ঢাকা ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫
English
শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আইইএর পূর্বাভাস মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি বিনিয়োগ ১৭৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৪, ১২:৫০ পিএম
মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি বিনিয়োগ ১৭৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে
সংযুক্ত আরব আমিরাতের মোহাম্মদ বিন রশিদ আল-মাকতুম সোলার প্রার্ক প্রকল্প। ছবি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ চলতি বছরে আনুমানিক ১৭৫ বিলিয়ন (১৭ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারে পৌঁছাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এই বিনিয়োগের মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশ থাকবে ক্লিন এনার্জি (পরিবেশবান্ধব জ্বালানি)। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) একটি নতুন প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। খবর আরব নিউজের।

ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির বিশ্লেষণের বরাত দিয়ে সৌদি আরবভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, ঘোষিত অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ ২০২৪ সালের তুলনায় তিনগুণ বেশি হবে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চলতি দশকের শেষ নাগাদ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ করা প্রতি ডলারের বিপরীতে ক্লিন এনার্জিতে ৭০ সেন্ট বিনিয়োগ করা হবে।

বর্তমানে জীবাশ্ম জ্বালানি সরবরাহের জন্যই বেশি অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ করা প্রতি ডলারের বিপরীতে ক্লিন এনার্জিতে বিনিয়োগের জন্য বরাদ্দ করা হয় মাত্র ২০ সেন্ট। এটি বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগের প্রায় এক-দশমাংশ।

খবরে বলা হয়, এই অঞ্চলের (মধ্যপ্রাচ্য) ১২টি দেশের মধ্যে পাঁচটি, তাদের কার্বন নির্গমন লক্ষ্যমাত্রা শূন্যে (নিট জিরো) নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। তবে সৌদি আরব, বাহরাইন ও কুয়েত ২০৬০ সালের মধ্যে তাদের কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাত ২০১৯ স্তর থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ১৯ শতাংশ নির্গমন কমাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশটি ২০২৩ সালের জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (ইউএন ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্স) বা কপ২৮-এ একটি জলবায়ুকেন্দ্রিক বিনিয়োগ উদ্যোগ চালু করার জন্য ৩০ বিলিয়ন অনুঘটক মূলধনের (ক্যাটালিক ক্যাপিটাল) প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রসঙ্গত, অনুঘটক মূলধন বা অনুঘটক পুঁজি হলো এমন এক ধরনের বিনিয়োগ, যেখানে সাধারণত লাভের চেয়ে সামাজিক বা পরিবেশগত প্রভাবের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়।

খবরে বলা হয়, এই অঞ্চলের (মধ্যপ্রাচ্য) বিদ্যুৎ খাতের ক্লিন এনার্জি টেকনোলজিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য একটি স্বতন্ত্র সুযোগ রয়েছে, বিশেষ করে সোলার বা সৌরবিদ্যুৎ। এই সুযোগগুলো কাজে লাগালে বিদ্যুৎ খাতে তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভরতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।

উদাহরণস্বরূপ, সৌদি আরব বর্তমানে ৫ গিগাওয়াটেরও কম নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। ২০৩০ সালের মধ্যে এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে ১৩০ গিগাওয়াটে পৌঁছানোর লক্ষ্য স্থাপন করেছে দেশটি। একইভাবে সৌদি আরবের বৃহৎ আল-শুয়াইবাহ সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মোহাম্মদ বিন রশিদ আল-মাকতুম সোলার পার্ক প্রকল্পগুলোর কার্যক্রমও চলমান।

বিভিন্ন দেশ নীল ও সবুজ হাইড্রোজেনে বিনিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলোর জন্য তহবিল বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। উদাহরণস্বরূপ, সৌদি আরব ১৮ কোটি ২০ লাখ ডলারের খনিজ অনুসন্ধান প্রণোদনা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে ১ দশমিক ৯০ বিলিয়ন খনির অংশীদারত্বের মাধ্যমে এবং তামাসমৃদ্ধ জাম্বিয়াতে নতুন চুক্তিগুলোসহ এই সেক্টরে প্রচেষ্টা বাড়াচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।

ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি খাতের বিনিয়োগ প্রথমবারের মতো ৩ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এর মধ্যে ২ ট্রিলিয়ন ডলার পরিবেশবান্ধব জ্বালানি প্রযুক্তি ও অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করা হবে।

