ঢাকা ৩০ কার্তিক ১৪৩১, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

বন্যায় বেশি ক্ষতি পর্যটন ব্যবসায়

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ১২:০৪ পিএম
আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪, ১২:০৫ পিএম
বন্যায় বেশি ক্ষতি পর্যটন ব্যবসায়
সিলেট শাহজালাল (রহ.) মাজার এলাকায় পর্যটন কেন্দ্রিক দোকান গুলোতে ক্রেতাহীন সময় কাটাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। ছবি : খবরের কাগজ

সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে সারা বছরই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এ অঞ্চলে আসেন। সাপ্তাহিক সরকারি ছুটির দিনগুলোতেও পর্যটকদের ভিড় থাকে। তবে দুটি ঈদে সিলেটে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। আর তাদের বরণে নানা প্রস্তুতি নেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। কেউ হোটেল বুকিংয়ে ছাড় দেন, কেউ স্বল্পমূল্যে খাবারের প্যাকেজের অফার দেন, কেউবা আবার পণ্য কেনায় ছাড় দেন।

কিন্তু এবার ঈদুল আজহার সময় সিলেটে বন্যায় সব হিসাবনিকাশ পাল্টে গেছে। কারণ ঈদুল আজহার একদিন আগ থেকে বজ্রসহ বৃষ্টি ও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত চলমান থাকার কারণে সিলেটের নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। 

ফলে ঈদের দিন থেকে বন্যায় প্লাবিত হতে থাকে সিলেট নগরীসহ বিভিন্ন উপজেলা। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ এলাকার মানুষজন খুব তাড়াতাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়েন। নিরাপত্তার স্বার্থে এই দুই উপজেলার সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তাই এই ভরা মৌসুমে সিলেটের পর্যটননির্ভর ব্যবসায় ধস নেমেছে।

সিলেটে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চলমান এই বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিলেটে এবার ঈদে ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা। 

বন্যার কারণে সিলেটের সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ থাকায় অন্য ব্যবসায়ীদের মতো ক্ষতির শিকার হয়েছেন জাফলং জিরো পয়েন্টের কাপড় ব্যবসায়ী নূর নবী। তিনি বলেন, ‘এখন জাফলং জিরো পয়েন্টে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় থাকার কথা। কিন্তু বন্যা সব শেষ করে দিয়েছে। আমাদের পরিবার এই ব্যবসার টাকা দিয়ে চলে। কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় আমরা কোনো ব্যবসা করতে পারিনি। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। 

জাফলং জিরো পয়েন্টের কসমেটিকস ব্যবসায়ী আব্দুল কাদির বলেন, ‘আগে ঈদের দিনেও আমাদের দোকান খুলতে হতো। কারণ ঈদের দিন থেকে পর্যটক আসা শুরু হয়। কিন্তু এবার কিছুই হয়নি। বন্যায় ঘরবাড়ির সঙ্গে আমাদের ব্যবসাও ডুবে গেছে। খুব সংকটে আছি।’ 

সাদাপাথর পর্যটন স্পটের কসমেটিকস ব্যবসায়ী আলিম উদ্দিন বলেন, ‘হঠাৎ ঢলের পানি এসে অর্ধেকেরও বেশি মালামাল ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ব্যবসা করার মতো পুঁজি নেই। তার ওপর বন্যার জন্য স্পটও বন্ধ। তাই সব ছেড়ে বাড়ি চলে আসছি। এখন পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন যাপন করছি। কীভাবে আবার ঘুরে দাঁড়াব বুঝতে পারছি না।’

জাফলং পর্যটনকেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. হোসেন মিয়া বলেন, ‘পর্যটকদের ওপর আমাদের ব্যবসা নির্ভর করে। জাফলংয়ে প্রায় ৬০০ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। এই ৬০০ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক, কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ঢলের পানিতে অনেকের দোকানপাট প্লাবিত হয়েছে। অনেকের মালামাল ভেসে গেছে। বেশির ভাগ ব্যবসায়ী লোন নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এই ভরা মৌসুমে ব্যবসা করতে না পারায় এই লোনের কিস্তি দিতেও আমরা হিমশিম খাচ্ছি।’ 

