কার টাস্কফোর্স। এ ছাড়া যেসব বিনিয়োগকারীর দুটি বিও হিসাব রয়েছে, তার একটি যদি মার্জিন ঋণের মাধ্যম বিনিয়োগ করে লোকসান হয়, তাহলে অপর নন-মার্জিন হিসাবের শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে ঋণ পরিশোধের প্রস্তাব করা হয়েছে। 

সোমবার (২৮ এপ্রিল) আগারগাঁও বিএসইসির মাল্টিপারপাস হলে মার্জিন ঋণের বিষয়ে টাস্কফোর্সের চূড়ান্ত সুপারিশ প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে টাক্সফোর্সের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। 

সংবাদ সম্মেলনে টাস্কফোর্সের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘এই প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে আমরা এ-সংক্রান্ত সব অংশীজনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছি। তারপরও আমাদের এই প্রতিবেদনে কোনো অংশ নিয়ে কারও কোনো দ্বিমত থাকলে আমরা অনুরোধ জানাব, আপনারা আমাদের সংশোধন করে দেবেন।’ 

সংবাদ সম্মেলনে প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি এবং সিইও মো. মনিরুজ্জামান সার্বিক বিষয় উপস্থাপন করে বলেন, মার্জিন রুলস, ১৯৯৯ যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স ‘মার্জিন রুলস’সংক্রান্ত চূড়ান্ত সুপারিশ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানে একজন বিনিয়োগকারী ১:১ অনুপাতে সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত মার্জিন ঋণ নিতে পারবেন বলে সুপারিশ করা হয়েছে। তবে টাস্কফোর্সের কাছে ১:০.৫ অনুপারে মার্জিন ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন পুঁজিবাজার অংশীজনরা। 

নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী ৩০ দিন পর্যন্ত যেই কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে মার্জিন ঋণ না দেওয়ার বিধান আছে। কিন্তু টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে তা অন্তত তিন মাস পর্যন্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এই তিন মাসের সেই কোম্পানির কোনো না কোনো প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী সেই কোম্পানি মার্জিন ঋণ পাবে কি না, সেটি নির্ধারণ করা যাবে। 

তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিষয়ে টাস্কফোর্সের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চুক্তিভিত্তিক হয়ে থাকে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেল সেগুলোর নতুন করে অনুমোদন পাবে কি না তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। এ জন্য এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে মার্জিন ঋণ না দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। 

বলা হয়েছে, যেকোনো বিনিয়োগকারীর দুটি অ্যাকাউন্ট থাকে এবং এর একটি যদি মার্জিন ঋণের হিসাব হয় আর অপরটি নন-মার্জিন অ্যাকাউন্ট হয় তাহলে মার্জিন ঋণের হিসাবে শেয়ারের দাম ক্রয়মূল্যের চেয়ে কমে গেলে অপর অ্যাকাউন্টের শেয়ার বিক্রি করে তার হিসাব সমন্বয় করা যাবে। এমন প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মার্জিন ঋণের অ্যাকাউন্ট নেগেটিভ হলে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান তারল্য সমস্যার সম্মুখীন হন এবং সেই বিনিয়োগকারীও লোকসানের কারণে নতুন বিনিয়োগ করতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে অপর হিসাব থেকে ঋণ সমন্বয় করা হলে প্রতিষ্ঠানের জন্য তা ভালো হবে। বিনিয়োগকারীও ঋণমুক্ত হবেন। 

পেনশনহোল্ডার, শিক্ষার্থী বা গৃহিণীদের নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থা থাকে না। তারা মার্জিন ঋণ নিলে অনেক সময় সমস্যায় পড়ে যান। নিয়মিত আয় না থাকায় মার্জিন ঋণ পরিশোধ তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। সে জন্য যাদের নিয়মিত আয় আছে মার্জিন ঋণ নিলে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হন না, বাজারও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। এ জন্য আমরা যাদের নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থা আছে, তাদের জন্যই মার্জিন ঋণের সুপারিশ করা হয়েছে। 

