
কোরবানির ঈদ শেষে আবারও অস্থির হয়ে পড়েছে ডিমের বাজার। দেড় মাসের ব্যবধানে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে প্রতিপিস ডিমে দাম বাড়ানো হয়েছে ১ টাকা ৪০ পয়সা। অপরদিকে খুচরা দোকান থেকে ক্রেতাকে প্রতিডজন ডিম কিনতে গুনতে হচ্ছে ১৬০ টাকা। সে হিসেবে খুচরায় প্রতিপিস ডিমের দাম পড়ছে ১৩ টাকা ৩৩ পয়সা।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ডিমের দামে কারসাজি থেমে নেই। গত মাসে ৯ দিনে ৭ বার ডিমের দাম বাড়ানো হয়েছিল। সর্বশেষ গত মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে পাইকারিতে প্রতিপিস ডিম বিক্রি হয় ১১ টাকা ৩০ পয়সায়। কোরবানি পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকে ডিমের ব্যবসা। কোরবানি শেষে চাহিদা বাড়ার অজুহাতে বর্তমানে পাইকারিতে প্রতিপিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা ৭০ পয়সায়।
জানা গেছে, গত ২ মে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে প্রতিপিস ডিম বিক্রি হয়েছিল ৯ টাকায়। ৩ মে বিক্রি হয়েছে ৯ টাকা ৫০ পয়সা। পিসপ্রতি ১০ পয়সা বাড়িয়ে ৪ মে প্রতিটি ডিম বিক্রি হয় ৯ টাকা ৬০ পয়সায়। ৫ মে এক লাফে ৭০ পয়সা বেড়ে প্রতিপিস ডিম বিক্রি হয় ১০ টাকা ৩০ পয়সায়। দাম কিছুটা কমে ৬ ও ৭ মে প্রতিপিস ডিম বিক্রি হয় ১০ টাকা ১০ পয়সায়। ৮ মে ২০ পয়সা বেড়ে পাইকারিতে প্রতিটি ডিম বিক্রি হয় ১০ টাকা ৩০ পয়সা। ৯ মে বিক্রি হয় ১০ টাকা ৬০ পয়সায়। আর ১০ মে অস্বাভাবিক হারে দাম বেড়ে প্রতিপিস ডিম বিক্রি হয়েছে ১১ টাকা ৩০ পয়সায়। বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতিপিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা ৭০ পয়সায়। অর্থাৎ ১০০ পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৭০ টাকায়।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনা, রাজশাহী এসব অঞ্চল থেকে ডিম সংগ্রহ করেন। তবে সবচেয়ে বেশি ডিম আনা হয় টাঙ্গাইল থেকে। পাহাড়তলী বাজারে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০টি ট্রাকে করে ডিম আনা হয়। প্রতিটি ট্রাকে ১ লাখ ৪৪ হাজার পিস ডিম থাকে।
তবে ব্যবসায়ীরা শঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, বর্তমানে ডিমের দাম ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ফলে বেচাকেনাতেও ভাটা পড়েছে। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে ক্রেতাসংকটে ডিমগুলো নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর্থিকভাবে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিম ব্যবসায়ী খবরের কাগজকে বলেন, টাঙ্গাইল, ঢাকা, কুমিল্লার বড় বড় আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে ডিমের দাম বাড়িয়েছেন। ফলে তাদের কাছ থেকে বাড়তি দরে ডিম কিনতে হচ্ছে। সরকার যদি বিষয়টিতে এখনই নজর না দেন তা হলে খুচরায় প্রতিপিস ডিমের দাম ১৫ টাকায় ঠেকতে বেশি দিন সময় লাগবে না।
চট্টগ্রাম ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল শুক্কুর বলেন, ‘ডিমের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। তাই আমাদের এখানে বেচাকেনাও কমে গেছে। কিন্তু আমাদেরও তো বাড়তি দরে কিনে আনতে হচ্ছে। তাই বাড়তি দরে বিক্রি না করে উপায় নেই।’
রাজধানী ঢাকার তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ বলেন, ‘ডিম পচনশীল পণ্য। এ পণ্যে সিন্ডিকেট করার সুযোগ নেই। মূলত ডিম ব্যবসা এখন করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে চলে গেছে। তারা মুরগির বাচ্চার দাম, খাদ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে পোল্ট্রি খাতে উদ্যোক্তা কমে গেছে। তার ওপর করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোও ডিমের দাম বাড়িয়েছে। আবার চাহিদাও বেড়েছে। সব মিলিয়ে ডিমের বাজার বেড়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে সরকারকে কঠোরভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। নজরদারি বাড়াতে হবে। অন্যথায় ডিমের দাম আরও বাড়বে।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘অপকর্ম করে শাস্তি না পেলে অপরাধ করার প্রবণতা তো বাড়বেই। ডিম নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। আর এটাকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা পণ্যটির বাজার অস্থির করে তুলছেন। কারা ডিমের বাজার অস্থির করছেন তাদের খুঁজে বের করে জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা হলে ডিমের দাম কমবে।’