সিলেট নগরীর পানসী রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত মাসে একবার বন্যা হলো। এই মাসে আবারও বন্যা। এর প্রভাব আমাদের ব্যবসার ওপরও পড়েছে। কারণ আমাদের ব্যবসা পর্যটকের ওপর নির্ভরশীল। ঈদের ছুটির এই সময় আমাদের রেস্টুরেন্টে উপচে পড়া ভিড় থাকে। কিন্তু পর্যটন স্পট বন্ধ থাকার কারণে এবার ভিড় নেই।’ 

এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানবসৃষ্ট? 
ঈদের সময় বন্যায় সিলেট প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাহমিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘বন্যার কারণে সিলেটে কোনো ঈদের আমেজ নেই। সিলেট মূলত কৃষি, মৎস্য, পর্যটন এবং বিদেশি রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল। বন্যার আগ্রাসনে আমাদের এসব অর্থনৈতিক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এক বছরের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্যবসায়ীরা। এতে সিলেটের অর্থনীতির মারাত্মক হচ্ছে।’ 

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমি বলব এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানবসৃষ্ট। এসবের জন্য দায়ী আমাদের সমাজের রাঘব বোয়ালরা। সিলেটে সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে ভারত থেকে সিলেট এলাকার নদীগুলোয় বিপুল পরিমাণ পাথর এসে জমা হয়েছে। পাথর জমা হওয়ার কারণে নদীর নাব্য কমে যাওয়ার পাশাপাশি গতিপথও পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে, নদী ভরাট হচ্ছে। সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন পুনরায় চালু করা হলে নদীর নাব্য বৃদ্ধি ও গতিপথ স্বাভাবিক হবে। কিন্তু সেটা করা হবে না, কারণ পাথর উত্তোলন চালু হলে অনেকের ক্ষতি হয়ে যাবে।’ 

বছরের পর বছর ধরে সিলেটের নদ-নদীগুলো খনন হচ্ছে না জানিয়ে এই চেম্বার নেতা বলেন, ‘পলিমাটি জমতে জমতে এখন আমাদের নদীগুলোর আর পানি ধারণের ক্ষমতা নেই। আমার ৫৫ বছরে আমি কোনো দিন শুনিনি সিলেটের কোনো নদী খনন হতে। কিন্তু বন্যা হলেই এমপি-মন্ত্রীরা এসে বলে যান এত এত কিলোমিটার নদী খনন হচ্ছে। পলিথিনের কারণে নদী খনন করা যাচ্ছে না। এসব তাদের মিথ্যা আশার বাণী। দেশে এত প্রযুক্তি, এত উন্নত মেশিনারি থাকার পরও পলিথিনের কারণে নদী খনন করতে পারেন না তারা। এ ধরনের হাস্যকর অযৌক্তিক কথাও শুনতে হয় নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে। সিলেটর এই পরিস্থিতি দ্রুত সমাধানে সরকার যদি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে, তাহলে সিলেটের অর্থনীতি দিন দিন তলানির দিকে যাবে এবং এর প্রভাব দেশের অর্থনীতিতেও পড়বে।’

নিউইয়র্কে সোর্সিং জার্নালের সামিটে পোশাক খাতের অগ্রগতি তুলে ধরল বিজিএমইএ

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪২ পিএম
নিউইয়র্কে সোর্সিং জার্নালের সামিটে পোশাক খাতের অগ্রগতি তুলে ধরল বিজিএমইএ
ছবি : সংগৃহীত

নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত সোর্সিং জার্নালের ফল সামিটে বাংলাদেশের পোশাক খাতের অগ্রগতি তুলে ধরেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন ও বিজিএমইএর সহায়ক কমিটির সদস্য মিরান আলী।

গত ১২ নভেম্বর এই সামিট অনুষ্ঠিত হয়। এতে বৈশ্বিক পোশাক এবং সোর্সিং খাতের প্রধান, বিশেষজ্ঞ এবং অংশীজনরা একত্রিত হয়েছিলেন।