টাস্কফোর্সের সুপারিশে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি বাড়ি ভাড়া পান, তার কিন্তু আয়ের একটা ব্যবস্থা আছে। মার্জিন ঋণ তার জন্য রেস্ট্রিক্টেড না। কিন্তু যাদের নিয়মিত আয় থাকে না, যেমন- অবসরের পর যে ভাতা পাওয়া যায় তা দিয়ে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের ঋণ পরিশোধ করা কঠিন। 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর কোথাও মার্জিন ঋণ দীর্ঘ সময়ের জন্য দেওয়া হয় না। এ ঋণ নিয়ে সাধারণত বাজার সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকা দক্ষ বিনিয়োগকারীরা ব্যবসা করেন। তারা স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ নিয়ে তা দ্রুত পরিশোধ করে দেন।

এর আগে গত রবিবার বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ কাছে মার্জিন রুলস, ১৯৯৯-এর যুগোপযোগীকরণে চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দেন পুঁজিবাজারের উন্নয়নে গঠিত সংস্কার টাস্কফোর্স। এ সময় কমিশনার মো. আলী আকবর ও কমিশনার ফারজানা লালারুখ উপস্থিত ছিলেন। 

এ ছাড়া সংস্কার টাস্কফোর্সের পক্ষে টাস্কফোর্সের সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিএসই বিভাগের অধ্যাপক মো. মোস্তফা আকবর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন উপস্থিত ছিলেন। 

গত ৭ অক্টোবর ২০২৪ পুঁজিবাজার উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক মানের সুশাসন নিশ্চিত করতে পুঁজিবাজার সংস্কারের সুপারিশের জন্য পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। 

পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোংয়ের জ্যেষ্ঠ অংশীদার এ এফ এম নেসারউদ্দীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিএসই বিভাগের অধ্যাপক মো. মোস্তফা আকবর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন।

বিএসইসি গঠিত পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭টি। এরই মধ্যে মার্চেন্ট ব্যাংক, আইপিও ও মার্জিন ঋণের বিষয়ে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে কমিশনে। এর মধ্যে রয়েছে পুঁজিবাজারের আকার, তথা জিডিপি ও বাজার মূলধন অনুপাত কম হওয়ার প্রধান কারণগুলো চিহ্নিত করা ও উন্নতির জন্য নীতি প্রণয়নের প্রস্তাব, দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে ব্যাংকঋণের বদলে পুঁজিবাজার থেকে অর্থায়নে সরকারের নীতি প্রণয়ন ও এ–সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিএসইসির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের সুপারিশ করা; বাজারের সুশাসনের উন্নতির জন্য বর্তমান পরিস্থিতি ও প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো বিশ্লেষণ করে সমাধানের সুপারিশ প্রণয়ন; বিএসইসির প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সুপারিশ; ডিএসই, সিএসই, সিডিবিএল, সিসিবিএলের তদারকি কার্যক্রম বিশ্বমানে উন্নীত করাসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিতে সুপারিশ প্রণয়ন; প্রাইভেট প্লেসমেন্টসংক্রান্ত সিকিউরিটিজ নীতিমালা যুগোপযোগী করতে সুপারিশ; তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন, করপোরেট ঘোষণাসহ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা ও বাজারের গভীরতা বৃদ্ধির সুপারিশ প্রণয়ন; বাজার মধ্যস্থতাকারীদের জন্য বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধান যুগোপযোগী করতে সুপারিশ করা; বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও আস্থা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান; বাজারে কারসাজি, অনিয়মের বিচার ও জরিমানার সমতা আনতে সুনির্দিষ্ট পেনাল কোড এবং শাস্তির বিধিমালা প্রণয়ন করা; নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের জন্য একটি মানসম্মত পদ্ধতি বা নির্দেশিকা প্রণয়ন; তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে অ–তালিকাভুক্ত কোম্পানি একীভূত, অধিগ্রহণসংক্রান্ত হাইকোর্টের অনুমোদনের আগে বিএসইসির অনাপত্তি গ্রহণসংক্রান্ত সুপারিশ করা ইত্যাদি।

নকশাবহির্ভূত রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০২ এএম
নকশাবহির্ভূত রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল
দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)

নকশাবহির্ভূত রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। 

সোমবার (২৮ এপ্রিল) গণমাধ্যমে এক গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করার বিষয়টি জানায় ডিএসসিসি।

গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় কিছু আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের অভ্যন্তরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদিত নকশায় না থাকলেও বিধিবহির্ভূতভাবে রেস্তোরাঁ (রেস্টুরেন্ট) পরিচালনা করা হচ্ছে এবং ভবনের ছাদে অবৈধভাবে রুফটপ রেস্তোরাঁ পরিচালিত হচ্ছে, যা জনজীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিধিবহির্ভূতভাবে রেস্তোরাঁ পরিচালনা করায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও সম্পদহানির ঘটনা ঘটছে। এসব ক্ষেত্রে অনেক অবৈধ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনৈতিক উপায়ে করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করেছে।

ডিএসসিসির গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্পদ ও জানমালের ঝুঁকি এড়াতে নকশাবহির্ভূত সব রেস্তোরাঁ এবং ভবনের ছাদে স্থাপিত রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল ঘোষণা করা হলো। বাতিল করা লাইসেন্স দিয়ে কোনো ব্যবসা পরিচালনা করা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘যেসব রেস্তোরাঁ সঠিক তথ্য না দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছে, সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। তবে ভবনের অনুমোদন কিন্তু বাতিল করা হয়নি। ভবনের নকশায় রেস্তোরাঁ থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সশরীর উপস্থিত হয়ে আমাদের কাছে তথ্য-উপাত্ত দিলে সেগুলো সচল করা হবে।’ অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিটি রেস্তোরাঁকে আলাদা করে চিঠি পাঠাব।’

ডিএসসিসির এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান। তিনি বলেন, কোনো প্রকার আলোচনা না করেই ডিএসসিসি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের ওপর জুলুম চলছে। ব্যবসাগুলো একদিনে গড়ে ওঠেনি। রাজউকের পাস করা ভবনের নকশায় রেস্তোরাঁ নেই বললেই চলে। বিগত সরকারের সময় এই জটিলতা নিরসনে একটা টাস্কফোর্স করা হয়েছিল। সেই টাস্কফোর্সের দুটি বৈঠক হয়েছিল। তারপর তো সরকার বদল হয়ে গেল।

ইমরান হাসান বলেন, ‘ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করে এখন যদি ডিএসসিসি অভিযানে নামে, তাহলে নতুন করে হয়রানিতে পড়বেন ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতি হলে আমাদের রেস্তোরাঁ বন্ধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।’

গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনে ভয়াবহ আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর রেস্তোরাঁর অনুমোদন ও অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি সামনে আসে। ওই ভবনে আটটি রেস্তোরাঁ ছিল, তবে ভবনটিতে রেস্তোরাঁ প্রতিষ্ঠার কোনো অনুমোদনই ছিল না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) চার বছর আগে দেশের রেস্তোরাঁ খাত নিয়ে একটি জরিপ করে। সেই জরিপের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালে দেশে মোট হোটেল ও রেস্তোরাঁ ছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭৪টি, যা ২০০৯-১০ অর্থবছরের চেয়ে ৫৮ শতাংশ বেশি। সরকারি সংস্থার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৮৫২টি। বাকি সব ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন।

রেস্তোরাঁ ব্যবসা করতে চাইলে একজন বিনিয়োগকারীকে সরকারের সাতটি সংস্থার অনুমোদন ও ছাড়পত্র নিতে হয়। রেস্তোরাঁর জন্য প্রথমে নিবন্ধন ও পরে লাইসেন্স নিতে হয় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে। ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ২০২৪ সালের মার্চ মাসের তথ্য অনুযায়ী, সরকারের সব সংস্থার প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও ছাড়পত্র নিয়ে ঢাকায় রেস্তোরাঁ ব্যবসা করছে মাত্র ১৩৪টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে ১২৮টি রেস্তোরাঁ।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি ঢাকা জেলায় পাঁচটি উপজেলা রয়েছে। সাভার, ধামরাই, কেরানীগঞ্জ, দোহার ও নবাবগঞ্জ- এই পাঁচ উপজেলার মধ্যে শুধু সাভারের ছয়টি রেস্তোরাঁর লাইসেন্স রয়েছে।

