কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন সিরাজগঞ্জের খামারিরা। অবৈধ পথে ভারত থেকে গরু আমদানি না হলে লাভবান হওয়ার আশা তাদের। অন্য বছরের মতো এবারও সিরাজগঞ্জে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে সোয়া ৬ লাখ গবাদিপশু; যা গত বছরের চেয়ে বেশি।
গতবারের মতো এবারও বেসরকারি উদ্যোক্তার পাশাপাশি সরকারিভাবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কোরবানির পশু বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারিভাবে অনলাইনে কেনা গরু পছন্দ না হলে টাকা ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা এ বছর সংযোজন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অপরদিকে গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় এবার গরুর দামও বেশি হবে বলে জানিয়েছেন খামারিরা।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, গত বছর সিরাজগঞ্জে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ১২ হাজার। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ২৫ হাজারে। জেলার ১৭ হাজার ১৩৪টি খামারে এবার এসব পশু মোটাতাজা করা হয়েছে। এর মধ্যে ষাঁড় ১ লাখ ৭৩ হাজার ১১০টি, বলদ ৩৩ হাজার ৬০৫টি, গাভি ১৫ হাজার ৭১৭টি, মহিষ ৩ হাজার ৬৮১টি, ছাগল ৩ লাখ ৩৮ হাজার ২৩৫টি ও ভেড়া ৬০ হাজার ৫৮০টি। প্রস্তুতকৃত এসব পশুর বাজারমূল্য প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
জানা গেছে, জেলার খামারিরা এখন দুধ উৎপাদনের পাশাপাশি বছরজুড়ে উন্নত জাতের গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া মোটাতাজা করছেন। এতে তাদের ভালো আয়ও হচ্ছে। প্রান্তিক খামারিদের দেখাদেখি জেলায় অনেকগুলো বাণিজ্যিক পশু মোটাতাজাকরণ খামারও গড়ে উঠেছে। জেলার সবচেয়ে বেশি পশু মোটাতাজা করা হয় গো-চারণভূমি হিসেবে খ্যাত শাহাজাদপুর উপজেলায়।
স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব পশু দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হবে, যা এখানকার গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে। কাঁচা ঘাস, লতা-পাতা, খৈল ও ভুসি খাইয়ে প্রাকৃতিকভাবে মোটাতাজা করার ফলে দেশজুড়ে এখানকার পশুর চাহিদা বেশি। ইতোমধ্যে গরু কিনতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় করছেন জেলার বিভিন্ন খামারে।
সদর উপজেলার রানীগ্রামে অবস্থিত খান অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছরের মতো এবারও কোরবানির জন্য অনেক গরু দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজা করেছি। উৎপাদন খরচ প্রচুর বেড়ে যাওয়ায় এবার কোরবানি পশুর দাম অনেক বেশি চাওয়া হচ্ছে। আমাদের এখানে দেড় লাখ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা মূল্যের গরু রয়েছে।’
শাহজাদপুর উপজেলার রেশমবাড়ি গ্রামের সৌরভ ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো. সালাম ব্যাপারী বলেন, ‘বাজারে গো-খাদ্যের দাম এত বেড়েছে যে, খামার টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। কোরবানির জন্য এ বছরও অর্ধ শতাধিক পশু মোটাতাজা করা হয়েছে। উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় বাজারে পশুর দাম বেশি না পেলে ক্ষতিগ্রস্ত হব।’
সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার ছোঁয়ামণি ডেইরি ফার্মের মালিক হাজী আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘সরকার পশুখাদ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলে খামারিদের গরু লালন-পালনে সহজ হতো। যেভাবে পশুখাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে সামনের দিনগুলোতে প্রান্তিক খামারিদের জন্য পশু লালন কঠিক হবে।’
তাড়াশ উপজেলার প্রান্তিক খামারি মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও বেশি লাভের আশায় দেশীয় পদ্ধতিতে চারটি ষাঁড় মোটাতাজা করেছি। খৈল ও ভুসির দাম বেশি হওয়ায় খরচও অনেক বেশি হয়েছে। আশা করছি এবারও ভালো দামে বিক্রি করতে পারব।’
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ওমর ফারুক খবরের কাগজকে বলেন, ‘জেলায় প্রতি বছর কোরবানির চাহিদার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি পশু মোটাতাজা করা হয়। এ বছর ৬ লাখ ২৪ হাজার গবাদিপশু মজুত আছে। জেলায় চাহিদা রয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার গবাদি পশুর। এ বছর বাজার ভালো থাকলে অন্তত ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার পশু বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। এখানকার পশু প্রাকৃতিকভাবে মোটাতাজা করা হয় বলে দেশজুড়ে এর ব্যাপক চাহিদা। আমরা খামারিদের সব ধরনের পরামর্শ এবং সহযোগিতা দিচ্ছি। সীমান্ত এলাকা বন্ধ থাকায় কোরবানির সময় পাশের দেশগুলো থেকে পশু আসতে পারবে না। তাই খামারিদের দুশ্চিন্তার কারণ নেই।’