ইভেন্ট চলাকালীন মূল মঞ্চে মো. আনোয়ার হোসেন ও মিরান আলী উভয়েরই সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়, যেখানে তারা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের রূপান্তরের অগ্রগতিগুলো এবং দেশটিতে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত বৈপ্লবিক পরিবর্তনগুলো তুলে ধরেন।

মো. আনোয়ার হোসেন শ্রমিকদের অধিকার, পরিবেশগত সাসটেইনেবিলিটি এবং জনগণের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার বিষয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন।

তিনি দেশের পোশাক শিল্পের আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টা ও একটি নিরাপদ, ন্যায্য এবং আরও টেকসই পোশাক খাত তৈরি করতে সরকার, শিল্প স্টেকহোল্ডার এবং শ্রমিকদের মধ্যে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার ওপর আলোকপাত করেন।

মিরান আলী বৈশ্বিক ডিকার্বনাইজেশন প্রচেষ্টা এবং দায়িত্বশীল ক্রয় চর্চায় বাংলাদেশের উদীয়মান নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন। 

সামিট চলাকালে আনোয়ার হোসেন আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের (এএএফএ) সভাপতির সঙ্গে বৈঠকসহ অংশীজনদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির বিষয়ে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত এবং বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদার করার জন্য বিজিএমইএ থেকে অব্যাহত সহযোগিতার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেন। 

জে. ক্রু, র‌্যাঙলার এবং টার্গেটসহ যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি পোশাক ব্র্যান্ড এবং প্রযুক্তি সমাধান সরবরাহকারীদের সঙ্গে দেখা করেন আনোয়ার হোসেন।

সালমান/

 

কর কমানোর পরও দাম কমছে না : অর্থ উপদেষ্টা

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৮ পিএম
কর কমানোর পরও দাম কমছে না : অর্থ উপদেষ্টা
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

শুল্ক-কর কমানোর পরও নিত্যপণ্যের বাজারে যে তার প্রভাব নেই, সে কথা অকপটে স্বীকার করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। 

তিনি বলেছেন, বাজারে এমনভাবে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে যে ট্যাক্স (শুল্ক-কর) কমিয়েও নিত্যপণ্যের দাম কমানো যাচ্ছে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অনেক সুবিধা দিয়েছে। তার পরও নিত্যপণ্যের দাম কমছে না।
 
বুধবার (১৩ নভেম্বর) পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) আয়োজিত ‘পিকেএসএফ দিবস ২০২৪’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। 

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টাকে বললাম, বাজারে দাম কমানো শুধু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। এখানে অনেক ফ্যাক্টর আছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। বাজারে গিয়ে মানুষের কষ্ট হচ্ছে। ৫০০ টাকা নিয়ে গেলে দুমুঠো শাক ও অন্যান্য কিছু কিনলেই টাকা শেষ হয়ে যায়। আমি চেষ্টা করছি বাজারে পণ্যের দাম কমানোর জন্য।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পিকেএসএফের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক বদিউর রহমান। পিকেএসএফের চেয়ারম্যান সাবেক সচিব জাকির আহমেদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্থার ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে অর্থায়ন’।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘মানুষ বলছে পণ্যের দাম কমছে না, অথচ এনবিআর অনেক সুবিধা দিয়েছে। মানুষ অধৈর্য হয়ে গেছে, এটাই স্বাভাবিক।’

অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা চলে যাওয়ার পরও মানুষ মনে রাখবে। কারণ আমরা ভালো কাজ করেছি। মানুষ বলবে স্যার আপনি ওখানে ছিলেন, আপনি অমুক কাজ করছেন। অনেকে আমাদের ধন্যবাদ দেয় যে, স্যার আপনি অমুক কাজটি ভালো করেছেন। বন্ডের ট্যাক্স তুলে দেওয়ায় মানুষ আমাদের অনেক ভালো বলে। সঞ্চয়পত্রেও আমরা ভালো করেছি। এখন সঞ্চয়পত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়ন হচ্ছে।’ 

আক্ষেপ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘ভালো প্রতিষ্ঠানের বড্ড অভাব। বিল্ডিং আছে কিন্তু মানুষ নেই, সেখানে স্বচ্ছতার অভাব, জবাবদিহির অভাব। আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলি যে, তুমি এটা দেখ।’

ভারতে ইলিশ রপ্তানিকে ইতিবাচক ব্যাখ্যা করে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমার ছোট ভাই ফোন দিয়ে বলে, ভাই ইলিশ মাছ দিয়ে দিলেন, ফেসবুকে আপনাকে গালি দিয়ে ভরে দিচ্ছে। আমার কিন্তু ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই। দেশে ৫ লাখ ৩০ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন হয়। ভারতে দিলাম মাত্র ৩ হাজার টন। অনেকে বলছেন, ভারতে ইলিশ দেওয়া ভালো সিদ্ধান্ত।’

বিশ্বে সবাই ইতিবাচক মন্তব্য করে উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের দিকে কেউ মুখ বাঁকা করছে না। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ সভায় গেলাম, ৭ থেকে ৮ দিন ছিলাম, সবাই আমাদের বিষয়ে ইতিবাচক। সভা করতে করতে আমরা হয়রান হয়ে গেছি। সবাই আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চান। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিছু শর্ত থাকে, তবে সেসব শর্ত কঠিন নয়। প্রত্যেকে হাত বাড়িয়েছে।’

দেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সার্বিকভাবে বাংলাদেশের সম্ভাবনা আছে। দেশের কৃষক, মজুর ও পোশাকশ্রমিকের অবদানের কারণে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাব। আমরা দায়িত্ব পালন করছি। আমরা স্বল্প মেয়াদে সংস্কার করব। দীর্ঘ মেয়াদে করব না। দীর্ঘ মেয়াদে করবে নির্বাচিত সরকার। আমরা চাইলেই সবকিছু পারি না, আমাদেরও কিছু বাধা আছে।’

বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতনে কমেছে সূচক

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৮ পিএম
বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতনে কমেছে সূচক
ছবি : সংগৃহীত

এক কার্যদিবস কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর গতকাল মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দেশের শেয়ারবাজারে আবার দরপতন হয়েছে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম কমার তালিকায়। ফলে কমেছে সব কটি মূল্যসূচক।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে এ বাজারটিতেও মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে শেষ পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হলো।

এর আগে টানা তিন কার্যদিবস দরপতনের পর গত সোমবার শেয়ারবাজারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। টানা পতন থেকে শেয়ারবাজার যখন ঊর্ধ্বমুখী দেখা দেয় সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানানো হয়, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি থাকলে সেসব ব্যাংক লভ্যাংশ দিতে পারবে না।

সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গভর্নরের সঙ্গে ১৭ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্ত ছড়িয়ে পড়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দেয়। একশ্রেণির বিনিয়োগকারী বাজারে শেয়ার বিক্রির চাপও বাড়ায়। ফলে লেনদেন শুরুর দিকে সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও শেষ পর্যন্ত পতন দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১৩৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২১৬টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৪৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩৫ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ২৯৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৭০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৮৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

শেয়ারবাজারের এ পরিস্থিতি সম্পর্কে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব দেখা যাচ্ছে। যখনই শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তখনই কোনো না কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত আসছে। টানা পতনের পর বাজার যখন একটু ঊর্ধ্বমুখী দেখা গেল, তখনই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লভ্যাংশ ঘোষণা নিয়ে একটি সিদ্ধান্তের তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। যে কারণে গতকাল আবার শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য এখন খুবই খারাপ সময় যাচ্ছে। অধিকাংশ বিনিয়োগকারী বড় লোকসানে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজার ভালো করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকা খুবই জরুরি।

এদিকে সব কটি মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫৭৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৭৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা।

এই লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ২৫ কোটি ৫৬ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ২৫ কোটি ২৮ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।

এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ইসলামী ব্যাংক, এমজেএল বাংলাদেশ, ফারইস্ট নিটিং, গ্রামীণফোন, বেক্সিমকো ফার্মা, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স এবং ওরিয়ন ফার্মা।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বৃদ্ধির শীর্ষে বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি পিএলসি। 

মঙ্গলবার ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর বেড়েছে। আজ কোম্পানিটির শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৩ টাকা ১০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়েছে।

দর বৃদ্ধির দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কেন্টাইল ইসলামী পিএলসি। কোম্পানিটির শেয়ারদর ২ টাকা ২০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়েছে। তৃতীয় স্থানে থাকা মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর বেড়েছে ২ টাকা বা ৯ দশমিক ২১ শতাংশ।

মঙ্গলবার দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসা অপর কোম্পানিগুলো হচ্ছে- এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল হেভি, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, রানার অটোমোবাইলস, নর্দার্ন ইসলামী ইন্স্যুরেন্স এবং সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দরপতনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড।

মঙ্গলবার ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমেছে ২২ টাকা ৫০ পয়সা বা ৭ দশমিক ২১ শতাংশ। তাতে দরপতনের শীর্ষে জায়গা নিয়েছে কোম্পানিটি।

দর পতনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা ফু-ওয়াং ফুডসের শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ৯০ পয়সা বা ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ কমেছে। আর শেয়ারদর ১৬ টাকা ৮০ পয়সা বা ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ কমে যাওয়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

মঙ্গলবার দরপতনের তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো- ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোড, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, ইভিন্স টেক্সটাইল, মনোস্পুল পেপার, ফারইস্ট ফাইন্যান্স এবং ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেড।

গতকাল মঙ্গলবার ডিএসইর ব্লক মার্কেটে ৩২টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মোট ৩২ কোটি ৩০ লাখ ৭২ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হতে দেখা গেছে ছয় প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- বেক্সিমকো ফার্মা, বিচ হ্যাচারি, এমজেএল বিডি, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স এবং ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস পিএলসি। আজ এই ছয় প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকারও বেশি।

এদিন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো ফার্মার। এদিন কোম্পানিটির ১৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
বিচ হ্যাচারির ৪ কোটি ১৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

আর ১ কোটি ৯৬ লাখ ২৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে এমজেএল বিডি।

অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে- সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা এবং ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস পিএলসির ১ কোটি ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৩৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০৭টির এবং ২১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয় ৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

চলতি দশকে বিশ্বে জ্বালানি তেলের চাহিদা কমবে ১৫ শতাংশ

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৩ পিএম
আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৩ পিএম
চলতি দশকে বিশ্বে জ্বালানি তেলের চাহিদা কমবে ১৫ শতাংশ
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের কারসনে অবস্থিত ম্যারাথন নামের পরিশোধনাগার। ছবি: সংগৃহীত

প্যারিসভিত্তিক জ্বালানি পর্যবেক্ষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) গত মাসে বার্ষিক ওয়ার্ল্ড এনার্জি আউটলুক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটিতে দেওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বে জ্বালানি তেলের চাহিদা ১৫ শতাংশ কমবে। খবর অয়েলপ্রাইচ.কমের। 

খবরে বলা হয়, সব ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানির বৈশ্বিক চাহিদা বাড়ার প্রবণতা বর্তমান দশকের মধ্যে কমে যাবে। আর ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক কোটা পূরণ করবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত। আইইএর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘নেট জিরো’ লক্ষ্য অর্জনের জন্য ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের চাহিদা বর্তমান দৈনিক ১০ কোটি ৩০ লাখ ব্যারেল থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৮ কোটি ৫০ ব্যারেলে নামিয়ে আনা হবে। চলতি দশকের শেষনাগাদ প্রতি বছর ৩০ থেকে ৪০ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেলের চাহিদা কমবে।

খবরে বলা হয়, জ্বালানি তেল সম্পর্কে আইইএর এই নেতিবাচক পূর্বাভাস ব্লুমবার্গের পূর্বাভাসের সঙ্গে মিলে যায়। গত এপ্রিলে ব্লুমবার্গ এক পূর্বাভাসে বলেছে, বৈশ্বিক সড়ক জ্বালানির চাহিদা কেবলমাত্র আরও চার বছর বৃদ্ধি পাবে এবং ২০২৭ সালে দৈনিক ৪ কোটি ৯০ লাখ ব্যারেলে পৌঁছে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে। ব্লুমবার্গের মতে, বৈদ্যুতিক গাড়ি, ক্রমবর্ধমান জ্বালানি দক্ষতা এবং শেয়ার্ড মোবিলিটি জ্বালানি তেল খাতের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। সেই সঙ্গে ২০৪০ সালের মধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ির কারণে জ্বালানি তেলের চাহিদা দৈনিক ২ কোটি ব্যারেল প্রতিস্থাপন করতে পারে, যা বর্তমানে ২০ লাখ ব্যারেলের রেঞ্জে রয়েছে। ব্লুমবার্গের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে সড়ক পরিবহনের জন্য পেট্রল ও ডিজেলের চাহিদা ইতোমধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে এবং চীনে এই চাহিদা ২০২৪ সালে সর্বোচ্চে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। অন্য প্রধান ভোক্তা দেশগুলোর মধ্যে ভারতে জ্বালানি তেলের চাহিদা ২০৩০-এর দশকে ব্যাপক হারে কমে যাবে।

তবে আরেকজন বিশ্লেষক বলেছেন, এই নেতিবাচক পূর্বাভাসগুলো বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কানাডিয়ান সম্প্রচারমাধ্যমের (সিবিসি) ‘দ্য আইওপেনার’ অনুষ্ঠানে একটি সাক্ষাৎকারে, এনভারাস ইন্টেলিজেন্স রিসার্চের অ্যাল সালাজার বলেন, দৈনিক ৮ কোটি ৫০ লাখ ব্যারেল চাহিদা হলো কোভিড-১৯ সময়কার চাহিদার থেকেও ৬০ লাখ ব্যারেল কম, যেখানে বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের চাহিদা ২০২০ সালে দৈনিক প্রায় ৯ কোটি ১০ লাখ ব্যারেলের পর্যায়ে নেমে এসেছিল এবং জ্বালানি তেলের দাম ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নেতিবাচক পর্যায়ে পৌঁছেছিল। সালাজারের মতে, বৈদ্যুতিক যানবাহনের (ইভি) বিপ্লব এখন বেশ কিছু গুরুতর বাধার সম্মুখীন হচ্ছে, বিশেষত চীনের নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও ইভি খাতকে শুল্কবাধার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

বাইডেন প্রশাসন চীনের ওপর প্রায় ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের মতো কঠোর হয়েছে, যদিও তেমন কোনো প্রচার এখনো দেখা যায়নি। দুই মাস আগে, মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তর (ইউএসটিআর) চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধির পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে, যা মে মাসে প্রথম প্রস্তাবিত শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাবের প্রতিনিধিত্ব করছে। মূলত কৌশলগত পণ্যের ক্ষেত্রে এসব শুল্ক বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে রয়েছে বৈদ্যুতিক যানবাহন (ইভি), ব্যাটারি, সোলার সেলস, সেমিকন্ডাক্টর ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ। চূড়ান্ত শুল্ক কাঠামো ১৪টি পণ্য বিভাগের কয়েক হাজার আইটেমকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যার মধ্যে প্রথম দফার শুল্ক বৃদ্ধি কার্যকর হয়েছে সেপ্টেম্বর ২৭ তারিখে এবং বাকিগুলো আগামী দুই বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে কার্যকর হবে। এই শুল্ক আরোপের ধরনগুলো ট্রাম্পের আমলের মতোই কঠোর। এর মধ্যে চীনের ইভির ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, লিথিয়াম-আয়ন ইভি ব্যাটারির ওপর ২৫ শতাংশ এবং ফোটোভোল্টিক সোলার সেলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্কারোপ করা হয়েছে। একই সময়ে, চীনে তৈরি সেমিকন্ডাক্টরের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক ২০২৫ সালে কার্যকর হবে।

 

৩০০ কোটি ডলারের কাজুবাদাম আমদানি ভিয়েতনামের

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫২ পিএম
আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৩ পিএম
৩০০ কোটি ডলারের কাজুবাদাম আমদানি ভিয়েতনামের
কাজুবাদাম বাছাইয়ের কাজ করছেন শ্রমিকরা। ছবি : সংগৃহীত

চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে ২৩ লাখ টন কাজুবাদাম আমদানি করেছে ভিয়েতনাম, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি পরিমাণে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মূল্যে ১ দশমিক ১০ শতাংশ কম। 

ভিয়েতনামের জেনারেল ডিপার্টমেন্ট অব কাস্টমসের পরিসংখ্যান থেকে এই তথ্য জানা গেছে। খবর ভয়েস অব ভিয়েতনামের।

খবরে বলা হয়, এই সময়ের মধ্যে কম্বোডিয়া ছিল ভিয়েতনামে সবচেয়ে বেশি কাজুবাদাম সরবরাহকারী দেশ, যার পরিমাণ ছিল ৮১৫ হাজার টনের বেশি এবং আর্থিক মূল্য ছিল ১ দশমিক ০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। সে হিসাবে কম্বোডিয়া থেকে আমদানি পরিমাণে ৩৩ শতাংশ এবং মূল্যের দিক থেকে ২৭ শতাংশ বেড়েছে।

সরবরাহকারীদের মধ্যে আইভরি কোস্ট দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। দেশটি থেকে ৫৪৭ হাজার টনের বেশি কাজুবাদাম এসেছে এবং এর মূল্য ছিল ৬৭ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি পরিমাণে ৩০ শতাংশ এবং মূল্যের দিক থেকে ২০ শতাংশ কম।

কয়েকজন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞের মতে, কাজুবাদামের আমদানি ও রপ্তানি মূল্যে বছরের শুরু থেকেই ধারাবাহিকভাবে ওঠানামা দেখা যাচ্ছে। এর কারণ হতে পারে সরবরাহ শৃঙ্খলের ব্যাঘাত, যার ফলে কাজুবাদাম চাষাবাদ ক্রমেই কমছে।

বিশ্বের বৃহত্তম কাজুবাদাম প্রক্রিয়াকরণকারী দেশ হিসেবে ভিয়েতনামে চলতি বছরে কাঁচা কাজুবাদামের আমদানি ১০ শতাংশের বেশি কমতে চলেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কম। কাঁচা কাজুবাদামের প্রধান উৎস পশ্চিম আফ্রিকায় ফলন খারাপ হওয়ায় এই ঘাটতি আরও বেড়েছে বলে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন। কাঁচা কাজুবাদামের উচ্চমূল্য ও কাঁচামালের অভাবের কারণে কাজুবাদামের দাম বেড়ে গেছে।

এদিকে উদীয়মান বাজারগুলোতে কাজুবাদামের চাহিদা উচ্চপর্যায়ে রয়েছে, বিশেষ করে চীন ও এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে এটির চাহিদা অনেক বেশি। এর কারণ হলো এই অঞ্চলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রসার ও ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য সচেতনতা। এ ছাড়া সীমিত সরবরাহের জন্য বাড়তি প্রতিযোগিতা কাজুবাদামের মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রপ্তানি পরিস্থিতির কথা বললে, বছরের প্রথম নয় মাসে দেশটি মোট ৫ লাখ ৮১ হাজার ১৩০ টন বিভিন্ন ধরনের কাজুবাদাম রপ্তানি করেছে, যার আয় ছিল ৩৩৮ কোটি (৩ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার। এটি গত বছরের প্রথম নয় মাসের তুলনায় পরিমাণে প্রায় ২৮ শতাংশ এবং মূল্যের দিক থেকে ৩২ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। চলতি বছরে দেশটির লক্ষ্য হলো কাজুবাদাম রপ্তানি থেকে মোট ৩৮০ কোটি (৩ দশমিক ৮০ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার আয় করা, যা ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বেশি।