বেইলি রোডের আগুনের পর রাজধানীজুড়ে অভিযান শুরু করে সরকারের পাঁচ সংস্থা- রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। মাঝে মাঝে সংস্থাগুলোর ‘বিচ্ছিন্ন’ অভিযানে রেস্তোরাঁ ভেঙে ফেলা, সিলগালা করে দেওয়া, কর্মীদের গ্রেপ্তার ও জরিমানার ঘটনা ঘটে। এর বাইরে সারা বছরই রেস্তোরাঁয় অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সংস্থা। রেস্তোরাঁর মালিকদের অভিযোগ, সারা বছর সংস্থাগুলোর অসাধু কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করেই তাদের চলতে হয়।

তখন নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতিরা বলেছেন, রেস্তোরাঁয় উদ্যোক্তাদের কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। এতে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। রেস্তোরাঁগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনা দরকার। কিন্তু বিচ্ছিন্ন অভিযানে কোনো সমাধান আসবে না।

শ্রমক্ষেত্রে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৯ এএম
শ্রমক্ষেত্রে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে
রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর আয়োজিত ‘পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা’ সম্মেলনে প্যানেল আলোচনায় অতিথিরা

শ্রমক্ষেত্রে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে বলে  জানিয়েছেন বক্তারা। তারা বলেন, পেশাগত নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও তাদের তদারকি কার্যক্রম আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এ ছাড়া পরিবহনসহ যেসব খাতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে, সেগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করতে হবে।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর একটি হোটেলে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিয়ে আয়োজিত ‘ওএসএইচ সম্মেলন ২০২৫’-এ বক্তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শিল্প খাতে যখনই কোনো সংকট তৈরি হয়, তখন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। তেমন পরিস্থিতিতে নিজেদের ভাসমান মনে হয়, কোথায় যেতে হবে জানি না। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।

অনুষ্ঠানে শ্রম উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, ‘যখনই কোনো সংকট হয়, তখন কিন্তু আমরা কাউকে খুঁজে পাই না। কিসের ট্রাইপার্টাইট (সংকট নিরসনে ত্রিপক্ষীয় কমিটি) আর কিসের কী; সংকট যখন আসে তখন আমি আর শ্রমসচিব নিজেদের ভাসমান অবস্থায় দেখি। কোথায় যেতে হবে জানি না। সুতরাং সংকটকালে সবাই টিম (একত্রে) হিসেবে কাজ না করলে তা কার্যকর হবে না।’

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ‘এই মন্ত্রণালয়ের (শ্রম) দায়িত্ব নিয়েছি সাত মাস হলো। এ সময়ে যে পরিমাণ সংকট হয়েছে, সেগুলো সব কিন্তু এই সাত মাসে তৈরি হয়নি। যেমন অনেক তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের দুই-তিন বছরের বেতনও বকেয়া আছে। গতকাল বিএটি বাংলাদেশের (ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, বাংলাদেশ) কিছু লোক এসেছিলেন, যাদের ২০১৯ সালে ছাঁটাই করা হয়েছিল। আমি (এই প্রসঙ্গে) বিএটিকে বলেছি, ফলো দ্য ল অর ওয়াইন্ড ইয়োর বিজনেস অ্যান্ড গো (আপনারা হয় আইন মেনে চলেন, না হয় এ দেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যান)। বাধ্য হয়ে এমন শক্ত কথা বলতে হয়েছে। এ ছাড়া অন্য উপায় ছিল না।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘মানুষ নির্বিঘ্নে কর্মক্ষেত্রে যাবে, অথচ আমরা কাজের জায়গাগুলোকে মৃত্যুকূপ বানিয়ে রেখেছি। শ্রম সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ দিয়েছে, তার প্রতিটি বিষয় নিয়ে কাজ করা হবে। এটা প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি। সে জন্য সময় নির্দিষ্ট কর্মকৌশল গ্রহণের সুপারিশ এসেছে।’

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক মো. মতিউর রহমান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্যানুসারে, সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনা কিংবা অসুস্থতার কারণে বিশ্বে প্রতি ১৫ সেকেন্ডে অন্তত একজন কর্মী মারা যান। কর্মক্ষেত্র-সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনায় যে আর্থিক ক্ষতি হয়, তা বৈশ্বিক জিডিপির ৪ শতাংশের সমান।