২০২০ সাল থেকে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি খাতের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে ত্বরান্বিত হয়েছে এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ, গ্রিড ও স্টোরেজের ব্যয় এখন তেল, গ্যাস ও কয়লার মোট ব্যয়ের চেয়ে বেশি।
সস্তা ঋণের (কম সুদহারে নেওয়া ঋণ) যুগ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঋণের উচ্চখরচ বেশ কিছু নির্দিষ্ট খাতের বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে।

যদিও উচ্চতর ঋণের খরচ বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে, তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে সরবরাহ শৃঙ্খলের চাপ কমে যাওয়া এবং দাম কমার ফলে এই প্রভাব কিছুটা কমে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, গত দুই বছরে সৌর প্যানেলের খরচ ৩০ শতাংশ কমেছে এবং জ্বালানি পরিবর্তনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও ধাতুগুলোর দাম, বিশেষ করে ব্যাটারির জন্য প্রয়োজনীয় ধাতুগুলোর দামও দ্রুত কমেছে।

আরব নিউজ বলছে, ২০২৪ সালে পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে বিনিয়োগ ৩২০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে, যা ২০২০ সালের বিনিয়োগ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি।

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৫, ১১:৫৭ এএম
আপডেট: ১২ জুন ২০২৫, ১১:৫৮ এএম
জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আর্থিক চাপকে এর মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার (১০ জুন) প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট: ট্যাক্সিং টাইমস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। 

এতে বলা হয়, বাংলাদেশের পরবর্তী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছার সম্ভাবনা থাকলেও সেটিও পূর্বাভাসের তুলনায় কিছুটা কমে গেছে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত প্রথম ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। তবে এপ্রিলের হালনাগাদ প্রতিবেদনে তা কমিয়ে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ করা হয় এবং এবার জুন সংস্করণেও সেই পূর্বাভাসই বহাল রাখা হলো।

গত মঙ্গলবার প্রকাশিত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে ২০২৫ সালে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশের পূর্বাভাস দেওয়া হয়। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় কিছুদিন আগে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য সংশোধন করে ৫ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে।

প্রতিবেদনে কর ব্যবস্থায় সংস্কার, ফাঁকফোকর বন্ধ, কর বিধিমালা সরলীকরণ, কর আহরণে প্রযুক্তি ব্যবহার, কর অব্যাহতি হ্রাস এবং দূষণমূল্য আরোপ করার মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার মন্তব্য করেন, গত এক দশকে একাধিক ধাক্কা দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিকে দুর্বল করে দিয়েছে। এখনই সময় বাণিজ্যের দ্বার উন্মুক্ত করা, কৃষিকে আধুনিকীকরণ এবং বেসরকারি খাতকে আরও সক্রিয় করার মাধ্যমে টেকসই প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার।

বিশ্বব্যাংক বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বেড়ে যাওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা দুর্বল হবে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে। এ অঞ্চলের বেশির ভাগ দেশের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস কমে এসেছে। এ প্রেক্ষাপটে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোই ভবিষ্যতের ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থনীতিকে আরও সহনশীল করতে সহায়ক হতে পারে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বব্যাংক জানায়, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সপ্রবাহে ধীরগতি এবং ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা চাপের মুখে রয়েছে। এ কারণে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার মন্থর হচ্ছে এবং প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার তুলনায় কম হচ্ছে।

খাতুনগঞ্জ-পাহাড়তলীতে এখনো কাটেনি ঈদের আমেজ

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৫, ০৯:২৫ এএম
আপডেট: ১২ জুন ২০২৫, ১০:০০ এএম
খাতুনগঞ্জ-পাহাড়তলীতে এখনো কাটেনি ঈদের আমেজ
অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ থাকায় ভোগ্যপণ্যের বাজারে এখন শুধুই নীরবতা। ছবিটি চট্টগ্রাম মহানগরের পাহাড়তলী বাজার থেকে তোলা। মোহাম্মদ হানিফ

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ-পাহাড়তলীতে এখনো কাটেনি ঈদের আমেজ। আড়তদার-শ্রমিকদের হাঁকডাকে মুখরিত থাকা বড় এই দুই ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজারে এখন শুধুই নীরবতা। কিছু কিছু দোকানপাট খুললেও অধিকাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। যারাই খুলেছেন, ক্রেতা না থাকায় পার করেছেন অলস সময়। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে ভোগ্যপণ্যের বাজার পুরোনো রূপে ফিরে যাবে, এমনটাই জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বাজার দুটি ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য সময়ে খাতুনগঞ্জে ক্রেতা, বিক্রেতা আর শ্রমিকদের সমাগম আর হাঁকডাকে সরব থাকা বাজার দুটিতে এখন কেউই নেই। সারা বছর বড় বড় পণ্যবাহী গাড়ি, রিকশা আর মানুষের সমাগমে সরু রাস্তায় যানজট দেখা দিলেও এখন পুরো রাস্তাই ফাঁকা। রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে ভ্যানগাড়ি রেখেছেন শ্রমিকরা। ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ সকালের দিকে দোকান খুললেও কুশল ও ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ে সময় কেটেছে। ক্রেতা সমাগম না থাকায় তারা আবার দুপুরে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে চলে যান। অধিকাংশ ব্যবসায়ী গ্রাম থেকে না ফেরা এবং ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজারে এখন সুনসান নীরবতা। একই চিত্র দেখা গেছে পাহাড়তলী বাজারেও। সেখানেও নেই ট্রাকের সারি বা যানজট। 

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যবসায়ীদের অনেকেই ঈদ উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে সময় কাটাচ্ছেন। পরিবারকে সময় দিচ্ছেন। আগামী রবিবার থেকে শুরু হবে ব্যাংকিং কার্যক্রম। সেদিন থেকে খাতুনগঞ্জ-পাহাড়তলী পুরোদমে সচল হবে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি বন্দরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভোগ্যপণ্যবাহী গাড়ি আসবে। তখন সবকিছু আবার সরব হয়ে উঠবে। পাশাপাশি ভোগ্যপণ্যে সরবরাহ সংকট বা দাম বাড়ার মতো পরিস্থিতি হবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন ব্যবসায়ীরা। 

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের অধিকাংশ এখনো গ্রাম থেকে ফেরেনি। এর উপর ব্যাংকিং কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি ক্রেতারাও এখন পণ্য কিনতে আসবেন না। তাই রবিবার (১৫ জুন) থেকে পুরোদমে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু হবে।’

একই কথা জানালেন হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ নেই। যারা খুলেছেন, অলস সময় পার করেছেন। ব্যাংকিং কার্যক্রম সচল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়িক কার্যক্রমও সচল হয়ে উঠবে। এবার কোরবানির ঈদে পেঁয়াজ, আদা ও রসুনসহ অন্য মসলা পণ্যের দাম নিম্নমুখী ছিল। আশা করছি, আগামী দিনে সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে পণ্য কিনতে পারবেন।’

পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘এবার ঈদের ছুটি বেশি। তাই সুযোগ পেয়ে ব্যবসায়ীরাও পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজনকে সময় দিচ্ছেন। পুরো বাজার নীরব। আগামী শনিবার বা রবিবার অধিকাংশ ব্যবসায়ী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলবেন। এরপরও পুরোদমে বিক্রি শুরু হতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লেগে যাবে।’ 

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘এ বছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় পাইকারি বাজারে অধিকাংশ ভোগ্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে ছিল। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। তবে পাইকারি বাজারে দাম কমার প্রভাব খুচরা বাজারে পড়েনি। তাই সাধারণ মানুষ কোনো সুফল পাননি। এই বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে ভাবার সময় এসে গেছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।’

ময়মনসিংহে চামড়ার দাম নিয়ে শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৫, ০৮:৪৮ এএম
ময়মনসিংহে চামড়ার দাম নিয়ে শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা
ছবি: খবরের কাগজ

ময়মনসিংহ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় চামড়ার হাট শহরতলির শম্ভুগঞ্জে প্রতি বছরের মতো এবারও কোরবানির পশুর চামড়ায় লবণ লাগিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। চামড়ার ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

 শনিবার (১৪ জুন) ট্যানারি মালিকসহ তাদের প্রতিনিধিরা হাটে লবণযুক্ত চামড়া কিনতে আসবেন। এদিন ভালো দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় হাটের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে দিতে পারেন। এতে এ ব্যবসায় ধীরে ধীরে ধস নামতে পারে।

সরেজমিন হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিপুল পরিমাণ চামড়ায় লবণ লাগিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। মাঠের চারদিকে প্লাস্টিকের পর্দার নিচে চামড়া রাখা হয়েছে। পর্দার বাইরে থাকা লবণযুক্ত চামড়াগুলো বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা করতে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

জানা যায়, ঈদের দিন ও পরের দিন গরুর চামড়ার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ খাসির চামড়া হাটে এসেছে। কিন্তু কোনো ব্যবসায়ী খাসির চামড়া কেনেননি। কারণ খাসির চামড়া কেনার পর প্রতি পিস চামড়ায় লবণ বাবদ ২০ টাকা খরচ হয়। এর মধ্যে রয়েছে শ্রমিকদের মজুরি। ট্যানারি মালিকরা খাসির চামড়ার দাম দিতে চান না। ফলে চামড়ার মৌসুমি ব্যবসায়ীরা খাসির চামড়া বিক্রি করতে এসে দাম না পেয়ে হাটে ফেলে চলে গেছেন। এ ছাড়া অনেকে খাসির চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন।

হাটের ব্যবসায়ীরা জানান, সর্বোচ্চ ভালোমানের গরুর চামড়া ৬০০-৭০০ টাকা ও তুলনামূলক খারাপ মানের চামড়াগুলো ১০০-২০০ টাকায় কিনেছেন হাটের ব্যবসায়ীরা। লবণ ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ প্রতি পিস চামড়ায় আরও ৩০০ টাকা খরচ হয়েছে। ট্যানারি মালিকদের কাছে প্রতি পিস চামড়া ১ হাজারের ওপর বিক্রি করতে হবে। এবার ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট করে দাম কম দিলে ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই ট্যানারি মালিকদের দিকে তাকিয়ে আছেন সব ব্যবসায়ী। হাটের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভবিষ্যতে অনেক ব্যবসায়ী পশুর চামড়া ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

খাসির চামড়া বিক্রি করতে হাটে গিয়ে বিক্রি করতে পারেনি মৌসুমি ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঈদের দিন বিকেলে ৮০ পিস খাসির চামড়া সংগ্রহ করেছি। কিন্তু হাটে আনার পর ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তারা কিনবেন না। এমন অবস্থায় ক্ষোভে হাটেই চামড়াগুলো ফেলে চলে এসেছি।’ 

আনিছ মিয়া নামের হাটের একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘খাসির চামড়ার দাম ট্যানারি মালিকরা একেবারেই দিতে চান না। তারা যে দাম বলেন, সে দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়। তাই খাসির চামড়া কেউ কেনেননি। মান ভেদে গরুর চামড়া বিভিন্ন দামে কেনা হয়েছে।’

শম্ভুগঞ্জ চামড়া হাটের ইজারাদার মো. শহীনুর রহমান শহীন বলেন, ‘আগামী শনিবার ট্যানারি মালিকসহ তাদের প্রতিনিধিরা এ হাটে আসতে পারেন। এদিন ময়মনসিংহ বিভাগসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা এখানে লবণযুক্ত চামড়া নিয়ে আসবেন। ট্যানারি মালিকরা ন্যায্য দামে চামড়া কিনলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। আর সিন্ডিকেট করলে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন হাটের ব্যবসায়ীরা।’

জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, ‘লিল্লাহ বোর্ডিংসহ বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে লবণ দিয়েছি। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা হাটে চামড়া বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্ত হননি। ট্যানারি মালিকদের কাছে হাটের ব্যবসায়ীরা যথাযথ দামে চামড়া বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছি। এ ছাড়া চামড়া যেন সীমান্ত এলাকা দিয়ে পাচার না হয়, সেজন্য সীমান্তে বিজিবি সতর্ক রয়েছে।’

দুবাইয়ে মেয়ের ফ্ল্যাট বিতর্ক নিয়ে যা বললেন গভর্নর

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৫, ০৭:০৫ পিএম
আপডেট: ১১ জুন ২০২৫, ০৭:৩৮ পিএম
দুবাইয়ে মেয়ের ফ্ল্যাট বিতর্ক নিয়ে যা বললেন গভর্নর
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের মেয়ে মেহেরীন সারাহ মনসুরের দুবাইয়ের যে ফ্ল্যাট রয়েছে তা স্বীকার করেছেন তিনি নিজেই। তার দাবি, তিনি গভর্নর হওয়ার আগেই মেয়ে ওই ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন। এর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।

বুধবার (১১ জুন) যুক্তরাজ্যে অবস্থনরত আহসান এইচ মনসুর বুধবার টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর কাছে বিষয়টি স্বীকার করেন।

গভর্নরের মেয়ের ফ্ল্যাট নিয়ে আলোচনা শুরু হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সোমবার ছাত্রলীগ নেতা জাকিরের ফেইসবুক পোস্টটি শেয়ার করার পর। ওই পোস্টে বলা হয়, ‘‘জুলাই ষড়যন্ত্র বিপ্লবের পর হঠাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হয়ে যাওয়া আহসান এইচ মনসুর, তার আদরের মেয়ে মেহেরিন সারা মনসুরের নামে গত ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে মাত্র ৪৫ কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছেন! ‘তথ্যমতে, দুবাইতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের মেয়ের নামে ১৩.৫ মিলিয়ন দিরহামের প্রোপার্টির (৪৫ কোটি) খোঁজ পাওয়া গেছে।”

এই পোস্টে আহসান এইচ মনসুরের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হলেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য-প্রমাণ দেখানো হয়নি।

বিডিনিউজে প্রকাশতি প্রতিবেদনটির মূল অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

গভর্নরের কথায়, ‘আমার মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক, তার বয়স ৪০, বিবাহিত। স্বামীর ব্যবসার কারণে দুবাইতে থাকে। সে নিজেই এমন একটা ফ্ল্যাট কিনতে পারে। আমার মেয়ে আমেরিকার সিটিজেন। আর ও একজন (মেয়ে) অ্যাডাল্ট। তার আর্থিক বিষয়ে আমি কেন ইনভলভ হতে যাব?’

তিনি বলেন, ‘আমি গভর্নর পদে বসার অনেক আগেই আমার মেয়ে ২০২৩ সালে দুবাইতে ফ্ল্যাটটি ক্রয় করেছে। আমার গভর্নর পদে বসার সঙ্গে এই ফ্ল্যাট কেনার কোনো সম্পর্ক নেই।’

আহসান মনসুর বলেন, ‘ওই ফ্ল্যাটে আগে থেকেই থাকত তার মেয়ের পরিবার। মালিক ছিলেন একজন ভারতীয়। তিনি ফ্ল্যাটটি বিক্রির উদ্যোগ নিলে মেহরিন সেটি কিনে নেন। কেনাকাটার সকল কার্যক্রম ২০২৩ সালেই সম্পন্ন হয়। আর ২০২৪ সালে সেটি হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা সারা হয়।’

তার দাবি, ওই ফ্ল্যাটের দামের ৮০ শতাংশ মর্টগেজ, বাকিটা মেহরিন নিজে দিয়েছেন।

‘তিন বছরে আমি আমার মেয়েকে একটা কাপড় দিয়েছি, আর কিছু দিইনি’, বলেন গভর্নর।

২০২৪ সালে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুতের পর ব্যাংকিং খাতেও সংস্কার শুরু হয়। পরিবর্তনের ঢেউয়ে তৎকালীন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার পদত্যাগ করেন। এর পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর ওই মাসেই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব নেন। 

আওয়ামী লীগের সময় পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া উদ্যোগেরও নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।

চট্টগ্রামে চামড়ার দাম পাচ্ছেন না মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৫, ১০:৫৫ এএম
চট্টগ্রামে চামড়ার দাম পাচ্ছেন না মৌসুমি ব্যবসায়ীরা
নগরের চৌমুহনী এলাকায় চলছে চামড়া সংগ্রহ। ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রাম মহানগরের পবিত্র ঈদুল আজহার দিন (শনিবার) বিভিন্ন এলাকা থেকে চামড়া সংগ্রহ করেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। সংগ্রহ করা চামড়া লাভের আশায় আড়তদারের কাছে নিয়ে গেলে দেখা যায় উল্টো চিত্র। কেনা দাম তো দূরে থাক, তার চেয়েও কম দাম বলছেন আড়তদাররা। এতে বিপাকে পড়েন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এদিকে নগরের কিছু কিছু এলাকায় চামড়া কিনতেই যায়নি কেউ। তাই অনেক কোরবানিদাতা উপায় না দেখে চামড়া দান করেছেন মাদরসা ও এতিমখানায়।

নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করা চামড়া বিক্রি হয় চৌমুহনী এলাকায়। সেখানে চামড়া কেনার জন্য অপেক্ষায় থাকেন আড়তদাররা। এবার লবণযুক্ত গরু ও মহিষের কাঁচা চামড়ার সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকা। তাই মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা দরে চামড়া কিনেছেন। কিন্তু লাভ তো দূরে থাক, কেনা দরেও চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না তারা।

নগরের হালিশহর এলাকায় চায়ের দোকান আছে সাব্বিরের। লাভের আশায় তিনি এবার ৬০০ টাকা দরে ১৭টি চামড়া সংগ্রহ করেন। কিন্তু আড়তদারদের কাছে গেলে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বলছে।

সাব্বির বলেন, লাভের আশায় চামড়া কিনে বিপদে পড়লাম। কষ্ট করে চামড়া সংগ্রহ করলাম। কিন্তু লাভ পাচ্ছি না। উল্টো আমার আসল টাকাটাই জলে।

রাইড শেয়ার করে সংসার চালান পাঠানটুলি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আকবর। তিনিও লাভের আশায় ৪৫০ টাকা দরে ৩১টি চামড়া কিনে আড়তদারের কাছে বিক্রি করতে চৌমুহনী আসেন। তার চামড়ার দাম উঠেছে ৪০০ টাকা। 

মোহাম্মদ আকবর বলেন, চামড়ার সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকা। তাই ভেবেছি ন্যুনতম ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পাব। হতাশা কাজ করছে মনে। 

তবে চামড়ার ভাল দাম উঠেছে বলে দাবি করছেন বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন। 

তিনি বলেন, ‘মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অনেকেই লবণযুক্ত চামড়ার দামের সঙ্গে কাঁচা চামড়ার দাম মিলিয়ে ফেলেন। তাই তারা বেশি দামে চামড়া কিনে লোকসানে পড়েন। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অনেকেই চামড়ায় লবণ দেন না। লবণ ছাড়া চামড়া বেশি দামে কেনার সুযোগ নেই আমাদের। যারা লবণ দিয়ে এনেছে ওসব চামড়ার ৭০০-৮০০ টাকা দর উঠেছে।’

এদিকে নগরে বিভিন্ন এলাকায় চামড়া বিক্রি না হবার খবর পাওয়া গেছে। নগরের উত্তর আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. শাহেদ বলেন, আমাদের গলিতে ছয়টি গরু জবাই হয়েছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও কেউ চামড়া কিনতে আসেনি। তাই এই চামড়াগুলো এতিমখানায় দান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

কোরবানির ঈদে পশুর চামড়া সংগ্রহের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া সারা দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২২ থেকে ২৭ টাকা দরে বিক্রি হবে ট্যানারিতে। আর বকরির চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দাম ২০ থেকে ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। 

২০২২ সালে সাড়ে তিন লাখ, ২০২৩ সালে চার লাখ, ২০২৪ সালে সাড়ে চার লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছিল। এবারও সাড়ে চার লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন আড়তদাররা। এবার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ করার আশা করছেন তারা।

তবে চামড়া সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা বাড়লেও কমছে আড়তদারের সংখ্যা। চট্টগ্রাম মহানগরের আতুরার ডিপো এলাকায় চামড়ার আড়তগুলো অবস্থিত। চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির তথ্যমতে, এই সমিতির সদস্যভুক্ত ১১২ জন আড়তদার রয়েছেন। সদস্যভুক্তি থাকলেও ২০২২ সালে এই ব্যবসায় জড়িত ছিলেন ৪৫ জন। বর্তমানে চামড়া আড়তদারের সংখ্যা আরও কমে ৩০ জনে ঠেকেছ। তারাও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই করছেন প্রতিনিয়ত। বাকিরা অন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকে ঝুঁকে গেছেন। 

আতুরার ডিপো এলাকার আড়তদাররা জানান, একসময় কোরবানির ঈদ চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য আলাদা আমেজ বয়ে আনত। কিন্তু এখন সেই আমেজ নেই। চামড়া কিনলে সেটা ট্যানারি মালিকদের কাছে লাভে বিক্রি করা যাবে কিনা, ট্যানারি মালিকরা বকেয়া টাকা পরিশোধে গড়িমসি, ঋণ পরিশোধ- এসব নিয়ে ‍দুশ্চিন্তা করতে হয়। ১৯৯০ সালের দিকে চট্টগ্রামে ২২টি ট্যানারি গড়ে উঠেছিল। কিন্তু চামড়ার দরপতনে ব্যবসায় লোকসান ও ইটিপি (বর্জ্য পরিশোধনাগার) স্থাপন করতে না পারায় ২১টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। 

বর্তমানে রিফ লেদার নামক একটি প্রতিষ্ঠান টিকে আছে। প্রতিষ্ঠানটি এবার ৪০ হাজার চামড়া চট্টগ্রামের আড়তদাররদের কাছ থেকে সংগ্রহ করবে। আড়তদারদের দাবি, চট্টগ্রামে আরও ট্যানারি স্থাপন করা প্রয়োজন। চামড়া বিক্রির জন্য ঢাকার ট্যানারিগুলোর উপর নির্ভর থাকতে হয়। এ কারণে প্রতিযোগিতামূলক বাজার না থাকায় ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে কম দামে ও বাকিতে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হতে হয়। এ কারণে চামড়া খাতে সংকট কাটছে না।

অমিয়/