অনুষ্ঠানে একাধিক বক্তা বলেন, দেশে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে দুর্ঘটনা কমলেও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে বাড়ছে। মতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের ঘটনার পরও প্রায় প্রতিবছর কমবেশি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর অর্থ পেশাগত নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েই গেছে। তার অনুমান, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে আরও বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে, এসব সংবাদে আসছে না। এসব তথ্য পেলে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও পেশাগত সুরক্ষার বিষয়ে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যেত।

জীবনের অধিকারের ক্ষেত্রে যে বৈষম্য, বর্তমানে সেটাই সবচেয়ে বড় বৈষম্য বলে মন্তব্য করেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ। পেশাগত নিরাপত্তা মানুষের মৌলিক অধিকার; এটা দর-কষাকষির বিষয় নয়। এটি যত দিন না ঠিক হবে, তত দিন শিল্পও টেকসই হবে না। সুলতান উদ্দিন আরও বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক খাতে আগের তুলনায় দুর্ঘটনা কমেছে। তবে একই হারে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে দুর্ঘটনা বাড়ছে।

সমন্বয়ের অভাব: শ্রমক্ষেত্রে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে বলে মন্তব্য করেন একাধিক বক্তা। মতিউর রহমান বলেন, পেশাগত নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও তাদের তদারকি কার্যক্রম আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এ ছাড়া পরিবহনসহ যেসব খাতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে, সেগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করতে হবে।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক মো. ইমরুল মহসিন বলেন, দ্বন্দ্ব নিরসনে মালিক, শ্রমিক ও সরকার- প্রত্যেকের মধ্যে একধরনের প্রতিপক্ষসুলভ মনোভাব কাজ করে। এটি থাকা ঠিক না। এই সুযোগে গরম তাওয়ায় কীভাবে রুটি ভেজে খাওয়া যায়, অনেকে আবার সেই চেষ্টা করেন।

পেশাগত স্বাস্থ্য উপেক্ষিত: অনুষ্ঠানে ‘পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কনভেনশন অনুসমর্থন’ বিষয়ে একটি প্যানেল আলোচনা হয়। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশে আইএলওর প্রধান টুমো পুটিআইনেন।

বাংলাদেশে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে অনুষ্ঠানে আরেকটি উপস্থাপনা দেন সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেইনিং বিভাগের পরিচালক হাসনাত এম আলমগীর। তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হলেও পেশাগত অসুস্থতার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। যেমন অনেক কর্মী লেড, অ্যাসিড প্রভৃতি রাসায়নিকের কারণে দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল অসুস্থতায় পড়েন। রিকশা-সিএনজিচালক, ট্রাফিক পুলিশসহ পরিবহন খাতে যুক্ত মানুষের বড় একটি অংশ ঠিকঠাক কানে শোনেন না। এ ছাড়া শ্রমিকরা ঠিকসময়ে বেতন না পেলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে। সুতরাং দুর্ঘটনার পাশাপাশি এসব বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) মহাসচিব ফারুক আহমেদ বলেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতেও পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা (ওএসএইচ) কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সেটি দেখা প্রয়োজন। কারণ, ওএসএইচ বাস্তবায়নে শুধু আলোচনা না করে সময় নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন।

আইনের প্রয়োগ নেই: প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভা প্রধান ও শ্রমবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য তাসলিমা আখতার। তিনি বলেন, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কোনো ভাবেই দয়াদাক্ষিণ্যের বিষয় নয়; এটা শ্রমিকের মানবাধিকার। পেশাগত নিরাপত্তা নিয়ে কঠোর আইন রয়েছে, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনেও সুপারিশ করা হয়েছে। আমরা চাই, এসব পরামর্শ কাগজে সীমাবদ্ধ না থেকে যেন বাস্তবায়িত হয়।

পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে ইতোমধ্যে দেশে আইন আছে। কিন্তু সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ বিজনেস অ্যান্ড ডিজঅ্যাবিলিটি নেটওয়ার্কের ট্রাস্টি রূপালী চৌধুরী। এর কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, আইন ও প্রয়োগ নিয়ে সচেতনতার অভাব আছে।

ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ কাউন্সিলের উইমেন সেক্রেটারি চায়না রহমান বলেন, তৈরি পোশাক খাতে নারীরা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হন। কাজের বাইরে পথে ঘাটে ও বাসাবাড়িতেও তারা সমস্যায় পড়েন। ফলে তারা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন।